, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

Avatar Arfat

রাজস্ব ফাঁকির শীর্ষে গ্রামীণফোন

প্রকাশ: ২০১৫-০৯-১৬ ১৪:০৮:৫৮ || আপডেট: ২০১৫-০৯-১৬ ১৪:১২:৩২

Spread the love

 

রাজস্ব ফাঁকির শীর্ষে গ্রামীণফোন

আরটিএমনিউজ২৪ডটকম, ঢাকা:    দেশের শীর্ষ মোবাইল ফোন অপারেটর গ্রামীণফোন রাজস্ব ফাঁকিতেও শীর্ষে। সরকারের পাওনা ৪ হাজার ৬শ’ কোটি টাকার রাজস্ব পরিশোধ না করেও বহাল তবিয়তে চুটিয়ে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি এই টাকা উদ্ধারে অসংখ্য চিঠি, লিগ্যাল নোটিশ এমনকি মামলা করেও আজও টাকার দেখা পায়নি। স্বভাবত প্রশ্ন উঠেছে, এই ফোন কোম্পানির খুঁটির জোর কোথায়?

বিটিআরসি (বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন) চেয়ারম্যান সুনীল কান্তি বোস বলেন, তারা পাওনা আদায়ে কঠোর। কেউ একটি টাকাও না দিয়ে ছাড় পাবে না।

বিটিআরসির সচিব সারোয়ার আলম বলেন, সরকারের পাওনা আদায়ে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেয়া হবে। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত কমিশন সভায় এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

সূত্র জানায়, ২০১১ সালে বিটিআরসি গ্রামীণফোনের অভ্যন্তরীণ অডিট পরিচালনা করে। ২০০৫ থেকে ২০১০ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত এই ফোন কোম্পানির বিভিন্ন কার্যক্রম নিয়ে ওই অডিট করা হয়। অডিটে রাজস্ব ফাঁকির এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসে। বিটিআরসির একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, এ ঘটনার পর থেকে গ্রামীণফোন আর বিটিআরসিকে কোনো ধরনের অডিট করতে দেয়নি। মামলার মাধ্যমে ওই পথ রুদ্ধ করে দেয়া হয়। তবে বিটিআরসিও পিছু হটবে না। শিগগির অডিট করার জন্য অডিটর সংস্থা নিয়োগ দেবে। এই কর্মকর্তার ধারণা, এবারের অডিটে গ্রামীণফোনের রাজস্ব ফাঁকির পরিমাণ ১০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।

প্রাপ্ত তথ্য মতে, রাজস্ব ফাঁকি দেয়া খাতগুলোর মধ্যে বিটিআরসির সঙ্গে রেভিনিউ শেয়ারিং খাতে (২০১০ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত) ২১৬ কোটি ৫৮ লাখ টাকা, ৩০ শতাংশ হারে বিটিআরসির জেড অ্যামাউন্ট খাতে ৪৬ কোটি ৫২ লাখ টাকা, ভয়েস, এসএমএস ও ইন্টারনেট (সিডিআর তথ্য অনুযায়ী) খাতে ৫৩ কোটি ৩৭ লাখ টাকা, ফ্রিকোয়েন্সি খাতে ১ কোটি ২০ লাখ টাকা, হ্যান্ডসেট ও বেইস স্টেশনের রয়্যালিটি বাবদ ৫৯৯ কোটি ৩৪ লাখ টাকা, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) পাওনা সুদসহ ৮৮৭ কোটি ৫৬ লাখ টাকা এবং পুরো বকেয়ার ওপর ১৫ শতাংশ হারে সুদ বাবদ ১ হাজার ২২৯ কোটি ৫১ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে ২০১১ সাল পর্যন্ত রাজস্ব ফাঁকির পরিমাণ ৩ হাজার ৩৪ কোটি ১১ লাখ টাকা। অপরদিকে এনবিআরের এলটিইউর (লং টার্ম ইভ্যালুয়েশন) দাবি অনুসারে সিম রিপ্লেসমেন্ট ট্যাক্স ও ভ্যাট বাবদ গ্রামীণফোনের কাছে পাওনার পরিমাণ ১ হাজার ৫৮০ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে অপারেটরটি সরকারের কাছে এখন দেনা ৪ হাজার কোটি টাকার বেশি। এর মধ্যে ভ্যাট (ভ্যালু অ্যাডেড ট্যাক্স) বাবদ বিটিআরসির পাওনা ১৪৭ কোটি টাকার কথা মনেই করতে পারছে না বৃহৎ এ ফোন কোম্পানি।

