, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

Avatar n_carcellar1957

লাশের সঙ্গে তিন যুগের বসবাস

প্রকাশ: ২০১৫-০৮-১০ ১২:৪৮:৫৮ || আপডেট: ২০১৫-০৮-১০ ১২:৪৮:৫৮

Spread the love

Lash20150810111137

আরটিএমনিউজ২৪ডটকম,ঢাকা:   ঢাকা মেডিকেল কলেজের (ঢামেক) মর্গ সহকারী সিকান্দার আলী। বয়স পঞ্চাশ ছুঁই ছুঁই। কিন্তু সুঠাম দেহের অধিকারি সুদর্শন সিকান্দার আলীকে দেখলে বয়স অনেক কম মনে হয়। হরহামেশাই তাকে তরুণ যুবক বলে অনেকেই ভুল করে বসেন।

 

সিকান্দার আলীর অর্ধশতাব্দীর জীবনের সিংহভাগ সময় স্ত্রী, সন্তান ও পরিবারের চেয়ে মর্গে লাশের সঙ্গে বেশি কেটেছে। গত ৩৫ বছর ধরে মর্গ সহকারী হিসেবে ময়নাতদন্ত কাজে ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসকদের নিরলসভাবে সহায়তা করে যাচ্ছেন।

 

এমবিবিএস পাস করা কিংবা উচ্চ ডিগ্রিপ্রাপ্ত চিকিৎসক না হয়েও তিনি সিনিয়র জুনিয়র ফরেনসিক মেডিসিন চিকিৎসকদের কাছ থেকে ‘ময়নাতদন্ত বিশেষজ্ঞ’ খেতাব পেয়েছেন!

 

তার পেশাগত কাজের বর্ণনা শুনলে যে কেউ আঁতকে উঠবেন। সিকান্দার তার কর্মজীবনে একাই লক্ষাধিক লাশ কাটাছেঁড়া করেছেন। ময়নাতদন্ত কাজে সিদ্ধহস্ত।  যে কোন লাশের ময়নাতদন্ত শুরুর কিছুক্ষণের মধ্যেই তিনি খুবই অনায়াসে খুন, আত্মহত্যা, বিষপান কিংবা অন্য কি কারণে মৃত্যু হয়েছে তা নিশ্চিত ও নির্ভূলভাবে বলে দিতে পারেন।

 

প্রচার বিমুখ সিকান্দার আলী মিডিয়ার কাছে নিজেকে প্রকাশ করতে একেবারেই নারাজ। সাক্ষাৎকার নিতে গেলেও অনেকটা ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, পৃথিবীর বিভিন্ন মানুষ বিভিন্ন পেশার সাথে জড়িত। অন্য আর দশটা পেশার মতো লাশ কাটা আমার পেশা। ময়নাতদন্ত কাজে চিকিৎসকদের সহায়তা করি। তার প্রশ্ন কেন তাকে নিয়ে মানুষের এত আগ্রহ। তিনি লাশ কাটাকে নিছক পেশা হিসেবে দেখার অনুরোধ জানান।

পূর্ব পরিচয়ের সূত্র ধরে অনেক পীড়াপীড়ির পর  এ প্রতিবেদককে সুদীর্ঘ কর্মজীবনের ইতিহাস তুলে ধরেন সিকান্দার আলী।

ঢাকা মেডিকেল কলেজের প্রবীন চিকিৎসকদের কাছে সিকান্দার আলী রমেশ চন্দ্র দাস নামে অধিক পরিচিত। মাত্র কয়েক বছর আগে ধর্মান্তরিত হয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে নাম বদলে সিকান্দার আলী রেখেছেন।

এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে সিকান্দার আলী জানান, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল-২ এর বহুতল ভবনটি যে স্থানটিতে গড়ে উঠেছে সেখানে এক সময় তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের কোয়ার্টার ছিল। সেই কোয়ার্টারে তার জম্ম।

