, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

admin admin

তাকওয়া অর্জন ও মর্যাদাপূর্ণ মাস- মাহে রমজান

প্রকাশ: ২০১৫-০৭-০৬ ১৭:৫৮:৪৮ || আপডেট: ২০১৫-০৭-০৬ ১৭:৫৮:৪৮

Spread the love

তাকওয়া অর্জন ও মর্যাদাপূর্ণ মাস- মাহে রমজান
Ramadan (Takwa)তাকওযা অর্জনঃ আসমান ও জমিনের একমাত্র অধিপতি একমাত্র মালিক, রাজাধিরাজ, পরম করুনাময় আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের পক্ষ থেকে মহা-পবিত্রতম মাস মাহে রমজান, মুসলমানদের জন্য সবচেয়ে বড় রহমত, করুণা, দয়া, ভিক্ষা। কারন আল্লাহ চান না তার প্রিয় বান্দারা জাহান্নামের কঠিন আযাবে পতিত হোক। তাই মানুষের কর্মের অর্থাৎ তার আমলের পরিশুদ্ধতার জন্য বছরের একটি মাসকে বোনাস হিসাবে নির্ধারন করেছেন। যাতে করে তার প্রিয় বান্দারা পূর্বের সকল প্রকার পাপ সমুহকে ধুয়ে মুছে দিয়ে আল্লাহভীতি অর্জনের মাধ্যমে জান্নাতের অমিয় সূধা পান করতে পারে। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন , হে ঈমানদারগণেরা! তোমাদের জন্য রোজাকে ফরজ করা হয়েছে যেমনিভাবে ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর। যাতে তোমরা তাকওয়া (আল্লাহভীতি) অর্জন করতে পারো। (সুরা বাকারা-১৮৩)
এই আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন রোজা পালনের মাধ্যমে তাকওয়া তথা আল্লাহভীতি অর্জন করার প্রতি ইঙ্গিত করেছেন। কারন দুনিয়া ও আখেরাতের সমস্ত কল্যান ও অকল্যান, সফলতা ও ব্যর্থতা তাকয়ার স্তম্বের উপর অবস্থিত। তাহলে তাকওয়া কি ? তাকওয়ার আভিধানিক অর্থ হল- সতর্কতা, সচেতনতা, আত্মরক্ষা করা, দায়িত্ববান হওয়া, কর্তব্যপরায়ণ হওয়া, বিচক্ষনতা অর্জন, নিজেকে সকল প্রকার অনিষ্ট থেকে রক্ষায় প্রতিটি মুহুর্তে সতর্ক থাকা।
ইংরেজী ভাষায়- To guard, take good care, to preserve, to protect, to be aware, defense, preventive etc. এক বাক্যে এভাবে বলা যায়- আল্লাহর ভয়ে আল্লাহর নিষিদ্ধ করা সকল প্রকার পাপ কাজ থেকে আত্মরক্ষার জন্যে সবসময় সতর্ক ও সচেতন থাকা এবং পূর্ণ আন্তরিক অনুভূতি, সচেতনতা, আগ্রহ, সক্রিয়তা, পেরেশানি ও ভলোবাসার সাথে আল্লাহর আদেশের প্রতি কর্তব্য পালন করা, যাতে করে নিজেকে আল্লাহর কঠিন পাকড়াও তথা পরকালীন আযাব ও অনিষ্ট থেকে রক্ষা করা। অর্থাৎ- ১. আল্লাহর নির্দেশিত দায়িত্ব পালনে যতœবান ও সতর্ক থাকা এবং অন্যের কাছে এই দাওয়াত পৌছে দেওয়া। ২. আল্লাহর আদেশের প্রতি কর্তব্যপরায়ণ হওয়া। ৩. আল্লাহর পাকড়াও থেকে মুক্তির চেতানা ও তাড়না জাগ্রত থাকা। ৪. হারামের ভয়ে হারামের শেষ সীমানা পর্যন্ত পৌঁছা থেকে বিরত থাকা। ৫. সীমালংঘনের ভয়ে সীমানায় বিচরণ করা থেকে বিরত থাকা। ৬. শিরকের ভয়ে শিরকের সীমানা থেকে নিজেকে আত্মরক্ষা করা।
আর এই তাকওয়ার মূলভিত্তি হলো মজবুত ঈমান। পুরো কোরআনই হলো তাকওয়া। পবিত্র কোরআনে তাকওয়ার উপর সবচেয়ে বেশি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। ঝিনুকের খোলসের ভিতর যেমন মুক্তা রয়েছে তেমনি তাকওয়ার ভিতরে ঈমানের সকল শাখা অবস্থিত। অর্থাৎ বীজ এবং বৃক্ষের মত। তাই পবিত্র রমজান মোবারকে তাকওয়ার অর্জনের কথা বলা হয়েছে। আর এই তাকওয়ার অর্জনের মূল উপাদান হলো কোরআন। “আমি এই কোরআনে মানুষের জন্য সব ধরনের দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করেছি, যাতে তারা উপদেশ গ্রহন করে। আর আরবী ভাষায় কোরআন একেবারে সহজ (বক্রতামুক্ত) করে দিয়েছি, যাতে করে তারা কোরআনের মাধ্যমে তাকওয়া অর্জন করতে পারে”। (আল যুমার-২৭,২৮) অন্য এক আয়াতে কোরআনকে স্বারক বার্তা বলা হয়েছে। “আর এই কোরআন মুত্তাকীদের জন্য একটি স্বারক বার্তা”(আল হাক্কাহ-৪৮)।

