, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

admin admin

২১ বছর প্রবাসে কাটানো এক সৌদি প্রবাসীর দু:খ

প্রকাশ: ২০১৫-০৮-২৫ ১৮:২৮:৩৬ || আপডেট: ২০১৫-০৮-২৫ ১৮:২৮:৩৬

Spread the love

image
মধ্যপ্রাচ্যে প্রতিনিধি, আরটিএমনিউজ২৪ডটকম, ডেস্কঃ এক প্রবাসী ভাইয়ের দুঃখে ভরা জীবন কাহিনী পড়ূন ভাল লাগবে। যেখানে আপনারও শিক্ষার অনেক কিছু আছে।

আজ সকাল সাড়ে ১১ টা বাজে সৌদি আরবে আমি রাস্তার পাসে গাড়ী পার্কিং করে মায়ের সাথে ফোনে কথা বলছিলাম এমন সময় দেখলাম পাশে একজন অনেকক্ষন আকাশের দিকে তাকিয়ে আছেন। মনে মনে ভাবলাম লোকটার কি হয়েছে যে এভাবে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। কিছু ক্ষন পর আবার তাকালাম, লোকটা আগের মতই আছে। ফোনের লাইন কেটে লোকটার কাছে গেলাম,

আমি। জিজ্ঞাসা করলাম দেশী ভাই নাকি?
লোকটি বললেন “হ্যা”
বললাম, ভাই অনেকক্ষন ধরে দেখলাম আপনে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছেন যে?
“এইতো ভাই হিসাব করছিলাম এই প্রবাসে জীবনে কি পেলাম আর কি হারালাম আর ২১ বছর প্রবাস জীবনে দুঃখগুলো ভাবছিলাম।

আমি ২১ বছরে কথা শুনে খুব কৌতুহলী হয়ে বললাম ভাই, আমাকে বলবেন আপনের দুঃখ গুলো আমার খুব শুনতে ইচ্ছে করছে”।

ভাই ২১ বছরে দুঃখগুলো মাত্র কয়েক মিনিটে শুনে কি করবেন?

বললাম, ভাই আমি হয়ত পারবনা আপনের দুঃখগুলো তাড়িয়ে দিতে, কিন্ত এমনওতো হতে পারে যে আপনের দুঃখগুলো থেকে কিছু শিখতে পারি কারণ আমিও তো একজন প্রবাসী।

লোকটি তখন বলা শুরু করলো। তাহলে শুনেন,

“আমরা ছিলাম ৬ ভাইবোন আমি ছিলাম সবার বড়। বাবা ছিলেন কৃষক নিজেগো জমি চাষ করতাম বাবার সাথে আমি কাজ করতাম। বাপ বেটা মিলে সংসারে অভাব দূর করতে পারতাম না। ছোট ভাইবোনদের পড়ালেখা করত ওদের কেউকে ক্ষেতে খামারে নিতাম না যদি পড়ালেখার ক্ষতি হয় .এভাবে দিনের পর দিন কষ্ট করতে লাগলাম কিন্তূ কষ্টের দিন শেষ হয় না.একদিন কিছু জায়গা বিক্রি করে পারি দিলাম ইরাক।

সেখানে চার বছর ছিলাম তারপর বাড়িতে আসলাম। এর মাঝে সংসারে অভাব কিছুটা দূর হলো ভাইবোনদের পড়ালেখা ভালো চলছিল। কিছুদিন যাবার পর দেখালাম আবার ও পুরনো দুঃখটা বাড়ির চারপাশে ঘুরছে। আবার পারি দিলাম সিঙ্গাপুর.সিঙ্গাপুর এসে মাত্র কয়েক মাস থাকার পর পারমিট বাতিল করে দিল। দেশে গিয়ে পরলাম মহাবিপদে যা টাকা ছিল সব শেষ .মা বাবা বললেন বিয়ে করতে ,আমি বিয়ে করেনি কারণ ভাইবোন গুলো পড়ালেখা শেষ করে চাকরি পাক আবার বোনদের বিয়ে দেওয়া হয় নাই।

কয়েক বছর পর আবার আসলাম সৌদি আরবে……এর মাঝে কেটে গেল অনেক বছর .ছুটিতে বাড়ি গেলাম বিয়ে করব বলে কিন্ত বিয়ে করতে গিয়ে পরলাম অনেক জামেলায়.বয়স বেশি আর অশিক্ষিত বলে ভাল বাড়িতে বিয়ে করতে পারলাম না.শেষে কোনো উপায় না পেয়ে গরিবের এক মেয়েকে বিয়ে করলাম তা আবার আমার থেকে অর্ধেক বয়সের.জীবনে খুঁজে পেলাম সুখের ঠিকানা.ভালো কাটছিল ছুটির দিনগুলো মনে হইছিল পৃথিবীতে আমি একজন সুখী মানুষ.ছুটি শেষ করে আবার চলে আসলাম সৌদি আরবে এসে কোনো কিছু ভালো লাগত না।

