ফাইল ফটো,
আরটিএমনিউজ২৪ডটকম,অনলাইন ডেস্ক: দিনাজপুরের পার্বতীপুরে ধর্ষণের শিকার পাঁচ বছরের শিশুটি এখনো আতঙ্কে আঁতকে উঠছে। তার শরীরে কেউ স্পর্শ করলেই ভয়ে আঁতকে ওঠে সে। ব্যথা অনুভব করে।
চিকিৎসকরা বলছেন, নির্মম নির্যাতনের শিকার শিশুটি শুধু শারীরিকভাবেই নয়, মানসিকভাবেও বড় ধরনের আঘাত পেয়েছে। এ জন্য তাকে মানসিক চিকিৎসাও দেয়া হচ্ছে।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মিজানুর রহমান শিশুটির শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে সাংবাদিকদের জানান, শিশুটির বর্তমান অবস্থা আগের চেয়ে ভালো। তবে তার ক্ষত স্থানে সংক্রমণের শঙ্কা রয়েছে। তাকে হাই এন্টিবায়োটিক দেয়া হবে, হাই প্রোটিনও চলছে। তবে শিশুটি এখনো আতঙ্কে আছে, তার গায়ে হাত দিলেই ভয়ে আঁতকে উঠে।
শারীরিকভাবে সুস্থ হলে ২/১ মাসের মধ্যে শিশুটির অস্ত্রোপচার করা হবে জানিয়ে পরিচালক বলেন, এখানে (ঢামেকে) শিশুটিকে সব ধরনের চিকিৎসা দেয়া সম্ভব।
ঢামেকেই তার মানসিক চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন একাধিক রোগীর স্বজন জানিয়েছেন, গত দু’দিন ধরে মধ্যরাতে ওসিসি থেকে এক শিশুর কান্নার আওয়াজ শুনতে পেয়েছেন তারা।
ওসিসির সমন্বয়কারী ডা. বিলকিস আজ জানান, শিশুটির গোপনাঙ্গ থেকে শুরু করে সারা শরীরে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন ও পোড়া দাগ রয়েছে। শারীরিক ও মানসিকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত শিশুটি এখন ওসিসির অন্যান্য রোগী এমনকি চিকিৎসক ও নার্সদের দেখলেও ভয়ে চিৎকার করে কেঁদে উঠছে। বেশিরভাগ সময়ই তাকে ওষুধ খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হচ্ছে।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, শিশুটির চিকিৎসার জন্য গাইনি ও অবসট্রেটিকস বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. ফেরদৌসি আক্তার লিপিকে প্রধান করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সমন্বয়ে গঠিত নয় সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ডের সদস্যরা সকাল ৯টার দিকে ওসিসিতে এসে শিশুটির সর্বশেষ শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা প্রদান করেন।
কমিটির সদস্য ওসিসি সমন্বয়কারী ডা. বিলকিস জানান, ভর্তির পর থেকেই শিশুটির চিকিৎসা চলছে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা পর্যবেক্ষণ শেষে কিছু ওষুধ পরিবর্তন করে দিয়েছেন। বোর্ড সদস্যরা আবার এক সপ্তাহ পর ফলোআপ চিকিৎসা প্রদান করবেন। শিশুটির বেডের পাশে একটি পর্দা টানিয়ে তাকে অন্য রোগীদের কাছ থেকে আলাদা করে রাখা হয়েছে।
হাসপাতালের শিশু সার্জারি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক আশরাফ উল হক কাজল বলেন, সকালে শিশুটিকে বোর্ড দেখেছে। শিশুটির প্রজনন অঙ্গ ক্ষত-বিক্ষত। সংক্রমণের আশঙ্কা রয়েছে। যদি সংক্রমণ রক্তে ছড়ায়, তাহলে বিষয়টি ভয়াবহ হবে।
শিশুটির পুষ্টির অভাব রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, শিশুটিকে পুষ্টিকর খাবার দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
এদিকে আজ দুপুরে শিশুটিকে দেখতে যান প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী মাহবুবুল হক শাকিল এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমানের দুই সহকারী।
মাহবুবুল হক শাকিল সাংবাদিকদের জানান, শিশুটির চিকিৎসার সব খরচ সরকার বহন করবে। প্রধানমন্ত্রী শিশুটির খোঁজ রাখছেন। এ ঘটনায় জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।
গত ১৮ অক্টোবর পার্বতীপুর উপজেলার সিঙ্গীমারী জমিরহাট গ্রামের ওই শিশু বাড়ির সামনে থেকে নিখোঁজ হয়। সন্ধান না পেয়ে ওইদিন রাতে তার বাবা পার্বতীপুর মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। পরদিন ভোরে বাড়ির পাশে একটি হলুদ ক্ষেত থেকে শিশুটিকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে পার্বতীপুর ল্যাম্প হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে তাকে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানেও অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠান চিকিৎসকরা।
গত ২০ তারিখ রাতে শিশুটির বাবা একই গ্রামের জহির উদ্দিনের ছেলে সাইফুল ইসলাম ও আফজাল হোসেন কবিরাজকে আসামি করে পার্বতীপুর মডেল থানায় ধর্ষণ মামলা দায়ের করেন। মামলার প্রধান আসামি সাইফুলকে পুলিশ গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডে নিয়েছে।
উৎসঃ নয়া দিগন্ত ।