, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

admin admin

হালদায় দ্বিতীয় দফায় ডিম ছেড়েছে মা মাছ

প্রকাশ: ২০১৫-০৬-১৩ ১৩:৪১:৩২ || আপডেট: ২০১৫-০৬-১৩ ১৩:৪১:৩২

Spread the love

গাজী জয়নাল আবেদীন

OLYMPUS DIGITAL CAMERA
OLYMPUS DIGITAL CAMERA

রাউজান (চট্টগ্রাম) সংবাদদাতা: এশিয়ার অন্যতম প্রকৃতিক মৎস প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীতে গত শুক্রবার ভোরে দ্বিতীয় দফায় মা মাছ ডিম ছেড়েছে। গত ১১ জুন বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে প্রচন্ড বৃষ্টি ও বজ্রপাত হলে হালদা নদীতে ডিম সংগ্রহকারীরা নদীর বিভিন্ন স্পটে নৌকা ও জাল নিয়ে মা মাছের ডিম সংগ্রহ করার জন্য নদীতে অপেক্ষা করে। দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর শুক্রবার ভোরে নদীতে মা মাছ ডিম ছাড়লে ডিম সংগ্রহকারী নদী থেকে ডিম সংগ্রহ করেন। তবে পূর্বাভাস না পাওয়ায় অনেক জেলেরা নদীতে অবস্থান না করায় এবার গতবারের চেয়ে কম ডিম সংগ্রহ হয়েছে।
ডিম আহরণকারীরা জানান, যে সময় নদীতে ডিমের অস্তিত্ব পাওয়া যায় সেই সময়ে অধিকাংশ ডিম সংগ্রহকারী নৌকা জাল নিয়ে নদীতে ছিল না। যারা ভোর সকালে ডিম দেয়ার খবর পেয়েছে তারাই ডিম সংগ্রহ করতে নেমে স্বল্প পরিমান ডিম সংগ্রহ করেছে।
আজিমের ঘাটের ডিম সংগ্রহকারী আবুল কালাম বলেছেন গভীর রাতে জোয়ারের সময় হয়ত মা মাছ ডিম দিয়েছে। ভোরে ভাটার টানে নিচের দিকে ডিম নেমে যায়। এসময় কিছু কিছু ডিম সংগ্রহকারী নদীতে জাল ফেলে ডিমের অস্তিত্ব দেখতে পায়। তারা পরিচিত জনদের নদীতে নামার আহŸান জানায়। যারা খবর পেয়েছে তারা নৌকা জাল নিয়ে নদীতে নেমে ডিম সংগ্রহ করেছে। মৎস্যজীবিরা বলেছেন মা মাছ ডিম দিয়েছে নদীর উপরিয়াংশে। ভাটার টানে ডিম নেমে গেছে নিচের দিকে।
সরজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়, বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত একটার সময় থেকে গত শুক্রবার ভোর পর্যন্ত সময়ে হাটহাজারীর মদুনাঘাট, মাছুয়াঘোনা, গড়দুয়ারা, রাউজান পশ্চিম গহিরা, কাগতিয়া, মোবারকখীল, আজিমের ঘাট, কাসেম নগর হ্যাচারীতে ডিম সংগ্রহকারীরা হালদা নদী থেকে ডিম সংগ্রহ করার পর ডিম সংগ্রহকারীরা নদীর তীরে মাটির কুয়ায় ও হ্যাচারীতে ডিম ফুটানোর কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন।
রাউজানের পশ্চিম গহিরা অংকুরী ঘোনা এলাকার ডিম সংগ্রহকারী সাধন বড়ুয়া জানান শুক্রবার ভোর পর্যন্ত হালদা নদী থেকে চারটি নৌকা দিয়ে তিনি চার বালতী ডিম সংগ্রহ করেছেন। পরিদর্শনে ডিম সংগ্রহকারী সাধন বড়–য়া ও তার পুত্র বিতান বড়–য়া পশ্চিম গহিরা অংকুরী ঘোনা এলাকায় সংগ্রহ করা ডিম নদীর তীরে মাটির কুয়ায় ডিম ফুটানোর কাজে ব্যস্ত দেখা যায়।
মৎস্যজীবিরা বলেছেন, নদীতে প্রায় দুই থেকে আড়াইশ মৎস্যজীবি এতদিন জাল নৌকা নিয়ে ডিমের আশায় নদীতে পাহারা বসিয়েছিল। তাদের অনেকেই ডিম দেয়ার সংবাদে সঠিক সময়ে উপস্থিত হতে না পেরে হতাশ হয়েছে। আর যারা নৌকা জাল নিয়ে নদীতে ছিল তারাও স্বল্প পরিমান ডিম সংগ্রহ করে সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে। স্থানীয়রা জানিয়েছে মৎস্যজীবিরা সাধারণত বেশি বৃষ্টির জন্য অপেক্ষায় ছিল। তাদের ধারণা ছিল বেশির বৃষ্টি হলে নদীতে স্রোত সৃষ্টি হবে। এসময় মা মাছ ডিম দেবে। কিন্ত এবছর অতীতের সব হিসাব ব্যর্থ করে দিয়ে মা মাছ ডিম দিয়েছে বৃষ্টিহীন পরিবেশে। গত এপ্রিলেও বৃষ্টিবিহীন অবস্থায় প্রথম দফায় মা ডিম দিয়েছিল। তাও পরিমানে কম।
উলে­খ্য, এবৎসর প্রাকৃতিক মৎস প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীতে মা মাছের ডিমের নমুনা ছাড়ে গত ২০ এপ্রিল। নমুনা ডিম ছাড়ার পর যে কোন সময়ে মা মাছ ডিম ছাড়তে পারে এই আশায় শত শত ডিম সংগ্রহকারী নৌকা ও জাল নিয়ে ডিম সংগ্রহের প্রতিক্ষায় ছিল। কয়েকদপে বৃষ্টি ও বজ্রপাত হলে গত ২১ এপ্রিল হালদা নদীতে মৌসুমের মধ্যে প্রথমবারের মতো মা মাছ ডিম ছাড়ে। জানা যায়, প্রথমবার রাউজান হাটহাজারী ডিম সংগ্রহকারীরা যে পরিমাণ ডিম নদী থেকে সংগ্রহ করেন সেই ডিম থেকে ৬০ কেজি রেনু উৎপাদন করে। ডিম সংগ্রহকারী কাগতিয়ার সুবল জলদাশ জানান, প্রতি কেজি রেনু ৬০ হাজার টাকা করে বিক্রয় করেছে।
রাউজান উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা নাজিম উদ্দিন হালদায় মা মাছ ডিম দেয়ার কথা স্বীকার করে বলেছেন সংগ্রহকারীরা প্রথম দফায় যে ডিম সংগ্রহ করতে পেরেছিল গত শুক্রবার দ্বিতীয় দফায় তারা এর চাইতে প্রায় অর্ধেক ডিম কম সংগ্রহ করতে পেরেছে। তার হিসাবে প্রথম দফায় ডিম সংগ্রহ করা হয়েছিল প্রায় ৬৫ কেজি। আর এবার দ্বিতীয় দফায় সংগ্রহ করতে পেয়েছে ৩০ থেকে ৩৫ কেজি ডিম। তিনি জানান সংগৃহীত ডিম এখন স্থানীয় হ্যাচারী গুলোতে রেখে পোনায় রূপান্তরের কাজ চলছে

Logo-orginal