বিটিআরসির শীর্ষ কর্মকর্তাদের সূত্রে জানা গেছে, টাকা দেয়া তো দূরের কথা উল্টো গ্রামীণফোনের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়ে দেয়া হয় তারা সরকারকে কোনো টাকা দেবে না। এমনকি সরকার তাদের কাছে কোনো টাকা পাবে না বলেও সাফ জানিয়ে দিয়েছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার এখতিয়ার নিয়েও তাদের প্রশ্ন রয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে গ্রামীণফোনের হেড অব এক্সটার্নাল কমিউনিকেশন সৈয়দ তালাত কামাল জানান, ২০১১ সালে বিটিআরসি যে অডিট পরিচালনা করেছিল দেশের সর্বোচ্চ আদালত ওই অডিট বাতিল করে দিয়েছেন। এরপর এ খাতে সরকারকে টাকা দেয়ার কোনো প্রশ্নই উঠতে পারে না। এ নিয়ে প্রশ্ন তোলাও ঠিক নয়। তার মতে, বিটিআরসি যে পদ্ধতিতে গ্রামীণফোনের অডিট করেছিল তা কোনোভাবেই ঠিক ছিল না।

বিটিআরসির আইনজীবী সূত্রে জানা গেছে, ভিএটিসহ পুরো রাজস্ব ফাঁকির এ অ্যামাউন্টটি গ্রামীণফোনকে দিতেই হবে। এর বিকল্প নেই।

এদিকে এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন টেলিকমিউনিকেশন বিশেষজ্ঞ বলেন, নরওয়ের টেলিনর মোবাইল কমিউনিকেশন্স এএস ৫৫.৮০ শতাংশ শেয়ারে গড়ে ওঠা অপারেটরটি তাদের ওয়েবসাইটে ব্যবসায়িক স্বচ্ছতার কথা বললেও বাস্তবে এই স্বচ্ছতার দেখা মেলেনি গত এক দশকেও। যদিও গ্রামীণফোনের ওয়েবসাইটে কর্পোরেট গভর্নেন্স বিভাগে দাবি করা হয়, গ্রামীণফোন সত্যিকার অর্থেই একটি স্বচ্ছ প্রতিষ্ঠান এবং আন্তর্জাতিক মানে এর স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।

বিটিআরসির মতে, একের পর এক রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে যাওয়া গ্রামীণফোন তাদের ফাঁকি জায়েজ করার জন্য নিত্যনতুন অজুহাত ও কৌশল গ্রহণ করে। এ প্রক্রিয়ায় আইনের দীর্ঘসূত্রতায় ঝুলে আছে সরকারের পাওনা বিপুল পরিমাণ রাজস্ব।

বিটিআরসির লিগ্যাল শাখার একজন সিনিয়র কর্মকর্তা বলেন, এ সংক্রান্ত মামলায় হাইকোর্ট ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারিতে গ্রামীণফোনকে ভ্যাট বাবদ পাওনা ১৪৬ কোটি ৯০ লাখ ১৩ হাজার ৮৭৩ টাকা পরিশোধ করার নির্দেশ দেন। গ্রামীণফোন ওই আদেশের ওপর স্থগিতাদেশ চাইলে আদালত তাও নাকচ করে দিয়েছেন বলে অ্যাটর্নি জেনারেল অফিস সূত্রে জানা গেছে। বিটিআরসির একজন আইনজীবী জানান, এ অবস্থায় আইন অনুযায়ী গ্রামীণফোন এ টাকা দিয়ে দিতে বাধ্য।

বিটিআরসির আইনজীবী খন্দকার রেজা-ই-রাকিব বলেন, পাওনা টাকা সংক্রান্ত মামলায় আপিল খারিজের পর গ্রামীণফোন আদালতের স্থগিতাদেশ চায়। সেটিও বাতিল করে দেন উচ্চ আদালত। এরপরও টাকা না দেয়ার কোনো কারণ থাকতে পারে না।

বিটিআরসির ফিন্যান্স বিভাগের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, টাকা আদায়ে তারা তাদের সব প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। কোনো বাধাই তাদের আটকাতে পারবে না।

উল্লিখিত প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা পাওনা প্রসঙ্গে গ্রামীণফোনের হেড অব এক্সটার্নাল কমিউনিকেশনস তালাত কামাল লিখিত বক্তব্যে আরও জানান, যে কোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সরকারের রাজস্ব নিয়ে মতবিরোধ থাকতে পারে। তা সমাধানের জন্য বিভিন্ন পদ্ধতিও আছে। এ ধরনের রাজস্ব বিরোধ নিষ্পত্তি হওয়ার আগে তা নিয়ে কোনো পক্ষকে দোষারোপ করা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তিনি বলেন, বিষয়টি আদালতে বিাচারাধীন। তাই এ ধরনের বিষয় সম্পর্কে মন্তব্য করা সম্ভব নয়।

 – যুগান্তর
আরটিএমনিউজ২৪ডটকম/ এ এইচ বি

Logo-orginal