, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

admin admin

নিবরাস ছিল নিরাপদে “

প্রকাশ: ২০১৬-০৭-১৯ ১৩:৩১:১০ || আপডেট: ২০১৬-০৭-১৯ ১৩:৩১:১০

Spread the love
নিবরাস ছিল নিরাপদে
নিবরাস ছিল নিরাপদে

আরটিএমনিউজ২৪ডটকম, অনলাইন ডেস্কঃ জঙ্গিসহ নানা অপরাধে গত তিন বছরে সন্ত্রাসী, আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জামায়াত শিবিরের কর্মীসহ ঝিনাইদহে ৩৩ জন ক্রসফায়ারে নিহত হলেও সেই জনপদে নিবরাস ছিলো নিরাপদে। সেখানেই নির্বিঘে ছিলো জঙ্গি নিব্রাস ও তার সঙ্গিরা।ক্রসফায়ার ও ‘বন্দুকযুদ্ধে’র রাজ্য যখন এক করে অপরাধীরা খুন হচ্ছে তখন নিবরাস কোথায় ছিল, এমন প্রশ্ন এখন ঝিনাইদহের মানুষের মুখে মুখে।

এর মধ্যে যারা খুন হয়েছেন অনেকে ছিল ছাত্র। যারা ওই এলাকারই বাসিন্দা। ঝিনাইদহে নিব্রাসের অবস্থান ও সেখানকার নানা  খুনের তদন্ত নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংশ্লিষ্ট সদস্যদের বিরুদ্ধে। গত ১ জুলাই ঝিনেইদহে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয় ঝিনাইদহ আলিয়া মাদ্রাসার ছাত্র উপজেলার বদনপুর গ্রামের রজব আলীর পুত্র শহীদ আল মাহমুদ এবং কুষ্টিয়া যোকিয়া ভাটপাড়া এলাকার আব্দুস সাত্তারের ছেলে আনিসুর রহমান। গত ২১ এপ্রিল কালীগঞ্জ মেইন বাসস্ট্যান্ড থেকে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে মাহবুব হাসান লিমন (১৮) নামের এক এইচএসসি পরীক্ষার্থীকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। ২০ এপ্রিল চুয়াডাঙ্গা থেকে উদ্ধার হয়েছে ওই একই কলেজের এইচএসসি প্রথম বর্ষের ছাত্র সোহানুর রহমানের (১৬) লাশ। সে কালিগঞ্জ ঈশ্বররা গ্রামের মহসিন আলীর ছেলে। পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে সোহান কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলো না।

চলতি মাসে এই এলাকায় আরো দুইজন অপহরণ ও হত্যার শিকার হয়েছেন। এরা হলেন, আবুজর গিফারী ও শামিম হোসেন। গিফারী কালিগঞ্জের চাপালী গ্রামের নুর ইসলামের ছেলে। চাপালী গ্রামের জামতলা থেকে গত ১৮ মার্চ ডিবি পরিচয়ে তাকে অপহরণ করা হয়। ১৩ এপ্রিল যশোরের হৈবতপুর বিরামপুর শ্মশান থেকে তার লাশ উদ্ধার হয়। ২৪ মার্চ কালিগঞ্জের বাকুলিয়া গ্রাম থেকে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে অপহৃত হন শামিম হোসেন। ১৩ এপ্রিল গিফারীর লাশের সঙ্গে একই স্থান থেকে তার লাশও উদ্ধার হয়। শামিম বাকুলিয়া গ্রামের রুহুল আমিনের ছেলে। তার দু’জন শিবিরের কর্মী ছিলো বলে জানা গেছে।

