Arfat
প্রকাশ: ২০১৫-০৭-২৪ ১৫:২৬:৩২ || আপডেট: ২০১৫-০৭-২৪ ১৬:০৫:০৪
আরটিএমনিউজ২৪ডটকম, চট্টগ্রাম: রাজধানীর কলাবাগানে কোয়ালিটি আইসক্রিমের সাবজিরো ব্র্যান্ডের ব্যবস্থাপক ওবায়দুল হক হত্যার রহস্য উদঘাটন করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা ও অপরাধ তথ্য বিভাগ (ডিবি)। চাঞ্চল্যকর এই হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে নিহতের স্ত্রী তাসমিন খদিজা সোনিয়াসহ (২৬) তিনজনকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে।
গত বুধবার মধ্যরাতে চট্টগ্রামের ‘ট্রিটমেন্ট’ হাসপাতালের সামনে থেকে সোনিয়াকে গ্রেপ্তার করে ডিবি। সম্প্রতি গ্রেপ্তারের পর মাহমু
দুল হাসান মিঠু ও তানভীর আহমেদ নামে দুই যুবক আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।
নিহত ওবায়দুল প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী নূরুল ইসলাম বিএসসির ভাগ্নে।
ডিবির তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, স্ত্রীর পরকীয়ার জের ধরেই হত্যা করা হয় ওবায়দুলকে (৩৬)। হত্যার পর ঘটনাটিকে ছিনতাই বলে চালিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে খুনিরা। এ জন্য ওবায়দুলকে গুলি করে হত্যার পর তার ল্যাপটপ ও মোবাইল ফোনও নিয়ে যায় তারা।
তবে ডিবির তদন্ত, সিসিটিভির ফুটেজ বিশ্লেষণ এবং দুই আসামির জবানবন্দিতে প্রকৃত রহস্য বেরিয়ে এসেছে। এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে পাঁচজন জড়িত। ওবায়দুলের স্ত্রীর কথিত প্রেমিক সাইফুল্লাহ ওরফে রুবেল ও রুবেলের ভাগ্নে পাপ্পু এখনো পলাতক।
ডিডির যুগ্ম-কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘প্রথম থেকে সন্দেহ হচ্ছিল ঘটনাটি নিছক ছিনতাই নয়। কারণ ছিনতাইকারী সেজে যারা ঘটনাস্থলে ওবায়দুলের রিকশার গতিরোধ করেছিল, চাওয়ার পরপরই তার সঙ্গে থাকা সবকিছু দিয়ে দেয়া হয়।
সাধারণত ছিনতাইকারীরা নির্বিঘ্নে টার্গেট করা ব্যক্তির কাছ থেকে জিনিসপত্র পাওয়ার পর গুলি করে না। বেশকিছু ক্লু ও সিসি টিভির ফুটেজ পাওয়ার পর জানা যায়- স্ত্রীর পরোকিয়া কারণেই হত্যা করা হয় ওবায়দুলকে।’
ডিবির উপ-কমিশনার (ডিসি-দক্ষিণ) মাশরুকুর রহমান খালেদ বলেন, ‘বুধবার মধ্যরাতে সোনিয়াকে চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ এলাকার একটি হাসপাতালের সামনে থেকে গ্রেপ্তার করে বৃহস্পতিবার বিকেলে ঢাকায় আনা হয়েছে।
রিমান্ড চেয়ে আজ শুক্রবার তাকে আদালতে হাজির করা হবে। হত্যাকাণ্ডে সোনিয়াসহ পাঁচজনের সম্পৃক্ত থাকার তথ্য পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে তিনজন গ্রেপ্তার হয়েছে। সোনিয়ার প্রেমিক রুবেল ও তার ভাগ্নে পাপ্পুকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।’
