, বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪

admin admin

ছাত্রলীগ নেতা আরজুর ক্রসফায়ারে সরকারে অস্থিরতা

প্রকাশ: ২০১৫-০৮-২৫ ০৯:১৭:৪৮ || আপডেট: ২০১৫-০৮-২৫ ০৯:১৭:৪৮

Spread the love

আরজু
আরটিএমনিউজ২৪ডটকম, ঢাকাঃ হাজারীবাগ থানা ছাত্রলীগের নেতা আরজু মিয়া র‌্যাবের ক্রসফায়ারে নিহত হওয়ার ঘটনায় সরকারের ভেতরে ও বাইরে তোলপাড় চলছে। সরকারি দল ছাড়াও সমাজের বিভিন্ন পর্যায় থেকে এ ঘটনার তদন্ত ও বিচার দাবি করা হচ্ছে। ঘটনার পর পরিস্থিতি মোকাবেলায় ব্যর্থতার অভিযোগে হাজারীবাগ থানার ওসি মইনুল ইসলামকে প্রত্যাহার করা হয়। রোববার প্রত্যাহার করা হয় র‌্যাব-২-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল মাসুদ রানাকে। এছাড়া আরজুর পরিবারের পক্ষ থেকে আদালতে পিটিশন মামলা করা হয়েছে।

এদিকে আইনশৃংখলা বাহিনীর একটি সংস্থার পক্ষ থেকে সরকারের উচ্চপর্যায়ে পাঠানো এক গোপনীয় প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, আরজু মূলত একজন পেশাদার সন্ত্রাসী ছিলেন। তিনি ২২ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তরিকুল ইসলামের সেকেন্ড ইন কমান্ড হিসেবে কাজ করতেন। কাউন্সিলরের ছত্রছায়ায় থাকার সুবাদে হাজারীবাগ এলাকার মাদক ব্যবসা ছিল আরজুর নিয়ন্ত্রণে। এলাকার বহু সাধারণ মানুষও তার কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছিলেন। আরজু ছাত্রলীগের নেতা পরিচয় দিয়ে এলাকায় বেপরোয়া চাঁদাবাজিও করতেন। এতে আরও বলা হয়, আরজু অদৃশ্য ক্ষমতার দাপটে থানা পুলিশকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে চলতেন।

৯ আগস্ট তিনি হাজারীবাগ থানার এএসআই শাহজাহানের ওপর চড়াও হন। সেদিন এএসআই শাহজাহানের নেতৃত্বে পুলিশের একটি টহল দল আইনশৃংখলা রক্ষার স্বার্থে গভীর রাত পর্যন্ত দোকান খোলা না রাখার জন্য ব্যবসায়ীদের অনুরোধ করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে আরজুর লোকজন পুলিশকে উদ্দেশ করে গালাগালি করে। এমন কি পুলিশকে শাসিয়ে বলা হয়, ‘এলাকায় পুলিশ আসতে হলে তাদের অনুমতি নিয়ে আসতে হবে।’ একপর্যায়ে পুলিশের টহল দলটিকে আটকে রেখে মারধরও করা হয়। এ ঘটনায় হাজারীবাগ থানার কনস্টেবল বিল্লাল গুরুতর আহত হন। পরে তাকে রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এছাড়া ওই টহল দলে থাকা দু’জন আনসার সদস্যও আহত হন।

আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি উচ্চপর্যায়ের সূত্র যুগান্তরকে জানান, ২০১৩ সালের ৪ মে হাজারীবাগ থানা ছাত্রলীগের নেতা জামালের ওপর হামলা চালান আরজু। ছাত্রলীগের কমিটি গঠন নিয়ে আরজুর সঙ্গে জামালের মতবিরোধ ছিল। এরই জের ধরে আরজু তার লোকজন নিয়ে জামালকে চিরতরে সরিয়ে দেয়ার পরিকল্পনা করে। ঘটনার দিন বেলা সোয়া ৩টার সময় জামালকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কোপানো হয়। একপর্যায়ে মৃত্যু নিশ্চিত হয়েছে ভেবে জামালকে রাস্তায় ফেলে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়। কিন্তু ভাগ্যের জোরে জামাল বেঁচে যান। পথচারীরা তাকে মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়।

