, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

admin admin

কুরআনের মূল আলোচ্য বিষয় কী

প্রকাশ: ২০১৭-০২-০৯ ২০:২০:৩০ || আপডেট: ২০১৭-০২-০৯ ২০:২০:৩০

Spread the love
কুরআনের মূল আলোচ্য বিষয় কী
কুরআনের মূল আলোচ্য বিষয় কী

শাহ আবদুল হান্নান:   অধিকাংশ লোকের ধারণা হলো, কুরআনে নামাজ, রোজাসহ ইবাদতের কথা এবং কিছুটা ইতিহাস নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে কেউ যদি কুরআন শরীফকে গভীরভাবে জানেন এবং পড়েন তাহলে দেখবেন, কুরআনে অবশ্যই নানা বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। কিন্তু মূল বিষয়টি হলো কুরআনে রাসূল সা:-কে প্রতি পদে গাইড করা বা নির্দেশনা দেয়া, যাতে তিনি বুঝতে পারেন- এখন কোন পথে যেতে হবে।

ইসলামের সূচনার দিকে যেসব সূরা নাজিল হয়েছিল, তাতে রাসূল সা:-কে বলা হয়- ‘আপনি উঠুন এবং মানুষকে সতর্ক করুন।’ নবী হওয়ার পর প্রথম দিকে এ নির্দেশ ছিল। তখন তাঁর কাজ ছিল মানুষকে সতর্ক করা। তখনো এসব শিক্ষা আসেনি যে, নামাজ পড়–ন, রোজা রাখুন, হজ করুন, জাকাত দিন। রাসূলুল্লাহ সা: নবুয়ত জীবনের ২৩ বছরের মধ্যে মক্কায় ১৩ বছর ছিলেন এবং মদিনায় ১০ বছর। প্রতি পদে রাসূল সা:-কে পথনির্দেশ দেয়া হয় আল্লাহর তরফ থেকে। আমরা সোজা কথায় বলতে পারি, এটা ছিল একটা (Strategic) গাইডেন্স অর্থাৎ কিভাবে কখন কী করতে হবে তার একটা গাইডেন্স বা নির্দেশনা। এভাবেই, মক্কায় যখন তার ওপর নানা অত্যাচার করা হয়েছিল, সে সময় তিনি এভাবেই গাইডেন্স পেতে থাকেন। তাঁকে বলা হয়, প্রথমে আপনি আপনার আত্মীয়স্বজনকে ইসলামের দাওয়াত দিন। তিনি তাদের দাওয়াত দিলেন একমাত্র আলী রা: ছাড়া। তাদের মধ্যে কেউ ইসলাম গ্রহণ করল না। তারপর যখন অসহ্য হয়ে গেল পরিস্থিতি, তখন রাসূল সা: খুব হতাশ হয়ে গেলেন এবং সেই অবস্থায় মেরাজ হলো। আল্লাহতায়ালা রাসূল সা:-কে মেরাজে নিয়ে গেলেন (সেটা রূহানিভাবেই হোক বা শারীরিকভাবেই হোক)। আল্লাহ পাক সব বিষয় সম্পর্কে, আখেরাত সম্পর্কে তাঁর মনকে দ্বিধামুক্ত করে দিলেন। সে সময়ে পুরনো নবীদের কাহিনী আসতে থাকে তাঁর কাছে, যেখানে অতীতের নবীদের যে বিপদ হয়েছিল, তা আলোচনা করা হয়েছে।
