, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

admin admin

আধুনিকতার মোড়কে চাপা পড়েছে নোয়াপাড়া পথের হাটের আদি ইতিহাস

প্রকাশ: ২০১৫-০৬-১২ ২৩:৪৬:৫০ || আপডেট: ২০১৫-০৬-১২ ২৩:৪৬:৫০

Spread the love

গাজী জয়নাল আবেদীন
paterhat noaparaচট্টগ্রাম প্রতিনিধি: চট্টগ্রামের রাউজানের এই সময়ের সর্বাধিক জমজমাট বানিজ্যিক কেন্দ্রটির নাম নোয়াপাড়া পথের হাট। যাদের বয়স এখন ৩০/৩৫ এর কোটায় তারা জানেন না এই পথেরহাট সৃষ্টি ও নামকরণের ইতিহাস। তারা কেউ দেখেননি স্বাধীনতা পূর্ব অথবা সত্তুর দশকের পথেরহাটে চিত্র। পঞ্চাশ দশকের শুরুতে যখন কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ প্রকল্প কাজ শুরু হয়েছিল, তখন থেকে চট্টগ্রামের সাথে কাপ্তাই এর যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে পরিকল্পনা হয়েছিল কাপ্তাই সড়ক নির্মাণের।

৫২ সালের দিকে সড়কটি আরকান সড়ক সংযোগ(কাপ্তাই রাস্তার মাথা) থেকে কাপ্তাই মুখি নির্মাণ কাজ আরম্ভ হলে এটি হালদা নদী(মদুনাঘাট) পাড় হয়ে রাউজানের উরকিরচর, নোয়াপাড়া, বাগোয়ান ও পাহাড়তলী ইউনিয়নের বুক ছিড়ে চলে যায় রাঙ্গুনিয়ার দিকে। এই সময়ে নির্মানাধিন কাপ্তাই সড়ক পাশে গুরুত্বপূর্ণ কোনো স্থাপনা বা চোখে পড়ার মত কোনো অবকাঠামো ছিল না।

তবে নোয়াপাড়া উচ্চ বিদ্যালয় ও উত্তর মুখি গ্রাম সমূহের মানুষজনের বিভিন্নমূখি যাতায়াত ছিল এই নোয়াপাড়া হয়ে কর্ণফুলীর লাম্বুর হাট, খেলারঘাট, নোয়াপাড়া চৌধুরীঘাট ও হালদা নদীর কচুখাইন, দেওয়াজিরঘাট নৌপথে। দুরদুরান্তের মানুষের চলাচলের এই সুবাদে নোয়াপাড়ায় (বর্তমান পথেরহাট))ডোবা নালার উপর বাঁশের মাচাং তৈরী করে গড়ে উঠেছিল হাতেগনা দুই চারটি ঝুপড়ি দোকান।

ওসব দোকানীদের মধ্যে আলোচিত কয়েকটি দোকান ও দোকানদার হচ্ছে আব্দু ও চান্দু, ছালামের চা দোকান, সাধনের মিষ্টির দোকান, গুরা বৈদ্যের পানশালা ও পাসারীর দোকান। অবশ্য পরে যুক্ত হয় এখানে আরো কয়েকটি দোকান যেমন- বাহাদুরের লাইব্রেরী,  আবুল ফয়েজ এর বেকারী।
কাপ্তাই সড়কের নির্মাণ সমাপ্ত হলে এই নোয়াপাড়ার এলাকারটি গুরুত্ব আরো বেড়ে যায়। বাড়তে থাকে বিভিন্ন মুখি মানুষের আনাগোনা। গ্রামীণ জনপদে থাকা বিভিন্নমূখি সপ্তাহিক হাটে এই পথে যাতায়াত বাড়ে। পন্য বিক্রেতারা দুরদুরান্ত থেকে হাটে যাওয়া আসার পথে বিশ্রামের জন্য নির্বাচিত করে বর্তমানে নোয়াপাড়া ভূমি অফিসের সামনের জায়গাটি। ভূমি অফিসের পিছনের বড় পুকুরটির পানিতে তারা হাত মুখ ধুয়ে গাছের ছায়ায় পরিশ্রান্ত শরীর জুড়িয়ে নিতো। আর ফাঁকে ফাঁকে স্থানীয়দের কাছে ওসব পন্য বিক্রি করতো। নোয়াপাড়ার এই স্থানটিই ওই সময়ে পরিচিতি পায় পথেরহাট হিসাবে।
noapara pater hat.-1প্রবীণদের মতে সেকালে কোনো এলাকায় পাকা অথবা ইটে রাস্তা ছিল না। উত্তরের অধিকাংশ মানুষ নোয়াপাড়ায় আসতে বর্ষার সময় অনেক কষ্ট হতো। হাটু কাদায় দীর্ঘ পথ অতিক্রম করে আসতে অনেকেরই কাপড় নষ্ট হয়ে যেতো। এ কারণে অনেকেই আরো এক জোড়া কাপড় সাথে করে নিয়ে আসতো বিকল্প হিসাবে। হাটু কাঁদায় পথেরহাটে এসে মানুষ হাফ ছেড়ে বাঁচতো। নোয়াপাড়ার পুকুরে কাদা পরিস্কার করে তারা সাথে থাকা বিকল্প কাপড় গায়ে জড়িয়ে নিজ নিজ গন্তব্যে এখান থেকে ভালভাবে রাওয়ানা দিতো।
কালের আধুনিকতার ঘুর্ণিয়মান চাকায় পথেরহাটে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগে স্বাধীনতার পরবর্তী সময় থেকে।

