, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

admin admin

আরাফার দিনের রোযা পূর্ববর্তী এবং পরবর্তী এক বছরের গোনাহ্ মাফ হয়

প্রকাশ: ২০১৬-০৯-১১ ০০:০০:৪২ || আপডেট: ২০১৬-০৯-১১ ০০:০০:৪২

Spread the love
 আরাফার দিনের রোযা পূর্ববর্তী এবং পরবর্তী এক বছরের গোনাহ্ মাফ হয়
আরাফার দিনের রোযা পূর্ববর্তী এবং পরবর্তী এক বছরের গোনাহ্ মাফ হয়

আরটিএমনিউজ২৪ডটকম, ইসলাম ডেস্কঃ  জিলহজ মাসের ৯ তারিখ অর্থাৎ ঈদুল আজহার আগের দিনটি হচ্ছে আরাফা দিবস। পবিত্র কোরআন ও হাদিসের আলোকে এ দিনটি অত্যন্ত ফজিলত ও তাৎপর্যপূর্ণ। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হচ্ছে, শপথ উষার। শপথ ১০ রজনীর, শপথ জোড় ও বেজোড়ের। (সূরা ফজর : আয়াত নং-১-৩)। এ আয়াতে জোড় বলতে ঈদুল আজহার দিন আর বেজোড় বলতে আরাফা দিবসকে বুঝানো হয়েছে। হজরত জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে হজরত মুহাম্মদ (সা.) জোড় বেজোড়ের এ ব্যাখ্যাই করেছেন (তাফসিরে ইবনে কাছীব ও মাআরিফুল কোরআন), অবশ্য জোড় বেজোড়ের অন্যান্য ব্যাখ্যাও রয়েছে। আরাফা দিবসে রোজা রাখা মুস্তাহাব। এ প্রসঙ্গে হজরত মুহাম্মদ (সা.) ইরশাদ করেন, আরাফার দিনের রোজা সম্পর্কে আমি মহান আল্লাহর কাছে আশা করি যে, তিনি এর দ্বারা পূর্ববর্তী এক বছর এবং পরবর্তী এক বছরের গোনাহ্ মাফ করে দেবেন। (তিরমিজি ১/১৫৭ মুসলিম ১/৩৬৮)।

এ হাদিস দ্বারা আরাফা দিবসের রোজার অশেষ সওয়াব ও ফজিলত প্রমাণিত হয়। তবে এটা যারা হজে যাননি তাদের জন্য। যারা হজে যান তারা আরাফা দিবসে আরাফার ময়দানে থাকেন। আর হাজিরা আরাফা দিবসে আরাফার ময়দানে রোজা না রাখাই উত্তম। যাতে তারা সবল সতেজ ও চাঙ্গা থেকে অধিক দোয়া ও ইবাদতে মনোনিবেশ করতে পারেন। এ বিষয়টিও হাদিস দ্বারাই প্রমাণিত। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। হজরত নবী করীম (সা.) আরাফা দিবসে আরাফার ময়দানে রোজা রাখতে নিষেধ করেছেন। (আবু দাউদ, ১/৩৩১)।

আরাফার দিনে হাজীরা মিনা থেকে আরাফার ময়দানে সমবেত হন এবং সূর্যাস্ত পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করেন। এটিই হজের প্রধান রুকন। হাদিসে এরশাদ হয়েছে, ‘আরাফাতে অবস্থান করাই হজ। অর্থাৎ হজের সবচেয়ে বড় রুকন। ফজিলত হিসেবে এ দিনটির গুরুত্ব অপরিসীম। আনাস (রা.) বলেন, জিলহজ মাসের প্রথম দশকের প্রতিটি দিন ১ হাজার দিনের সমতুল্য আর আরাফার দিনটি ১০ হাজার দিনের সমান মর্যাদাপূর্ণ। (ফতহুল বারি : ৮/৭৫)। রাসূল (সা.) বলেন, আরাফার দিনটি সব দিবসের মধ্যে শ্রেষ্ঠ। (উমদাতুল কারি : ৭/২৩৯)।

