, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

admin admin

১৩ বছর যৌনদাসী হিসেবে বন্দী অ্যানা রাস্টনের নির্মম কাহিনী

প্রকাশ: ২০১৬-১২-৩০ ২২:৫১:৫৮ || আপডেট: ২০১৬-১২-৩০ ২২:৫১:৫৮

Spread the love

১৩ বছর যৌনদাসী হিসেবে বন্দী অ্যানা রাস্টনের নির্মম কাহিনী
১৩ বছর যৌনদাসী হিসেবে বন্দী অ্যানা রাস্টনের নির্মম কাহিনী

ফাইল ফটো

 আরটিএমনিউজ২৪ডটকম, অনলাইন ডেস্কঃ শিশু বয়সেই বাবা-মা ছেড়ে যাওয়ায় বৃদ্ধ দাদীর কাছে বড় হতে থাকে অ্যানা রাস্টন। কিন্তু ১৫ বছর বয়সে সেই দাদীও না-ফেরার দেশে চলে গেলে একদম একা হয়ে পড়ে ব্রিটিশ এই কিশোরী। এরপর ঠাঁয় নেন সৎবাবার কাছে। কিন্তু তিনি নানাভাবে নির্যাতন শুরু করেন অ্যানাকে।

সৎবাবার নোংরা অত্যাচার থেকে বাঁচতে বাড়ি থেকে অজানার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ে কিশোরীটি। এ সময় পরিচয় হয় মালিক নামের একজন ট্যাক্সিচালকের সঙ্গে। মিষ্টি কথায় আবেগাপ্লুত হয়ে ট্যাক্সিচালকের সঙ্গে তার বাড়ি যান অ্যানা। এরপর তার জীবনে নেমে আসে আরও লোমহর্ষক অত্যাচার।

টানা ১৩ বছর তাকে ঘরে বন্দী করে রেখে যৌনদাসী হিসেবে ব্যবহার করেছেন ওই ট্যাক্সিচালক। এতেই শেষ নয়, এই ১৩ বছরে তার সঙ্গে অমানবিক শারীরিক নির্যাতনের ফল হিসেবে জন্ম নেওয়া ৪ সন্তান বিক্রি করে দিয়েছেন মালিক।

গতকাল বৃহস্পতিবার ইনডিপেনডেন্ট অনলাইনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে নিজেই এই লোমহর্ষক কাহিনি জানিয়েছেন অ্যানা রাস্টন। বর্তমানে তার বয়স ৪৪ বছর। জীবনের এত দিন পর ‘সিক্রেট স্লেভ’ শিরোনামে অ্যানার একটি বইও প্রকাশিত হয়েছে। ওই বইয়ে এ ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ রয়েছে।

অ্যানা রাস্টন বলেন, তার দাদী মারা যাওয়ার পর তিনি সৎবাবার কাছে চলে গিয়েছিলেন। সেখানে নোংরা অত্যাচারের শিকার হন তিনি। ১৯৮৭ সালের এপ্রিল মাসে ওই বাড়ি থেকে পালিয়ে যান। সে সময় পরিচয় হয় মালিক নামের এশিয়ার এক ট্যাক্সিচালকের সঙ্গে। কথাবার্তায় মুগ্ধ হয়ে মালিকের মা-বাবার সঙ্গে দেখা করতে তার বাড়িতে যান অ্যানা। তার মা-বাবা ও ভাই-ভাবিদের সঙ্গে কথা বলে ভালো লাগে অ্যানার। এই সুযোগে মালিক ওই রাতে অ্যানাকে বাড়িতে থেকে যেতে বলেন। এত মানুষের সঙ্গে গল্প-আড্ডার লোভে সেই রাতে থেকে যান ১৫ বছরের স্বজনহারা অ্যানা। এরপর আর ওই বাড়ি থেকে অ্যানাকে বের হতে দেননি মালিক। একটি ঘরে তাকে বন্দী করে রাখা হয়। টানা ১৩ বছর ধরে প্রায় প্রতি রাতেই অ্যানাকে ধর্ষণ করতেন মালিক। শুধু তা-ই নয়, বাড়িতে অন্য কোনও পুরুষ এলেও তার সঙ্গে শুতে বাধ্য করা হতো। এতে রাজি না হলে কপালে জুটত নির্মম অত্যাচার।

অ্যানা রাস্টন বলেন, আমি এখনও ওই ঘরটি দেখতে পাই। ঘরের এক কোণে আমি ব্যথায় কাতর হয়ে থাকতাম। একসময় এসব ব্যথা আর ব্যথা মনে হতো না। শরীর সয়ে গিয়েছিল সব। মালিকের বাড়ির লোকজন এসব দেখেও না দেখার ভান করে থাকতেন।