ডিবি সূত্র জানায়, বুধবার মধ্য রাতে তাকে চট্টগ্রামের ‘ট্রিটমেন্ট’ হাসপাতালের সামনে থেকে ডিবি সোনিয়াকে গ্রেপ্তার করে। ওই হাসপাতালে তিনি চিকিৎসাধীন ছিলেন। অভিযানের বিষয়টি টের পেয়ে গভীর রাতেই ছাড়পত্র নিয়ে সিএনজি অটোরিকশাযোগে হাসপাতাল থেকে পালানোর চেষ্টা করেন সোনিয়া। স্বামী খুন হওয়ার কয়েক দিন পরই চট্টগ্রামে বাবার বাড়িতে চলে যান সোনিয়া। জ্বর হওয়ার কারণে গত ২১ জুলাই পাঁচলাইশে ট্রিটমেন্ট হাসপাতালে ভর্তি হন সোনিয়া।
ডিবির ধারণা, দুই আসামির জবানবন্দিতে তার সম্পৃক্ততার বিষয়টি জানাজানির পর ‘অসুস্থ’ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন সোনিয়া।
সম্প্রতি মিঠু ও তানভীর নামে দুই আসামিকে শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করে ডিবি। তারা আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়ে সোনিয়ার সম্পৃক্ততা জানায়। তারা দু’জন সম্পর্কে রুবেলের ভাগ্নে। জবানবন্দির তথ্য অনুযায়ী ঘটনার রাতে ওবায়দুল হত্যা মিশনে মিঠু, রুবেল, তানভীর ও তার আরেক ভাগ্নে পাপ্পু উপস্থিত ছিল।
দুই আসামি জবানবন্দিতে জানায়, ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সময় চার বছর আগে চট্টগ্রামের তাসমিন খদিজা সোনিয়া ও চাঁদপুরের সাইফুল্লাহ ওরফে রুবেলের প্রেম হয়।
আট মাস আগে পারিবারিকভাবে সোনিয়ার সঙ্গে বিয়ে হয় ওবায়দুল হকের। তবে বিয়ের পরও সাবেক প্রেমিক রুবেলের সঙ্গে গোপনে যোগাযোগ রাখতেন সোনিয়া। তার সঙ্গে ঘর বাঁধতেই মূলত ওবায়দুলকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেয়ার পরিকল্পনা করেন তিনি।
এ জন্য পিস্তল কিনতে রুবেলের হাতে সোনিয়া তুলে দেন ৬০ হাজার টাকা। এরপর রুবেল অস্ত্র কিনে তার তিন ভাগ্নেকে দিয়ে পরিকল্পিতভাবে ওবায়দুলকে হত্যা করায়।
সূত্র জানায়, সানোয়ারা গ্রুপের প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি হলো কোয়ালিটি আইসক্রিম। রাজধানীর পান্থপথে বসুন্ধরা সিটি শপিংমলের সপ্তম তলায় কোয়ালিটির একটি আইসক্রিম পার্লার রয়েছে। গত ২৬ জুন রাতে সেখানকার কর্মস্থল থেকে রিকশায় বাসায় ফেরার পথে কলাবাগানের সার্কুলার রোডে দুর্বৃত্তদের গুলিতে খুন হন ওবায়দুল। পরে সিসি টিভি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, তিন যুবক ওবায়দুলের কাছে থাকা ল্যাপটপ ও মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিয়ে মাথায় অস্ত্র ঠেকিয়ে তাকে গুলি করে।
বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়, ‘ছিনতাইকারীদের হাতে নুরুল ইসলাম বিএসসির ভাগ্নে খুন’। ভিডিও ফুটেজসহ বিভিন্ন সূত্র ধরে তদন্ত করছিল পুলিশ। এই হত্যাকাণ্ডের পর ওবায়দুলের মামা চট্টগ্রামের সংসদ সদস্য নূরুল ইসলাম বিএসসি প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। এর ফলে মামলার তদন্তে আরো গতি বাড়ে বলে জানায় সূত্র। নিহত ওবায়দুল তার স্ত্রীকে নিয়ে সার্কুলার রোডের ৫৭ নম্বর বাসার দোতলায় থাকতেন।
আরটিএমনিউজ২৪ডটকম/ এ এইচ বি