, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

Avatar Arfat

পদত্যাগ করতে চেয়েছিলেন মির্জা আব্বাস !

প্রকাশ: ২০১৫-০৭-২৭ ১১:৫১:৩৩ || আপডেট: ২০১৫-০৭-২৭ ১১:৫১:৩৩

Spread the love

Miza Abbas

আরটিএমনিউজ২৪ডটকম, ঢাকা:  পদত্যাগ করতে চেয়েছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও ঢাকা মহানগর কমিটির আহ্বায়ক মির্জা আব্বাস। মহাজোট সরকারের আমলে আন্দোলন-সংগ্রামে নিষ্ক্রিয় ভূমিকা নিয়ে নানামুখী সমালোচনার মুখে পড়েছিল সাদেক হোসেন খোকার নেতৃত্বাধীন মহানগর কমিটি।

 

এ ব্যর্থতার ব্যাপারে তখন সবচেয়ে বেশি মুখর ছিলেন মির্জা আব্বাস। নানা ঘটনার পর অবশেষে তাকে আহ্বায়ক করেই নতুন কমিটি দেয় বিএনপি। কিন্তু সে কমিটি ঘোষণার পরও অসন্তুষ্ট মির্জা আব্বাস পদত্যাগের চিন্তা করেছিলেন। শেষে দলের কয়েকজন সিনিয়র নেতার পরামর্শে সে চিন্তা থেকে সরে আসেন তিনি।

 

সম্প্রতি এক ঘরোয়া আড্ডায় বিএনপিতে তার ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত দুই নেতা বিষয়টি প্রকাশ করেছেন। তবে পদত্যাগ না করলেও তার নিষ্ক্রিয়তা এবং অসহযোগিতার কারণে ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি মহানগর বিএনপি। এক মাসের মধ্যে ওয়ার্ড কমিটি পুনর্গঠনের নির্দেশনা বাস্তবায়ন হয়নি এক বছরেও। দৃশ্যত তেমন কোন উদ্যোগও নেই। উল্টো নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে মহানগর নেতৃত্ব।

 

যার কারণে মহানগর নেতারা ন্যূনতম ভূমিকা রাখতে পারেনি চলতি বছরের শুরুতে খালেদা জিয়া ঘোষিত টানা অবরোধ আন্দোলনে। মামলার অজুহাতে আত্মগোপন কৌশলে নিরাপদেই রয়েছেন তিনি। গুঞ্জন রয়েছে, ব্যাংকসহ নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের আনুষ্ঠানিক বৈঠকেও অংশ নেন তিনি।

 

চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের টানা অবরোধ আন্দোলনে মহানগর নেতৃত্বের নিষ্ক্রিয় ভূমিকা, উচ্চ আদালতে জামিন না পেলেও গ্রেপ্তার এড়ানো এবং সরকারের সঙ্গে সমঝোতার ব্যাপারে রাজনৈতিক মহলে গুঞ্জনের প্রেক্ষিতে ওই আড্ডায় তার ঘনিষ্ঠ দুই নেতা এসব তথ্য জানান।

বিএনপিতে মির্জা আব্বাসের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত নেতাদের একজন জানান, মহানগর কমিটি ঘোষণার পরদিন আহ্বায়কের দায়িত্ব পাওয়ায় মির্জা আব্বাসকে অভিনন্দন জানাতে তার বাসায় যান। সেখানে গিয়ে দেখেন মির্জা আব্বাসের বৈঠক ঘরে বসে আছেন সদস্য সচিবের দায়িত্বপ্রাপ্ত হাবিব-উন নবী খান সোহেল। সেখানে তার সঙ্গে অপেক্ষা করছেন দলের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মীও।

