, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

admin admin

জঙ্গি ঘাঁটি কোথায় ?

প্রকাশ: ২০১৬-০৭-১২ ১০:৩৩:৩২ || আপডেট: ২০১৬-০৭-১২ ১০:৩৪:১৪

Spread the love

জঙ্গি ঘাঁটি কোথায় ?
জঙ্গি ঘাঁটি কোথায় ?

আরটিএমনিউজ২৪ডটকম, অনলাইন ডেস্কঃ জঙ্গি ঘাঁটির সন্ধানে রয়েছে আইন প্রয়োগকারী সব সংস্থা। এ ব্যাপারে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে মাঠ পর্যায়ের সব স্তরের কর্মকর্তাকে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দেশের উত্তরাঞ্চল ও পার্বত্যাঞ্চলের বেশ কয়েকটি জেলায় বিশেষ নজরদারি শুরু হয়েছে। তথ্য পাওয়ামাত্রই ঘাঁটি তছনছ করতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

সরকারি একটি সূত্র এসব তথ্য দিয়ে বলেছে, গুলশান আর্টিজান ও শোলাকিয়ায় নজিরবিহীন সশস্ত্র হামলার পর জঙ্গি দমনে সরকার সর্বাত্মক ব্যবস্থা নিয়েছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী শিক্ষার্থীদের কারা জঙ্গি কার্যক্রমে নিয়ে যাচ্ছে, তাদের কোথায় প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে— বিশেষ করে জঙ্গিদের ঘাঁটির সন্ধানে নানা পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। ইতিমধ্যেই গোয়েন্দারা নজরদারি শুরু করেছেন সন্দেহজনক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের মসজিদসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ওপর। তদন্ত হচ্ছে অভিযুক্ত বেসরকারি বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকাণ্ড। পাকিস্তান, তুরস্ক, সিরিয়ায় ঘন ঘন যাতায়াতকারী ব্যক্তিদের নামের তালিকাও ইমিগ্রেশন থেকে সংগ্রহ করেছেন গোয়েন্দারা। যেসব প্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থীদের বিদেশ পাঠানোর কাজে নিয়োজিত, তারাও নজরদারির আওতায় রয়েছে। মালয়েশিয়ায় লেখাপড়া করতে যাওয়া বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের নামের তালিকা সংগ্রহের কাজ চলছে। এই শিক্ষার্থীদের পরিবার-পরিজন সম্পর্কেও খোঁজখবর নেওয়া হবে। একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের সঙ্গে সাম্প্রতিক হামলার কোনো যোগসূত্র রয়েছে কিনা, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার মেস বাড়ি সম্পর্কে খোঁজখবর নিচ্ছেন গোয়েন্দারা। ঢাকা, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের পাঁচ তারকা হোটেল, বিমানবন্দরসহ স্পর্শকাতর বিভিন্ন স্থাপনা ঘিরে গোয়েন্দা নজরদারির পাশাপাশি বাড়তি নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কূটনৈতিক এলাকায় নেওয়া হয়েছে বিশেষ নিরাপত্তাব্যবস্থা। গতকাল থেকে নিরাপত্তায় যুক্ত হয়েছে অতিরিক্ত বিজিবি। অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উচ্চবিত্ত ও শিক্ষিত পরিবারের মেধাবী সন্তানদের কোথায় নিয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে, কারা তাদের মগজ ধোলাই করছে— এসব প্রশ্নের জবাব গোয়েন্দাদের বের করতে হবে। আর এসব প্রশ্নের জবাব বের করতে হলে জঙ্গি ঘাঁটির সন্ধান ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। নইলে মেধাবী শিক্ষার্থীদের এই পথে যাওয়া রোধ করা সম্ভব হবে না।

পুলিশের সাবেক আইজি মোহাম্মদ হাদিস উদ্দিন বলেন, যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলা ও অপরাধ দমনে বাংলাদেশ পুলিশের সক্ষমতা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। তবে মাঠ পর্যায়ে পুলিশ যখন কাজ করবে, তখন সিনিয়র কর্মকর্তাদের সঠিকভাবে তাদারকি করতে হবে। এতে সাফল্য আসবে দ্রুত।

র‌্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ গতকাল র‌্যাব কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা যদি প্রত্যেকেই নিজ নিজ অবস্থান থেকে এই জঙ্গিদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াই, তাহলে খুব শিগগিরই একে সমাজ থেকে নির্মূল করা যাবে এবং দেশের যে অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রা তা, অব্যাহত থাকবে।’