বাবা ও চাচার চাকরির সুবাদে ঢামেকের চৌহদ্দিতে তার ছেলেবেলা কেটেছে। বাবা শংকর লাল দাস এনাটমি বিভাগে ও  চাচা রবি চন্দ্র দাস ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগে চাকরি করতেন। বাসার পাশেই বাবা চাচার কর্মস্থল হওয়ায় খুব ছোট বয়সেই মর্গে আসা যাওয়া ছিল। চাচাকে লাশ কাটতে দেখতেন, অনেক সময় কাটা লাশ দেখে ভয়ে বাসায় দৌড়ে চলে যেতেন।

সিকান্দার জানান, ১৫ বছর বয়সে চাচার মৃত্যু হলে সিকান্দার আলী মর্গ সহকারি হিসেবে যোগদান করেন।  প্রথমদিকে হাতুড়ি, বাটাল, ছুরি ও চাকু দিয়ে কিভাবে লাশের মাথা, বুক ও পেটসহ শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ কাটতে হয় তা জানতেন না।

ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের সিনিয়র শিক্ষকরা তাকে হাতে ধরে কাজ শিখিয়েছেন।  চার বছর পর থেকে নিজে লাশ কাটতে শুরু করেন। ফরেনসিক মেডিসিন  বিভাগের সাবেক চিকিৎসক আইয়ুবউল্ল্যাহ, নাসিমুল ইসলাম, মিজানুর রহমান, হাবিবুজ্জামান চৌধুরী, আনোয়ার, জাহিদুল করিমের নাম শ্রদ্ধার সাথে উল্লেখ করে বিনয়ী সিকান্দার বলেন, দেশ বিদেশে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এ সকল চিকিৎসকের সান্নিধ্যে থেকে গত ৩৫ বছরে অনেক কিছু শিখেছেন।

হাজার হাজার লাশের ময়নাতদন্ত কাজে সহায়তা করেছেন। জীবনে মোট কত লাশ কেটেছেন তার সঠিক হিসাব না রাখলেও সংখ্যা এক লাখের কম হবে না বলে তিনি জানান।

কোন লাশের ময়নাতদন্ত করতে গিয়ে তার মনে দাগ কেটেছে কিনা জানতে চাইলে সিকান্দার  আলী বলেন, সব লাশের ময়নাতদন্ত করতেই খারাপ লাগে তবে শিশুদের লাশ (পরীক্ষায় ফেল ও প্রেমঘটিত কারণে আত্মহত্যা, গাড়ি চাপায় মৃত্যু, মুক্তিপনের জন্য অপহরণের পর হত্যা) এর ময়নাতদন্ত করতে গিয়ে বুক কেঁপে উঠে বলে জানান।

সুদীর্ঘ ৩৫ বছরের চাকরি  জীবনে বহু ট্রাজেডী ঘটনায় গার্মেন্টেসে অগ্নিকাণ্ড, লঞ্চডুবি, বিডিআর বিদ্রোহে নৃশংস হত্যাকাণ্ডের শিকার সেনা কর্মকর্তাদের লাশের ময়নাতদন্ত করেছেন বলে তিনি জানান।

সিকান্দার আলী জানান, স্ত্রী, দুই মেয়ে ও এক ছেলে নিয়ে তার সংসার জীবন। বড় মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন, অন্যরা পড়াশুনা করছে।

মাদকের ভয়াল থাবা যুব সমাজকে ধ্বংস করে দিচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাকে নিয়ে লিখে কী হবে, যারা মাদক ব্যবসা ও মাদক গ্রহণের সাথে জড়িত তাদের নিয়ে লিখুন। একটি সংসার একজন মাদকসেবীর কারণে ধ্বংস হয়ে যায় বলে মন্তব্য করে মাদক ব্যবসা বন্ধে সরকারের  শীর্ষ কর্তা ব্যক্তিদের সদয় দৃষ্টি ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা  গ্রহণের অনুরোধ জানান সিকান্দার আলী।

সূত্রঃজাগো নিউজ

 

 

আরটিএমনিউজ২৪ডটকম/ এন এ কে

Logo-orginal