, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

admin admin

সৌদিতে শিরশ্ছেদ থেকে বেচে যাওয়া লিটনের আলৌকিক ঘটনা

প্রকাশ: ২০১৫-১০-১১ ১৯:২৩:০৩ || আপডেট: ২০১৫-১০-১১ ১৯:২৩:০৩

Spread the love

সৌদিতে শিরশ্ছেদ থেকে বেচে যাওয়া লিটনের আলৌকিক ঘটনা
আরটিএমনিউজ২৪ডটকম, মধ্যপ্রাচ্যঃ( ফাইল ছবি ) ভাগ্য বদলাতে বাংলাদেশি অনেকের মতো মা-বাবাকে ছেড়ে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরব গিয়েছিলেন মুন্সিগঞ্জ জেলার গজারিয়া থানার গোসাইচর গ্রামের মো. লিটন জহির উদ্দিন (২৫)। কয়েকবছর সেখানে ভালো ছিলেন লিটন। এরপর এক ভারতীয় নারীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠে তার বিরুদ্ধে। সৌদি পুলিশ এ ঘটনায় তাকে গ্রেফতার করে এবং পরবর্তীতে সৌদি শরিয়াহ আদালত তাকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করেন। তবে অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি, মৃত্যুদণ্ডের ওই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করার সময় শেষ হয়ে যাওয়ার পরও নাটকীয়ভাবে সে দণ্ডের হাত থেকে বেঁচে গেছেন তিনি। তবে একাবারে রেহাই পাচ্ছেন না লিটন। কারণ মৃত্যুদণ্ডের পরিবর্তে তাকে কারাবাস করতে হবে ১০ বছর।

লিটনের এই বেঁচে যাওয়ার পুরো কৃতিত্ব প্রথমত তার মা মোছা. জাহানারা বেগম ও বাবা মো. জহির উদ্দিনের এবং দ্বিতীয়ত সৌদি আরবের বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তাদের বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশের জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) একাধিক কর্মকর্তা। জানা গেছে, নিজের মুখে অপরাধের কথা স্বীকার করার কারণে তার পক্ষে লড়তে অপারগতা প্রকাশ করেছিলেন আইনজীবীরা। সেই সঙ্গে শেষ হয়েছিল রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার সময়ও। ফলে লিটনের দণ্ড কার্যকর সময়ের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছিল। এরপরও তিনি প্রাণে বেঁচে গেছেন।

মামলা সূত্রে জানা যায়, ২০১০ সালের ৭ জুন সৌদি আরবের মোরাব্বা এলাকার আব্দুর রহিম আব্দুল্লাহ আল গামদির বাসার ভাড়াটিয়া ময়েজ উদ্দিনের স্ত্রী আসমা বেগম (৩১) বাসায় একা ছিলেন। লিটন ময়েজের বাসায় ঢুকে আসমার হাত বেঁধে ফেলেন এবং তাকে হত্যার হুমকি দিয়ে ধর্ষণ করেন। পরে ছয় হাজার সৌদি রিয়াল, পাঁচ হাজারের মতো ভারতীয় রুপী, দুটি সোনার চেইন এবং একটি মোবাইল চুরি করে পালিয়ে যান তিনি। পরে এসব অভিযোগে লিটনকে গ্রেফতার করে মোরাব্বা পুলিশ।

শরিয়াহ আদালতে লিটনের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় আদালতের সম্মলিত বোর্ড তার মৃত্যদণ্ডের রায় প্রদান করে। ২০১১ সালের ১৯ অক্টোবর সেই রায় পর্যালোচনা করে দেখা যায়, আদালতে লিটন তার ডাকাতি ও ধর্ষণের অভিযোগ স্বীকার করেছেন। পরে এই রায়ের বিরুদ্ধে ৩০ দিনের মধ্যে আপিল করার সুযোগ ছিল। কিন্তু তিনি নির্দিষ্ট সময়ে আপিল করতে পারেননি। এমনকি তার মামলা পরিচালনার জন্য যে আইনজীবী কাগজপত্র সংগ্রহ করেছিলেন, তিনিও পরে মামলা লড়তে অপরাগতা প্রকাশ করেন। আর এসব ঘটনায় মৃত্যদণ্ড কার্যকর এক রকমের নিশ্চিতই হয়ে গিয়েছিল।

