, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

Avatar n_carcellar1957

বাংলাদেশে জঙ্গি তৎপরতার সহায়ক কি পাকিস্তান?

প্রকাশ: ২০১৫-১২-২১ ১০:২০:০৬ || আপডেট: ২০১৫-১২-২১ ১০:২০:৫০

Spread the love

jongiআরটিএমনিউজ২৪ডটকম,ঢাকা : মুক্তিযুদ্ধ কিংবা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে বরাবরই মিথ্যাচার করে আসছে একাত্তরের পরাজিত শক্তি পাকিস্তান। বিভিন্ন সময় দেশটির হাই অফিসিয়ালদের বিরুদ্ধে জঙ্গিবাদে পৃষ্ঠপোষকতার অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি ঢাকায় পাকিস্তানি হাইকমিশনের সেকেন্ড সেক্রেটারি (পলিটিক্যাল) ফারিনা আরশাদের বিরুদ্ধে জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ নতুন করে ভাবাচ্ছে গোয়েন্দাদের। যদিও এই খবরকে ‘ভিত্তিহীন’ বলে দাবি করেছে পাকিস্তান হাইকমিশন।

তবে গোয়েন্দারা বলছেন, দেশে জঙ্গি উত্থানে ভূমিকা রাখছে পাকিস্তান।  বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পাকিস্তান নামক ‘অভিশাপময়’ একটি রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ওঠা এমন অভিযোগ উড়িয়ে দেওয়ার অবকাশ নেই। কারণ, তাদের অতীত কর্মকাণ্ড আমাদের সেই দিকে ধাবিত করে।  ফারিনা আরশাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশে তৎপর ইসলামী জঙ্গিদের সঙ্গে যোগসাজশ রয়েছে, এমন তথ্য প্রকাশ করেছেন গোয়েন্দারা। কয়েকজন সন্দেহভাজন জেএমবি সদস্যকে জিজ্ঞাসাবাদের সময় সম্প্রতি এ তথ্য পান তারা। আটক সন্দেহভাজনদের একজন এই তথ্য দিয়ে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছেন বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার  বলেন, ‘পাকিস্তানের বিষয়ে কোনো অভিযোগ উড়িয়ে দেওয়ার মতো নেই। তাদের অতীত কর্মকাণ্ডের দিকে দেখলে তার যথেষ্ট প্রমাণ মেলে।’  এখন পাকিস্তানের ‘মুখোশ’ খুলে দেওয়ার সময় এসেছে বলে জানান এই রাজনীতি বিশ্লেষক।

তিনি বলেন, ‘পাকিস্তানিদের তো তাদের শাসকরা মিথ্যার জগতে রেখেছে। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যে গণহত্যা তারা চালিয়েছে সে সম্পর্কে ওই দেশের অনেক নাগরিক এখনো জানেন না। কিন্তু এখন ইন্টারনেটের যুগ। লেখালিখির মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে সব সত্য ঘটনা পাকিস্তানের সাধারণ জনগণের সামনে হাজির করতে হবে।’ জঙ্গি অর্থায়নের অভিযোগে চলতি বছরের ১২ জানুয়ারি সন্ধ্যায় ঢাকায় আটক করা হয় পাকিস্তানি হাইকমিশনের কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাযহার খানকে। পরে জঙ্গি কানেকশন, মুদ্রা পাচার ও জাল মুদ্রা সরবরাহসহ বিভিন্ন অপকর্মে জড়িত থাকার দায়ে তার বিরুদ্ধে দেশটির সরকারের কাছে বাংলাদেশ অনানুষ্ঠানিক অভিযোগ দায়ের করে।

তবে ঢাকায় পাকিস্তান হাইকমিশন এই ইস্যুতে সেসময় কোনো ব্যাখ্যা দেয়নি। গত ৩১ জানুয়ারি এই কূটনীতিক সপরিবারে বাংলাদেশ ত্যাগ করেন। সংবাদমাধ্যমে তার চলে যাওয়ার খবর প্রকাশিত হয় গত ৩ ফেব্রুয়ারি।  গোয়েন্দাদের তথ্য পাওয়ার পর পাকিস্তানি দূতাবাসকে ‘নব্য কাশিমবাজার কুঠি’, ‘জঙ্গি তৎপরতার পেছনে পাক দূতাবাস’ কিংবা ‘নাশকতার নেপথ্যে পাকিস্তান’ এমন মন্তব্য করে আসছে আওয়ামী লীগের নেতারা।