রাতে ঘুম আসেনা কাজে মন বসে না.বাড়ি যাওয়ার জন্য মন ছটফট করত.মনে মনে ভাবলাম ভাইবোনদের বিয়ে হয়ছে ভালো চাকরি হয়ছে ভাইদের .এখন আমার দায়িত্ব শেষ এই ভেবে একেবারে বাড়ি চলে গেলাম. আর এটাই ছিল আমার জীবনে সবচেয়ে বড় ভুল এখন সেই ভুলের মাসুল দিতেছি.কিছু দিন যাওয়ার পর দেখালাম চেনা মানুষ গুলো অচেনা হয়ে গেল.যে মা বাবা ভাই বোনদের জন্য এত কষ্ট করলাম তারা যেন আমাকে চিনে না কারণ আমি কেন একেবারে চলে এলাম দেশে।

আর বুঝতে পারলাম এতদিন ওরা আমাকে ভালোবাসেনি , ভালবাসতো আমার টাকাকে.আর মা বাবা আমার কথা শুনতনা ভাইদের কথা শুনত কারণ ওরা মা বাবাকে বেশি যত্ন করত বলে.মা আর আমার বৌয়ের সাথে প্রতিদিন লেগে থাকত জগরা .মা বলত আমি বৌয়ের কথা শুনি আর বউ বলত মার কথা.এদিকে বৌয়ের সাথে আমার সম্পর্ক ভালো না.বৌয়ের যেটা ভালো লাগে আবার আমার সেটা ভালো লাগে না।

বৌয়ের কোনো দোষ নাই.আসলে ভাই জীবনে যৌবনের তরীটা যে সময় ভাসানো দরকার ছিল সেই সময় ভাসায়নি.অসময়ে ভাসায়ছি ঠিকই কিন্ত যৌবনের তরীটা আজ বাইতে পারি না.মাঝে মাঝে এত কষ্ট লাগে যাদের জন্য এত কষ্ট করলাম আজ তারা কত সুখে .আর আমি একাই কত কষ্টে আছি.আজ ভ্যাগের কঠিন আঘাতে ভেঙ্গে চুরমার হয়েগেছে আমার মন দেহ.ভ্যাগের কঠিন নিয়মে পরাজিত হয়ে দিক বিদিক হারিয়ে ফেলেছি।

যে না পাওয়াটার জন্য এত কষ্ট করলাম আজ তা পেয়ে হারালাম .কিছু নিজের স্বার্থপর আপনজন কারণে.অভাবে দিন যে কত বড় তা শুধু অভাবে যারা থাকে তারা বুঝে .আবার টাকা ঋণ করে সৌদি আরব আসলাম.ঋণের তাড়নায় কোনো কিছু ভালো লাগে না.একদিন ভাইকে ফোন দিয়েছিলাম বললাম আমাকে এক লক্ষ টাকা ধার দে.সে যে কথা বলছে আমি কোনো দিন ভুলতে পারব না.আমাকে বলল,এক বেলা না খেয়ে থাকলে খায়ানো যায় ,বা ১শ টাকা ১ হাজার টাকা ধার দেওয়া যায়। কারো ঋণ শোধ করা যায়না।

মাঝে মাঝে ইচ্ছে করত মরে যায় কিন্ত আমার একটি ছেলে আছে তার কি হবে .মা বাবা ভাই বোন সবাই সুখে আছে হয়ত বউ চলে যাবে কিন্ত আমার ছেলে কি হবে.ভাইদের অনাদর অবহেলা বড় হবে .তাই আবার নতুন করে যুদ্ধ শুরু করলাম শেষ বয়সে.
কথাগুলো বলতে বলতে দেশী ভাইটি কাদছিল.আমি ও তার কথা শুনতে শুনতে কখন যে কাদতে ছিলাম আমি নিজে বুঝতে পারি না দেশী ভাই কে কি বলে সান্তনা দেব আমার সব ভাষা হারিয়ে ফেলছিলাম.শুধু বললাম, আমরা প্রবাসীরা হলাম এমন এক যুদ্ধর সৈনিক. যে যুদ্ধর জয়ের উল্লাস আমরা করতে পারি না দিয়ে দিতে হয় অন্যদের ।

হয়ত অন্যদের মাঝ থেকে জয়ের উল্লাস কেউ পায় আবার কেউ পায় না.অথর্চ এই যুদ্ধে আমাদের দিতে হয় পরিশ্রম নামে জীবনের স্বাদ ইচ্ছা ভালো লাগার মুহূর্তগুলোকে…, .জানি না আমার এই লেখাটা কয়জন প্রবাসী ভাই পড়বে.যদি একজন প্রবাসী ভাই পড়েন .তাকে বলব যতদিন প্রবাসে থাকবেন কিছু টাকা সঞ্চয় করেন .আর কিছু করেন মানুষ মানুষের জন্যে ইসলামের জন্য..আমরা সারা বছর দেশে টাকা পাঠালে ও বাড়ি অভাব দূর করতে পারব না..।
[আমরাও সৌদিপ্রবাসী’র ফেসবুক থেকে নেয়া।]

আরটিএমনিউজ২৪ডটকম/ একে

Logo-orginal