, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

Avatar n_carcellar1957

অপার সৌন্দর্যের লীলাভূমি সাগর কন্যা কুয়াকটা

প্রকাশ: ২০১৫-০৬-০৬ ১৬:৪৫:০৮ || আপডেট: ২০১৫-০৬-০৬ ১৬:৪৫:০৮

Spread the love

1427671093kuakata-beach-680x365

ভ্রমন ডেস্ক:প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যের লীলাভূমি সাগর কন্যা কুয়াকটা। এটি দক্ষিণ এশিয়ায় একমাত্র সমুদ্র সৈকত যেখানে দাঁড়িয়ে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত অবলোকন করা যায়। সমুদ্রের পেট চিরে সূর্য উদয় হওয়া এবং সমুদ্রের বক্ষে সূর্যকে হারিয়া যাওয়ার দৃশ্য অবলোকন করা নিঃসন্দেহে দারুণ ব্যাপার।

অনেকেই কক্সবাজারের সাথে কুয়াকাটার মিল খুজতে চান। অনেকেই বলে থাকেন কুয়াকাটায় দেখার মত কিছু নেই, এর থেকে কক্সবাজার অনেক সুন্দর। এখানে বলে রাখি কক্সবাজার আর কুয়াকাটার সৌন্দর্য সম্পূর্ন ভিন্ন রকমের। জেলেদের মাছ ধরার দৃশ্য অথবা গাংচিলের ওড়াওড়ি দেখেতে পাবেন একটু নজর রাখলেই।

যেতে যেতে পথে:
অনেকেই হয়তো শুনে থাকবেন কুয়াকাটার রাস্তা খুবই খারাপ। কিন্তু বাস্তব অভিজ্ঞতাটা এই যে কুয়াকাটার যাবার রাস্তা আসলে খুবই ভাল। শুধু শেষের কয়েক কিলোমিটার রাস্তা মোটামুটি হিসেবে চালিয়ে দেয়া যায়। কিন্তু ফেরিতে নদী পার হতে হয় চারটি। তবে আশার কথা হল তিনটি নদীতে সেতু নির্মান হচ্ছে।। একটির কাজ অনেক দূর এগিয়েছে। তাই অচিরেই ফেরী পারাপারের হ্যাপাও আর থাকবে না।
বরিশাল বিভাগ পুরোটাতে অসংখ্য নদী দিয়ে ঘেরা। তাই নদীপারের জীবন যাত্রা দেখে অবিভূত হতে পারেন। রাস্তার দুপাশে যতদূর চোখযায় শুধু ধান ক্ষেত। নদী, ধান, খাল এই নিয়ে বরিশাল কথাটার সার্থকতা খুজে পাবেন। যত কুয়াকাটার দিকে যেতে থাকবেন ততই পাল্টাতে থাকবে আশেপাশের দৃশ্য। দেখা পাবেন সাগরের মাছ ধরার ট্রলার হয়তো সাগর থেকে ফিরছে। এদিকের মানুষের অনেকেরই প্রধান জীবিকা মাছ ধরা।দূরে দেখতে পাবেন ম্যনগ্রোভ বনের সারি। এসব দৃশ্য দেখতে দেখতে কখন যে সময় কেটে যাবে বুঝতেও পারবেন না।

গন্তব্যে পৌছে:
কুয়াকাটায় গিয়ে প্রথম কাজ হবে কোন একটি হোটেলে ওঠা। যারা একটু নিরিবিলি থাকতে পছন্দ করেন তাদের জন্য পর্যটন করপোরেশনের হোটেল অনেক ভাল লাগবে। চারদিকে নারিকেল গাছে সারি। সামনে বিশাল বাগান। পর্যটন করপোরেশনের হোটেলে একটু বাড়তি নিরাপত্তা দেয়। তাছাড়াও আছে অসংখ্য হোটেল। তার যে কোন একটিতে উঠতে পারেন।

