, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

admin admin

জাকাত না দেওয়ায় যে সব শাস্তি

প্রকাশ: ২০১৬-০৬-১৪ ১২:২৪:১৯ || আপডেট: ২০১৬-০৬-১৪ ১২:২৪:১৯

Spread the love

জাকাত না দেওয়ায় যে সব শাস্তি
জাকাত না দেওয়ায় যে সব শাস্তি

আরটিএমনিউজ২৪ডটকম, ক্রীড়া ডেস্কঃ  তারাবিতে পবিত্র কোরআনের তেলাওয়াতকৃত অংশের বিশেষ উল্লেখযোগ্য একটি বিষয় হচ্ছে জাকাত। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনের সূরা তওবার ৬০ নম্বর আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘জাকাত তো কেবল নিঃস্ব, অভাবগ্রস্থ ও তৎসংশ্লিষ্ট কর্মচারীদের জন্য, যাদের মন আকৃষ্ট করা হয় তাদের জন্য, দাস মুক্ত করার জন্য, ঋণগ্রস্থদের জন্য, আল্লাহর পথে জিহাদকারীদের জন্য, (অভাবগ্রস্থ) পথযাত্রীদের জন্য। এটা আল্লাহর বিধান। আল্লাহ সর্বজ্ঞ ও প্রজ্ঞাময়।’

এ আয়াতে জাকাত প্রদানের জন্য ৮টি খাত সুনির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। নিঃস্ব বলতে তাদের বুঝায় যাদের একেবারেই কোনো সম্পদ নেই। অভাবগ্রস্থ বলতে বুঝায় যাদে সম্পদ আছে কিন্তু পরিবার-পরিজন নিয়ে স্বাভাবিক জীবনযাপনের জন্য সেই সম্পদ পর্যাপ্ত নয়। তৎসংশ্লিষ্ট কর্মচারী বলতে বুঝায় যারা সরকারি জাকাত বিভাগে জাকাত সংগ্রহ ও বিতরণের কাজে নিয়োজিত তাদের ভাতা জাকাত থেকে প্রদান করা। যাদের মন আকৃষ্ট করা হয় বলতে বুঝায়, সে সব অমুসলিম ইসলামের প্রতি দুর্বলমনা। কিছুটা আর্থিক সহায়তা পেলে ইসলাম গ্রহণে উৎসাহবোধ করবে। অধিকাংশ মুফাসসির ও ইসলামি স্কলারদের মতে, জাকাত প্রদানে এ চতুর্থ খাতটি ইসলামের প্রাথমিক যুগের জন্য প্রযোজ্য ছিল। কিন্তু মুসলমানরা নিজস্ব শক্তিতে ইসলাম নিয়ে সুপ্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর উক্ত খাত রহিত হয়ে গেছে। এখন কোনো অমুসলিমকে ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট করার জন্য জাকাত থেকে সহায়তা করা যাবে না। সাড়ে বায়ান্ন ভরি (৬১২.৩৬ গ্রাম) রূপা বা তার মূল্যমানের অতিরিক্ত সম্পদ যার মালিকানায় আছে তাকে জাকাত দেওয়া যাবে না।

জাকাত প্রদানের নির্দেশ দিতে যেয়ে মহান আল্লাহ আরও ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা নামাজ আদায় কর এবং জাকাত প্রদান কর। তোমরা যে উত্তম কাজ নিজেদের জন্য অগ্রে প্রেরণ করবে তা আল্লাহর নিকট পাবে। নিশ্চায়ই তোমরা যা কর আল্লাহ তা দেখেন।’ –সূরা বাকারা: ১১০

জাকাত প্রদানের ফজিলত বলতে যেয়ে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেছেন, ‘তোমাদের মধ্য থেকে যারা আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে জাকাত দিয়ে থাকে তারাই নিজেদের সম্পদ কয়েক গুণ বৃদ্ধি করে থাকে।’ –সূরা আর রূম: ৩৯

‘হে নবী! আপনি তাদের সম্পদ থেকে জাকাত গ্রহণ করুন, যা দ্বারা আপনি তাদের পবিত্র ও পরিশুদ্ধ করবেন। আর তাদের জন্য রহমতের দোয়া করুন। নিশ্চয়ই আপনার দোয়া তাদের জন্য শান্তিস্বরূপ।’ –সূরা তওবা: ১০৩

জাকাত প্রদান না করার শাস্তি সম্পর্কে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেছেন, ‘যারা সোনা, রূপা জমা রাখে এবং তা আল্লাহর পথে ব্যয় করে না- তাদের আপনি যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির সুসংবাদ দিন। যেদিন সেগুলো উত্তপ্ত করে তাদের মুখমণ্ডল, পার্শ্ব ও পিঠে দাগ দেওয়া হবে। (এবং বলা হবে) এগুলো তোমাদের সেই সম্পদ, যা তোমরা নিজেদের জন্য সঞ্চিত করে রেখেছিলে। এখন তোমরা নিজেদের সঞ্চিত সম্পদের স্বাদ আস্বাদন কর।’ -সূরা তওবা: ৩৪-৩৫

জাকাত প্রদান না করার শাস্তি সম্পর্কে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘আল্লাহ যাকে সম্পদ দিয়েছেন, সে যদি তার সম্পদের জাকাত আদায় না করে তাহলে তার সম্পদকে কিয়ামতের দিন টাকপড়া বিষধর সাপের রূপ দেওয়া হবে। যার চোখের ওপর দু’টি কালো দাগ থাকবে। কিয়ামতের দিন সেই সাপকে তার গলায় পেঁচিয়ে দেওয়া হবে। এরপর সাপ তার মুখে দংশন করতে থাকবে এবং বলতে থাকবে, আমি তোমার সম্পদ, আমি তোমার সঞ্চয়।’ –সহিহ বোখারি: ৪৫৬৫

সাড়ে বায়ান্ন ভরি (৬১২.৩৬ গ্রাম) রূপা বা তার মূল্যমানের অতিরিক্ত সম্পদ কারো মালিকানায় পূর্ণ এক চান্দ্রবছর অতিবাহিত হলে; তার ওপর জাকাত ফরজ হয়। যার ওপর জাকাত ফরজ তার দায়িত্ব হলো, জাকাতের হকদারের কাছে জাকাত পৌঁছে দেওয়া। তার কাছে থেকে কেউ এসে জাকাত নিয়ে যাকে এ প্রত্যাশা না করা।

জাকাত প্রদানের জন্য জাকাতগ্রহীতাদের বাড়িতে ডেকে এনে ভিড় সৃষ্টি করার অনুমতি ও শিক্ষা ইসলাম দেয়নি। তাই এ ধরণের ভিড়ে যদি কোনো প্রাণ বা সম্পদের ক্ষয়-ক্ষতি হয় তবে সে দায় ইসলামের নয়। যে ব্যক্তি জাকাত প্রদানের নামে ভিড় সৃষ্টি করল, দরিদ্র মানুষকে ডেকে আনল; সে দায় তাকেই বহন করতে হবে। নিরাত্তার স্বার্থে প্রশাসনের উচিৎ এ ধরণের লোক দেখানো আয়োজনকে শক্ত হাতে দমন করা। জাকাতের বিধান গরিবকে হাসানোর জন্য, গরিবকে কাঁদানোর জন্য জাকাতের বিধান নয়।

Logo-orginal