এ ঘটনার পর জামালের মা নাসিমা আক্তার থানায় অভিযোগ নিয়ে যান। কিন্তু থানা পুলিশ আরজুর বিরুদ্ধে মামলা নিতে গড়িমসি করতে শুরু করে। এ সময় মরণাপন্ন ছেলেকে হাসপাতালের বিছানায় রেখে জামালের মা মামলা নেয়ার জন্য থানার কর্মকর্তাদের হাতে-পায়েও ধরেন। কিন্তু থানা পুলিশ তাকে দফায় দফায় ঘোরাতে থাকে। এভাবে কয়েকদিন ঘোরানোর পর ১২ মে সকাল ৮টায় জামালের মাকে থানা থেকে ডেকে পাঠানো হয়।

তিনি সকাল ৮টায় থানায় গেলে তাকে রাত ১২টা পর্যন্ত বসিয়ে রাখা হয়। একপর্যায়ে পরদিন আবারও সকাল ৮টায় তাকে থানায় আসতে বলে পুলিশ। তিনি সকালে থানায় গেলে ফের রাত ৮টায় তাকে আসতে বলা হয়। পুলিশের কথামতো রাত ৮টায় থানায় উপস্থিত হন জামালের মা। কিন্তু এবার পুলিশ উল্টো সুর ধরে। থানা পুলিশের পক্ষ থেকে তাকে বোঝানো হয়, ‘মামলা করে কি করবেন এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের ধরে আপস করে ফেলেন।’ কিন্তু জামালের মা আপস করেননি। তিনি আদালতে মামলা করেন। মামলা করার সময় আরজুর ভয়ে থানা পুলিশের এ আচরণের কথা এজাহারেও উল্লেখ করেন তিনি। পরে আদালতের নির্দেশে মামলা রেকর্ড করা হলেও আরজুর বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয়ার সাহস পায়নি পুলিশ। আরজুকে বাদ দিয়ে অভিযোগপত্র জমা দেয়া হয়।

তবে এ ঘটনার বিচার পাওয়া তো দূরের কথা প্রতিবাদ করার সাহসও হারিয়ে ফেলে জামালের পরিবার। কারণ আদালতে মামলা করার কিছুদিন পরই জামালকে ইয়াবাসহ গ্রেফতার দেখিয়ে চালান দেয় পুলিশ। এ ঘটনার পর থেকে আজ পর্যন্ত জামাল কারাগারেই বন্দি।

এ ঘটনার বিষয়ে বক্তব্য জানতে জামালের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা এ নিয়ে কোনো বক্তব্য দিতে রাজি হননি। বরং বলেন, ভাই অনেক ভয়ে আছি। ওদের বিরুদ্ধে কথা বললে আমাদের মেরে ফেলবে।

প্রসঙ্গত, সর্বশেষ ১৭ আগস্ট হাজারীবাগ এলাকায় নির্মমভাবে খুন হন ১৭ বছরের কিশোর রাজা। অভিযোগ উঠেছে, আরজুর বাসা থেকে ল্যাপটপ ও মোবাইল চুরির অপবাদ দিয়ে রাজাকে ধরে আনে আরজুর লোকজন। এরপর রাজাকে নিমর্মভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এ হত্যাকাণ্ডের পর রাজার বোন রেশমা আক্তার শাবানা বাদী হয়ে আরজুর বিরুদ্ধে থানায় হত্যা মামলা করেন। এরই একপর্যায়ে র‌্যাবের হাতে আটক হন আরজু। পরে তিনি র‌্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন বলে র‌্যাবের পক্ষ থেকে বলা হয়। তবে আরজুর বড় ভাই মাসুদ রানা অভিযোগ করেন, র‌্যাব তার ভাইকে ধরে নিয়ে গিয়ে গুলি করে হত্যা করেছে। তার দাবি, আরজু অপরাধী ছিলেন না। ঘটনার তদন্ত ও বিচার দাবি করে সংবাদ সম্মেলন করা হয়।

আরজুর ক্রসফায়ার নিয়ে প্রকাশ্যে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন ওই এলাকার সরকারদলীয় সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস। (সুত্রঃ যুগান্তর)

আরটিএমনিউজ২৪ডটকম/ একে

Logo-orginal