, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

admin admin

জাফর ইকবাল ও ডা. ইমরানকে হত্যার পরিকল্পনা

প্রকাশ: ২০১৫-০৬-১০ ১১:১৩:৪৫ || আপডেট: ২০১৫-০৬-১১ ১১:৫০:০৮

Spread the love

আরটিএমনিউজ২৪ডটকম

1433928765

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও লেখক মুহম্মদ জাফর ইকবাল এবং গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকারসহ দেশের বিশিষ্ট কয়েক নাগরিককে হত্যার পরিকল্পনা ছিলো ইসলামপন্থী জিহাদিদের। দুটি ব্যাংকে ডাকাতি করে সংগৃহীত অর্থ দিয়ে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কথা ভাবছিল তিন জঙ্গি সংগঠনের যৌথ প্ল্যাটফর্ম।

গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেটকে (আইএস) অনুসারী স্থানীয় জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামী বাংলাদেশ (হুজি-বি), আনসারুল্লাহ বাংলা টিম ও জামায়াতুল মুজাহেদিন বাংলাদেশের (জেএমবি) সদস্যরা গত বছর এই পরিকল্পনা করে।

পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) অতিরিক্ত সহকারী কমিশনার ছানোয়ার হোসেন বলেন, জঙ্গি সংগঠনগুলো আগে বিভিন্ন এনজিও, স্থানীয় ব্যবসায়ী ও শুভাকাঙ্ক্ষীর কাছ থেকে আর্থিক সাহায্য পেতো। সম্প্রতি কড়া নজরদারি ও কয়েকজন অর্থ যোগানদাতাকে আটকের পর অর্থ সংগ্রহ তাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে। যে কারণে তহবিল গঠনে তারা ব্যাংক ডাকাতির বিকল্প পরিকল্পনা করে।

রাজধানীর বনশ্রী ও সূত্রাপুর থেকে গ্রেফতার হওয়া জিহাদি সংগঠনের নয় সদস্যকে জিজ্ঞাসাবাদে এসব তথ্য পেয়েছেন গোয়েন্দারা। গত রবিবার ওই নয়জনকে গ্রেফতার করা হয়। তারা বর্তমানে সাত দিনের পুলিশ রিমান্ডে আছেন।

তাদের কাছ থেকে পাঁচ কেজি বিস্ফোরক, বোমা তৈরির বিভিন্ন সরঞ্জাম, আটটি হাতবোমা, ছয়টি চকলেট বোমা, চারটি চাপাতি, উগ্র মতবাদ প্রচারের বই ও সংগঠনের প্রস্তাবিত পতাকা উদ্ধার করা হয়।

গ্রেফতারকৃতদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে সূত্রাপুরে বোমা তৈরির একটি গবেষণাগারেরও সন্ধান পায় পুলিশ। জাফর ইকবাল ও ইমরান এইচ সরকারকে হত্যার পরিকল্পনাকারী এই সংগঠনটি গত ফেব্রুয়ারিতে বিজ্ঞান লেখক ও ব্লগার অভিজিৎ রায়কেও হত্যার পরিকল্পনা করে।

জঙ্গিদের ভাষায়, তারা ব্যাংক ডাকাতি বা অন্য কোনওভাবে অর্থ সংগ্রহ করে জিহাদের পথে খরচ করাকে ‘জায়েজ’ মনে করে। গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, জঙ্গিরা সৈয়দপুরে একটি বেসরকারি ব্যাংক ডাকাতির চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিয়েছিলো। ডাকাতির পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে ব্যাংক রেকি করা, ভেতরের ছবি তুলে তা বিশ্লেষণ করে কীভাবে নিরাপদে বেরিয়ে আসা যাবে সেই প্রস্তুতিও ছিল তাদের। ব্যাংকটির নিরাপত্তা ব্যবস্থা তুলনামূলক দুর্বল হওয়ায় সেটাকেই তারা সুযোগ হিসেবে নিতে চেয়েছিল।

ডাকাতির উদ্দেশ্যে তারা সৈয়দপুরে বিস্ফোরক ও অস্ত্র নিয়ে যায় বলে জানা গেছে। ডাকাতির চূড়ান্ত পরিকল্পনা করতে তারা রাজধানীর বনশ্রী এলাকায় বৈঠকে বসে। ওই সময়ই তাদের গ্রেফতার করা হয়।

সূত্র জানায়, নূরুল্লাহ কাশেমী এই গ্রুপের আধ্যাত্মিক নেতা। এর বাইরে আরেকজন দলনেতা রয়েছেন। তিনি মূলত জিহাদিদের সংগঠিত করার চেষ্টা করছিলেন। তাকে গ্রেফতারের জন্য অভিযান চালানো হচ্ছে।

গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, আটককৃতদের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র কাজী ইফতেখারুল খালেদ তাদের জানিয়েছেন মাওলানা কাশেমী তার বক্তব্যে উল্লেখ করেছেন, জাফর ইকবাল ও ইমরান এইচ সরকার ‘ইসলামের দুশমন’। তাদের হত্যা করা ‘ধর্মীয় দায়িত্ব’।

খালেদ রিমান্ডে জানান, এর আগে তারা অভিজিৎ রায়কে হত্যার পরিকল্পনা করেন। এ জন্য তিনটি চাপাতি ও পিস্তল জোগাড় করা হয়েছিলো। কিন্তু তাদের নেতা কাকরাইল মসজিদ এলাকায় তাদের কাছ থেকে এসব অস্ত্র নিয়ে নেন। খালেদ বলেন, ‘এর কয়েকদিন পর শুনতে পাই অভিজিৎকে হত্যা করা হয়েছে। তবে আমি তাকে হত্যা করিনি।’

গোয়েন্দারা বলছেন ওই ৯ জনের গ্রেফতারে হরকাতুল জিহাদ বাংলাদেশ ও আনসার‌‌‌ল্লাহ সম্পর্কে অনেক রহস্যঘেরা তথ্য জানা যাবে।

জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলেন, নূরুল্লাহ কাশেমী আগে কুয়েত থাকতেন। সেখানকার একটি মসিজদের খতিব হিসেবে কাজ করতেন। দেশে ফেরার পর তিনি আল আজহার নামে একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেছিলেন। পরে তিনি ও অপর এক নেতা মিলে সব জঙ্গি সংগঠনকে এক করার চেষ্টা করেন। কাশিমপুরের হাইসিকিউরিটি জেলে গিয়ে জঙ্গি নেতা মাওলানা রউফের সঙ্গেও তিনি একাধিকবার সাক্ষাত করেন। মাওলনা রউফ বাইরে থাকা জঙ্গি সদস্যদের কাশেমীর সঙ্গে কাজ করার নির্দেশ দেন। এরপরই কাশেমী ও অপর একজন মিলে জঙ্গি সংগঠনগুলোকে ‘এক ছাতার নিচে’ আনার চেষ্টা করেন।

ডিবি কর্মকর্তা ছানোয়ার জানান, রাজধানীর আরেকটি ব্যাংক ডাকাতির পকিল্পনা করেছিল তারা। তবে সুনাম ক্ষুণ্ন ও গ্রাহকদের ওপর প্রভাব পড়তে পারে এই শঙ্কায় গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বেসরকারি ব্যাংকটির নাম প্রকাশ করেননি। এসব ব্যাংকে নিরাপত্তা জোরদার করতে বাংলাদেশ ব্যাংক ও সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে অবহিত করা হবে।

Logo-orginal