নানা কারণে এ দিবসটি মুসলমানদের কাছে অবিস্মরণীয়। স্বয়ং আল্লাহ পাক পবিত্র কোরআনে এ দিনের কসম খেয়েছেন। এ কথা স্বতঃসিদ্ধ, আল্লাহ তায়ালা কোনো জিনিসের কসম খেলে তার মর্যাদা বোঝানোই উদ্দেশ্য হয়। এ মহান দিবসে ইসলাম ধর্মের পূর্ণাঙ্গতাসংবলিত আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে। ইমাম বোখারি বর্ণনা করেন, জনৈক ইহুদি খলিফা ওমর ইবনে খাত্তাব (রা.) কে বলেছিল, ‘হে আমিরুল মোমেনিন, আপনাদের কিতাবে একটি বিশেষ আয়াত আছে, যা আমাদের কিতাবে থাকলে আমরা সেদিনটি ঈদ হিসেবে উদ্যাপন করতাম। হজরত ওমর (রা.) তা জানতে চাইলে সে বলল, সূরা মায়েদার তিন নম্বর আয়াত। যাতে বলা হয়েছে, আজ আমি তোমাদের ধর্মকে পূর্ণাঙ্গ করে দিলাম, তোমাদের ওপর আমার নেয়ামত পরিপূর্ণ করে দিলাম এবং ইসলামকে তোমাদের ধর্ম হিসেবে মনোনীত করলাম। হজরত ওমর (রা.) বললেন, আমি ওই দিন এবং স্থান সম্পর্কে জানি। অর্থাৎ জুমার দিন আরাফার ময়দানে ওই আয়াত অবতীর্ণ হয়েছিল।

প্রিয় নবী (সা.) সেদিন এক সারগর্ভ ভাষণ দিয়েছিলেন, যা ছিল তাঁর ৬৩ বছরের নবুয়তি জীবনের কর্মপন্থা ও প্রজ্ঞার সার-নির্যাস। সৃষ্টির আদি থেকে অন্ত পর্যন্ত আগত-বিগত পৃথিবীর সব ভাষণের মধ্যে সেই ভাষণটি শ্রেষ্ঠত্বের মর্যাদায় বিভূষিত। সে ভাষণে ছিল বিশ্বময় শান্তি প্রতিষ্ঠার এক পূর্ণাঙ্গ ও বাস্তব কর্মসূচি। বিশ্ব মানবতার মুক্তির এমন কোনো দিক নেই, যার ছোঁয়া ওই ভাষণে লাগেনি। কেয়ামত অবধি বিপদসঙ্কুল পৃথিবীর উদ্ভূত পরিস্থিতি ও সমস্যার চূড়ান্ত সমাধান রয়েছে সেই ভাষণে। ইতিহাসে তা ‘বিদায় হজের ভাষণ’ নামে পরিচিত।

জিলহজের দশম তারিখে সারা বিশ্বে ঈদ পালিত হলেও প্রিয় নবী (সা.) নবম তারিখটিকেও ঈদ আখ্যায়িত করেছেন। বিশেষত হজব্রত পালনকারীদের জন্য ঈদতুল্য। কেননা ওইদিন আরাফাতে অবস্থানরত হাজীদের ওপর আল্লাহ পাকের অজস্র রহমত বর্ষিত হয়। প্রিয় নবী (সা.) এরশাদ করেন, বদরের যুদ্ধের দিন বাদে শয়তান সবচেয়ে বেশি অপদস্থ, ধিকৃত ও ক্রোধান্বিত হয় আরাফার দিনে। কেননা এ দিন শয়তান আল্লাহ পাকের অত্যধিক রহমত এবং বান্দার অগণিত পাপরাশি মাফ হতে দেখতে পায়। (মুয়াত্তা, মিশকাত)। অন্য একটি হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, আরাফার দিন আল্লাহ তায়ালা প্রথম আকাশে অবতরণ করে ফেরেশতাদের সঙ্গে এভাবে গর্ব করেন_ দেখ, আমার বান্দারা কী অবস্থায় আমার দরবারে উপস্থিত হয়েছে। দূর-দূরান্তের পথ অতিক্রম করার দরুন মাথার চুল এলোমেলো। শরীরে ও কাপড়ে ধুলাবালি লেগে আছে। লাব্বাইক বলে চিৎকার করছে। তোমাদের সাক্ষী রাখছি, আমি তাদের ক্ষমা করে দিলাম। হুজুর (সা.) বলেন, সেদিনকার মতো অন্য কোনো দিন অধিক সংখ্যক লোককে আল্লাহ পাক জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেননি। (ইবনে খুজাইমা : ২৫৯)।

সুতরাং আরাফার দিনটি মুসলমানদের জন্য অত্যন্ত সম্মান ও গর্বের। এ সুমহান দিনের পবিত্রতা ও সম্মান রক্ষার্থে যাবতীয় পাপকর্ম থেকে বিরত থাকা এবং ইবাদত-বন্দেগিতে মনোনিবেশ করা অপরিহার্য। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তোমরা সম্মানিত মাসে নিজের প্রতি জুলুম-অন্যায় করো না।’ (সূরা তওবা : ৩৬)। অন্যত্র এরশাদ হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সম্মানযোগ্য বিধানাবলির প্রতি সম্মান প্রদর্শন করলো, তা তার জন্যই উত্তম।’ (সূরা হজ : ৩০)।

সুত্রঃ ইন্টারনেট

Logo-orginal