যেমন, নূহ আ:-এর জীবনে যে বিপদ এসেছিল, তাঁর জাতির কেউ তাকে গ্রহণ করেনি। ইব্রাহিম আ:-এর দাওয়াতও কেউ গ্রহণ করেনি, সেই অবস্থার কথা তুলে ধরা হয়েছে। হজরত শোয়াইব আ:-এর দাওয়াতও কেউ গ্রহণ করেনি সে অবস্থার কথা বলা হয়েছে। যেসব বিপদ-আপদ বনি ইসরাইলের ওপর হয়েছিল; তারা এসেছিল ইসরাইল থেকে মিসরে। হজরত ইউসুফ আ:-এর সময়ে তারা বাদশাহর জাতি হয়ে যায়। কিন্তু পরে ফেরাউন ক্ষমতা নেয় এবং কোনো একপর্যায়ে তাদের অনেক অত্যাচার নির্যাতন করতে থাকে। এমনকি কুরআনে উল্লেখ করা হয়েছে, তাদের মেয়েদের তারা বাঁচিয়ে রাখত এবং ছেলেদের হত্যা করত। এবং আল্লাহপাক কুরআনে আরো উল্লেখ করেছেন, আগের যুগের নবীদের হত্যা করা হতো, অত্যাচার করা হতো। এসবের উল্লেখের কারণ, যাতে রাসূল সা: সবুর করেন, যাতে তিনি সবুর করতে পারেন। এগুলো রাসূল সা:-এর প্রতি (Strategic) গাইডেন্স; প্রতি পদে তিনি কী করবেন তা বোঝাবার জন্য। তারপর নির্দেশ এলো হিজরতের এবং তিনি শেষ পর্যন্ত মদিনায় হিজরত করে সেখানে পৌঁছে গেলেন। এরপর বদরযুদ্ধের ব্যাপারে গোটা কুরাইশ জাতি হামলা করে বসল। তখন তিনি কী পথ ধরবেন, শহরের ভেতর থেকে তিনি কী ফবভবহফ করবেন নাকি বাইরে গিয়ে যুদ্ধ করবেন, এসব নির্দেশ আসতে থাকে। তারপরে ওহুদের যুদ্ধের ব্যাপারে নির্দেশ আসতে লাগল যে, অনেক বেশি সংখ্যায় ওরা আসছে যুদ্ধ করতে। কিন্তু আপনি চিন্তা করবেন না; আল্লাহ তায়ালা আপনাকে সাহায্য করবেন। শেষ পর্যন্ত তারা রাসূল সা:কে হত্যা করতে পারেনি। আমরা জানি, কয়েকজন মুসলমান ওই যুদ্ধে কিছু ভুল করেছিল, যুদ্ধ ছেড়ে দিয়ে তারা নিজ স্বার্থ নিয়ে চিন্তা করছিল এতে তারাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়; এমনকি পুরা যুদ্ধটাই বিপক্ষে চলে যায়। কিন্তু আল্লাহ তায়ালা সান্ত্বনা দেন, মানুষের উত্থান-পতন আছে। যা হোক কুরাইশরা সফল হলো না। তেমনিভাবে খন্দকের যুদ্ধের সময়ও গাইডেন্স দেয়া হলো নবী সা:-কে, আপনি ভেতর থেকে লড়াই করেন। এরপর আল্লাহ তায়ালা এক ভয়ানক ঝড় পাঠিয়ে শত্রুদের বিধ্বস্ত করে দেন। তারপর একসময় নবী সা: ওমরা করতে চাইলেন। কিন্তু কুরাইশরা তা করতে দিতে চাইল না। শেষ পর্যন্ত যুদ্ধাবস্থা সৃষ্টি হলো এবং আল্লাহ তায়ালার নির্দেশে তিনি হুদাইবিয়ার সন্ধি করলেন।
এর থেকে যে কথাটা বলতে চাচ্ছি, কুরআনের মূল প্রতিপাদ্য ও মূল সূত্র হচ্ছে, রাসূল সা:কে প্রতি পদে ওহির মাধ্যমে বা জিবরাইলের মাধ্যমে পথনির্দেশ দেয়া হয়েছিল। এই বিষয়টা আমরা একেবারেই ভুলে যাই। এটাকে আমরা গুরুত্বই দিই না। আমরা অন্যান্য বিষয়ের দিকে চলে যাই। অথচ এটাই হচ্ছে কুরআনের প্রথম প্রতিপাদ্য।