 

এই সময়ে আধুনিক পথেরহাটের রূপকারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন ওই এলাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম খায়েজ আহমদ। তিনি এখানে সড়ক পাশে প্রথম একটি দ্বিতল ভবন করেন। ওই ভবনে নিজে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলে বসার পাশাপাশি ব্যবসা করার সুযোগ করে দেন অন্যদের। তার এই ভবনে স্থান পাওয়া অন্যতম অপর এক ব্যবসায়ী হচ্ছে শাহা আলম সওদাগড়। যিনি মাইক শাহা আলম হিসাবে পরিচিতি। যারা নাম জড়িয়ে আছে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক গানের সুচনা ইতিহাসের সাথে।

 

খায়েজ আহমদের হাতের ছোঁয়ায় বছরের পর বছর পথেরহাটে জৌলুস বাড়তে থাকে। আলোকিত হয় নোয়াপাড়ার এই এলাকাটি। কিছু কিছু গ্রামীণ রাস্তায় ইট পড়ে। এক সময় স্থানীয়রা সড়ক পাশের জায়গা নিজেদের দখলে নিয়ে সব নালা ডোবা ভরাট করে ফেলে। তারা ওসব নালা ডোবার উপর গড়ে তুলে দোকান ঘর।
আশির দশকের শেষের দিকে নোয়াপাড়ায় প্রথম আধুনিকতার ছোঁয়া লাগায় চেয়ারম্যান খায়েজ আহমদ । তিনি এখানে প্রথম আধুনিক মাকের্টটি প্রতিষ্ঠা করেন আমির মাকের্ট নামে। তার ব্যবসায়ীক সাফল্য আর পথেরহাটের সম্ভাবনা দেখে পরবর্তীতে এখানে বহুতল ভবন নির্মাণ করে শপিং মল ও বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠান করেছেন অনেক ঢর্ণাঢ্য ব্যক্তি।

 

বর্তমানে এই পথেরহাটে ব্যবসা করছে বিভিন্ন তফসিলি ব্যাংকের ১৮টি শাখা, পাইওনিয়ার হাসপাতাল নামের ৫০ শষ্যার একটি আধুনিক বেসরকারি হাসপাতালসহ অপর একটি হাসপাতাল। ব্যবসা বানিজ্য করছে প্রায় তিন হাজার দোকানী। এলাকার জনসাধারণ মনে করেন পথেরহাটের গুরুত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে নব্বই দশকের শেষের দিক থেকে। ওই সময় থেকে রাউজানের সাংসদ এবিএম ফজলে করিম চৌধুরীর রাজনৈতিক ভূমিকায় এলাকার রাস্তাঘাট ও ব্রিজ কালবার্টে প্রভুত উন্নিত হয়।

সন্ত্রাস নৈরাজ্যমুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করতে তিনি বিভিন্ন মূখি অবদান রাখেন। একারণে এলাকার শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত হয়। মানুষ এগিয়ে আসে ব্যবসা বানিজ্যে বিনিয়েগে। আজকের আধুনিক পথেরহাটে রূপকার হিসাবে স্বীকৃতি দেয়া যেতে পারে রাউজানের এই সাংসদকে ।

 

Logo-orginal