, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

admin admin

জঙ্গিবাদবিরোধী সমাবেশের নামে আহলে সুন্নাতের চাঁদাবাজি!

প্রকাশ: ২০১৬-১০-৩১ ১৯:৪৭:৪৪ || আপডেট: ২০১৬-১০-৩১ ১৯:৫৩:৩৫

Spread the love
জঙ্গিবাদবিরোধী সমাবেশের নামে আহলে সুন্নাতের চাঁদাবাজি!
জঙ্গিবাদবিরোধী সমাবেশের নামে আহলে সুন্নাতের চাঁদাবাজি!

আরটিএমনিউজ২৪ডটকম, অনলাইন ডেস্কঃ আহলে সুন্নাত ওয়াল জমা’আত সমন্বয় কমিটির নামে বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের জঙ্গিবাদবিরোধী সমাবেশকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন মাজার ও পীরদের কাছ থেকে জোর করে চাঁদা তোলার অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া, দরবার থেকে লোক নিয়ে সমাবেশে যোগ দিতেও বলা হয়েছে। জানা গেছে, এই সম্মেলনের সঙ্গে সরকারি নিবন্ধনভুক্ত ‘বাংলাদেশ আহলে হাদিস ওয়াল জামাত’-এর কোনও সম্পৃক্ততা নেই। লিড নিউজ বাংলা ট্রিবিউনের ।

 

জনস্বার্থে প্রতিবেদনটি আরটিএম পাঠকদের জন্য হুবুহু তুলে ধরা হলো ।

যদিও বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে আলাপকালে সমন্বয় কমিটির আহ্বায়ক ও বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের মহাসচিব এম এ মতিন এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তার দাবি, প্রকৃত আহলে হাদিসের অনুসারীরাই তাদের ব্যানারে কাজ করছেন এবং সম্মেলনে তারা অংশ নেবেন।

তিনি এও দাবি করেন, সমাবেশে বাংলাদেশের আলেম-ওলামা ও পীর-মাশায়েখদের প্রায় ৭০ ভাগ উপস্থিত হবেন।

জানা গেছে, ‘বাংলাদেশ আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত’ নামে সরকারিরভাবে নিবন্ধিত একটি সংগঠন রয়েছে। সংগঠনটি ১৯৪৮ সাল থেকে নিয়মিত কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। এই সংগঠনটির প্রধান সৈয়দ বাহাদুর শাহ ও সেক্রেটারি খন্দকার গোলাম মাওলা। বাহাদুর শাহ’র অভিযোগ, ‘রাজধানীতে জঙ্গিবাদবিরোধী সমাবেশ হওয়ার ব্যাপারে আমরা কিছু জানি না। এটা কেবলমাত্র চাঁদা তোলার জন্যই করা হচ্ছে। সরকারের কাছে দাবি জানাব, আয়োজকদের ব্যাপারে খোঁজখবর নেওয়া হোক।’ বাহাদুর শাহ দাবি করেন, ‘সম্মেলনের নাম ভাঙিয়ে বহু টাকা তোলা হয়েছে।’

জানা গেছে, ‘বাংলাদেশ আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত’ আগামী ৫ নভেম্বর আলেম-ওলামা সমাবেশ ডেকেছে। সেখানে তারা আনুষ্ঠানিকভাবে এ নিয়ে আলোচনা করবে।

অভিযোগ উঠেছে, কুমিল্লার বকশিয়া দরবার শরীফ, লাকসামের চাঁদপুরী দরবার শরীফ, রাজাপুর দরবার শরীফ, নেত্রকোনার রিজভিয়া দরবার শরীফে চাঁদার জন্য চাপ দেওয়া হয়েছে।

