, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪

Avatar n_carcellar1957

অপরূপ প্রকৃতি হাতছানি , পর্যটকদের বরণ করতে প্রস্তুত মিরসরাই

প্রকাশ: ২০১৫-০৭-১৬ ১৪:১৫:৫৫ || আপডেট: ২০১৫-০৭-১৬ ১৪:১৫:৫৫

Spread the love

Mirsarai Projoton Photo (2)এম মাঈন উদ্দিন, মিরসরাই: ঈদের ছুটিতে পর্যটকদের বরণ করতে প্রস্তুত রয়েছে অপরূপ সৌন্দয্যের লীলভূমি চট্টগ্রামের মিরসরাই। দীর্ঘ সময় ধরে বন্দি মন খানিকটা ছুটি পেয়ে ছটপট করছে একটু আলো-বাতাসের ছোঁয়া পেতে। কতদিন বেড়ানো হয় না। ঈদের ছুটি সেই সুযোগটা করে দেয় অনেককে।

আর ঘরে বসে থাকা যায় না। আর এই ঈদের ছুটিতে ঘুরে আসতে পারেন অপরূপ সৌন্দয্যের লীলাভূমি চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে। এখানে রয়েছে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম কৃত্রিম লেক মহামায়া সেচ প্রকল্প, দেশের ৬ষ্ঠ সেচ ও প্রথম বায়ু বিদ্যুৎ প্রকল্প মুহুরী পজেক্ট, আট স্তর বিশিষ্ট জলপ্রভাত খৈয়াছড়া ঝর্ণা ও বাওয়াছড়া প্রকল্পে। ঈদের ছুটিতে প্রকৃতির অতি কাছাকাছি যে যেতেই হবে।

অপার সৌন্দর্যমন্ডিত প্রকৃতির সঙ্গে সখ্য, এমন চারটি পর্যটন স্থান নিয়ে প্রস্তুত মিরসরাই। এবার ঈদে তাই এখানকার মুখরিত জনপদ হয়ে উঠবে আরও মুখর। প্রাণের টানে ঘর থেকে বেরিয়ে পড়া প্রকৃতিপ্রেমীদের আমন্ত্রণ মহামায়া, খৈয়াছড়া, বাওয়াছড়া ও মুহুরীর পক্ষ থেকে।
মহামায়ার প্রকৃতিতে রঙের ছড়াছড়ি :
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মিরসরাই উপজেলার ঠাকুর দীঘি বাজারের এক কিলোমিটার পূর্বে। ছায়াঘেরা সড়ক। দেশেরে যে কোন স্থান থেকে এসে লেকে যেতে রাস্তায় প্রস্তুত আছে সিএনজি অটোরিক্সা। কিছুদূর পর দেখা মিলবে রেলপথ। রেল লাইন পেরুলেই কাছে টানবে মহামায়া। প্রাণের টানে ছুটে আসা পথ যেন ক্রমশই বন্ধুর হতে চাইবে মনের কোণে জাগা মৃদু উত্তেজনায়। দূর থেকে দেখা যায় প্রায় পাহাড়সম বাঁধ।

উভয় পাশে শুধু পাহাড় আর পাহাড়। বাঁধে উঠতেই…! আহ, কি অপরূপ শোভা। বাঁধের ধারে অপেক্ষমান সারি সারি ডিঙি নৌকো আর ইঞ্জিনচালিত বোট। ১১ বর্গকিলোমিটার আয়তনের লেক কেবল সুভা ছড়ায়। পাহাড়ের কোল ঘেঁষে স্বচ্ছ পানিতে তাকাতেই দেখা যায় নীলাকাশ। পূর্ব-দিগন্তের সারি পাহাড়ের বুক চিরে যেতে যেতে একসময় হারিয়ে যেতেও মন চাইবে কল্পনায়। সঙ্গের সাথী পাশে নিয়ে গেলে তো কথাই নেই।

পরিবার-পরিজন নিয়ে গেলেও কোন বারণ নেই। কিছুদূরেই দেখা যাবে পাহাড়ের কান্না। অঝোরে কাঁদছে। অথচ তার কান্না দেখে নিজের কাঁদতে ইচ্ছে হবে না। উপরন্তু কান্নার জলে গা ভাসাতে মন চাইবে। তারও পূর্বে যেখানে লেকের শেষ প্রান্ত, সেখানেও বইছে ঝর্ণাধারা। মাঝপথে থেমে গিয়ে পাহাড়চূড়ায় উঠে নিজেকে গর্ববোধ করতেও পারেন। কেননা, সেখান থেকে দেখা মিলবে দূরের পথ।