এসব ঘটনায় প্রথমবারের মতো গর্ভবতী হওয়া প্রসঙ্গে ‘সিক্রেট স্লেভ’ বইয়ে অ্যানা বলেছেন, যখন আপনি বুঝবেন যে আপনার জঠরে একজন শিশু নড়াচড়া করছে, তখন অনুভূতি হবে যে, কেউ অন্তত আপনার পাশে আছে। আপনি আর একা নন।

প্রতিবেদনে বলা হয়, নিয়মিত ধর্ষণের কারণে যখন অ্যানা গর্ভবতী হয়ে পড়তেন, কেবল তখনই মালিক তাকে মারধর করা বন্ধ করতেন। তার গর্ভে মালিকের এক ছেলেসন্তানের জন্ম হয়েছিল। মালিকের বাড়িতে আসা অন্য পুরুষেরাও মালিকের সহায়তায় তাকে ধর্ষণ করত। এভাবে আরও তিন সন্তানের জন্ম হয়। অ্যানার এই চার সন্তানকেই টাকার লোভে বিক্রি করে দেন মালিক।

একটি রেডিওকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে অ্যানা বলেন, সন্তান জন্ম দেওয়ার সময় আমাকে মালিক হাসপাতালে নিয়ে যেতেন। সে সময় তিন থেকে চারজন মানুষ সঙ্গে সঙ্গে থাকত। তাই আমি পালানোর পথ খুঁজে পাইনি। আমি চিকিৎসকের সব প্রশ্নের উত্তর দিতে পারতাম না। শুধু মাথা নাড়তাম। আমি সঙ্গে থাকা মানুষেরা একটু বাইরে গেলেই সব কথা চিকিৎসককে জানিয়ে সাহায্য চাইতাম। কিন্তু কেউই আমাকে এক মিনিটও একা ছাড়ত না। যখন আমি শৌচাগারে যেতাম, দরজার সামনে কেউ না কেউ দাঁড়িয়ে থাকত।

তিনি আরও বলেন, এক উৎসবের দিনে তিনি বাড়ির পেছনের দরজা দিয়ে পালানোর চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু ধরা পড়ে যান। সে সময় তাকে বেদম মারধর করা হয়েছিল। এতে তিনি খুব ভয় পেয়েছিলেন।

অ্যানা বলেন, মালিক ও তার পরিবার আমাকে পাকিস্তানে একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে নিয়ে যাওয়ার কথা বলেন। এতে আমি বুঝে যাই যে তারা হয়তো আমাকে হত্যা করবেন, নয়তো অন্য কারও কাছে বিক্রি করে দেবেন। এটা কিছুতেই হতে দেওয়া যাবে না। আমি সিদ্ধান্ত নিই, হয় আত্মহত্যা করব, নয় যে করেই হোক পালিয়ে যাব।

অ্যানা আরও বলেন, তাকে দেখতে একজন চিকিৎসক বাসায় আসতেন। তিনি সাহস করে একটি চিরকুটে সব লিখে ওই চিকিৎসকের হাতে দেন। চিকিৎসক বুঝতে পেরে তাকে পালানোর পথ বাতলে দেন।

চিকিৎসক তাকে জানান, ঈদের দিন বাড়িতে সবাই যখন কাজে ব্যস্ত থাকবে, তখন তিনি চারদিক বিবেচনা করে ওই বাড়ির টেলিফোনে টানা তিনবার ফোন দেবেন। ঠিক ওই মুহূর্তেই পালাতে হবে অ্যানাকে। যেই কথা সেই কাজ। ঈদের দিন তিনবার ফোন বেজে ওঠামাত্রই সুযোগ বুঝে ঘর থেকে বেরিয়ে যান অ্যানা। বাইরে অপেক্ষমাণ চিকিৎসকের সঙ্গে চলে যান পুলিশের কাছে। সব কথা জানার পর মালিককে পুলিশ থানায় নিয়ে আসে। সেখানেও মালিক অ্যানাকে তার স্ত্রী পরিচয় দেন এবং বলেন, অ্যানা মানসিক ভারসাম্যহীন, সে বাড়ি থেকে পালিয়ে এসেছে। কিন্তু পুলিশ অ্যানার বক্তব্যের সত্যতা পেয়ে মালিককে গ্রেপ্তার করেছে।

দীর্ঘ ১৩ বছর ধরে চলা যৌন নির্যাতন থেকে পালিয়ে মুক্তি পাওয়ার পর অ্যানা সোজা চলে যান মিডল্যান্ডে। সেখানে তার কৈশোরকালের প্রেমিক জ্যামির সঙ্গে দেখা করেন। সব শুনে জ্যামি তাকে বিয়ে করেন। এখন নিজেদের চার সন্তান নিয়ে বেশ সুখেই আছেন তারা। সুত্রঃ আমাদের  সময় ।

Logo-orginal