, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

Avatar n_carcellar1957

চট্টগ্রামে পানি সংকটে জনজীবন বিপর্যস্ত

প্রকাশ: ২০১৫-০৬-০৮ ০৫:৩৯:১৬ || আপডেট: ২০১৫-০৬-০৮ ০৫:৩৯:১৬

Spread the love
Decrease font Enlarge font

স্টাফ রিপোর্টার,আরটিএমনিউজ২৪ডটকম

92

চট্টগ্রাম: চট্টগ্রামে  পানি সংকটে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। গরমের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বন্দরনগরী চট্টগ্রামে বাড়ছে পানির চাহিদা।  ভূগর্ভে পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় এ সংকট আরও তীব্র হয়েছে।

পরিস্থিতি সামাল দিতে ওয়াসা কর্তৃপক্ষ রেশনিং পদ্ধতিতে নগরীতে পানি সরবরাহ করলেও কোন কোন এলাকায় প্রায় দুই মাসেও একবার পানি সরবরাহ করা হয় না বলে অভিযোগ করেছেন গ্রাহকরা।

ওয়াসা কর্তৃপক্ষ বলছে, উৎপাদনের চেয়ে পানির চাহিদা প্রায় তিনগুণ। উৎপাদনের সঙ্গে চাহিদার সামঞ্জস্য না থাকায় পানির এ সংকট চলছে। পানি সংকট নিরসনে এ মাসেই আরও ২/৩টি গভীর নলকূপ স্থাপন করা হচ্ছে বলে জানান ওয়াসা কর্মকর্তারা। তবে আরও এক বছর এভাবে পানির সংকট থাকবে বলে জানিয়েছেন তারা।

২৫ নম্বর রামপুরা ওয়ার্ডের মধ্যম রামপুর খৈয়তরা এলাকায় বসবাস করেন গৃহবধু ফাতেমা আক্তার।  এলাকার অনেকের মতো তার বাসায়ও ওয়াসার সংযোগ রয়েছে।  কিন্তু সেই সংযোগে পানি নেই।  গত দুই মাসে ওয়াসার এ সংযোগে পানি এসেছে মাত্র চারবার। তাও আবার অল্প কিছুক্ষণ। ফলে প্রতিদিন বাড়তি প্রায় দু’শ টাকা খরচ করতে হয় পানির জন্য। ওয়াসার সংযোগ থাকা সত্ত্বেও বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জারের পানিই এখন ভরসা তার। শুধু গৃহবধু ফাতেমা নয়, এলাকার  চার শতাধিক পরিবারের একই দশা।

রামপুরা ওয়ার্ডের নবনির্বাচিত কাউন্সিলর এসএম এরশাদউল্লাহ  আরটিএমনিউজ২৪ডটকমকে বলেন, ‘সপ্তাহে তিনদিন রামপুরা ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকায় পানি সরবরাহ করার কথা। কিন্তু ওয়াসার দেওয়া সময়েও পানি সরবরাহ নেই।  রামপুরা ওয়ার্ডের প্রায় ৭০ শতাংশ এলাকা পানিবিহীন রয়েছে। ’

শুধু রামপুরা নয় নগরীর শুলকবহর ওয়ার্ডের আলফালাহ গলি, হালিশহর, আগ্রাবাদ সিজিএস কলোনি, বহুতলা কলোনি, টিএন্ডটি কলোনি, আগ্রাবাদ হাজীপাড়া, দাইয়া পাড়া, জামালখান ওয়ার্ডের হেমসেম লেইন, চান্দগাঁও আবাসিক এলাকা, সিঅ্যান্ডবি, কাট্টলী কুতুব বাড়ী, চকবাজার, বাকলিয়া, কাপাসগোলা, দামপাড়া বেটারিগলি, মতিঝর্ণা, কাজীর দেউড়ি, আসকারদীঘি পাড়, সার্সন রোড, চট্টেশ্বরী এলাকা, পাঠানটুলী, ধনিয়ালাপাড়া, আন্দরকিল্লা, নাসিরাবাদ, পাঁচলাইশসহ নগরীর বিভিন্ন এলাকায় এখন তীব্র পানি সংকট চলছে।

নগরীর শুলকবহর ওয়ার্ডের আলফালাহ গলি এলাকার এএনজে চৌধুরী হাউজে ভাড়া বাসায় থাকেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ ১ম  বর্ষের শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলাম। তিনি আরটিএমনিউজ২৪ডটকমকে বলেন, ‘দিন দিন গরমের মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেই সঙ্গে পানিরও সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। ওয়াসা সপ্তাহে দুই দিন পানি দিলেও তা পরিমাণে খুব কম।  এর ফলে বাসার মালিক প্রতিদিন পানি সরবরাহ করতে পারে না।  আমরা খুবই কষ্টে আছি। ’