এক কিলোমিটার দূরের মহাসড়ক, তার অর্ধেকের রেলপথ, ট্রেনের ছুটে চলা, কৃষাণীর ধান মাড়ানো, কৃষকের ফলন, কিশোরের দুরন্ত পনা; সব-সবই দেখা মিলবে চূড়া থেকে। তবে সাবধান! বৃষ্টিভেজা পাহাড়ের মাটি পিছলে ছিটকে পড়লে সত্যিকারের চোখের জলে ভাসতে হবে। কি নীল, কি সবুজ, সব রঙের ছড়াছড়ি যেন ঢেলে দেওয়া হয়েছে মহামায়ার প্রকৃতিতে। এর সঙ্গে মিশতে গিয়ে মন এতটাই বদলে যাবে, যেন মন বারবার ঘুরে আসতে চাইবে ফেলে আসা স্মৃতিতে।

নান্দনিক সৌন্দয্যের আরেক নাম খৈয়াছড়া ঝর্ণা:
প্রকৃতির নান্দনিক তুলিতে আঁকা সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হচ্ছে দেশের ভ্রমণ পিয়াসী মানুষ। অনেকে রাতের বেলায় চাঁদের আলোয় ঝরনার অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে পাহাড়ের পাদদেশে তাবু টাঙ্গিয়ে অবস্থান করছে। প্রকৃতির অপরূপ সৃষ্টি সেতুবন্ধন করে, সবুজের চাদরে ঢাকা বনানী রূপের আগুন ঝরায়, যেখানে প্রকৃতি খেলা করে আপন মনে, ঝুম ঝুম শব্দে বয়ে চলা ঝরনাধারায় গা ভিজিয়ে মানুষ যান্ত্রিক জীবনের অবসাদ থেকে নিজেকে ধুয়ে সজীব করে তুলছে খৈয়াছরা ঝরনায়।

গ্রামের সবুজ শ্যামল আঁকা বাঁকা মেঠো পথ পেরিয়ে শরীরটা একটু হলেও ভিজিয়ে নেয়া যায় নিঃসন্দেহে। আট স্তরের ঝরনা দেখতে দেশি বিদেশি পর্যটকের ভিড় পড়েছে। দেশের অন্যতম বড় প্রাকৃতিক ঝরনাটি দেখতে প্রতিদিন ছুটে যাচ্ছে হাজার হাজার দেশি বিদেশি পর্যটক। উপজেলার খৈয়াছরা ইউনিয়নের বড়তাকিয়া বাজারের উত্তর পাশে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ৪.২ কিলোমিটার পূর্বে ঝরনার অবস্থান।

এরমধ্যে ১ কিলোমিটার পথ গাড়িতে:
Mirsarai Projoton Photo (2) Mirsarai Projoton Photo (6)যাওয়ার পর বাকি পথ যেতে হবে পায়ে হেঁটে। বাঁশের সাকো, ক্ষেতের আইল, আঁকাবাকা পাহাড়ী পথ, ছরা, অন্তত ৪টি পাহাড় পেরিয়ে যখন ঝরনার স্বচ্ছ জলে যখন গা ভিজাবে পর্যটক তখন মনে হবে পথের এই দুরত্ব খুব সামান্য। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে ব্যাপক প্রচারের ফলে প্রতিদিন ভিড় করছেন পর্যটকরা।

