, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

Avatar n_carcellar1957

চাঞ্চল্যকর হত্যা ও চোরাগোপ্তা হামলার লক্ষ্য কী শুধুই দৃষ্টি আকর্ষণ?

প্রকাশ: ২০১৫-১২-২০ ১৮:২৪:৫৭ || আপডেট: ২০১৫-১২-২০ ১৮:২৫:৪৪

Spread the love

ctg 2অনলাইন ডেস্কঃ চলতি বছরের শেষ চার মাসে বেশ কয়েকটি চাঞ্চল্যকর হত্যা ও চোরাগোপ্তা হামলার ঘটনা ঘটেছে। যার মধ্যে দুই বিদেশি নাগরিক হত্যা, শিয়াদের তাজিয়া মিছিলে গ্রেনেড হামলা, প্রকাশক হত্যা, চেকপোস্টে পুলিশ হত্যা, এমনকি চেকপোস্টে মিলিটারি পুলিশের ওপরও হামলার ঘটনা ঘটেছে।

সম্প্রতি বেড়েছে মসজিদ ও মন্দিরে হামলার ঘটনা। দিনাজপুরে দুটি মন্দিরে হামলা ও বগুড়ায় একটি মসজিদে হামলা হয়েছে। সর্বশেষ গত শুক্রবার চট্টগ্রামে নৌবাহিনীর সংরক্ষিত এলাকায় বোমা হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে সামরিক বাহিনীসহ সকল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যেও জঙ্গিবাদের অস্তিত্ব থাকার বিষয়টি দ্রুত খতিয়ে দেখতে পরামর্শ দিয়েছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা।

এসব হামলার পর বারবারই ওঠে আসছে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জামায়াতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি)-এর নাম। পাশাপাশি আনসারুল্লাহ বাংলা টিমসহ আরও কয়েকটি ছোট ছোট জঙ্গি সংগঠনের নামও এসেছে। প্রায় সব ঘটনায় দুই-একজন গ্রেফতার হলেও কোনো কুল-কিনারা করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এসব হামলা পূর্বপরিকল্পিত এবং হামলার মূল লক্ষ্য দৃষ্টি আকর্ষণ। শুক্রবার দুপুরে জুমার নামাজের পরপর চট্টগ্রামে নৌবাহিনীর ঈশা খাঁ ঘাঁটি জামে মসজিদসহ দুটি মসজিদে বোমা বিস্ফোরিত হয়। বোমা হামলার সাথেজড়িত থাকার সন্দেহে ঘটনাস্থল থেকে মুসল্লিরা দুই জনকে আটক করে। আটককৃত দু্ইজনই নৌ সদস্য বলে জানা গেছে। তারা হলেন- বল কিপার মান্নান ও ব্যাটম্যান রমজান। কয়েকটি অবিস্ফোরিত বোমাও উদ্ধার করা হয়েছে। আটককৃত ব্যাটম্যান রমজান ও বল পিকার মান্নান ওরফে সিয়ামকে বোমাসহ হাতেনাতে আটকের পরে তাদের কাছ থেকে ১৪টি বোমা উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানায় পুলিশ।

এদিকে শনিবার ইপিজেড থানার ওসি আবুল কালাম জানান, আটক দুইজন র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‍্যাব) হেফাজতে রয়েছেন। নগরীর পতেঙ্গার র‍্যাব-৭ এর সদর দফতরে রেখে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তবে এ ব্যাপারে র‍্যাবের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

তিনি আরও বলেন, বোমা হামলার ঘটনায় শনিবার বিকেল পর্যন্ত কোনো মামলা করা হয়নি। এক প্রশ্নের জবাবে ওসি বলেন, নৌবাহিনীর কেউ বাদি হয়ে মামলা করলে আমরা মামলা নেব। মামলা হলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেবে পুলিশ। আটককৃতদের পরিচয় সম্পর্কে নগর পুলিশের উপকমিশনার (বন্দর) হারুন উর রশিদ হাযারী বলেন, আটক রমজানের বাড়ি দিনাজপুরের কাহারোল উপজেলায়। তিনি টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং পাস তথ্য গোপন রেখে বছর খানেক আগে নৌবাহিনীতে ‘ব্যাটম্যান’ হিসেবে চাকরি নেন। বলপিকার মান্নানের গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইলে। তিনি ছয় মাস আগে নৌবাহিনীতে যোগ দিয়েছেন।

আটকদের পরিবারের সদস্যরা বাড়িতে নেই এদিকে সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়,  আটক রমজান আলীর বাড়ি কাহারোল উপজেলার মুকুন্দপুর ইউনিয়নের মুকুন্দপুর গ্রামে। তার বাবার নাম আহসান হাবিব। স্থানীয় কয়েকজন জানিয়েছেন, রমজানের বাবা আহসান হাবিব পাশের গ্রামের ছোট ভাদগা মসজিদের ইমাম। রমজানের বড় ভাই রাশেদ পরিবারের সঙ্গেই থাকতেন।

শনিবার দুপুরে ওই বাড়িতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির সামনের দরজায় তালা লাগানো; তবে খোলা ছিল বাড়ির পেছনের ফটক। বাড়িতে ঢুকে পাওয়া যায় তরিকুল নামে এক ব্যক্তিকে, যিনি নিজেকে ওই বাড়ির ‘কাজের লোক’ বলে পরিচয় দেন। তার বাড়ি পাশের বাঘমারা গ্রামে।

