, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

Avatar n_carcellar1957

নিরাপত্তাহীনতায় নারীরাঃ সাত মাসে পাঁচ শতাধিক ধর্ষণ

প্রকাশ: ২০১৫-০৮-২৩ ১৬:৫৪:৩৯ || আপডেট: ২০১৫-০৮-২৩ ১৬:৫৫:১৫

Spread the love

নিজস্ব প্রতিবেদক,

dorson

আরটিএমনিউজ২৪ডটকম, ঢাকা:সম্প্রতি আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে ধর্ষণের মতো ঘটনা। অপরাধীদের বিশেষ টার্গেটে পরিণত হচ্ছে গৃহকর্মী, শিশুসহ স্কুল-কলেজে পড়ুয়া তরুনী-কিশোরী শিক্ষার্থীরাও। কর্মক্ষেত্র ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন নারীরা। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রায় খবর আসে ধর্ষণ, ধর্ষণের চেষ্টা, শ্লীনতাহানি ও ইভটিজিংয়ের শিকারের ঘটনার।

 

 

গত ৭ মাসে ঢাকাসহ সারাদেশে ধর্ষণ, গণধর্ষণ, ধর্ষণের চেষ্টার ঘটনা ঘটেছে প্রায় ৪ শতাধিক। এসব ঘটনায় আত্মহত্যার ঘটনাও ঘটেছে। থানা পুলিশ ও মানবাধিকার সংগঠন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

 

জানা গেছে, এসব ঘটনায় মামলা হলেও মামলার তদন্ত ও চূড়ান্ত রায় প্রকাশে ধীর গতি থাকায় অপরাধীরা  পার পেয়ে শাস্তি থেকে রয়ে যাচ্ছে বহাল তবিয়তে। নারী অধিকার সংশ্লিষ্ট মানবাধিকার সংগঠকদের অভিযোগ- আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিস্পৃহতা ও নিষ্ক্রিয়তার সুযোগেই একের পর এক নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটে চলেছে। অধিকাংশ ঘটনায়ই প্রকৃত অপরাধীরা ধরা না পড়ায় শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি উদ্বিগ্ন অভিভাবকরাও।

 

 

কিছু দিন আগে মানসিকভাবে লাঞ্ছনা ও নির্যাতনের ঘটনার পরিমাণ বেশি লক্ষ্য করা গেলেও সম্প্রতি শারীরিক লাঞ্ছনা ও ধর্ষণের ঘটনা বেড়েছে উদ্বেগজনক হারে। শুধুমাত্র ঢাকায় নয়, সারাদেশেই এটা অনেকটা সামাজিক ব্যাধি হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মনে করছে মানবাধিকার সংগঠনগুলো।

 

মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) -এর দেয়া এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী- গত জানুয়ারি থেকে জুন মাস পর্যন্ত ৭ মাসে সারাদেশে ধর্ষণ, গণধর্ষণ, ধর্ষণের চেষ্টার ঘটনা ঘটেছে ৩৭৮টি।

 

 

এর মধ্যে সরাসরি ধর্ষণের ঘটনা রয়েছে- ২০৬টি। ৬ বছরের নিচের বয়সী বাচ্চাদের ধর্ষণের ঘটনা ২২টি, ৭ বছর থেকে ১৮ বছরের নিচের বয়সী ৭৮ কিশোরী ধর্ষণের শিকার হয়েছে। গণধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ১১১টি। এক্ষেত্রে ৭ বছর থেকে ১৮ বছরের নিচের বয়সী শিশু ও কিশোরী গণধর্ষণের শিকার হয়েছে ২৪ জন। কারা কিভাবে ধর্ষণ করেছে তা পরবর্তীতে নিশ্চিত হওয়া যায়নি -এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে ৯টি। এসব ঘটনায় শিশু-কিশোরী ও নারীসহ আত্মহত্যা করেছে ২৯ জন। এছাড়া ধর্ষণের চেষ্টার ঘটনা ঘটেছে ৫২টি।

 

 

এর মধ্যে ২০টি ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের হয়েছে। ধর্ষণের ঘটনায় ১০৯ এবং গণধর্ষণের ঘটনায় ৬৫ মামলা হয়েছে।

 

ডিএমপি সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীতেও আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে ধর্ষণ, ধর্ষণের চেষ্টা, শ্লীনতাহানি ও ইভটিজিংয়ের ঘটনা। সর্বশেষ গত এক সপ্তাহে রাজধানীতে কমপক্ষে ২০ জন নারী ও কিশোরী ধর্ষণ ও ধর্ষণের চেষ্টার শিকার হয়েছেন।

 

 

গত মঙ্গলবার রাজধানীতে কিশোরী, দুই শিশু, ভবঘুরে নারী ও গৃহবধূকে ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। গুলশানের এক ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের এক ছাত্রীকে অপহরণের পর ধর্ষণের অভিযোগে মামলা হয়েছে। পল্লবীতে গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন ভবঘুরে নারী। চকবাজারে দেবরের হাতে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন এক গৃহবধূ। সূত্রাপুরের কলতা বাজারে ষষ্ঠ শ্রেণির এক ছাত্রী ধর্ষিত হয়। ধোলাইপাড়ে সাত বছর বয়সী শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এদের সবাইকে বুধবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) ভর্তি করা হয়েছে।

 

 

গত বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) বন্ধুর সঙ্গে ঢাকায় বেড়াতে এসে তেজগাঁওয়ে এক কিশোরী ধর্ষণের শিকার হয়। তেজগাঁও থানার কর্তব্যরত কর্মকর্তা উপ পরিদর্শক (এসআই) মো. খোকন মিয়া বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে তেজগাঁও রেললাইন এলাকায় কে বা কারা ওই কিশোরীকে ধর্ষণ করে ফেলে রেখে যায় বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। পরে রাত সাড়ে ১১টার দিকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) ভর্তি করা হয়।

 

 

এর আগে রাজধানীর মগবাজারে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি কোচিং করতে আসা এক তরুণী (১৮) ধর্ষণের শিকার হন। তার নিজ গ্রামের দুই বন্ধু মিলে মগবাজারের একটি হোটেলে নিয়ে ওই তরুণীকে ধর্ষণ করে বলে তরুণীর পরিবারের অভিযোগ।

 

 

 

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু  বলেন, প্রতিকারহীনতার সংস্কৃতি কিংবা লাল ফিতার দৌরাত্ম্য বৃদ্ধির কারণে ধর্ষণ ও ধর্ষণ চেষ্টার মতো ঘটনা বাড়ছে। আইনি প্রক্রিয়া ও প্রশাসনিক কাঠামোগত দুর্বলতার কারণে অপরাধীরা পার পেয়ে যাচ্ছে।

 
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) নির্বাহী পরিচালক সুলতানা কামাল  বলেন, নারী ধর্ষণ, ধর্ষণের চেষ্টা, শ্লীনতাহানি ও ইভটিজিংয়ের ঘটনা খুবই উদ্বেগজনক। রাষ্ট্রযন্ত্রের দুর্বলতা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিষ্ক্রিয়তার সুযোগেই একের পর এক এসব ঘটে চলছে।

 

 

 

আরটিএমনিউজ২৪ডটকম/এন এ কে

Logo-orginal