গত ২২ নভেম্বর রাতে বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী এবং জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের পর থেকেই সম্পর্কের অবনতি হতে থাকে। এই বিচারবিচারকে ‘ত্রুটিপূর্ণ’ আখ্যায়িত করে এ নিয়ে ‘আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতিক্রিয়ার’ কথাও বলা হয় ওই বিবৃতিতে। তবে পাকিস্তানের এমন আচরণের ব্যাপক সমালোচনা করেছেন খোদ সেদেশেরই মানবাধিকারকর্মী, আইনজীবী আসমা জাহাঙ্গীর। যু্দ্ধাপরাধীদের ফাঁসির রায় কার্যকর ইস্যুতে পাকিস্তানের আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়ার প্রতিবাদে ঢাকায় নিযুক্ত দেশটির হাইকমিশনার সুজা আলমকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করা হয়।

এসময় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে পাকিস্তানের ‘উদ্বেগ প্রকাশের’ বিবৃতির জন্য দেশটির হাইকমিশনারকে তলব করে ‘কড়া প্রতিবাদ’ জানানো হয়। এখানেই থেমে থাকেনি পাকিস্তান, ঢাকায় পাকিস্তান হাইকমিশনারকে তলবের এক সপ্তাহ পরই ইসলামাবাদে বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনারকে তলব করে পাকিস্তান ’৭১-এ গণহত্যার দায় অস্বীকার করে।

বাংলাদেশের দুই নেতা ‘বিচারিক হত্যাকাণ্ডের’ শিকার হয়েছে অভিযোগ করে এ বিষয়ে কঠোর ব্যবস্থা নিতে জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থার কাছে চিঠি পাঠান পাকিস্তানের সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সিনেটর রেহমান মালিক।  পাকিস্তানের এমন ‘অশোভন আচরণের’ কড়া প্রতিবাদ উঠেছে দেশজুড়ে। অনেকেই পাকিস্তানের সাথে সব ধরনের সম্পর্ক ছিন্ন করার দাবি জানান। এ্ররই অংশ হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফ থেকে পাকিস্তানের সাথে সম্পর্ক ছিন্নের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া হয়।

তবে পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক ছিন্নের বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করেছেন রাজনীতি বিশ্লেষক শান্তনু মজুমদার। তিনি বলেন, ‘বর্তমানে দাবি উঠেছে পাকিস্তানি সামরিক অফিসারদের বিচারের আওতায় নিয়ে আসা। কিন্তু এখনও তারা একাত্তরে গণহত্যার বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ক্ষমা চায়নি। এই সময়ে যদি তাদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করা হয় তাহলে তারা সুযোগ পেয়ে বসবে। বিশ্ববাসীর কাছে বলে বেড়াবে যে, আমাদের সাথে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই। সুতরাং এখানে বিচার আবার কী।’

তিনি বলেন, ‘এর চেয়ে পাকিস্তানের কর্মকাণ্ডের বিষয়ে আমাদের তীক্ষ্ণ নজর রাখা জরুরি। তারা কি করছে সব সময় তা চোখে চোখে রাখতে হবে। আর এখন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে।’  পাকিস্তানের সাথে ‘সম্পর্কচ্ছেদ’ করার আগে অর্থনৈতিক বিষয়টি আমাদের মাথায় রাখতে হবে বলে মনে করেন শান্তনু মজুমদার। তিনি বলেন, ‘এই সময়ে আমাদের অর্থনীতি উদীয়মান। আমাদের পুরনো লেনদেনের হিসাব মিলাতে হবে। এই মুহূর্তে তাদের সাথে সম্পর্ক চ্ছিন্ন করার ক্ষেত্রে ভেবে দেখবার অবকাশ আছে।’

অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার বলেন, ‘বাংলাদেশে পাকিস্তানবিরোধী একটি আবহ তৈরি হয়েছে। কিন্তু আন্তর্জাতিক অঙ্গণে কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় এই পরিস্থিতি এখনো তৈরি হয়নি। আমাদের এখন বিভিন্নভাবে সেই পরিস্থিতি তৈরি করতে হবে, যাতে পাকিস্তান আন্তর্জাতিক চাপে পড়ে।’

আরটিএমনিউজ২৪ডটকম/ এন এ কে

Logo-orginal