ওই বছরের ৩ নভেম্বর এসব ঘটনা জানতে পেরে লিটনের মা জাহানার বেগম সরাসরি দূতাবাসে আবেদন করেন। সেখানে তার মা বলেন, ‘আমার ছেলে দীর্ঘদিন সৌদি আরবে কর্মরত আছে। আমি লোক মারফত জানতে পারলাম একজন ভারতীয় নারী উদ্দেশ্য প্রণোদিত হয়ে আমার ছেলে বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করে। যে মামলায় তার বিরুদ্ধে মৃত্যদণ্ড ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু ওই ভারতীয় নারী মামলার করার পর থেকে নিরুদ্দেশ। বর্তমানে আমার ছেলে মালাজ সেন্ট্রাল জেলের ৪ নম্বর রুমে আছে। তার দণ্ড মওকুফ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আবেদন করছি।’

পরবর্তী বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি লিটনের মৃত্যদণ্ডের রায়ের কপিও পাঠানো হয়েছিল কারাগারে। তাই যেকোন সময় এ রায় কার্যকর হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু জনশক্তি ব্যুরো ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তার মায়ের আবেদনপত্র পাওয়ার পর ২০১২ সালের মার্চ মাসের দিকে এই দণ্ডের বিষয়টি দূতাবাসের নজরে আনে। তখন দূতাবাস থেকে সৌদিতে থাকা লিটনের আত্মীয়-স্বজন ও সৌদি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। পরে সেই রায়ের কপিসহ রিয়াদের সৌদি ল’ ফার্ম মেসার্স আল খোরাইজির সঙ্গ পরামর্শ করা হয়। ওই ফার্মের আইনজীবী আবু আব্দুল্লাহ আল খোরাইজি মামলার যাবতীয় কাগজপত্র ও রায় পর্যবেক্ষণ করেন। ওই আইনজীবীও জানান, অভিযুক্তের স্বীকারোক্তির কারণে এ মামলার রায়ের বিরুদ্ধে কোনো বক্তব্য রাখার সুযোগ নেই। তাছাড়া আপিল আবেদন করার সময় না থাকায় আপিলও করা যাবে না।

তবে হাল ছাড়েননি লিটনের মা মোছা. জাহানারা বেগম। ২০১২ সালেই বিএমইটির মাধ্যমে সরাসরি সৌদি আরবের শরিয়াহ আদালতে ছেলেন প্রাণ ভিক্ষা চান তিনি। এই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আপিল আবেদনের আবারও সুযোগ করে দেন সৌদি আদালত। তখন দূতাবাসের উদ্যোগে ২০১৪ সালের ৭ আগস্ট আপিল গ্রহণের শুনানি হয়। সেই শুনানিতে দূতাবাসের প্রতিনিধি হিসেবে প্রথম সচিব মোহাম্মদ মিজানুর রহমান এবং অনুবাদক এসএম দোহা উপস্থিত ছিলেন। পরে দূতাবাসের মাধ্যমে লিটনের লিখিত বক্তব্যের আপিলটি কোর্টে গৃহীত হয়। পরে তার বক্তব্য পর্যালোচনা করে ১৭ আগস্ট আপিলের রায় দেয়া হয়। আপিলের রায়ে মৃত্যদণ্ডের পরিবর্তে তাকে ১০ বছরের কারাদণ্ড প্রদান করা হয়। আর এভাবে মৃত্যদণ্ডের হাত থেকে বেঁচে গেলেন লিটন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএমইটির এক কর্মকর্তা বলেন, সৌদি আরবের শরিয়াহ আইনের মৃত্যদণ্ড থেকে সাধারণত কেউ বেঁচে আসতে পারে না। লিটনের বিষয়টা বিরল ঘটনা। তবে এটা তার মায়ের কারণেই হয়েছে বলে আমি মনে করি। কেননা, তার মা যদি ‘ইনফর্ম’ না করতেন, তাহলে আমরা এ বিষয়ে জানতামই না। দূতাবাসও হয়তো জানতো মৃত্যদণ্ড কার্যকর হওয়ার পর। এই সাজা পরিবর্তনের জন্য সেখানকার দূতাবাসের কর্মকর্তারা অনেক পরিশ্রম করেছেন।

আরটিএমনিউজ২৪ডটকম/ একে

Logo-orginal