আর দ্বিতীয় প্রতিপাদ্য আমার মনে হয় যেটা, তা হলো-নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা কুরআনের মাধ্যমে মুসলমানদের সহি ঈমানের শিক্ষা দেন। তিনি জানান, কিসের ওপর ঈমান আনতে হবে এবং কিসের ওপর ঈমান আনতে হবে না। যেমন আমরা জানি, আল্লাহ এক, এর ওপর ঈমান আনতে হবে এবং আখেরাতের ওপর ঈমান আনতে হবে। আগে যারা নবী হয়েছেন তাদের ওপরে ঈমান আনতে হবে এবং আগে যেসব কিতাব বা সহিফা এসেছে সেগুলোর ওপর ঈমান আনতে হবে। তারপর আমরা দেখি, কুরআনে অনেক ইতিহাস আলোচনা করা হয়েছে এবং তার মূল উদ্দেশ্য হলো- রাসূল সা:কে গাইড করা। আগে কী হয়েছে তা জানিয়ে বুঝানো হচ্ছে, আপনার ওপরে যা ঘটেছে নতুন কিছু না। ইতিহাসে কী ঘটেছে এবং তার শিক্ষণীয় বিষয় কী, তা তুলে ধরা হয়েছে। মূসা আ: এবং ফেরাউনের কাহিনীতে আপনার জন্য এবং পরবর্তী মুসলিমদের জন্য কী হেদায়েত রয়েছে। এভাবে অনেক ইতিহাস রয়েছে বিভিন্ন সময়ের নবীদের ক্ষেত্রে।
তৃতীয় বিষয় যেটা বলতে পারি, অনেক ক্ষেত্রে ইবাদতের নিয়মনীতি শিখানো হয়েছে; যেমন, পাঁচ ওয়াক্ত সালাত হবে, এটা মোটামুটি বলা হয়েছে। বিস্তৃত করা হয়েছে রসূল সা:-এর সুন্নতে। হজের বিবরণ বা শিক্ষা ৯০ শতাংশ কুরআনে বলা হয়েছে। আর কিছুটা হাদিসে। রোজার বিবরণ প্রায় পুরোপুরি কুরআনে বলে দেয়া হয়েছে আর বাকিটা সুন্নতে নির্ধারিত হয়েছে। জাকাতের বিধানের প্রায় মূল দিকগুলো কুরআনে বলা হয়েছে; কিছু বিবরণ হাদিসে বলা হয়েছে। আরেকটি বিষয় খুব গুরুত্বপূর্ণভাবে কুরআনে আলোচনা করা হয়েছে। সেটা হলো আইন। যেমন আমরা বলতে পারি একজন লোক মারা গেলে তার সম্পত্তি কিভাবে বণ্টন হবে, ছেলে কতটুকু পাবে, মেয়ে কতটুকু পাবে, কখন পাবে কোন অবস্থায় পাবে। এসব বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। তারপর রয়েছে বিবাহের আইন। বিবাহের ক্ষেত্রে নারীদের অনুমতি নিতে হবে। তালাকের পদ্ধতি, কিভাবে তালাক দিতে হবে আর মূল কথা হলো সুবিচার করতে হবে। তার পরে আলোচনায় আছে- মদ হারাম, সুদ হারাম, জুয়া হারাম।
কুরআনে আলোচনা করা হয়েছে, ঋণচুক্তি কিভাবে হবে; তা লিখতে হবে, চুক্তিতে সাক্ষী কারা থাকবে, কাদের সাক্ষী নিতে হবে- এ ধরনের আলোচনা আছে। তা ছাড়া যুদ্ধের নিয়ম কী, শান্তির নিয়ম কী হবে, কখন যুদ্ধ করতে হবে এসব রয়েছে। কুরআনে শেষের দিকে বলা হয়েছে যুদ্ধবন্দীদের হয় বিনিময় করতে হবে, না হয় তাদের এমনিতেই ছেড়ে দিতে হবে। আইন ইসলামের শিক্ষার মধ্যে বা কুরআনের শিক্ষার মধ্যে একটা বড় অংশ। যা হোক্, কুরআনের মূল বিষয়টা আমাদের বুঝতে হবে। এটা ছিল মানবজাতির জন্য একটা চিঠি আল্লাহর পক্ষ থেকে। কিন্তু চিঠিটা আসছে রাসূল সা:-এর কাছে এবং চিঠিতে প্রথম কাজ হচ্ছে রাসূল সা:কে প্রতি পদে গাইডেন্স দেয়া।
লেখক : সাবেক সচিব, বাংলাদেশ সরকার