নগরীর ৩১ নম্বর আলকরণ ওয়ার্ডের আলকরণ এলাকায় সপ্তাহে রোববার ও বুধবার পানি সরবরাহে ওয়াসার সঙ্গে মৌখিক চুক্তি রয়েছে এলাকাবাসীর। কিন্তু এ প্রতিশ্রুতিও রাখছে না ওয়াসা কর্তৃপক্ষ।  সপ্তাহে দু’বারের পরিবর্তে মাসে মাত্র একবার করে পানি সরবরাহ দেওয়া হচ্ছে এ এলাকায়।  এতে নিত্য ভোগান্তি পোহাচ্ছে এলাকার কয়েক হাজার পরিবার।

পানি কষ্টের কথা তুলে ধরতে গিয়ে আলকরণ ওয়ার্ডের নবনির্বাচিত কাউন্সিলর তারেক সোলয়মান আরটিএমনিউজ২৪ডটকমকে  বলেন, ‘আমার বাসায় গত দুই মাসে এক বিন্দু পানি পাইনি। এলাকায় নলকূপ এবং গভীর নলকূপগুলোতেও পানি উঠছে না। বাধ্য হয়ে বেসরকারি বিভিন্ন পানি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান থেকে টাকা দিয়ে ব্যবহারের পানি নিতে হচ্ছে। এ ব্যাপারে ওয়াসা কর্তৃপক্ষকে অবহিত করলেও তারা কোন কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। ’

আলকরণের বাসিন্দা মুন্সী মিয়া  আরটিএমনিউজ২৪ডটকমকে বলেন,‘পানির তীব্র সংকটে এলাকায় রীতিমতো হাহাকার লেগে রয়েছে। ওয়াসা পানি দিচ্ছে না। এলাকায় কয়েকটি গভীর নলকূপ থাকলেও আশানুরূপ পানি মিলছে না। নলকূপগুলোতে রাতদিন সমানে লেগে থাকে মানুষের জটলা।’

নগরীর আগ্রাবাদ সিডিএ কলোনিতে পানির সমস্যা আরও মারাত্মক। ওয়াসা থেকে পানি পাওয়া যাচ্ছে না। আবার এলাকায় যে কয়টি গভীর নলকূপ রয়েছে সেগুলোর পানি লবণাক্ত।  টুকটাক কাজের জন্য ব্যবহার ছাড়া মুখে তোলা যায় না। ফলে স্বচ্ছল পরিবারগুলো বাড়তি টাকা দিয়ে ভাউজারের মাধ্যমে বিকল্প পন্থায় পানির ব্যবস্থা করতে পারলেও চরম বিপাকে রয়েছেন নিম্মবিত্ত পরিবারের লোকজন। এমন গরমের দিনেও অনেক লোককে গোসল করতে হয় সপ্তাহে একদিন।

এ এলাকার বাসিন্দা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থী জান্নাতুল মাওয়া আরটিএমনিউজ২৪ডটকমকে বলেন, ‘এলাকার বাসিন্দারা খুব পানি সংকটে আছে। খাবার পানিটুকু কোনরকমে সংগ্রহ করলেও গৃহস্থালি কাজের জন্য পানি একেবারে পাওয়া যাচ্ছে না। ’

নগরীর অন্যতম অভিজাত আবাসিক এলাকা চান্দগাঁও আবাসিকের এ এবং বি ব্লকেও রয়েছে ওয়াসার পানির সংকট। অনিয়মিত পানি সরবরাহ ও রেশনিং এর কারণে আবাসিকের বাসিন্দারা প্রায়শ দুর্ভোগে পড়েন। আবাসিক এলাকা ছাড়াও সিঅ্যান্ডবি, বহাদ্দারহাটসহ চান্দগাঁও ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকায় পানির সংকট রয়েছে।

এ প্রসঙ্গে চান্দগাঁও ওয়ার্ডের নবনির্বাচিত কাউন্সিলর সাইফুদ্দিন খালেদ আরটিএমনিউজ২৪ডটকমকে জানান, ‘চান্দগাঁও ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকায় পানির সংকট তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। অবিলম্বে পানির সংকট দূর করা না হলে সাধারণ জনগণকে নিয়ে আমরা আন্দোলনে নামতে বাধ্য হবো।

ওয়াসার প্রধান তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী জানে আলম ভূইয়া আরটিএমনিউজ২৪ডটকমকে বলেন, ‘নগরীতে দৈনিক পানির চাহিদা রয়েছে প্রায় ৫০ কোটি লিটার। কিন্তু ওয়াসা উৎপাদন করতে পারছে মাত্র ১৭ কোটি লিটার।  এছাড়া ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় ওয়াসার গভীর নলকূপগুলো থেকে পর্যাপ্ত পানি পাওয়া যাচ্ছে না। এ কারণে সংকট দেখা দিচ্ছে। তবে আমরা এ সংকট নিরসনে চেষ্টা চালাচ্ছি।

তিনি বলেন, ‘রমজান শুরু হওয়ার পূর্বে ওয়াসার পক্ষ থেকে আরও ২/৩টি গভীর নলকূপ স্থাপন করা হচ্ছে।  আগামী বছর ওয়াসার কর্ণফুলী পানি প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে সংকট অনেকটা কেটে যাবে।  বর্তমানে পানির সংকট পুরোপুরি দূর করা না গেলেও এক মাসের মধ্যে জনদুর্ভোগ কমে যাবে। ’

Logo-orginal