কথা বলে তিনি জানতে পারেন- সোহেল দীর্ঘ কয়েকঘণ্টা ধরে অপেক্ষা করছেন। সোহেলসহ অন্যদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় শেষে তিনি বাড়ির দোতলায় মির্জা আব্বাসের কাছে যান। সেখানে গিয়ে দেখেন গম্ভীর হয়ে বসে আছেন মির্জা আব্বাস। মহানগরের দায়িত্ব পাওয়ায় অভিনন্দন জানালেও মির্জা আব্বাস ছিলেন নীরব। এক পর্যায়ে বিএনপির ওই নেতা মির্জা আব্বাসকে জানান, বৈঠক ঘরে দীর্ঘক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছেন সোহেল।
তিনি কেন বৈঠক ঘরে গিয়ে অভিনন্দন জানাতে আসা নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলছেন না? তার এমন প্রশ্নের জবাবে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন মির্জা আব্বাস। স্বগোক্তি করে বলতে থাকেন, ‘আমি আর দল করবো না। আমি পদত্যাগ করবো। আমার পক্ষে আর এ দল করা সম্ভব না। আমি বৈঠক ঘরে যাবে না। তাদের চলে যেতে বলো’।
পরিস্থিতি বিবেচনা করে ওই নেতা মির্জা আব্বাসকে বোঝানোর চেষ্টা করেন- এই কমিটি দিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। দলের নীতিনির্ধারক একজন নেতা হিসেবে চেয়ারপারসন যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তার প্রতি সম্মান দেখানো উচিত। এ সময় মির্জা আব্বাস বলেন, ‘কাল রাতে আমি চেয়ারপারসনের সঙ্গে কথা বলে এসেছি।
কিন্তু কিভাবে সে সিদ্ধান্ত পাল্টে গেল! এটা কোনদিন চেয়ারপারসনের সিদ্ধান্ত হতে পারে না’। বিএনপির ওই নেতা জানান, এ সময় মির্জা আব্বাস স্বগোক্তি করে বলেন- ‘আমি চেয়ারপারসনকে বলেছি, সোহেল আমার সন্তানের বয়সী। আমার রানিংমেট হিসেবে তাকে মানায় না। সোহেলের কমিটিতে আহ্বায়ক হিসেবে কাজ করা আমার জন্য কঠিন।
আমি বেশিদিন এ পদে থাকতে চাই না। তাই একজন সিনিয়র নেতাকে সদস্য সচিব করেন। সোহেলকে যুগ্ম আহ্বায়ক বা সদস্য হিসেবে রাখেন। পরে পুনর্গঠিত কমিটিতে সোহেলকে দায়িত্ব দেন। আমার যুক্তি শুনে চেয়ারপারসন রাজি হয়েছিলেন’। বিএনপির ওই নেতা জানান, মির্জা আব্বাস রাগে গরগর করতে করতে বলেন, ‘সকালে ঘুম থেকে ওঠেই দেখলাম কমিটির চেহারা পাল্টে গেছে। রাতের মধ্যেই কিভাবে এতবড় পরিবর্তন হলো! এখানে বিশেষ কেউ ষড়যন্ত্র করেছেন। তারা চায় না, আমি রাজনীতি করি। আমার পক্ষে আর বিএনপি করা সম্ভব নয়। আমি পদত্যাগ করবো।’
বিএনপির ওই নেতা জানান, মির্জা আব্বাসের কথার যুক্তি আছে। যুবদলে তার রানিংমেট ছিল গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। যিনি বর্তমানে স্থায়ী কমিটির সদস্য এবং মহানগর কমিটির প্রথম সদস্য। ফলে মির্জা আব্বাসের সঙ্গে সোহেলের রাজনৈতিক জুটি তেমন মানানসই হয় না। চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুল আউয়াল মিন্টুকে সদস্য সচিব হিসেবে দেখতে চেয়েছিলেন মির্জা আব্বাস। পরে পুনর্গঠনকৃত কমিটিতে মিন্টুর সঙ্গে সদস্য সচিব হিসেবে সোহেল থাকতে পারে।