শাহ্ আব্দুল হান্নান

০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৭,বৃহস্পতিবার, ১৮:৩৯ | আপডেট: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৭,বৃহস্প

 

অধিকাংশ লোকের ধারণা হলো, কুরআনে নামাজ, রোজাসহ ইবাদতের কথা এবং কিছুটা ইতিহাস নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে কেউ যদি কুরআন শরীফকে গভীরভাবে জানেন এবং পড়েন তাহলে দেখবেন, কুরআনে অবশ্যই নানা বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। কিন্তু মূল বিষয়টি হলো কুরআনে রাসূল সা:-কে প্রতি পদে গাইড করা বা নির্দেশনা দেয়া, যাতে তিনি বুঝতে পারেন- এখন কোন পথে যেতে হবে।
ইসলামের সূচনার দিকে যেসব সূরা নাজিল হয়েছিল, তাতে রাসূল সা:-কে বলা হয়- ‘আপনি উঠুন এবং মানুষকে সতর্ক করুন।’ নবী হওয়ার পর প্রথম দিকে এ নির্দেশ ছিল। তখন তাঁর কাজ ছিল মানুষকে সতর্ক করা। তখনো এসব শিক্ষা আসেনি যে, নামাজ পড়–ন, রোজা রাখুন, হজ করুন, জাকাত দিন। রাসূলুল্লাহ সা: নবুয়ত জীবনের ২৩ বছরের মধ্যে মক্কায় ১৩ বছর ছিলেন এবং মদিনায় ১০ বছর। প্রতি পদে রাসূল সা:-কে পথনির্দেশ দেয়া হয় আল্লাহর তরফ থেকে। আমরা সোজা কথায় বলতে পারি, এটা ছিল একটা (Strategic) গাইডেন্স অর্থাৎ কিভাবে কখন কী করতে হবে তার একটা গাইডেন্স বা নির্দেশনা। এভাবেই, মক্কায় যখন তার ওপর নানা অত্যাচার করা হয়েছিল, সে সময় তিনি এভাবেই গাইডেন্স পেতে থাকেন। তাঁকে বলা হয়, প্রথমে আপনি আপনার আত্মীয়স্বজনকে ইসলামের দাওয়াত দিন। তিনি তাদের দাওয়াত দিলেন একমাত্র আলী রা: ছাড়া। তাদের মধ্যে কেউ ইসলাম গ্রহণ করল না। তারপর যখন অসহ্য হয়ে গেল পরিস্থিতি, তখন রাসূল সা: খুব হতাশ হয়ে গেলেন এবং সেই অবস্থায় মেরাজ হলো। আল্লাহতায়ালা রাসূল সা:-কে মেরাজে নিয়ে গেলেন (সেটা রূহানিভাবেই হোক বা শারীরিকভাবেই হোক)। আল্লাহ পাক সব বিষয় সম্পর্কে, আখেরাত সম্পর্কে তাঁর মনকে দ্বিধামুক্ত করে দিলেন। সে সময়ে পুরনো নবীদের কাহিনী আসতে থাকে তাঁর কাছে, যেখানে অতীতের নবীদের যে বিপদ হয়েছিল, তা আলোচনা করা হয়েছে।
যেমন, নূহ আ:-এর জীবনে যে বিপদ এসেছিল, তাঁর জাতির কেউ তাকে গ্রহণ করেনি। ইব্রাহিম আ:-এর দাওয়াতও কেউ গ্রহণ করেনি, সেই অবস্থার কথা তুলে ধরা হয়েছে। হজরত শোয়াইব আ:-এর দাওয়াতও কেউ গ্রহণ করেনি সে অবস্থার কথা বলা হয়েছে। যেসব বিপদ-আপদ বনি ইসরাইলের ওপর হয়েছিল; তারা এসেছিল ইসরাইল থেকে মিসরে। হজরত ইউসুফ আ:-এর সময়ে তারা বাদশাহর জাতি হয়ে যায়। কিন্তু