চাঁদপুরী দরবার শরীফের পীর সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সমাবেশের দাওয়াতপত্র দিয়ে বলা হয়েছে, রাজধানীতে জঙ্গিবাদবিরোধী সমাবেশ, চাঁদা দিতে হবে।’ রেজাউল হক বলেন, ‘জঙ্গিবাদবিরোধী সমাবেশ হবে, খুব ভালো। কিন্তু তা সবাইকে নিয়ে করতে হবে। শুনেছি, তারা কোনও মূলধারা সংগঠন বা দলকে দাওয়াত করেনি। এটা বেদনাদায়ক।’

আহলে সুন্নাতের পোস্টারকুমিল্লার বকশিয়া দরবার শরীফের জালাল উদ্দিন বকশি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমার কাছে চার-পাঁচ দিন আগে ফোন আসে। এম এ মান্নান ও এম এ মতিনের নামে বলা হয়েছে, ঢাকায় সমাবেশ ডাকা হয়েছে। পাঁচ লাখ দিতে হবে। আমি না করে দিয়েছি। জানি না, তারা কেন চাঁদা চাচ্ছে। আমাকে বলেছে, লোক নিয়ে যেতে। আমার দরবারের টাকা বা লোক, কেন আমি রাজনৈতিক সমাবেশে নিয়ে যাবো? এটা সরকারের দেখা উচিৎ।’
জানা গেছে, সরকারের নজরে আসতেই জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সমাবেশ করছে বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত সমন্বয় কমিটির নামে হলেও এই কমিটির আহ্বায়ক এম এ মতিন ফ্রন্টের মহাসচিব। সদস্য সচিব ফ্রন্টের যুগ্ম মহাসচিব মোসাহেব উদ্দিন বখতিয়ার। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি থেকে সরকারবিরোধী অবস্থান নেওয়ায় সরকারপন্থী মাজারসংগঠনগুলোর সঙ্গে এদের ইতোমধ্যে দূরত্বও তৈরি হয়েছে।
জানতে চাইলে তরিকত ফেডারেশনের মহাসচিব ও সংসদ সদস্য এম এ আওয়াল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে সরকারের নজরে আসতে এই সম্মেলন ডেকেছে তারা। আহলে আল সুন্নাহ জামাত বলতে যাদের বোঝায়, এমন ব্যক্তি বা সংগঠনের সম্পৃক্ততা নেই তাদের সঙ্গে। মূলত বিএনপি-ঘেষা মতিন ও মান্নানের নেতৃত্বাধীন ইসলামিক ফ্রন্ট এই উদ্যোগ নিয়েছে। তারা বিভিন্ন জায়গায় যোগাযোগের চেষ্টা করছে। তবে বেশির ভাগ মানুষ তাদের সঙ্গে নেই। আমরাও এ সম্মেলনে যাচ্ছি না।’
জানা গেছে, আহলে সুন্নাতের নামে সমাবেশ হলেও সমাবেশের দাওয়াত দেওয়া হয়নি এ মতের অনেক সংগঠনকে। অনেকটা আহলে সুন্নাতপন্থী দলগুলোকে এড়িয়ে সমাবেশ আয়োজন করছে বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট। জানতে চাইলে বিশ্বসুন্নী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব রায়হান রাহবার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত হচ্ছে চিরন্তন শাশ্বত বিশ্বাস। ইমানের মূল ধারা। ব্যক্তিগতভাবে কেউ আহলে সুন্নাতের নামে কোনও সংগঠন যেমন করতে পারেন না, তেমনি কোনও সমাবেশও না। আমরা সবাই আহলে সুন্নাতের মতাদর্শী। অথচ আমরা সমন্বয় কমিটির কোনও আমন্ত্রণপত্র পাইনি।’
দাওয়াত না পাওয়ার কথা জানিয়েছেন ইসলামী ঐক্য আন্দোলনের মহাসচিব এনামুল হক। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমি দাওয়াত পাইনি।
এসব অভিযোগ প্রসঙ্গে ‘আহলে সুন্নাত ওয়াল জমা’য়াত সমন্বয় কমিটির আহ্বায়ক মাওলানা এম এ মতিন বলেন, ‘আমরা সম্মেলনের নামে কোনও চাঁদা উঠাচ্ছি না। স্থানীয়ভাবে কেউ হয়ত ঢাকায় যাতায়াতের ব্যাপারে কারও কাছে সহায়তা চাইতে পারেন। আমরা সমাবেশ করছি।’
সমাবেশকে কেন্দ্র করে সারাদেশে ২০ হাজার পোস্টার ও তিন লাখ লিফলেট প্রকাশ করা হয়েছে বলে জানান এম এ মতিন। তিনি জানান, তাদের অনুষ্ঠান ১২ নভেম্বর সকাল ১০ টায় শুরু হবে। জোহরের নামাজের আগেই শেষ হবে। মতিন জানান, তাদের সমাবেশে কোনও প্রধান অতিথি নেই। তবে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক সামীম মোহাম্মদ আফজালকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এ ব্যাপারে সামীম আফজাল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘তারা আমাকে দাওয়াত দিয়েছেন। আমি বলেছি যে, আমি সরকারি চাকরি করি, আমার অনেক জায়গায় অংশ নেওয়ার ক্ষেত্রে বাধ্যবাধকতা আছে। এখন তাদের সম্মেলন নিয়ে প্রশ্ন উঠলে তা দুঃখজনক। এ ব্যাপারে আমার কিছু বলার নেই।’

আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের নামে সমাবেশ করার বিষয়ে মতিন বলেন, ‘যে নামে সংগঠনটি আছে, এটি আঞ্চলিক সংগঠন। এটা কারও নামে না যে, আহলে সুন্নাতের নামে করা যাবে না।’ দাওয়াতের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সব সংগঠনকেই দাওয়াত দিয়েছি। কেউ না পেয়ে থাকলে আমাদের বললে দাওয়াত পৌঁছে দেব।’
১২ নভেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের অনুমতি দিয়েছে ডিএমপি, এমন দাবি করেছেন এম এ মতিন। ডিএমপি রমনা জোনের ডিসি মারুফ হোসেন সরদার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমি সঠিক বলতে পারছি না, এ ধরনের চিঠি আমি পাইনি। তারা আগে চিঠি দেবে, এরপর যাচাই-বাছাই করে সমাবেশ করার বিষয়ে অনুমতি দেব।’
রবিবার রাতে দুটি সংগঠন জানিয়েছে, আহলে সুন্নাতের নাম সমাবেশ করার একই দিনে তারাও সমাবেশ করার ঘোষণা দেবে। আহলে সুন্নাতের মতানুসারী সংগঠনের দুই নেতা বলেন, ‘আমরা দ্রুত এ বিষয়ে প্রশাসনকে জানাব।’
এদিকে বিএনপি-জামায়াতপন্থী সংগঠনটি হঠাৎ পীর-মাশায়েখদের সমাবেশ করার কারণ কী,তা জানতে উৎসাহী সরকারের প্রভাবশালী একটি গোয়েন্দাসংস্থা। আগামী ১২ নভেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিতব্য এই আয়োজনের পেছনে অর্থের উৎস খুঁজছে সংস্থাটি।

সরকারের প্রভাবশালী একটি গোয়েন্দা সূত্র জানায়, হঠাৎ করেই জঙ্গিবাদবিরোধী সমাবেশের ডাক দেওয়ার বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে খটকা লেগেছে। বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট বছরের পর বছর নিষ্ক্রিয় থাকলেও বড় কর্মসূচিতে যাওয়ার পেছনে কারণ খুঁজছে গোয়েন্দারা। উধাও থেকে বড় কর্মসূচি নিয়ে আসার পেছনে বিএনপি বা জামায়াতের কোনও সমর্থন আছে কিনা, এ নিয়ে আলোচনা চলছে গোয়েন্দাদের মধ্যে। ইতোমধ্যে দুটি সংস্থা মাঠে নেমেছে এসব কারণ খুঁজতে।

 উৎসঃ বাংলা ট্রিবিউন,

Logo-orginal