, বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪

Avatar n_carcellar1957

এখনো এতোটা নি:স্বার্থ হতে পারিনি

প্রকাশ: ২০১৫-১২-২১ ১০:৩৫:০৮ || আপডেট: ২০১৫-১২-২১ ১০:৩৯:০৯

Spread the love

ফারুক আহমাদ আরিফ: সত্যি বলছি এখনো এতোটা নি:স্বার্থ হতে পারিনি। মানুষের জন্য মন কাঁদে তবু মানুষের উপকারে বা কল্যাণে নিজেকে মোটেও ব্যস্ত রাখতে পারছি না। নিজেকে নিয়েই বেশিরভাগ সময় অতিবাহিত হয়।shItআজ সজীব সরকার স্যার বাশারকে জানালো আমরা যেন পরীক্ষা শেষে স্যারের সাথে সাক্ষাৎ করি। বিকালে আমি আর বাশার দেখা করলাম স্যারের সাথে। স্যার আমার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাইলেন। স্যার জিজ্ঞাসা করলেন আমি রাজনীতির সাথে জড়াতে চাই কি না।
বললাম-রাজনীতির প্রতি আমার সামান্যতম দুর্বলতা নেই। আমি মিডিয়াকর্মী হতে চাই। মিডিয়াতেই ক্যারিয়ার গড়বো।
স্যার বললেন-আমি শুনেছি আপনি আন্দোলন নিয়েই এখনো পড়ে আছেন। রাত-দিন কেঁদে কাঁদে সময় পার করছেন। সবাই এগিয়ে যাচ্ছে আর আপনি পিছনে পড়ে যাচ্ছেন। সব কিছু ভুলে যান। সামনে তাকান। অনেক কাজ পড়ে আছে। সব বাদ দিয়ে ক্যারিয়ারের দিকে মনযোগ দেন।
বললাম স্যার পারছি না। স্মৃতিগুলো আমাকে তাড়িয়ে বেড়ায়। আগে যেখানে ১৮ ঘণ্টা কান্না করতাম এখন ৪ ঘণ্টায় নেমে এসেছে। আশা করি ধীরে ধীরে আমি স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসবো।
স্যার বললেন-তাই করেন। আপনার পরিকল্পনা অনুযায়ী এগিয়ে যান। সময় বসে নেই। ক্যারিয়ার গড়েন।
বললাম-স্যার দোআ করবেন আমি সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আমি এ অবস্থা কাটিয়ে উঠবোই দোআ করবেন স্যার।
স্যার আরও অনেক কথা বললেন…।
বাশার বললো স্যার শীতবস্ত্র বিতরণের কথা আপনি বলেছিলেন। স্যার বললেন-মানুষ কষ্ট পাচ্ছে যতদ্রুত সম্ভব দিয়ে দেন। আমার বাসায় অনেক কাপড় জমা পড়ে আছে এগুলো নিয়ে দিয়ে দেন। আপনাদের তো বেশ অনেকদিন আগেই জানিয়ে ছিলাম কাপড়গুলোর কথা। মানুষ কষ্ট পাচ্ছে। দ্রুত দিয়ে দেন।
বাশারকে বললাম তারিখ ঠিক করেন কবে দেয়া যাবে। বাশার
বললো ২৪ ডিসেম্বর।
বললাম-স্যার ২৪ ডিসেম্বর পরীক্ষা দিয়ে কাপড়গুলো এনে রাখবো আর সেইদিন রাতে ধানমন্ডির আশেপাশের লোকজনদের দিয়ে দিব।
স্যার বললেন-ঠিক আছে তাই করুন। তবে পরীক্ষায় যেন সমস্যা না হয়।
আজ রাত ৯টা ৪০ মিনিটে ধানমন্ডির ৮/ডি হতে কলাবাগান ১০৬ নিজের বাসায় যাচ্ছিলাম। শীতে তীব্রতা কেমন তা বুঝার জন্য সুইটারটা খুলে অফিসে রেখে শুধু শার্ট গায়ে দিয়ে
যাচ্ছিলাম।
শীতে থড়থড় করে কাপছি। বঙ্গবন্ধুর বাড়ি পার হয়ে রাসেল স্কয়ার পর্যন্ত যেতেই দেখি ৮-৯ জন মানুষ মিলে আগুন পোহাচ্ছে। দাঁড়ালাম। বললাম এখনো মানুষ আগুন পোহায়? একজন প্রবীণ বলে উঠলো বাবা শীতে কষ্ট পাচ্ছি একটা কম্বল দাও না! জিজ্ঞেস করলাম নাম কী? তিনি বললেন সাইদুল, বাড়ি টাঙ্গাইল। একজন নারী উঠে এসে দাঁড়ালো আমার সামনে। বাবা শীতে কাপছি একটা কাপড় দেন না।
মাথাটা নীচু করে ফেললাম। এতোটা নি:স্বার্থ এখনো হতে পারিনি যে নিজের লেপখানা এনে এদের দিয়ে দিব। যদিও ঈশ্বরচন্দ্রের মা প্রতিবেশীরা শীতে কষ্ট পাচ্ছে দেখে নিজে লেপ গায়ে দেননি।