আর আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের অন্যতম মাধ্যম হলো তাকওয়া অর্জন করা। কোরআনে বিভিন্ন জায়গায় আল্লাহ মানুষকে তাকওয়ার ব্যাপারে নানাভাবে বুঝিয়েছেন। “তোমাদের মাঝে আল্লাহর কাছে সে-ই সর্বধিক মার্যাদাবান যে সবচেয়ে অধিক তাকওয়ার অধিকারী। আর আল্লাহই ভালোভাবে জানেন এবং খবর রাখেন (কে বেশি তাকওয়াবান)”। (সুরা হুজরাত-১৩) তাকওয়া অর্জন করতে পারলে আমাদের চলার পথের, আমাদের রিযিকের ব্যবস্থার জিম্মাদার আল্লাহ নিজেই হয়ে যাবেন। কারন তাকওয়া পরিপূর্ন ভাবে অর্জন করা মানেই হলো আল্লাহর জন্যে হওয়া । আর যে আল্লাহর জন্য হয়ে যায় আল্লাহ তার জন্য হয়ে যায়। “যে কেউ আল্লাহকে ভয় করবে এবং আল্লাহর প্রতি কর্তব্যপরায়ণ হবে, আল্লাহ তার জন্য সুপথ বের করে দিবেন এবং এমন জায়গা থেকে রিযিকের ব্যবস্থা করে দিবেন, যা সে কল্পনাও করেনি”(আল কোরআন)।
পৃথিবীতে যত নবী রাসুল এসেছিলেন প্রত্যেকেই আল্লাহ ভীতি তথা তাকওয়া অর্জনের দাওয়াত পেশ করেছিলেন। যেমন হযরত নুহ, হযরত সালেহ, হযরত লুত হযরত, শোআইব (আঃ) তার জাতীদেরকে এই বলে দাওয়াত দিয়েছিলেন “আমি তোমাদের জন্য বিশ্বস্ত বার্তা বাহক। অতএব, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং আমার আনুগত্য কর। আমি তোমাদের কাছে কোন প্রকার প্রতিদান চায় না, আমার প্রতিদানতো বিশ্ব প্রতিপালকই দিবেন”। (সুরা আশ-শুআরা-১৭-১৯)
এই আয়াতগুলো পবিত্র কোরানের সুরা আশ-শো’আরাতে চার চারটি বার উল্লেখ করেছেন। প্রত্যেক বার উল্লেখ করার আগে এক একটি জাতীর প্রতি তাদের নবীদের তাকওয়ার দাওয়াত প্রত্যাখানের পর তাদেরকে যে শাস্তি দিয়েছেন সে ঘঁটনাগুলো উল্লেখ করেছেন। তাই আমাদেরকে তাকওয়া অর্জনের প্রতি অবশ্যই আন্তরিক হতে হবে। তা নাহলে আমাদের অবস্থাও পূর্ববর্তী ধ্বংস প্রাপ্ত জাতীদের মতো হয়ে যাবে। তাকওয়ার বিষয়েও অনুরুপ সর্বশেষ নবী রাসুল (সাঃ)ও একই ভাবে দাওয়াত দিয়েছিলেন হে ঈমানদারগণেরা- তোমরা সবর অবলম্বন করো,অটল থাকো, ঔক্যবদ্ধ থাকো, এবং আল্লাহকে ভয় করো,অবশ্যই তোমরা সফলতা অর্জন করবে।” সুরা-আল ইমরান,২০০) হে ঈমানদারগণেরা-তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং রাসুলের উপর ঈমান আন” (সুরা হদীদ-২৮)।
অতএব মহান আল্লাহর সান্নিধ্য লাভ করতে হলে তাকওয়া অর্জনের কোন বিকল্প নেই। তাই আসুন তাকওয়ার এই মাসে আমরা পরিপূর্ণ তাকওয়া অর্জনের চেষ্টা করি এবং সেই পুঁজি দিয়ে সারাটি বৎসর জীবন পরিচালনা করার মাধ্যমে যাতে করে পরকালীন কল্যান মুক্তি লাভ করতে পারি- আমীন।
ইব্রাহীম খলিল (সাংবাদিক ও ইসলামী গবেষক)
একে

Logo-orginal