সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সেখানে অবস্থিত রাষ্ট্রায়ত্ত্ব রাসায়নিক কারখানা চিটাগং কেমিক্যাল কমপ্লেক্সে আক্রমণই ছিল তাদের উদ্দেশ্যে। উক্ত কারখানায় ২৫ চীনা নাগরিক কর্মরত রয়েছেন। চার জঙ্গি গ্রেপ্তারের পর বিদেশি এ নাগরিকদের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার একেএম হাফিজ আক্তার বলেন, গ্রেপ্তারকৃতরা জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্য। তারা চট্টগ্রামে বড় ধরনের নাশকতার পরিকল্পনা করেছিলেন। এদের মধ্যে একজন ধর্মান্তরিত যুবকও রয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, সীতাকু-ের বাড়বকু-ে অবস্থিত দেশের একমাত্র রাষ্ট্রায়ত্ব রাসায়নিক কারখানা ‘চিটাগাং কেমিক্যাল কমপ্লেক্স’ ২০০২ সালে চারদলীয় জোট সরকারের আমলে বন্ধ করে দেয়া হয়। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর এই কারখানাটি চালুর উদ্যোগ নিলে দেখা যায় দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ পড়ে থাকায় কারখানার অধিকাংশ যন্ত্রপাতিই অকেজো হয়ে গেছে। কারখানা চালু করতে গিয়ে এসব যন্ত্রপাতি পুনঃস্থাপনের প্রয়োজন হয়ে পড়ে। নতুন যন্ত্রপাতি স্থাপনে ২০১০ সাল থেকে প্রক্রিয়া শুরু হলে পুনরায় যন্ত্রপাতির জন্য সংশ্লিষ্ট কাজে অভিজ্ঞ বিদেশি কোম্পানির কাছ থেকে দরপত্র আহ্বান করা হয়। এতে চীন ও ভারতের দুটি প্রতিষ্ঠান দরপত্র প্রদান করলে সবনি¤œ দরদাতা হিসেবে চীনের হুয়ান ওয়াইন নামক প্রতিষ্ঠান ঠিকাদারি লাভ করে।
চিটাগাং কেমিক্যাল কমপ্লেক্সের সিবিএ সভাপতি মো. নাছির জানান, চীনের হুয়ান ওয়াইন কারখানার যন্ত্রপাতি বসানো দায়িত্বে আছে। সেখানে ২৫ জনের মত চীনা নাগরিক প্রায় ৩ বছর ধরে যন্ত্রপাতি স্থাপনের কাজ করছেন। এখন কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। বর্তমানে বিদ্যুৎ প্ল্যান্ট স্থাপনের কাজ চলছে। এই কাজ শেষ হলে অল্পদিনের মধ্যে কাজ বুঝিয়ে দিয়ে তারা দেশে ফিরে যাবার কথা। এ অবস্থায় জঙ্গি অবস্থানের খবর পেয়ে তারাও ধারণা করছেন এসব চীনা নাগরিকই ছিলেন জঙ্গিদের টার্গেট। বাড়বকু-ে অবস্থানরত চীনা নাগরিকদের ওপর বড় রকমের হামলার উদ্দ্যেশ্যে বেশ কিছু জঙ্গি সদস্য কারখানা সংলগ্ন এলাকায় অবস্থান নিয়েছে এমন সংবাদ পেয়ে অভিযান চালায় পুলিশ।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আটক হবার পর জঙ্গি সদস্যরা হামলার পরিকল্পনা বিষয়ে বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য দেন। এতে বিদেশি নাগরিক ছাড়াও থানা ও পুলিশ সদস্যদের ওপর হামলার কথাও বলেন তারা। বাড়বকু-ের মান্দারীটোলা গ্রামের জয়নাল আবেদীনের পুত্র রাজীব কেমিক্যাল কমপ্লেক্সের কাছাকাছি পাহাড়ে একটি ঘর বানিয়ে জঙ্গিদের আশ্রয় দিয়েছে বলে অভিযোগ উঠলেও অভিযানে তাকে আটক করা সম্ভব হয়নি বলে জানান বাড়বকু- ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছাদাকাত উল্লাহ মিয়াজী। এঘটনার পর থেকে পুলিশ একাধিকবার কারখানার ভেতরে পরিদর্শন করে। বিদেশি নাগরিকদের বিষয়ে কারখানার নিরাপত্তা প্রহরীদের দিকনির্দেশনা দিয়ে যায়।
এদিকে কেমিক্যাল কমপ্লেক্সে হামলার পরিকল্পনা প্রকাশের পর উপজেলার অন্যান্য শিল্প প্রতিষ্ঠানে কর্মরত বিদেশি নাগরিকদের তথ্য সংগ্রহ শুরু করেছে উপজেলা প্রশাসন। সীতাকু- উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাজমূল ইসলাম ভূইয়া বলেন, সীতাকু-ের অনেকগুলি শিল্প প্রতিষ্ঠানে বিদেশি নাগরিক কাজ করছেন। কিন্তু কোথায় কতোজন আছেন তা আমাদের জানা নেই। এ কারণে সব প্রতিষ্ঠানকে বিদেশিদের তালিকা পাঠানোর জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে কিছু তথ্য পাওয়া গেছে। সব তথ্য পাওয়া গেলে তাদের তালিকা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়ে এদের নিরাপত্তায় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
গ্রেপ্তার হয়েছেন যারা : নাশকতার অভিযোগে গ্রেপ্তারকৃত আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্যরা হলেন পটিয়ার ছনহরা গ্রামের মুসায়াব ইবনে ওমায়ের ওরফে পিকলু দাশ, সীতাকু-ের রাসেল মোহাম্মদ ইসলাম, সীতাকু-ের খোরশেদুল আলম ও বি বাড়িয়ার শিপন ওরফে ফয়সাল।
সীতাকু- থানার পরিদর্শক (ওসি) ইফতেখার হাসান বলেন, চার জঙ্গি সদস্যের কাছে ল্যাপটপ, আই ফোন, ৪টি কিরিচ, ৪টি চাপাতিসহ বেশ কিছু সরঞ্জাম পাওয়া গেছে। দশ দিনের রিমান্ডের আবেদন জানিয়ে আজ (মঙ্গলবার) আদালতে পাঠানো হবে।
উৎসঃ পুর্বকোণ