, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

admin admin

বর্ষা শুরু

প্রকাশ: ২০১৫-০৬-১৫ ১৪:০১:০৫ || আপডেট: ২০১৫-০৬-১৫ ১৪:০২:৫৯

Spread the love

1_278967

কদম, কেয়া আর কেতকীর নয়নাভিরাম রূপের পসরা ও পেখম খোলা ময়ূরের উচ্ছল নৃত্যের আবাহনে এলো বরষা। বাংলা ষড়ঋতুর দ্বিতীয় ঋতুটি বর্ষা। অপরূপ রূপবতী মেঘবতীর সঙ্গে বর্ষার সেই প্রথম দিন আজ। এই আষাঢ়ের প্রথম দিন আকাশের চিরচেনা সেই ঝরঝর শব্দে রিনিঝিনি বৃষ্টির ধ্বনি শোনা যাবে কিনা তা বলা যায় না। কিন্তু বর্ষণ হোক বা নাই হোক, আজ পয়লা আষাঢ়।

আষাঢ়-শ্রাবণ এ দু’মাস বাংলায় বর্ষা। এর মধ্যে গত কয়েকদিন রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে ঘনিয়ে আসা মেঘপুঞ্জ আর বৃষ্টির মধুর বিড়ম্বনা বর্ষার আগমন বার্তা অবশ্য দেশবাসীকে জানিয়ে দিয়েছে। রিমঝিম বর্ষায় দীঘল কর্মহীন দিবস-রজনীতে উদাস মনের তোলপাড়ে ঘরে বসে গ্রামীণ নারীর কখনও কাঁথা সেলাই, কিংবা তরুণ মনে তপ্ত দীর্ঘশ্বাসে দু’জনাকে মুখোমুখি করে এই বর্ষা।

 

আবহমান বাংলার চিরায়ত বর্ষার রূপ-রস এবং সৌন্দর্য ও প্রকৃতি বিচারে আরও বলা যায় যে, তাপবিদগ্ধ তৃষিত ধরা নববর্ষার সিঞ্চনে সিক্ত হওয়ার দিন এসেছে। বাঙালির প্রেমকাতর হৃদয় নব-বরিষার ছোঁয়ায় সিক্ত হওয়ার পাশাপাশি হবে আরও সমৃদ্ধ। বৃষ্টির শব্দে মহাকবি কালিদাসের যক্ষের মতোই বাঙালির হৃদয় এক অজানা বিরহে ভারাক্রান্ত হয়ে ওঠে।
এই বর্ষার আগমনে প্রেমিক কবিরাও আবহমানকাল ধরেই উচ্ছলিত-বিচলিত। বাঙালি কবিদের প্রিয় ঋতু বলতে বর্ষা। ‘মেঘদূত’র মহাকবি কালিদাস তো এই আষাঢ়স্য প্রথম দিবসেই বিরোহী যক্ষ মেঘকে দূত করে সুদূর দুর্গম কৈলাস শিখরে পাঠিয়েছিলেন বিরোহিণী প্রিয়ার কাছে।

তিনি এই আষাঢ়েই চিরায়ত কাব্যগ্রন্থ মেঘদূত রচনা করেন। প্রকৃতির কবি জীবনানন্দ দাশ আষাঢ়কে বলেছেন ‘ধ্যানমগ্ন বাউল-সুখের বাঁশি’। বাঙালির অতি প্রিয় এই ঋতুর আগমনে পুরো প্রকৃতি তার রূপ ও বর্ণ বদলে ফেলে। গাছপালা, তরুলতা সবকিছুই যেন গ্রীষ্মের দহন থেকে পরিতৃপ্তি পেতে স্নান করে ওঠে।

কবিগুরুর কাব্যভাণ্ডারের বহু ছত্রে কেবল বর্ষা আবাহনের পঙক্তি ঃ ‘হৃদয় আমার নাচেরে আজিকে, ময়ূরের মত নাচেরে, আকুল পরাণ আকাশে চাহিয়া উল্লাসে কারে যাচে রে।’ কিংবা ‘নীল নবঘনে আষাঢ় গগন/তিল ঠাঁই আর নাহিরে/ওগো আজ তোরা/যাসনে ঘরের বাহিরে।’ ‘আষাঢ় সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলো, গেল রে দিন বয়ে/বাঁধনহারা বৃষ্টিধারা ঝরছে রয়ে রয়ে।’
বর্ষা নিয়ে নবযৌবন আর যৌবনের কবিদের অমরগাথা থাকলেও একে নিয়ে আবার অনুযোগেরও কমতি নেই। কাব্যলক্ষ্মীর সাধনায় যাদের আগ্রহ কম তাদের অনেকের কাছে বর্ষা ভোগান্তিরও বটে। কেননা আষাঢ় মানেই বৃষ্টির ঘনঘটা। বৃষ্টির তোড়ে যাওয়া যায় না ঘরের বাইরে। বিশেষ করে নগরে রাস্তায় বের হওয়া অনেক সময়ে চরম দুর্ভোগই নিয়ে আসে।

কমে যায় দিনমজুরের আয়-উপার্জন। গ্রামাঞ্চলেও অনেক সময়ে কাজে ব্যাঘাত ঘটে। তবে বর্ষা নিয়ে যাই চলুক আর ঘটুক প্রকৃতির গভীর আহ্বান ও নিষ্ঠুর বাস্তবতার মধ্যে সমন্বয় করেই চলছে বাঙালি মনন।
এদিকে বাস্তবে আষাঢ় নিয়ে তপস্যা আর বিরহ যা-ই থাকুক, বর্ষা ঋতুকে বরণ করে নিতে প্রতি বছরের মতো এ বছরও বর্ষা উৎসবের আয়োজন করেছে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন। আজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার লিচুতলাসহ রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে অনুষ্ঠিত হবে সংগীত, নৃত্য, আবৃত্তি আর বর্ষা কথনের নানা অনুষ্ঠান।

Related posts:

ড. পিয়াসের মৃত্যুতে খালেদা, ফখরুলের শোক প্রকাশ
এবার হাতের নাগালে জাতীয় পরিচয়পত্র!
উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চাই : প্রধানমন্ত্রী

কমেন্ট করুন