, মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪

Avatar n_carcellar1957

সদস্য সংখ্যাই বেড়েছে, কাজে নয়

প্রকাশ: ২০১৫-০৭-১৪ ২৩:৫৩:৪৭ || আপডেট: ২০১৫-০৭-১৪ ২৩:৫৩:৪৭

Spread the love

cabinet-reshafle02

আরটিএমনিউজ২৪ডটকম, ঢাকা : আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদে মন্ত্রিসভায় দ্বিতীয় দফায় রদবদল হলো। এ নিয়ে গত কয়েকদিন থেকে নানা জল্পনা কল্পনা চললেও শেষ পর্যন্ত কোনো চমক দেখা গেল না। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের মন্ত্রিসভা শুরু কলেবরেই বাড়লো। শুধু তা-ই নয় কারো কারো পদোন্নতি রীতিমতো হতাশ করেছে সাধারণ মানুষকে। দেশের বিশিষ্টজনেরা বলছেন, মন্ত্রিসভায় গুণগত কোনো পরিবর্তন হয়নি। এতে করে সরকারি অর্থেরই কেবল অপচয় হবে!

 

 

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মন্ত্রিসভায় দ্বিতীয় দফা রদবদল করা হয়েছে। এতে তিনজন নতুন মুখ যুক্ত হয়েছেন। এদের মধ্যে শিল্পপতি নূরুল ইসলাম বিএসপি পূর্ণমন্ত্রী হয়েছেন। অপর দুইজন প্রতিমন্ত্রীরে দায়িত্ব পেয়েছেন।

 

 

নূরুল ইসলাম বিএসসি পেয়েছেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব। তারানা হালিম ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী, আর নুরুজ্জামান আহমেদ খাদ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হয়েছেন।

 

 

 

অপরদিকে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্ত প্রতিমন্ত্রী মন্ত্রী ইয়াফেস ওসমানকে পূর্ণ মন্ত্রী করা হয়েছে। তাদের দপ্তর বদল হয়নি। যদিও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভূমিকা নিয়ে এ সরকারের শুরু থেকেই বিতর্ক ছিল।

 

 

এলজিআরডি মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের মন্ত্রণালয় হারানোর পর মঙ্গলবারের মন্ত্রিসভার রদবদল নিয়ে নিয়ে মানুষের বেশ কৌতূহল ছিল।

 

 

এই রদবদল নিয়ে দুর্নীতি বিরোধী আন্তর্জাতিক সংগঠন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) প্রধান ড. ইফতেখারুজ্জামান  বলেন, ‘মন্ত্রিসভায় এই রদবদলের ফলে কেবল সদস্য সংখ্যাই বেড়েছে। গুণগত কোনো পরিবর্তন আসেনি।’

 

 

 

তিনি বলেন, ‘মন্ত্রিসভার এই রদবদলে আমি গুণগত কোনো পরিবর্তন লক্ষ্য করছি না। আমার কাছে মনে হয়েছে এটা একটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। যেসব নতুন মুখ মন্ত্রিসভায় এসেছেন তাদের যোগ দেয়ার ফলে মন্ত্রিসভার গুণগত কোনো পরিবর্তন হয়নি। যাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। বা তারা নিজেরাও নৈতিকভাবে দায় স্বীকার করে পদত্যাগ করেননি। এই অন্তর্ভূক্তির ফলে কেবল মন্ত্রিসভার আকার বেড়েছে।’

 

 

 

বেসরকারি সংগঠন সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সাধারণ সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার মনে করছেন এটা শুধু মন্ত্রিসভার রদবদল না; গত এক সপ্তাহ ধরে সৈয়দ আশরাফকে নিয়ে যে বিতর্ক চলছিল তার একটা ধারাবাহিক প্রক্রিয়া।।

 

 

 

