, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

admin admin

মেড ইন জিঞ্জিরা’ দেশকে সক্ষমতা এনে দিয়েছে

প্রকাশ: ২০১৭-০২-০৬ ১৯:১৩:৩৬ || আপডেট: ২০১৭-০২-০৬ ১৯:১৩:৩৬

Spread the love

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

আরটিএমনিউজ২৪ডটকম, অনলাইন ডেস্কঃ জিঞ্জিরা বিপ্লব’ বাংলাদেশকে ক্ষুদ্র যন্ত্রাংশ তৈরিতে সক্ষমতা এনে দিয়েছে। এই নীরব বিপ্লবের নায়কদের পুঁথিগত জ্ঞানের অভাব থাকলেও কারিগরি জ্ঞানের অভাব নেই। তারা সে জ্ঞান দিয়ে উৎপাদন করছেন নানা কিসিমের ক্ষুদ্র যন্ত্রাংশ। কোটি কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হচ্ছে এসব কারিগরের কৃতিত্বে। তাদের সাফল্য এতটাই মহীরুহ আকার ধারণ করেছে যে, এখন চীন ও ভারতের মতো শিল্পোন্নত দেশগুলোর সাথে পাল্লা দিয়ে বাংলাদেশী যন্ত্রপাতি বিদেশে রফতানি হচ্ছে।
‘জিঞ্জিরা মডেল’কে সামনে রেখে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠেছে অনেক প্রতিষ্ঠান। ক্ষুদ্র যন্ত্রাংশ এবং যন্ত্রপাতি নির্মাণে তারা পারঙ্গমতা দেখাতে সক্ষম হয়েছেন। জিঞ্জিরার ঝুপড়ি বস্তির ক্ষুদ্র যন্ত্রাংশ কারখানার খুদে ইঞ্জিনিয়ারদের তৈরি করা হাজারো পণ্যসামগ্রীর কদর গড়ে উঠেছে ব্যবহারকারীদের কাছে। বিদেশের তকমা পরিয়েও বিক্রি হচ্ছে জিঞ্জিরার তৈরি পণ্য।
রাজধানীর দক্ষিণে বুড়িগঙ্গা নদীর তীরঘেঁষা জিঞ্জিরা-শুভাড্যা থেকে শুরু করে কেরানীগঞ্জের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে বেড়েছে হাজারো কারখানা। অনর্গল ইঞ্জিনের শব্দ, কারিগরের হাঁকাহাঁকি, শ্রমিকদের কোলাহল রাত-দিনের ব্যবধান ঘুচিয়ে দিয়েছে। লাখ লাখ কারিগর ও শ্রমিকের উদয়াস্ত পরিশ্রমে সুই, ব্লেড, আলপিন থেকে শুরু করে নাট-বল্টু, ট্রেন ও বিমানের যন্ত্রাংশ, ফ্লাস্ক, মোবাইল ফোন সেট, সমুদ্রগামী জাহাজের যন্ত্রাংশ পর্যন্ত তৈরি হচ্ছে এখানে।
সর্বাধুনিক প্রযুক্তির এসব মালামাল তৈরি করছেন লেখাপড়া না জানা ইঞ্জিনিয়াররা। এখানকার খুদে কারিগরদের দক্ষতা অবাক করে দেয়ার মতো। বছরের পর বছর গবেষণার পর জাপান, কোরিয়া, চীন যেসব সামগ্রী আজ উৎপাদন ও বাজারজাত করছে, সেসব জিনিস হাতে পাওয়ার পরদিনই তা তৈরি করে ফেলছেন জিঞ্জিরার কারিগরেরা। জাহাজ ভাঙা স্ক্র্যাপ, বিভিন্ন শিল্পকারখানা, রোলিং মিল, নির্মাণাধীন স্থাপনার পরিত্যক্ত লোহা ও শিট থেকে তাক লাগানো নানা যন্ত্রপাতি তৈরি করছেন তারা।