এছাড়া ঝিনাইদহে আরো যারা অপহরণ, হত্যা ও গুমের শিকার হয়েছেন তারা হলেন, বিএনপি কর্মী রফিকুল ইসলাম, সন্ত্রাসী ঘটনায় অভিযুক্ত ইউসুফ আলী বিশ্বাস, উজ্জল হোসেন, আসাদুল ইসলাম ও মফিজুল হক, জামায়াতের কোটচাদপুর উপজেলার অর্থ সম্পাদক এনামুল হক বিশ্বাস, ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য জামায়াত নেতা হাফেজ আবুল কালাম, চরমপন্থী দলের সদস্য বলে পরিচিত হাদিউজ্জামান হাদি, সোহাগ সরদার, ডাকাত সন্দেহে মইনুদ্দীন, বিএনপি নেতার ছেলে গোলাম আজম ওরফে পলাশ, সাধারণ পরিবারের সন্তান দুলাল হোসেন, যুবদল কর্মী মিরাজুল ইসলাম মিজা, ব্যবসায়ী তৈমুর রহমান তুরান, চরমপন্থী সন্দেহে ছব্দুল হোসেন, আওয়ামী লীগ কর্মী এনামুল হোসেন, বিএনপি নেতা রবিউল ইসলাম রবি, সন্ত্রাসী বলে পরিচিত শরিফুল ইসলাম নজু, শিক্ষক ও জামায়াত কর্মী আবু হুরাইয়া, শিবির কর্মী হাফেজ জসিম উদ্দিন। অপহরণের পর গুম রয়েছেন- আইউব, আজাদ হোসেন ও মোফাজ্জল। এই তিনজন চরমপন্থী দলের সদস্য বলে স্থানীয় সূত্র জানায়।

এছাড়া ২০১৫ সালের ১৬ মে কোটচাঁদপুরের ফাদিলপুর গ্রাম থেকে একটি লাশ উদ্ধার হয়, ২০১৫ সালের ২৬ জুলাই শৈলকুপার ত্রিবেনীতে একটি, ১৬ জুলাই ঝিনাইদহের ফুরসন্দি থেকে একটি, ২০১৪ সালের ১৩ নভেম্বর শৈলকুপার কমল নগর থেকে একটি, ১৬ নভেম্বর ঝিনাইদহের বঙ্কিয়া গ্রাম থেকে একটি এবং ২৬ জুলাই শৈলকুপার রতনহাট থেকে অজ্ঞাত এক যুবকের লাশ উদ্ধার করা হয়। যাদের পরিচয় আজো মেলেনি। এই হচ্ছে ঝিনেইদহের পরিস্থিতি। অথচ সেই ঝিনাইদহে নির্বিঘে দীর্ঘদিন বসবাস করেছে গুলশানে কমান্ডো অভিযানে নিহত জঙ্গি সদস্য নিব্রাস ইসলাম। শুধু নিব্রাসই নয়, সেখানে তার সঙ্গে আরো ৭/৮ যুবক অবস্থান করতো বলে জানা গেছে। স্থানীয় সূত্র জানায়, ঝিনাইদহ শহরের হামদহ এলাকার সোনালীপাড়ার ভাড়া বাসায় থাকাকালে নিব্রাসকে একটি মোটর সাইকেলে এলাকার মানুষ ঘুরে বেড়াতে দেখতেন।

সব সময় তার সঙ্গে আরো দু’জন থাকতো বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান। জানা গেছে এই সময়েই ঝিনাইদহে পুরোহিত আনন্দ গোপাল, সেবায়েত শ্যামানন্দ দাস, খ্রিস্টান হোমিও ডাক্তার সমির খাজা ও আব্দুর রাজ্জাক হত্যার ঘটনা ঘটে। ওই বাড়ির মালিকের স্ত্রী বিলকিস নাহার সাংবাদিকদের বলেছেন, আনুমানিক চার মাস আগে নিবরাস আসেন। ২৮ জুন চলে যান। আর ফুটবল খেলার সঙ্গী স্থানীয় তরুণেরা বলেছেন, মাস খানেক তাদের সঙ্গে নিবরাস খেলেছেন। নিব্রাসকে ওই এলাকার মানুষ সাঈদ নামে চিনতো। স্থানীয় সূত্র জানায়, পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন শাখা চষে বেড়ায় পুরো ঝিনাইদহ। তাদের আচরণে অনেক মানুষ তটস্থ। অথচ সেখানেই নির্বিঘ্নে দিন কাটিয়েছে নিব্রাসের মতো একজন জঙ্গি সন্ত্রাসী। পুলিশ তার কোন খোঁজও পায়নি। এমনকি, চারটি খুনের ঘটনার তদন্তেও নিব্রাসের কোন সংশ্লিষ্টতা খুঁযে পায়নি পুলিশ-গোয়েন্দারা।

উৎসঃ যমুনা নিউজ

Logo-orginal