তরিকুল জানান, শুক্রবার বিকেলে রমজানের বাবা তার বড় ছেলে রাশেদকে নিয়ে শ্বশুর বাড়ি বীরগঞ্জ উপজেলার কল্যাণী গ্রামে গেছেন। হঠাৎ কেন ঘর-বাড়ি ফেলে শ্বশুর বাড়ি গেলেন জানতে চাওয়া হলে নিরুত্তর থাকেন তরিকুল। তবে শুক্রবার রাতে র‍্যাব সদস্যরা ওই বাড়িতে তল্লাশি চালিয়েছে বলে জানান তিনি।

রমজানের প্রতিবেশী পল্লী চিকিৎসক তারিকুল ইসলাম জানান, রাজু দিনাজপুর পলিটেকনিকে পড়া-লেখা করত। তবে পড়া শেষ করেছে কিনা তিনি তা জানেন না। প্রায় পাঁচ বছর আগে রমজান এলাকা ছেড়েছে। নৌবাহিনীতে ব্যাটম্যানের চাকরি নিলেও এতদিন গ্রামের সবাই জানতেন রমজান ঢাকায় গার্মেন্টসে চাকরি করে। প্রায় দেড় বছর পর গত কোরবানি ঈদে সে বাড়ি এসেছিল।

ওই পল্লী চিকিৎসক জানান, রমজানদের পরিবারের সদস্যরা ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলতেন। তবে রমজান গ্রামে কারও সঙ্গে তেমন কথা-বার্তা বলতেন না। অন্যদিকে শনিবার র‍্যাব-১২ এর কর্মকর্তা মহীউদ্দীন ফারুকী জানিয়েছেন, চট্টগ্রামে ককটেল হামলার ঘটনায় আব্দুল মান্নান নামে একজন গ্রেপ্তার হওয়ার খবর তিনি জেনেছেন। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে তার বাড়ি টাঙ্গাইলের বাসাইলে।

রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে শক্তি প্রদর্শনের ক্ষমতা দেখাতে চায় তারা এ ঘটনা প্রসঙ্গে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল এবং গবেষণা সংস্থা ইনস্টিটিউট অব কনফ্লিক্ট, ল এন্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের পরিচালক মেজর জেনারেল আবদুর রশিদ বিবিসি বাংলা-কে বলেন, এই ব্যক্তি অনেকদিন ধরেই নৌবাহিনীতে কর্মরত ছিল এবং যতদূর জানা যাচ্ছে সে প্রায় বছর তিনেক ধরে নৌবাহিনীতে কাজ করেছে। তাকে যে জঙ্গিবাদে দীক্ষা দেওয়া হয়েছে এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। তবে এই তিন বছরের মধ্যে তার জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হওয়ার বিষয়টা যে ধরতে পারা গেল না, সেটা অবশ্যই চিন্তার কারণ।’

তিনি বলেন, যেহেতু এখন দেখা যাচ্ছে সামরিক বাহিনীকে টার্গেট করে তার ভেতরেও ‘ইনফিলট্রেশন’ বা ঢোকার একটা চেষ্টা শুরু হয়েছে তাই আগের তুলনায় এই যাচাই বাছাই প্রক্রিয়া আরও শক্ত হাতে করা প্রয়োজন, বিশেষ করে নিচের তলার গ্রেডগুলোতে। এই নিরাপত্তা বিশ্লেষক আরও বলেন, ‘এছাড়াও যারা বর্তমানে চাকরি করছে, তাদের বিষয়ে আবার নতুন করে খতিয়ে দেখতে হবে যে এরকম ফাঁকফোঁকর দিয়ে কতজন লোক এসে গেছে, আমার মনে হয় সময় এসেছে নতুন করে আবার ছাঁকনি দেবার।’

অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল আবদুর রশীদ মনে করছেন সামরিক বাহিনীকে টার্গেট করার পেছনে একটা কারণ আন্তর্জাতিকভাবে একটা চাঞ্চল্য সৃষ্টি করার বিষয়। তিনি বলেন, ‘একটা সুরক্ষিত এলাকার ভেতরে কোনো হামলা করতে পারলে চিরাচরিতভাবে তারা জানে তারা সংবাদমাধ্যমের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারবে।’ তবে তিনি বলছেন, জঙ্গিরা এধরনের হামলার মাধ্যমে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে শক্তি প্রদর্শনের ক্ষমতা বোঝানোর চেষ্টা করলেও তিনি মনে করেন না যে, তারা এখনই এতটা শক্তিশালী হয়ে উঠেছে যে তারা এভাবে সরকারের পতন ঘটাতে পারবে।

এদিকে বার্তাসংস্থা এএফপি-র বরাত দিয়ে এ হামলার খবর সিঙ্গাপুরের স্ট্রেইটস টাইমস, ভারতের টাইমস অব ইন্ডিয়া, পাকিস্তানের ডন, দুবাইয়ের খালিজ টাইমসসহ বিশ্বের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের অনলাইন সংস্করণে তাৎক্ষণিকভাবে প্রকাশিত হয়েছে।

আরটিএমনিউজ২৪ডটকম/ এন এ কে

Logo-orginal