তবে যারা বিতর্কিত তাদের ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়া হলো না বলে মনে করছেন তিনি। তিনি বলেন, ‘যদিও নতুনদের মধ্যে ভালো লোক আছেন। অবস্থাদৃষ্টে প্রতীয়মান হচ্ছে, খারাপ মুদ্রা যেমন ভালো মুদ্রাকে বাজার থেকে তাড়িয়ে দেয়, তেমনি খারাপ রাজনীতিকরাও ভালো রাজনীতিকদের রাজনীতির মাঠ থেকে বিতারিত করছেন। দুর্নীতি ও দুর্বৃত্তায়িত রাজনীতিতে ভালো লোক ঠিক থাকতে পারে না। এটার পরিণতি কখনো মঙ্গলকর নয়।’

 

 

জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমান নতুনদের ব্যাপারে হতাশা প্রকাশ করেছেন। যাদের পদোন্নতি দেয়া হয়েছে তাদের কর্মকাণ্ড এ মূল্যায়য়ের যোগ্য নয় বলে মনে করেন তিনি।

 

 

অধ্যাপক শামসুর রেহমান বলেন, ‘চমক দেয়ার মতো কোন বিষয় নেই মন্ত্রিসভার রদবদলে। একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীকে মন্ত্রিসভায় স্থান দেয়া হয়েছে। এর ফলে ব্যবসায়িক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে তিনি নিরপেক্ষ থাকবেন কি না তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। দুইজন প্রতিমন্ত্রীকে পূর্ণ মন্ত্রী করা হয়েছে। তাদের একজনের এমন কোনো পারফরমেন্স আমার চোখে পড়েনি যে তাকে পূর্ণ মন্ত্রী করা যেতে পারে। একজন প্রতিমন্ত্রীর পারিবারিক ইতিহাস সমৃদ্ধ নয়।’

 

 

সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে মন্ত্রিসভার রদবদল কতোটা ভূমিকা রাখবে সে প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ এখন নিম্নমধ্য আয়ের দেশ। তাই ক্যাবিনেটে দক্ষ, স্বচ্ছ ও ইমেজ বাড়াতে সক্ষম এমন লোকের অন্তর্ভূক্তির প্রয়োজন ছিল। নতুন যাদের অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে তাদের অর্জিত সুনাম আমাকে আশাবাদী করেনি।

 

আবার শুনছি ঈদের পর রিশাফল (পুনঃরদবদল) হবে। যদি সেটা হয় আমার পরামর্শ থাকবে বিতর্কিতদের বাদ দিয়ে যাদের স্বচ্ছ ভাবমূর্তি রয়েছে তাদের নিয়ে আসা। বিশ্বায়নের যুগে তাল মিলিয়ে চলতে পারে এমন লোকদের আনতে হবে মন্ত্রিসভায়। যাদের মন্ত্রিসভায় নেয়া হলো তারা সংসদে এমন কোনো দক্ষতার ছাপ রাখতে পারেনি যে তাদেরকে কেবিনেটে আনতে হবে। এটা সরকারি অর্থের অপচয় মাত্র।’

 

 

 

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির একতরফা নির্বাচনে জিতে দ্বিতীয় মেয়াদে সরকার গঠন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ১২ জানুয়ারি শপথ নিয়েছিল ওই মন্ত্রিসভা।

 

 

 

গত ২৬ ফেব্রুয়ারি মন্ত্রিসভায় প্রথম দফায় রদবদল করা হয়। তখন এ এইচ মাহমুদ আলীকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী এবং নজরুল ইসলামকে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী করা হয়।

 

 

 

গত দেড় বছরে আর কোনো পরিবর্তন আনেননি শেখ হাসিনা। গত ৯ জুলাই দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে সরিয়ে দিয়ে দপ্তরবিহীন মন্ত্রী করেন প্রধানমন্ত্রী। স্থানীয় সরকারের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেনকে। তিনি প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন। এখন অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে সে মন্ত্রণালয়ও চালাবেন তিনি।

 

 

 

শেখ হাসিনার বর্তমান মন্ত্রিসভায় ২৯ জন মন্ত্রী, ১৮ জন প্রতিমন্ত্রী এবং দুইজন উপমন্ত্রী ছিলেন। নতুন তিনজনকে নিয়ে মন্ত্রীর সংখ্যা ৩২ জনে দাঁড়ালো।

 

 

আরটিএমনিউজ২৪ডটকম/এন এ কে

Logo-orginal