, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

admin admin

টাকা না দিলে লাশ ভাসবে নদীতে

প্রকাশ: ২০১৬-০৬-২২ ১১:২৭:০৬ || আপডেট: ২০১৬-০৬-২২ ১১:২৭:০৬

Spread the love

আরটিএমনিউজ২৪ডটকম, ঢাকাঃ গুলশান এলাকার ব্যবসায়ী মো. হামিদুর রহমান ৪ জুন থেকে অপরিচিত কোনো ফোন রিসিভ করেন না। ওইদিন সকালে সেন্ট্রাল কুরিয়ার সার্ভিস থেকে তাকে একটি খাম দেয়া হয়। কম্পিউটার কম্পোজ করা স্বাক্ষরবিহীন ওই চিঠিতে তার কাছে ২০ লাখ চাঁদা দাবি করা হয়। টাকা না দিলে গুলি করে লাশ টুকরো টুকরো করে নদীতে ভাসিয়ে দেয়ার হুমকিও দেয়া হয়। এরপর থেকে অপরিচিত কোনো নম্বরের ফোনকল রিসিভ করেন না হামিদুর। যুগান্তরকে তিনি জানান, প্রায়ই দেশী-বিদেশী বিভিন্ন নম্বর থেকে ফোন আসে। কয়েকদিন আগে একটি নম্বর রিসিভ করার পর হুমকি পান। লিড নিউজ দৈনিক যুগান্তরের ।