নির্মল সৈকতে:
দুপুরের খাবার পর বেড়িয়ে পড়ুন সৈকত দেখতে। অনেক শান্ত নিরিবিলি একটি সৈকত। হেঁটে হেঁটে বহুদূর পর্যন্ত যাওয়া যায়। কুয়াকাটার সমূদ্রের দৈর্ঘ্য মাত্র ২০ কিলোমিটার। কিন্তু সৈকতের প্রস্থ প্রায় দেড় কিলোমিটার। পূর্ব দিকে কয়েক কিঃমিঃ গেলে দেখা মিলবে ঝাউ গাছের বাগান। মাঝে মাঝে মাথা উচু করে আছে নারিকেল গাছ। সাগর পাড়ের ছোট ছোট বাচ্চারা সৈকতে ছোটাছুটি করে। ছোট ছোট কাঁকড়া মাটি খুড়ে তৈরী করছে সুন্দর সুন্দর নকশা। যেন কোন শিল্পী নিখুত আঁচড়ে এইসব শিল্পকর্ম তৈরী করছে। তাছাড়াও এখানে সৈকতে পেতে রাখা আছে কাঠের বেড। চাইলে এগুলো ভাড়া নিতে পারেন। প্রতিঘন্টা বেড ভাড়া ২০টাকা। দিনের কোলাহলের থেকে রাতের আঁধারে সমূদ্রের গর্জন বেশি শোনা যায়। চাইলে রাতেও কাঠের বেড গুলো ভাড়া নিতে পারেন। নিরাপত্তার কথা যদি বলি তাহলে দেখেছি রাতে পুলিশ সৈকতে পাহারা দেয়। তবুও রাতে সৈকতে থাকলে একটু সতর্ক থাকা ভাল।

হারিয়ে যেতে নেই মানা:
কুয়াকাটায় ঘুরে বেড়ানোর জন্যভাড়াতে মটরসাইকেল পাওয়া যায়। মটরসাইকেল ভাড়ার নানান অফার পাবেন তাদের কাছ থেকে। দেখতে পাবেন সাগর পারের মানুষের মাছ ধরা ও তার জীবন যাত্রা। কেউবা ধরছে চিংড়ির পোনা। বিশাল সৈকতে রাখা আছে সারি সারি নৌকা। যেগুলো জেলেরা মাছ ধরার কাজে ব্যবহার করেন।

জেলেদের সাথে উড়ে বেড়ায় গাংচিলের ঝাঁক। নিশ্চিন্তে হেঁটে বেড়ায় সি বিচে। এখানে তাদের কেউ উৎপাত করেনা। দেখা পাবেন গাংচিলের ঝাঁক মাছ ধরার কাজে ব্যস্ত। সাথে আছে বিশাল আকাশ আর বিশাল সমূদ্র। হারিয়ে যান বিশালতার মাঝে।

চরের পরে চর:
ফাতরার চর মূলত সুন্দরবনের একটি অংশ। এখান থেকেই সুন্দরবনের এলাকা শুরু। চাইলে সুন্দরবনে ঘোরার সাধটি এখানেই অনেকটা মিটিয়ে নিতে পারেন। যদিও এখানে বন্যপ্রানী দেখার সম্ভাবনা অনেক কম। কিন্তু অনেক পাখি দেখতে পাবেন। এছাড়াও লাল কাঁকড়ার চরে যেতে পারেন। মূলত এই চরটির নাম গঙ্গামায়ার চর। এখানে হাজার হাজার লাল কাঁকড়া চোখে পড়বে আপনার। তাই অনেকে এটিকে লাল কাঁকড়ার চর বলে। এই দুই জায়গা ছাড়াও শুটকি পল্লীতে যাবার জন্য এখানকার সৈকত থেকে কয়েকটি ট্রলার ছেড়ে যায়। সকাল ৮টা থেকে ১০টার মধ্যে ট্রলারগুলো ছেড়ে যায়। ভাড়া জনপ্রতি ৩০০টাকা। ফাতরার চর,লাল কাঁকড়ার চর, শুটকি পল্লী ইত্যাদি কয়েকটি স্পটের প্যাকেজ অনুযায়ী ট্রলারগুলো চলাচল করে।

মনোলোভা সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত:
কুয়াকাটার বিশেষত্ব হচ্ছে এখান থেকে একই সাথে সূর্য উদয় আর সূর্য অস্ত দেখা যায়। দক্ষিন এশিয়ার এই একটি মাত্র জায়গা থেকে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখা যায়। ভোর বেলা সূর্য রক্তিম আভা ছড়িয়ে সমূদ্রের বুক চিড়ে উদয় হয় আবার সন্ধ্যায় অস্ত যায়। এই একটি বিশেষত্বের কারনে অনেকে দূর দূরান্ত থেকে ছুটে আসেন। সূর্যাস্ত দেখার জন্য বিকেল থেকেই সৈকতে থাকতে হবে। সারাটা বিকেল জুড়ে কুয়াকাটার সৌন্দর্য পরিবর্তিত হতে থাকে। আকাশে মেঘ না থাকলে সহজেই সূর্যাস্ত দেখতে পারবেন। কিন্তু সূর্যদোয় দেখতে হলে খুব সকালে উঠতে হবে। সকালে উঠতে হলে তারাতারি ঘুমিয়ে পড়ুন। রাত জেগে থাকলে সূর্যদোয় মিস হয়ে যেতে পারে কিন্তু! সূর্যদোয় দেখার জন্য সকালবেলা ঘুম থেকে উঠেই যেতে হবে ঝাঊ বনের দিকে। এখান থেকেই সূর্যদোয় সব থেকে ভাল দেখা যায়।