পরে ফেরাউন ক্ষমতা নেয় এবং কোনো একপর্যায়ে তাদের অনেক অত্যাচার নির্যাতন করতে থাকে। এমনকি কুরআনে উল্লেখ করা হয়েছে, তাদের মেয়েদের তারা বাঁচিয়ে রাখত এবং ছেলেদের হত্যা করত। এবং আল্লাহপাক কুরআনে আরো উল্লেখ করেছেন, আগের যুগের নবীদের হত্যা করা হতো, অত্যাচার করা হতো। এসবের উল্লেখের কারণ, যাতে রাসূল সা: সবুর করেন, যাতে তিনি সবুর করতে পারেন। এগুলো রাসূল সা:-এর প্রতি (Strategic) গাইডেন্স; প্রতি পদে তিনি কী করবেন তা বোঝাবার জন্য। তারপর নির্দেশ এলো হিজরতের এবং তিনি শেষ পর্যন্ত মদিনায় হিজরত করে সেখানে পৌঁছে গেলেন। এরপর বদরযুদ্ধের ব্যাপারে গোটা কুরাইশ জাতি হামলা করে বসল। তখন তিনি কী পথ ধরবেন, শহরের ভেতর থেকে তিনি কী ফবভবহফ করবেন নাকি বাইরে গিয়ে যুদ্ধ করবেন, এসব নির্দেশ আসতে থাকে। তারপরে ওহুদের যুদ্ধের ব্যাপারে নির্দেশ আসতে লাগল যে, অনেক বেশি সংখ্যায় ওরা আসছে যুদ্ধ করতে। কিন্তু আপনি চিন্তা করবেন না; আল্লাহ তায়ালা আপনাকে সাহায্য করবেন। শেষ পর্যন্ত তারা রাসূল সা:কে হত্যা করতে পারেনি। আমরা জানি, কয়েকজন মুসলমান ওই যুদ্ধে কিছু ভুল করেছিল, যুদ্ধ ছেড়ে দিয়ে তারা নিজ স্বার্থ নিয়ে চিন্তা করছিল এতে তারাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়; এমনকি পুরা যুদ্ধটাই বিপক্ষে চলে যায়। কিন্তু আল্লাহ তায়ালা সান্ত্বনা দেন, মানুষের উত্থান-পতন আছে। যা হোক কুরাইশরা সফল হলো না। তেমনিভাবে খন্দকের যুদ্ধের সময়ও গাইডেন্স দেয়া হলো নবী সা:-কে, আপনি ভেতর থেকে লড়াই করেন। এরপর আল্লাহ তায়ালা এক ভয়ানক ঝড় পাঠিয়ে শত্রুদের বিধ্বস্ত করে দেন। তারপর একসময় নবী সা: ওমরা করতে চাইলেন। কিন্তু কুরাইশরা তা করতে দিতে চাইল না। শেষ পর্যন্ত যুদ্ধাবস্থা সৃষ্টি হলো এবং আল্লাহ তায়ালার নির্দেশে তিনি হুদাইবিয়ার সন্ধি করলেন।
এর থেকে যে কথাটা বলতে চাচ্ছি, কুরআনের মূল প্রতিপাদ্য ও মূল সূত্র হচ্ছে, রাসূল সা:কে প্রতি পদে ওহির মাধ্যমে বা জিবরাইলের মাধ্যমে পথনির্দেশ দেয়া হয়েছিল। এই বিষয়টা আমরা একেবারেই ভুলে যাই। এটাকে আমরা গুরুত্বই দিই না। আমরা অন্যান্য বিষয়ের দিকে চলে যাই। অথচ এটাই হচ্ছে কুরআনের প্রথম প্রতিপাদ্য।