ছুটির দিনগুলোতে পর্যটকরা সবুজে সমারোহ পাহাড় আর ঝর্ণা দেখতে যেখানে প্রকৃতির অপরুপ সৃষ্টি সেতুবন্ধন করে। পাহাড়ের সবুজ রং আর ঝর্নার স্বচ্ছ জল মিশে মিশে একাকার হয়েছে মিরসরাইয়ের প্রাকৃতিক জলপ্রপাত খৈয়াছরা ঝর্নায়। প্রকৃতির নান্দনিক তুলিতে আঁকা এ ছবি দেখে মুগ্ধ হচ্ছে দেশের ভ্রমন পিয়াসী মানুষ। যারা একবার খৈয়াছরা ঝর্না দেখেছেন তাদের মনে একটিই প্রশ্ন উঁকি দেয় বার বার ‘দেশে এমন সৌন্দর্যের ঝর্না দ্বিতীয়টি আর আছে কিনা’। এমনই এক নান্দনিক ঝর্না পর্যটকদের আকর্ষন করছে যা খৈয়াছরা ঝর্না নামেই পরিচিত। খৈয়াছরা এলাকার পাহাড়ে অবস্থান বলে এর নামকরণ করা হয়েছে খৈয়াছরা ঝর্না।
মুহুরীর চরে জল আর রোদের খেলা :
প্রকৃতির আরেক নাম মুহুরী। যেখানে আছে আলো-আঁধারির খেলা। আছে জীবন-জীবিকার নানা চিত্র। মুহুরীর চর, যেন মিরসরাইয়ের ভেতর আরেক মিরসরাই। অন্তহীন চরে ছোট ছোট প্রকল্প। এপারে মিরসরাই, ওপারে সোনাগাজী। ৪০ দরজার রেগুলেটরের শোঁ শোঁ আওয়াজ শোনা যায় দূর থেকে। পশ্চিমে মৎস্য আহরণের খেলা, আর পূর্বে মন কাড়ানিয়া প্রকৃতি। নুয়ে পড়া মনোবল জেগে উঠবে পূবের জেগে ওঠা চরে। ডিঙি নৌকায় ভর করে কিছুদূর যেতেই দেখা মিলবে সাদা সাদা বক।

এখানে ভিড় করে সুদূরের বিদেশী পাখি, অতিথি পাখি বলেই অত্যধিক পরিচিত এরা। চিকচিকে বালিতে জল আর রোদের খেলা চলে সারাক্ষণ। সামনে পেছনে, ডানে-বামে কেবল সৌন্দর্য আর সুন্দরের ছড়াছড়ি। এ অবস্থায় মন আঁধারে ঢেকে যেতে পারে, যদি ক্যামেরা সঙ্গে না থাকে। মুহুরীর প্রকৃতির ছোঁয়ায় উদ্ভাসিত স্মৃতিরা যেন হারিয়ে যাওয়ার নয়। এসব ক্যামেরার ফিল্মে আটকে রাখার মত হাজার বছর ধরে।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের (পুরাতন) জোরারগঞ্জ বাজারে নেমে ধরতে হবে সংযোগ সড়কের পথ। জোরারগন্জ-মুহুরী প্রজেক্ট সড়ক নামে এ সড়কে দেখা মিলবে হরেক রকমের মোটরযানের। ভাঙাচোরা আঁকাবাঁকা আধাপাকা সড়ক পাড়ি দিতে হবে প্রায় আট কিলোমিটার। এরপর মুহুরী প্রকল্পের বাঁধ। যেতে যেতে দুই কিলোমিটার পরই দেখা মিলবে আসল সৌন্দর্য।
বাওয়াছড়ার অপরূপ দৃশ্য পর্যটকদের নজর কাড়ে:
উপজেলার ওয়াহেদপুর ইউনিয়নের মধ্যম ওয়াহেদপুর বাওয়াছড়া পাহাড়ীয়া এলাকায় যুগ যুগ ধরে ঝর্ণা প্রবাহিত হচ্ছে। সবুজ শ্যামল পাহাড়ীয়া লেকে পাখিদের কলতানে আবাল, বৃদ্ধ, বণিতা সকলের প্রান জুড়িয়ে যাবে। প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এ স্থানে ছুটে আসে শত শত পর্যটক। এবার আরো পর্যটক বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন বাওয়াছড়া প্রকল্পের উদ্যোক্তা চেয়ারম্যান সালাহ উদ্দিন সেলিম।
লোকেশন : ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বড় কমলদহ বাজার থেকে থেকে ২ কিলোমিটার পূর্ব দিকে এটি অবস্থিত।
পর্যটন স্পটগুলোতে নিরাপত্তার বিষয়ে মিরসরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইমতিয়াজ এম এ কে ভূইয়া এবং জোরারগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) লিয়াকত আলী জানান, আসন্ন ঈদে মিরসরাইয়ের পর্যটন স্পট ছাড়াও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হবে।

আরটিএমনিউজ২৪ডটকম/এন এ কে

Logo-orginal