দেখলাম একটি ৮-৯ বছরের একটি মেয়ে। কাছে ডাকলাম। নাম কি? জেসমিন বললো মেয়েটি।
মাথায় হাত বুলালাম। ডাস্টবিনের পাশেই এরা থাকে। মাথায় ঝাকড়া চুল থাকলেও ময়লায় ভর্তি।
বললাম স্কুলে যাও?
জেসমিনের জবাব না ভাই, যায় না। কেন যাও না। কোন
কথা নেই মুখে।
বাসায় গিয়ে সাবান দিয়ে ৫ পাঁচবার হাত ধোঁয়ে নিলাম। কোথাও যদি ময়লা লেগে থাকে। হায়রে! কী অদ্ভূত মানুষ আমি। মানুষকে ভালোবাসি অথচ সামান্য ময়লা পরিষ্কার করতে পাঁচবার সাবানের স্পর্শ নিতে হলো?
বাসা থেকে খাবার নিয়ে ১০টা ২০ মিনিটে রওয়া হলাম। শার্টের কভার কনুইয়ের উপরে দেখি শীতের তীব্রতা কেমন? স্টেটের সামনে দিয়ে আসার সময় সিঙ্গার দোকানের সামনে দেখলাম একব্যক্তি কয়েকটি ছিড়া কাঁথা গায়ে দিয়ে ঘুমাচ্ছে। লোকটাকে দেখে করুণা হলো। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলাম। অফিসে এসে কয়েকটি পত্রিকা ও অনলাইন নিউজ পোর্টাল দেখলাম শৈত্যপ্রবাহ নিয়ে নিউজ করেছে কি না। শুধু বাসসে একটি নিউজ পেলাম। ফোন দিলাম আবহাওয়া অফিসে। তাদের কাছ থেকে তথ্য নিলাম।
আবহাওয়া বার্তায় আবদুল বারেক জানালেন, আজ সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল শ্রীমঙ্গলে শূন্য ৭ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঢাকায় সর্বোচ্চ ২৪ সর্বনিম্ন ১৩.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। চট্টগ্রামে সর্বোচ্চ ২৪.৫ সর্বনিম্ন ১৩.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস, রাজশাহীতে সর্বোচ্চ ২৩.৭ সর্বনিম্ন শূন্য ৮.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
অর্থাৎ শীতের মাত্রা ধীরে ধীরে বাড়ছে। স্টেটের মারুফ ভাইকে ফোন দিলাম-মানুষ শীতে কষ্ট করছে কিছু একটা করেন। মারুফ ভাই বললেন কাল তিনটায় সজীব স্যারের সাথে সাক্ষাৎ করবো কি করা যায় সবাই মিলে একটা সিদ্ধান্তে আসা যাবে।
ড্যাফোডিলের সাজ্জাদ ভাইয়ের সাথে কথা বললাম তিনি বললেন শীতবস্ত্র নিয়ে কিছু একটা করা দরকার। চলুন কাজ করি।
ইউডার ইমন ও মারুফ ভাইকে জানালাম তারাও রাজি হলেন। ইউল্যাবের রাহুলকে বললাম সেও প্রস্তুত।
ধানমন্ডির ড্যাফোডিলে ২০ হাজার, স্টেটে ৪ হাজার, ইউল্যাবে ৪ হাজার, স্টেমফোর্ডে ২০ হাজার, ইস্টার্নে ৫ হাজার, ওয়ার্ল্ডে ৩ হাজার, নর্দানে ২ হাজার, ইবাইসে ৩ হাজার, সিটিতে ২ হাজারসহ ১০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ৬৫ হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে। সকলে একটি করেও যদি পুরাতন কাপড় দেয় তবে ৬৫ হাজার মানুষের শীতনিবারণের ব্যবস্থা হবে।
এখন শুধু উদ্যোগ প্রয়োজন। আশা করি সবাই নিজ নিজ উদ্যোগে এগিয়ে আসবে। সবাই মিলেই একেক দিন একেক এলাকায় এগুলো বিতরণ করা সম্ভব হবে। আসুন হাতটি বাড়ায় অসহায়দের প্রতি। জয় হোক মানুষের।

আরটিএমনিউজ২৪ডটকম/ এন এ কে

Logo-orginal