, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

Avatar n_carcellar1957

উন্নত চরিত্র গঠনে রমযানের ভূমিকা

প্রকাশ: ২০১৫-০৬-২২ ১৩:৩২:০৯ || আপডেট: ২০১৫-০৬-২২ ১৩:৩২:০৯

Spread the love

রমযান মাসের রোযা ফরজ হয় দ্বিতীয় হিজরীতে। রমযানের আভিবানিক অর্থ হচ্ছে দগ্ধকারী, যেহেতু রমযানের রোযা মানুষের কু-প্রভৃত্তিকে পুড়িয়ে দেয়, অক্ষম করে দেয়।

 

রোযাকে আরবীতে সাওম বলা হয়, এর বহু বচন হচ্ছে সিয়াম, সাওম শব্দের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে বিরত রাখা। যেহেতু রোযা মানুষকে পাপাচার ও অনাচার থেকে বিরত রাখে। রোযা সকল অপকর্ম ও পাপাচার থেকে রক্ষা করে এবং সকল সৎ কর্মের উৎস আত্মাকে শক্তিশালী করে।

 

ফলে উন্নত চরিত্রের পূর্ণতা লাভে রমযানের ভূমিকা অনস্বীকার্য। একজন মানুষের মধ্যে দুটি সত্তা বিরাজমান। এক নৈতিকসত্তা, দুই জৈবিক সত্তা। একজন মানুষের জন্য দুটি সত্তারই অপরিহার্যতা রয়েছে। এতে এক সত্তার উপর অন্য সত্তা প্রাধান্য লাভ করলে ফলাফল ভিন্ন ভিন্ন হয়।

 

জৈবিক সত্তার উপর নৈতিক সত্তা বা রূহ বিজয়ী হলে মানুষ হয় চরিত্রবান, পাপাচার তার জন্য কঠিন হয়ে পড়ে। পক্ষান্তরে রূহের উপর নফস বা জৈবিক সত্তার বিজয়ী হলে সে মানুষ কুপ্রবৃত্তির দাস হয়ে যায় সততা ও নৈতিকতা তার থেকে বিদায় গ্রহণ করে। মানুষের রূহ বা আত্মাকে শক্তিশালী করে তাকে তাকওয়াবান বা সৎচরিত্রবান হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যেই রমযানের রোযা ফরজ হয়েছে।

 

 

যেমনি মহান রাব্বুল আলামীন পবিত্র কুরআন শরীফে ঘোষণা করেছেন “হে ঈমানদার লোকেরা, তোমাদের উপর রোযা ফরজ করা হয়েছে, যেমনি করে তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর ফরজ করা হয়েছিল, আশা করা যায়- তোমরা সতর্কতা অবলম্বনকারী হবে”। (সূরা বাকারা: ৮৭)

 

নফস বা জৈবিক সত্তার চাহিদা প্রধানত তিনটি। এক: পানাহার, দুই: যৌনচার, তিন: বিশ্রাম। উক্ত তিনটি চাহিদাকে নিয়ন্ত্রণ করা না হলে নফসের শক্তি ও দাপট বেড়ে গিয়ে আত্মার উপর বিজয়ী হয়।

 

 

অপরদিকে উক্ত তিন চাহিদাকে নিয়ন্ত্রিত রেখে আত্মশুদ্ধির প্রচেষ্ঠা চালালে ব্যক্তির মধ্যে রূহ নৈতিক সত্তা প্রভাবশালী হয়। ফলে নৈতিক গুনাবলী বিকাশ লাভ করে। তখন সৎ ও মানবিক আচরণ একজন মানুষের জন্য স্বভাবগত বিষয়ে পরিণত হয়।

 

 

আর একথা সর্বজন বিদিত যে, সুবহে সাদেক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সকল ধরণের পানাহারের ও যৌন সম্ভোগ থেকে বিরত থাকার নাম রোযা। রমযনের রাত্রে তারাবীহ এর নামায ও সেহেরী খাওয়ার মাধ্যমে বিশ্রাম গ্রহণ ও হয় নিয়ন্ত্রিত।

 

এভাবে দেহের চাহিদাকে নিয়ন্ত্রিত রাখার মাধ্যমে স্বাভাবিক ভাবে নৈতিক সত্তা শক্তিশালী হবার সুযোগ পায়। এতে করে পাপাচার কঠিন হয়ে পড়ে এবং নৈতিক চরিত্র গঠন সহজ হয়ে যায়। তাই রোযা একটি আত্মরক্ষার হাতিয়ার অনৈতিকতার আক্রমন থেকে নিজেকে রক্ষার একটি ঢাল। এ অর্থে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) বলেছেন- “রোযা ঢাল স্বরূপ”।

 

পবিত্র রমযানের রূপে গড়ে তোলে সকল প্রকার অনাচার ও দুর্নীতি থেকে বিরত থাকে রমযানুল মোবারক সহায়তা করে। বাইরের কোন চাপ ও নজরদারী ব্যতিরেকে রোযা মানুষকে সৎ পথে চলতে অভ্যস্ত করে তোলে। রোযা মানুষের বিবেক ও নৈতিক সত্ত¡াকে জাগ্রত ও শাণিত করে। রোযার মাধ্যমে এভাবে চরিত্রবান হতে না পারলে তো রোযাই ব্যর্থ।

 

তাইতো আমাদের দয়ালু নবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) বলেছেন- “কর্ম ত্যাগ না করে রোযার মাধ্যমে তার পানাহার ত্যাগে আল­াহর কোন প্রয়োজন নেই”। ব্যক্তি পর্যায়ে নৈতিক চরিত্রের উন্নতি ব্যতীত সমাজকে অপরাধমুক্ত করার কোন সুযোগ নেই।

 

বিবেক জাগ্রত না হলে কেবল চরিত্রের উপর অবিচল রাখতে রমযানের সিয়াম সাধনার প্রভাব অব্যর্থ। তাই ব্যক্তি ও সমাজের কল্যাণে পবিত্র রমযানের লক্ষ্য ও শিক্ষা হাসিলে সবার নিষ্ঠাপূর্ণ ও সম্মিলিত প্রয়োজ। এ ব্যাপারে মহান আল­াহ আমাদের সহায় হোন। …………আমীন।
লেখক
মাওলানা এম. সোলাইমান কাসেমী
সুপার
সুফী ফতেহ আলী ওয়াইসী মহিলা দাখিল মাদ্রাসা
আমিরাবাদ, লোহাগাড়া, চট্টগ্রাম।

Logo-orginal