আর দ্বিতীয় প্রতিপাদ্য আমার মনে হয় যেটা, তা হলো-নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা কুরআনের মাধ্যমে মুসলমানদের সহি ঈমানের শিক্ষা দেন। তিনি জানান, কিসের ওপর ঈমান আনতে হবে এবং কিসের ওপর ঈমান আনতে হবে না। যেমন আমরা জানি, আল্লাহ এক, এর ওপর ঈমান আনতে হবে এবং আখেরাতের ওপর ঈমান আনতে হবে। আগে যারা নবী হয়েছেন তাদের ওপরে ঈমান আনতে হবে এবং আগে যেসব কিতাব বা সহিফা এসেছে সেগুলোর ওপর ঈমান আনতে হবে। তারপর আমরা দেখি, কুরআনে অনেক ইতিহাস আলোচনা করা হয়েছে এবং তার মূল উদ্দেশ্য হলো- রাসূল সা:কে গাইড করা। আগে কী হয়েছে তা জানিয়ে বুঝানো হচ্ছে, আপনার ওপরে যা ঘটেছে নতুন কিছু না। ইতিহাসে কী ঘটেছে এবং তার শিক্ষণীয় বিষয় কী, তা তুলে ধরা হয়েছে। মূসা আ: এবং ফেরাউনের কাহিনীতে আপনার জন্য এবং পরবর্তী মুসলিমদের জন্য কী হেদায়েত রয়েছে। এভাবে অনেক ইতিহাস রয়েছে বিভিন্ন সময়ের নবীদের ক্ষেত্রে।
তৃতীয় বিষয় যেটা বলতে পারি, অনেক ক্ষেত্রে ইবাদতের নিয়মনীতি শিখানো হয়েছে; যেমন, পাঁচ ওয়াক্ত সালাত হবে, এটা মোটামুটি বলা হয়েছে। বিস্তৃত করা হয়েছে রসূল সা:-এর সুন্নতে। হজের বিবরণ বা শিক্ষা ৯০ শতাংশ কুরআনে বলা হয়েছে। আর কিছুটা হাদিসে। রোজার বিবরণ প্রায় পুরোপুরি কুরআনে বলে দেয়া হয়েছে আর বাকিটা সুন্নতে নির্ধারিত হয়েছে। জাকাতের বিধানের প্রায় মূল দিকগুলো কুরআনে বলা হয়েছে; কিছু বিবরণ হাদিসে বলা হয়েছে। আরেকটি বিষয় খুব গুরুত্বপূর্ণভাবে কুরআনে আলোচনা করা হয়েছে। সেটা হলো আইন। যেমন আমরা বলতে পারি একজন লোক মারা গেলে তার সম্পত্তি কিভাবে বণ্টন হবে, ছেলে কতটুকু পাবে, মেয়ে কতটুকু পাবে, কখন পাবে কোন অবস্থায় পাবে। এসব বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। তারপর রয়েছে বিবাহের আইন। বিবাহের ক্ষেত্রে নারীদের অনুমতি নিতে হবে। তালাকের পদ্ধতি, কিভাবে তালাক দিতে হবে আর মূল কথা হলো সুবিচার করতে হবে। তার পরে আলোচনায় আছে- মদ হারাম, সুদ হারাম, জুয়া হারাম।
কুরআনে আলোচনা করা হয়েছে, ঋণচুক্তি কিভাবে হবে; তা লিখতে হবে, চুক্তিতে সাক্ষী কারা থাকবে, কাদের সাক্ষী নিতে হবে- এ ধরনের আলোচনা আছে। তা ছাড়া যুদ্ধের নিয়ম কী, শান্তির নিয়ম কী হবে, কখন যুদ্ধ করতে হবে এসব রয়েছে। কুরআনে শেষের দিকে বলা হয়েছে যুদ্ধবন্দীদের হয় বিনিময় করতে হবে, না হয় তাদের এমনিতেই ছেড়ে দিতে হবে। আইন ইসলামের শিক্ষার মধ্যে বা কুরআনের শিক্ষার মধ্যে একটা বড় অংশ। যা হোক্, কুরআনের মূল বিষয়টা আমাদের বুঝতে হবে। এটা ছিল মানবজাতির জন্য একটা চিঠি আল্লাহর পক্ষ থেকে। কিন্তু চিঠিটা আসছে রাসূল সা:-এর কাছে এবং চিঠিতে প্রথম কাজ হচ্ছে রাসূল সা:কে প্রতি পদে গাইডেন্স দেয়া।
লেখক : সাবেক সচিব, বাংলাদেশ সরকার

উৎসঃ নয়া দিগন্ত ।

Logo-orginal