বিএনপির সেই নেতা জানান, অনেকক্ষণ সান্ত্বনা দেয়ার পর শান্ত হন মির্জা আব্বাস। এ সময় ফোনেও কয়েকজনের সঙ্গে তার কথা হয়।
এদিকে দীর্ঘ তিন ঘণ্টা পর বৈঠকঘরে গিয়ে সোহেলের সঙ্গে কথা বললেও অপেক্ষাকৃত তরুণ এ নেতাকে নিজের রানিংমেট হিসেবে মেনে নিতে পারেননি মির্জা আব্বাস। যার প্রেক্ষিতে কমিটি ঘোষণার পরদিন থেকেই ঘটতে থাকে একের পর এক বিব্রতকর ঘটনা। যার বেশির ভাগের নেপথ্যে রয়েছে মির্জা আব্বাসের ভূমিকা ও নেতিবাচক মনোভাব।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে যে কোন রাজনৈতিক দলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইউনিট হচ্ছে ঢাকা মহানগর। সাংগঠনিক ভিত মজবুত ও আন্দোলনের স্বার্থে দলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এ শাখার ইউনিটগুলোকে নতুন করে সাজানোর পরিকল্পনা করেছিল বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব।
মহানগর নেতৃত্বের কোন্দল মেটাতে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছিল হাইপ্রোফাইল নেতাদের সমন্বয়ে।
কিন্তু পরিস্থিতি এমন হয়েছে যে, দু’চারটি ওয়ার্ড-থানা কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেয়া হলেও সেখানে প্রতিরোধের মুখে পড়তে হয়েছে সংশ্লিষ্টদের।
মহানগর বিএনপির একাধিক নেতাকর্মীর অভিযোগ, কমিটি ঘোষণার পর থেকেই সোহেলকে ওই পদ থেকে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন মির্জা আব্বাস ও তার অনুসারীরা। মহানগরীর কোন থানা বা ওয়ার্ড কমিটির তালিকা সোহেলকে দেয়া হয়নি। দাপ্তরিক কোন সুযোগ-সুবিধা যাতে না পান সেজন্যও সংশ্লিষ্টদের কড়া নির্দেশ দেন তিনি। এমনকি মহানগরের যেসব নেতাকর্মী সদস্য সচিব সোহেলের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছিলেন তাদেরও হুমকি-ধামকি দিয়ে নিষ্ক্রিয় করেন মির্জা আব্বাস।
তারা বলেন, কমিটি ঘোষণার পর থেকে আহ্বায়ক হিসেবে নিজে কোন কাজ করছেন না মির্জা আব্বাস। তার নেতিবাচক মনোভাব ও অনুসারীদের প্রতিবন্ধকতা এবং অসহযোগিতার কারণে কাজ করতে পারেননি অন্যরাও।
এতে বিএনপির মহানগর কমিটিকে ঘিরে নেতাকর্মীদের যে উচ্ছ্বাস তৈরি হয়েছিল তা দ্রুত মিইয়ে যায়। দলীয় সূত্র জানায়, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ৬৯তম জন্মদিন উদযাপন কর্মসূচি ছিল মহানগর বিএনপির প্রথম কর্মসূচি। সেদিন দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় নয়াপল্টনে খালেদা জিয়ার জন্মদিনের কেক কাটার কর্মসূচি পালন করতে পারেনি তারা।
চলতি বছরের প্রথম সপ্তাহেই সরকার বিরোধী ‘অল আউট’ আন্দোলনে গিয়েছিল বিএনপি। তার আগে বিভিন্ন সভা-সমাবেশে সরকারের বিরুদ্ধে জ্বালাময়ী বক্তব্য দিয়েছেন মির্জা আব্বাসসহ অন্যরা। আর অনির্দিষ্টকালের অবরোধ ও দফায় দফায় হরতাল দিয়ে সারা দেশে তুঙ্গে নিয়েছিল আন্দোলন। কিন্তু অতীতের ঢাকা মহানগর কমিটির মতো চূড়ান্তভাবে ব্যর্থ হয় নতুন কমিটিও।
