, মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪

Avatar Ziaul Hoque

বাংলাদেশের নামে ব্যাকটেরিয়া

প্রকাশ: ২০১৫-১০-২৭ ১৫:৪০:৪০ || আপডেট: ২০১৫-১০-২৭ ১৫:৪১:১৬

Spread the love

164092_1

আরটিএমনিউজ২৪ডটকম, ঢাকাঃ সাধারণত পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে মসুর জাতীয় ফসলের শিকড়ে গুটি (নডিউল) সৃষ্টির জন্য ‘রাইজোবিয়াম লিগুমিনোসেরাম’ ব্যাকটেরিয়াকে দায়ী করা হতো। কিন্তু এ ধারণা ভুল প্রমাণিত করে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মসুর জাতীয় ফসলের শিকড়ে নডিউল সৃষ্টিকারী তিনটি ভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়ার অস্তিত্ব প্রমাণ পেয়েছেন বাংলাদেশী বিজ্ঞানী ড. মোঃ হারুন অর রশীদ। তিনি বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিনা) বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত। মসুর ফসলের শিকড়ে নডিউল সৃষ্টিকারী তিনটি নতুন প্রজাতির ব্যাকটেরিয়ার একটির নাম দেশের নামকে প্রাধান্য দিয়ে ‘রাইজোবিয়াম বাংলাদেশেনস’ অন্যটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের নামানুসারে ‘রাইজোবিয়াম বিনাই’ এবং সর্বশেষটি মসুর ফসলের নামানুসারে ‘রাইজোবিয়াম লেনটিস’ রাখা হয়েছে। দীর্ঘ ৬ বছর গবেষণার পর সম্প্রতি তিনি ওই সাফল্য পান। এর ফলে মসুর ফসলের মূলে নডিউল সৃষ্টির কারণ হিসেবে দেখানো প্রায় ১০০ বছরের ধারণা থেকে সরে আসতে হচ্ছে বিজ্ঞানীদের এবং বিজ্ঞানের মৌলিক এ বিষয় নিয়ে নতুনভাবে কাজ করার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।

ড. হারুন জানান, তিনি ২০০৯ সালে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মসুর জাতীয় ফসলের নমুনা সংগ্রহ করে গবেষণা কাজ শুরু করেন। সংগৃহীত নমুনার ৩০টি ব্যাকটেরিয়া থেকে সাতটি জিন সিকোয়েন্স করে বায়ো-ইনফরম্যাটিক অ্যানালাইসিস, ডিএনএ ফিঙ্গার প্রিন্টসহ আরও বেশ কয়েকটি বৈশিষ্ট্য পরীক্ষা করেন। প্রাথমিকভাবে সম্পন্ন করা সেসব পরীক্ষা থেকে তিনি বাংলাদেশে মসুর ফসলের নডিউল সৃষ্টিতে নতুন প্রজাতির ব্যাকটেরিয়া লক্ষ করেন। তার এ গবেষণাকে আরও পাকাপোক্ত করতে জার্মানি, তুরস্ক ও সিরিয়া থেকে মসুর ফসলের শিকড়ে নডিউল সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া সংগ্রহ করে গবেষণা করা হয়। পরে এ দুই জায়গার নমুনার তুলনামূলক গবেষণা থেকে প্রমাণ করেন, বাংলাদেশের মসুর ফসলে যে প্রজাতির ব্যাকটেরিয়ার অস্তিত্ব বিদ্যমান, তা পৃথিবীর অন্যান্য জায়গা থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। তার এ গবেষণা ফল ইউরোপ থেকে প্রকাশিত মাইক্রোবায়োলজির বিখ্যাত জার্নাল ‘সিন্টেমেটিক অ্যান্ড অ্যাপ্লাইড মাইক্রোবায়োলজি’ এবং আমেরিকার বিখ্যাত জার্নাল ‘এফইএমএস মাইক্রোবায়োলজি ইকোলজি’তে প্রকাশিত হলে দেশে-বিদেশে অনেকটা আলোড়ন সৃষ্টি হয়। এর পর তিনি আর থেমে থাকেননি। ওই ব্যাকটেরিয়ার নমুনাগুলো নিয়ে ডিএনএ-ডিএনএ হাইব্রিডাইজেশন, কার্বন-নাইট্রোজেন সোর্স ইউটিলাইজেশন প্যাটার্ন, ফ্যাটি এসিড প্যাটার্ন এবং হোল জিনোম সিকোয়েন্স পরীক্ষাগুলো করে ব্যাকটেরিয়ার নতুন প্রজাতি সম্পর্কে সম্পূর্ণ নিশ্চিত হন। পরে ওই নতুন আবিষ্কৃত ব্যাকটেরিয়া তিনটির নামকরণের জন্য আন্তর্জাতিক নিয়মনীতি অনুসরণ করে ‘ইন্টারন্যাশনাল কোড অব নোমেনক্লেচার অব ব্যাকটেরিয়া’য় (আইসিএনবি) আবেদন করেন। তার এ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে চলতি বছরের জুন মাসে গ্রেট ব্রিটেন থেকে বৈজ্ঞানিক নামের স্বীকৃতি প্রদানকারী একমাত্র জার্নাল ‘ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব সিস্টেমিক অ্যান্ড ইভোল্যুশনারি মাইক্রোবায়োলজি’তে নতুন ওই প্রজাতির ব্যাকটেরিয়ার নাম প্রকাশিত হয়। এর ফলে মসুর ফসলের মূলে নডিউল সৃষ্টির কারণ হিসেবে দেখানো প্রায় ১০০ বছরের ধারণা থেকে সরে আসতে হচ্ছে বিজ্ঞানীদের এবং বিজ্ঞানের মৌলিক এ বিষয় নিয়ে নতুনভাবে কাজ করার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।

 

আরটিএমনিউজ২৪ডটকম/জেড এইচ

Logo-orginal