জঙ্গি ঘাঁটি : দেশে জঙ্গি ঘাঁটির সংখ্যা কত— এমন প্রশ্নের সঠিক কোনো জবাব নেই সংশ্লিষ্টদের কাছে। তবে গোয়েন্দাদের ধারণা, এ সংখ্যা শ’ ছাড়িয়ে গেছে। এসব ঘাঁটিতেই তরুণ আর যুবকদের নিয়ে মগজ ধোলাই থেকে শুরু করে অস্ত্র চালনার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। গত ডিসেম্বর থেকে মার্চ— এ চার মাসে শুধু রাজধানীতেই জঙ্গিদের ১৪টি আস্তানার সন্ধান পায় পুলিশ ও র‌্যাব। এসব আস্তানা থেকে জঙ্গিদের গ্রেফতারের সঙ্গে বিপুলসংখ্যক শক্তিশালী গ্রেনেড, বোমা, বোমা তৈরির সরঞ্জাম এবং জিহাদি বই উদ্ধার করা হয়। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় কয়েকটি জঙ্গি আস্তানার সন্ধান মেলায় গোয়েন্দাদের ভাবিয়ে তোলে। জঙ্গিদের ধরতে রাজধানীতে বিশেষ গোয়েন্দা নজরদারি শুরু হয়। জেরার মুখে তারা পুলিশ ও গোয়েন্দাদের জানিয়েছিল, তারা বড় ধরনের হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। গত মার্চে মাতুয়াইল কাঠেরপুল এলাকার সিদ্দিক মিয়ার বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ময়মনসিংহ জেলা জেএমবির আমির হুজাইফা আকনসহ পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়। সেই সঙ্গে উদ্ধার করা হয় বিপুলসংখ্যক শক্তিশালী গ্রেনেড, বোমা, বোমা তৈরির সরঞ্জাম ও জিহাদি বই। বাড্ডার একটি আস্তানায় অভিযান চালাতে গেলে জঙ্গিরা ডিবি পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। একই মাসে মোহাম্মদপুরের নবোদয় হাউজিংয়ের বি-ব্লকের পাঁচ তলার ফ্ল্যাটে অভিযান চালিয়ে গ্রেনেড, গ্রেনেড তৈরির সরঞ্জাম ও বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয়। বাড্ডা থেকে গ্রেফতার দুজনের কাছ থেকে মোহাম্মদপুরের এই বাড়ির সন্ধান মেলে। একই দিন একই এলাকার অন্য একটি বাসায় জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে অভিযান চালিয়ে সন্দেহভাজন ১৯ জঙ্গিকে গ্রেফতার করা হয়। ওই বাসায় জঙ্গিরা প্রশিক্ষণ গ্রহণ ও বোমা তৈরি করত। দক্ষিণখানের অন্য একটি বাসা থেকে দুটি শক্তিশালী বোমা ও বিপুলসংখ্যক বিস্ফোরক উদ্ধার করেন নবগঠিত কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের সদস্যরা। হাজারীবাগে জঙ্গি আস্তানায় আবদুল্লাহ ওরফে নোমান এবং কালাম ওরফে হিরণ গোয়েন্দাদের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে মারা যান। এ ছাড়া রাজধানীতে আরও বেশ কিছু ঘাঁটির সন্তান পান গোয়েন্দারা।

নাম প্রকাশ না করে সূত্রটি আরও জানান, মফস্বল বা নির্জন এলাকায় জঙ্গিরা প্রশিক্ষণ নিলেও তারা এখন ঢাকামুখী। তারা ছদ্মনাম ব্যবহার করে বাসা-বাড়ি ভাড়া নিচ্ছে। ১০ জনের সঙ্গে সহজেই মিশে যাচ্ছে। আগে তারা রাজধানীর কয়েকটি এলাকায় আস্তানা গাড়লেও সব এলাকায় তাদের আস্তানা রয়েছে। এরপরই মূলত রাজধানীর প্রতিটি থানা এলাকার বাড়িওয়ালা এবং ভাড়াটিয়াদের তথ্য চাওয়া হয় বলে জঙ্গি নিয়ে কাজ করছে এমন একটি সূত্র জানান। এ কর্মসূচি আরও জোরালো করা হচ্ছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।