এরপর থেকে পরিচিত নম্বর ছাড়া কোনো কল রিসিভ করেন না। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে যান না। মহাখালীতে নিজ বাসাতেই থাকেন। জিসান বাহিনীর নামে হুমকি পাওয়ার পর থেকে চরম আতংকে দিন কাটাচ্ছেন তিনি। তার মা হার্টের রোগী, বাবাও অসুস্থ। এ অবস্থায় বাসায় বিষয়টি জানলে তারা টেনশন করবেন। তাই বাসায় কাউকে কিছু বলেননি হামিদুর। চরম হুমকিতে নিজেই সারাক্ষণ ভয়ের মধ্যে আছেন। ৪ জুন গুলশান থানায় জিডি করার পর পুলিশও তাকে একটু সাবধানে চলাফেরা করতে বলেছে।
জানা গেছে, সন্ত্রাসীদের সহযোগী পরিচয় দিয়ে এবং ভয়ংকর সন্ত্রাসীদের নাম ব্যবহার করে চাঁদা দাবির অনেক অভিযোগ আসছে নগরীর বিভিন্ন থানায়। প্রায় দু’ডজন সন্ত্রাসীর নাম ব্যবহার করে এসব চাঁদাবাজি হচ্ছে। শুরুতে দেশের বিভিন্ন অপারেটরের ফোন নম্বর থেকে, পরে বিদেশী নম্বর থেকেও ফোন করে চাঁদা দাবি ও হুমকি দেয়া হচ্ছে।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ ও অপরাধ তদন্ত বিভাগ (ডিবি) সূত্র জানায়, কিছু সন্ত্রাসীর নাম ব্যবহার করে অনেক দিন থেকেই রাজধানীতে চাঁদাবাজি চলছে। সম্প্রতি এটা কিছুটা কমে এলেও ঈদ সামনে রেখে আবার বেড়েছে। রাজধানীর মিরপুরের শাহাদাত, মধ্য ঢাকার সুব্রত বাইন, জুরাইনের কালা আমির, গেণ্ডারিয়ার ইমন, খিলগাঁও-রামপুরার ঈশান ও জিসান, মগবাজারে রনি, বাড্ডায় শাহজাদা, বিজয়নগর-পল্টনের মোহাম্মদ, কোতোয়ালিতে ইমু বাহিনীর প্রধান ইমুর নামে চাঁদা দাবি করা হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সরকারের প্রভাবশালী কর্মকর্তা পরিচয় দিয়েও মোবাইল ফোনে চাঁদাবাজি করা হচ্ছে।
এমনকি বেপরোয়া এই চাঁদাবাজরা হুমকি দিতে ছাড়েনি কারা মহাপরিদর্শককেও (আইজি প্রিজন)। জানা গেছে, মোবাইল ফোনে হুমকি দিয়ে চাঁদাবাজির নানা অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি তিন শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস, খোরশেদ আলম রাসু ও পিচ্চি হেলালকে কাশিমপুর কারাগার থেকে দেশের তিনটি কারাগারে স্থানান্তর করা হয়। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে শনিবার সাংবাদিক ও কিলার আব্বাসের কাছের লোক পরিচয় দিয়ে এসএমএসের মাধ্যমে আইজি প্রিজন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দিনকে ‘শেষ দেখে নেয়া হবে’ বলে হুমকি দেয়া হয়েছে। উল্লেখ্য, এই সন্ত্রাসীদের নামে রাজধানীর বড় বড় ব্যবসায়ীর কাছে চাঁদা দাবি করা হচ্ছিল।
এদিকে গত সপ্তাহে নিকুঞ্জের ব্যবসায়ী হাসান উদ্দিনের কাছে শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদাতের নাম ব্যবহার করে ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করা হয়। পরে তিনি ওই নম্বর বদলে ফেলেন। জুনের প্রথম সপ্তাহে কাফরুলে লোডস্টার ফ্যাক্টরির মালিকের কাছে মোবাইল ফোনে দুই কোটি চাঁদা দাবি করা হয়। এ সময় চাঁদাবাজরা নিজেদের প্রধানমন্ত্রীর প্রটোকল অফিসার ও প্রধানমন্ত্রীর আত্মীয় পরিচয় দেয়। তারা ওই ব্যবসায়ীকে তুলে নেয়ার হুমকিও দেয়। কাফরুল থানা পুলিশকে বিষয়টি জানানোর পর পুলিশ ফাঁদ পেতে শেখ মুন্নি আক্তার নিপা, সেলিম, আসাদুজ্জামান ও মোস্তফা হাসান নামে চারজনকে হাতেনাতে গ্রেফতার করে। এ সময় তাদের কাছ থেকে একটি ওয়াকিটকি উদ্ধার করা হয়। কাফরুল থানা পুলিশ জানায়, নিপার নেতৃত্বে ১০-১২ জনের একটি চাঁদাবাজ গ্রুপ কাফরুল এলাকায় সক্রিয় রয়েছে। এ দলের অন্য সদস্যদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
মোবাইল ফোনে চাঁদাবাজির বিষয়ে ডিবির উপপুলিশ কমিশনার মাসরুকুর রহমান খালেদ যুগান্তরকে বলেন, ‘এবার ঢালাও অভিযোগ আসছে না। সন্ত্রাসীদের নাম ব্যবহার করে কিছু ফোন আসতে পারে। কিন্তু আমরা এবার সে রকম অভিযোগ খুব বেশি পাচ্ছি না। অনেক ক্ষেত্রে ছিঁচকে সন্ত্রাসীরা মোবাইল ফোনে হুমকি-ধমকি দিচ্ছে। ফোনে চাঁদাবাজি প্রতিরোধে ঢাকা মহানগর পুলিশের একটি বিশেষ সেল আছে। ওই সেলে কোনো অভিযোগ এলে ডিবিকে তদন্ত করতে বলা হয় এবং তারা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেন।’
পুলিশের বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, চাঁদা দাবি করে সবচেয়ে বেশি ফোন আসে ভারত থেকে। সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে কিছু ফোনকল আসে। ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের (সিটি) এডিসি মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেন জানান, সিটি ইউনিটের সঙ্গে আন্তর্জাতিক চ্যানেলে যোগাযোগ আছে। যারা বিদেশ থেকে চাঁদা দাবি করবে তাদের শনাক্ত করার প্রযুক্তিগত সক্ষমতাও রয়েছে। ব্যবহৃত সিমগুলোর তথ্য রয়েছে সংশ্লিষ্ট দেশে। বিদেশ থেকে যারা চাঁদা দাবি করবে তাদের বিষয়ে তথ্য বিনিময় করা হবে। সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর আইনশৃংখলা বাহিনী তাদের আইনের আওতায় নিতে পারবে। সিটি ইউনিটের প্রধান ও পুলিশের ডিআইজি মনিরুল ইসলাম বলেন, টেলিফোনে চাঁদাবাজির ক্ষেত্রে দেখা যায় যেসব নম্বর দিয়ে চাঁদা দাবি করা হয় তার অধিকাংশই ভুয়া রেজিস্ট্রেশনের। সিমকার্ডের রি-রেজিস্ট্রেশন শতভাগ নিশ্চিত করা গেলে এ ধরনের অপরাধ নিয়ন্ত্রণ অনেকটা সহজ হবে।

Logo-orginal