বাড়তি আকর্ষণ:
হাতে সময় থাকলে ঘুরতে পারেন বৌদ্ধমন্দির ও রাখাইন পল্লী। এই বৌদ্ধমন্দিরের বৌদ্ধ মূর্তিটি ৩০ফুল লম্বা। আর রাখাইন পল্লী মূলত উপজাতীয়দের আবাসস্থল। যেতে পারেন জেলে পল্লীতে। মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করা মানুষগুলোকে কাছ থেকে দেখুন। এখান থেকে সুলভ মূল্যে ইলিশ কিনতে পারেন।

যাওয়া-আসা:
ঢাকা থেকে বাস অথবা লঞ্চে কুয়াকাটা যেতে পারেন। এছাড়া সায়দাবাদ থেকে সরাসরি কিছু বাস যায় কুয়াকাটায়। সাকুরা পরিবহন ও বিআরটিসি পরিবহনের বাস গুলো একেবারে সিবিচের কাছেই নামিয়ে দেয়। লঞ্চে গেলে দুভাবে যেতে পারেন। ঢাকা থেকে বরিশাল হয়ে কুয়াকাটা অথবা ঢাকা থেকে পটুয়াখালী হয়ে কুয়াকাটা। সদরঘাট থেকে লঞ্চে পটুয়াখালী হয়ে যেতে পারেন। সেক্ষেত্রে পটুয়াখালীতে নেমে সেখান থেকে বাসে সোজা কুয়াকাটা যেতে হবে। লঞ্চে গেলে বরিশাল হয়ে যাওয়া অনেক সুবিধাজনক। বরিশাল থেকে কুয়াকাটা যাবার বাস ভাড়া ২২০টাকা। বাস গুলো খুব বড় নয়। বরিশাল রূপাতলী বাসস্টান্ড ও বরিশাল লঞ্চঘাট থেকে প্রতি ঘন্টায় বাস ছাড়ে। কুয়াকাটাতে গেলে হাতে কিছু সময় নিয়ে যান। দেখার মত অনেক কিছু আছে সেখানে। তার মধ্যে উল্লেখ যোগ্য হল ফাতরার চর। যেটা আসলে সুন্দরবনের একটি অংশ।

থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা:
কুয়াকাটাতে অনেক ভাল মানের হোটেল আছে। যেগুলোতে খুব কম খরচে থাকতে পারেন। তবে যারা একটু নিরিবিলি থাকতে পছন্দ করেন তারা পর্যটন মোটেলে উঠতে পারেন। এখানে পর্যটন মোটেল ও ইয়ূথ ইন এ সিঙ্গেল বেডের রুম ১০০০টাকা ও ডাবল বেডের রুম ১৫০০ টাকাতে পাবেন। এছাড়া ৪ বেডের রুম ভাড়া ১৬০০ টাকা। পর্যটন করপোরেশনের হোটেল পর্যটন হলিডে হোমস এ খবচ একটু কম পরবে। হোটেল গুলোতে খাবারের ব্যবস্থা আছে। চাইলে খাবার রুম সার্ভিসে নিতে পারেন। তাতে অতিরিক্ত চার্জ দিতে হবে। এছাড়াও কুয়াকাটার আশেপাশে আরো ৪০-৫০টি ব্যাক্তি মালিকানাধীন হোটেল আছে। সেগুলোতে খরচ অনেক কম। এগুলোতে ১৫০ থেকে ১০০০টাকার মধ্যে থাকতে পারবেন। এছাড়া সি বিচে কম খরচের অনেক হোটেল পাবেন খাবার জন্য। কুয়াকাটায় গেলে সামূদ্রিক মাছ খেতে ভুলবেন না। এখানকার সামুদ্রিক মাছের অসাধারন রান্না আপনার মুখে অনেকদিন লেগে থাকবে। এখানে শুঁটকি পল্লী থাকায় সেখান থেকে কম মূল্যে শুঁটকি কিনে ফিরতে পারেন।#

Logo-orginal