দলের ভেতরে তখন এ প্রশ্ন জোরালো হয়ে উঠে যে, কি লাভ হলো নতুন কমিটি দিয়ে? আন্দোলনে মহানগরীর সদস্য সচিব সোহেলকে কয়েকটি ঝটিকা মিছিলে নেতৃত্ব দিতে দেখা গেলেও পুরো সময় অন্তরালে ছিলেন আহ্বায়ক মির্জা আব্বাস। প্রশ্ন দেখা দেয়, আন্দোলনের সময় কোথায় ছিলেন আব্বাস-সোহেল? যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে দাবি করা হয়, মামলার কারণে আত্মগোপনে গেছেন দু’জনই।
মহানগর বিএনপির নেতাকর্মীরা অভিযোগ করেন, টানা অবরোধ চলাকালে দিক নির্দেশনা চেয়ে যোগাযোগ করলেও মহানগরের শীর্ষ নেতৃত্বের তরফে কোন সাড়া মেলেনি। রহস্যজনক আত্মগোপনে থাকা আহ্বায়কের কারণে মহানগর নেতাকর্মীরাও হরতালে-অবরোধে মাঠে নামেননি। অন্যদিকে প্রতিবন্ধকতা ও মামলা জটিলতার কারণে আত্মগোপনে যান সদস্য সচিব সোহেল। এতে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে ক্ষোভ ও হতাশা।
মহানগর নেতারা জানান, মির্জা আব্বাসের নেতৃত্বে কমিটি গঠনের পর সবাই ভেবেছিল একটি পরিবর্তন আসতে পারে। কিন্তু তিনি প্রথমেই ইঙ্গিত দেন সাদেক হোসেন খোকার কমিটির লোকজনকে সরাতে হবে। তার এমন মনোভাবের কারণে সাবেক কমিটির নেতারা নিষ্ক্রিয় হন এই যুক্তিতে যে, তাদের হয়তো আর কমিটিতে রাখা হবে না। তাই ঝুঁকি নিয়ে কি লাভ? অন্যদিকে দীর্ঘদিনের বঞ্চিতরাও পদায়নের ব্যাপারে আশ্বস্ত হতে পারেনি। ফলে দু‘পক্ষই ছিল কার্যত নিষ্ক্রিয়।
বিএনপি’র চেয়ারপারসন যখন অবরুদ্ধ, শীর্ষ নেতারা যখন কারাভোগ করছেন, কেউ কেউ হামলা-মামলার শিকার হয়েও যখন সরব; তখন কোথাও দেখা যায়নি মির্জা আব্বাসকে। না রাজপথে, না ঘরোয়া বৈঠকে। এমনকি দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়া পরিবারের ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যুতেও দেখা মিলেনি তার। আন্দোলনের পক্ষে একটি বিবৃতিও দেননি তিনি।
সক্রিয় নেতাকর্মীরাও এসময় তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে সক্ষম হননি। আন্দোলনের এক পর্যায়ে রাজনৈতিক মহলে গুঞ্জন ছড়ায় তিনি সরকারের সঙ্গে সমঝোতা করে চলছেন। সরকারি দলের লোকজনের আশ্রয়েই নিরাপদে দিন কাটাচ্ছেন তিনি।
এমন পরিস্থিতিতে সরকার ঢাকা সিটি নির্বাচনের উদ্যোগ নিলে সেখানে অংশ নেয়ার ভেতর দিয়ে অনানুষ্ঠানিকভাবে আন্দোলন থেকে সরে আসে বিএনপি। কিন্তু সবাইকে অবাক করে ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র পদে নির্বাচনে অংশ নেন অবিভক্ত সিটির সাবেক মেয়র মির্জা আব্বাস।
এ সময় তিনি উচ্চ আদালতে হাজির হয়ে জামিনের জন্য আবেদন জানালে দফায় দফায় তার শুনানি হয়। শেষ পর্যন্ত জামিন পাননি। গ্রেপ্তারও হননি। এর মাধ্যমে তার ব্যাপারে গুঞ্জনটি দৃঢ়তা পায়। নির্বাচনের পরও আত্মগোপন কৌশলে নিরাপদেই রয়েছেন তিনি।
-মানবজমিন ।
আরটিএমনিউজ২৪ডটকম/ এ এইচ বি

Logo-orginal