আমাদের জাতীয় অর্থনীতিতে কেরানীগঞ্জের এই নীরব শিল্পবিপ্লব যে অসামান্য ও সুদূরপ্রসারী ভূমিকা রাখবে তা আজ স্পষ্ট। কেরানীগঞ্জের পোশাকশিল্প, লৌহজাত পণ্য উৎপাদন ও শিপইয়ার্ড আর ডকইয়ার্ড শিল্প ১৫ লাখ শ্রমিকের কর্মসংস্থান করে দিয়েছে। বিপুল জনসংখ্যার এই বাংলাদেশে একটি ছোট এলাকাকে ঘিরে ১৫ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান সামান্য ঘটনা নয়। কেরানীগঞ্জে গত কয়েক বছরে গড়ে ওঠা এই তিনটি শিল্প সেক্টরের উৎপাদন যে কী বিপুল সাড়া জাগিয়েছে, তা ঘটনাস্থলে না গেলে কেউ কল্পনাও করতে পারবেন না। সেখানে দৈনিক গড়ে ২৭০ কোটি টাকার পণ্য কেনাবেচা হচ্ছে।
সবচেয়ে বড় কথা, গার্মেন্টশিল্পের শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি ও বেতনভাতা নিয়ে বিভিন্ন স্থানে অশান্তি বিরাজ করছে, আন্দোলন হচ্ছে। সেখানে কেরানীগঞ্জে বেতনভাতা, ওভারটাইম আর বোনাস নিয়ে শ্রমিকদের কোনোরকম অসন্তোষ নেই। তার মানে, শ্রমিকদের ন্যায্যপ্রাপ্য পরিশোধে সংশ্লিষ্ট শিল্পমালিকেরা সততা ও নিষ্ঠার পরিচয় দিচ্ছেন। কেরানীগঞ্জের উদ্যোক্তাদের আচরণ দেশের অন্যান্য শিল্পোদ্যোক্তার জন্য আদর্শ হতে পারে। জিঞ্জিরায় বিভিন্ন পণ্য অবিকল তৈরির বহু বছরের দক্ষতার নানা ঘটনা আমাদের জানা। সেখানে যথার্থ পৃষ্ঠপোষকতা পেলে প্রসাধনশিল্পসহ উন্নতমানের নানা পণ্য উৎপাদনের সাফল্য পেতে পারত দেশ। উপেক্ষার পরও জনসাধারণের কাছে ‘মেড ইন জিঞ্জিরা’র পণ্য এখন বেশ সমাদৃত। এমনকি মধ্যপ্রাচ্যেও বাজার পেয়েছে কেরানীগঞ্জ ও জিঞ্জিরার পণ্য।
দুর্ভাগ্যক্রমে ‘মেড ইন জিঞ্জিরা’ বলে উপেক্ষা করা হয়েছে সেই শিল্পসম্ভাবনাকে। ধোলাইখালে যানবাহনের চেসিস, ইঞ্জিনসহ বিভিন্ন খুচরা যন্ত্রাংশ তৈরির যে অসামান্য দক্ষতা আমাদের অশিক্ষিত-অর্ধশিক্ষিত শ্রমিকেরা দেখাচ্ছেন বহু বছর ধরে, সেখানেও পৃষ্ঠপোষকতা দেয়া হলে একটা নতুন বিপ্লব ঘটতে পারত। কেরানীগঞ্জে কয়েক বছর ধরে যে গার্মেন্টশিল্পের বিপুল প্রসার, জাহাজ নির্মাণ ডকইয়ার্ড যে কেরানীগঞ্জ থেকে মেঘনাঘাট পর্যন্ত বিস্তৃত, তাতে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা পেলে বিপুল সম্ভাবনার দুয়ার খুলে যাবে। শুধু মধ্যপ্রাচ্য নয়, ইউরোপের বাজার ধরতে হবে কেরানীগঞ্জ আর জিঞ্জিরার মেড ইন পণ্যের। লৌহজাত পণ্যÑ বিশেষ করে নাট-বল্টু, ওয়াশার, স্প্রিং, দরজার কবজা, সিটকিনি, তালা, শাটারসহ যে বিপুল ক্ষুদ্র লৌহপণ্য উৎপাদিত হচ্ছে তার বিকাশে ব্যাপক অর্থনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা ও রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ দরকার। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশ অনেক এগিয়েছে। অর্থনৈতিক এই অগ্রযাত্রায় কেরানীগঞ্জ জিঞ্জিরা বিশাল ভূমিকা রাখতে পারে।
লেখক : পরিচালক, এফবিসিসিআই/ উৎসঃ নয়া দিগন্ত

Logo-orginal