কোথায় প্রশিক্ষণ : সচ্ছল পরিবারের উচ্চশিক্ষিত তরুণদের কৌশলে জঙ্গি সংগঠনে ভিড়িয়ে বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। মগজ ধোলাইয়ের পর তাদের শেখানো হচ্ছে ভারী অস্ত্রশস্ত্র চালানোর কৌশল। গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন, জঙ্গি সংগঠনে যোগ দেওয়ার পর তরুণদের অস্ত্র চালনা এবং বোমা ও গ্রেনেড তৈরির প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। বিদেশ ছাড়াও দেশের কক্সবাজার, টেকনাফ, সিলেট, পার্বত্য চট্টগ্রামসহ পাহাড়ি অঞ্চলে চলে প্রশিক্ষণ কর্মকাণ্ড। এ ক্ষেত্রে অনেক তরুণ বাড়ি ছেড়ে আশ্রয় নেয় ভিন্ন কোনো স্থানে। পরিবার ও স্বজনদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ রাখে না তারা। অনেক তরুণ মানুষের চোখ এড়াতে নেয় ছদ্মবেশ। নিজেদের তারা শৌখিন পর্বতারোহী হিসেবে পরিচয় দেয়। পাহাড়ে অভিযানের কথা বলে বাড়ি থেকে বের হয় তারা। এরপর সেখানে গিয়ে নেয় সশস্ত্র প্রশিক্ষণ। দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে হামলা চালানোর জন্য প্রস্তুত করা হয় তাদের। দেশের পাশাপাশি বিদেশেও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়।

সূত্র জানান, পথভ্রষ্ট তরুণরা বিশেষ করে মালয়েশিয়ায় গিয়ে জঙ্গিবাদের প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। দেশের প্রভাবশালী একটি গোয়েন্দা সংস্থার কাছে খবর রয়েছে, বিপথগামী তরুণদের প্রশিক্ষণ কর্মকাণ্ডের সঙ্গে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা ইন্টার সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্সেরও (আইএসআই) সংযোগ রয়েছে। গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারিতে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে যৌথ অভিযানে নিহত পাঁচ জঙ্গির তথ্য ঘেঁটেও এমন বেশ কিছু তথ্য পেয়েছেন গোয়েন্দারা। এই তরুণদের পাসপোর্ট ঘেঁটে দেখা গেছে, অনেকবারই তারা দেশের বাইরে গেছে। মালয়েশিয়ায় যাতায়াত ছিল সবচেয়ে বেশি। সে দেশের বিভিন্ন স্থানে তাদের জঙ্গি প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে বলে মনে করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

তদন্ত সংস্থাগুলোর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ধনাঢ্য পরিবারের উচ্চশিক্ষিত তরুণদের নিশানা করছে জঙ্গি সংগঠনগুলো। বিশেষ করে ইংরেজি মাধ্যমে পড়া শিক্ষার্থীদের দলে টানতে চাইছে তারা। দলে ভেড়ার পর মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন আইএসের মতাদর্শে উজ্জীবিত করা হচ্ছে। বিদেশে নিয়ে গিয়ে একে-৪৭, একে-২২ রাইফেলসহ অন্য ভারী অস্ত্র চালনা শেখানো হচ্ছে। শেখানো হচ্ছে বোমা ও গ্রেনেড তৈরির কলাকৌশল। সূত্র জানান, পার্বত্যাঞ্চলে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।

নজরদারিতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় : জঙ্গি হামলায় ঘুরেফিরে আসছে দেশের নামিদামি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আর ইংরেজি মাধ্যমের বেশ কিছু স্কুলের নাম। ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ হলেও নামিদামি বেশ কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বলতে গেলে নির্বিঘ্নেই কার্যক্রম চালিয়েছে উগ্রবাদী কয়েকটি সংগঠন। হিযবুত তাহ্রীরের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের একাংশ জঙ্গি তত্পরতায় জড়িয়েছে বলে অভিযোগ আছে। হিযবুত নিষিদ্ধ হলেও ভিন্ন নামে বা গোপনে তত্পরতা চালিয়ে গেছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয়। বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের মসজিদে নামাজের পর জঙ্গিবাদী বিষয়ের ওপর নানা আলোচনা হয়ে থাকে। গোয়েন্দারা এসব বিষয় তদন্ত শুরু করেছে। পুলিশ জানায়, আর্টিজান ও শোলাকিয়ায় নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র জড়িত থাকার পর পুলিশ ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও ৪০ ছাত্রের ব্যাপারে খোঁজখবর নিচ্ছে।

উৎসঃ বাংলাদেশ প্রতিদিন

Logo-orginal