, বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪

admin admin

আল্লাহ-তায়ালা ভালো-মন্দের জ্ঞান দিয়ে কেন মানুষ সৃষ্টি করেছেন ?

প্রকাশ: ২০১৭-০৪-২৮ ১৮:২৩:৩৯ || আপডেট: ২০১৭-০৪-২৮ ১৮:২৩:৩৯

Spread the love
আল্লাহ-তায়ালা ভালো-মন্দের জ্ঞান দিয়ে কেন মানুষ সৃষ্টি করেছেন ?
আল্লাহ-তায়ালা ভালো-মন্দের জ্ঞান দিয়ে কেন মানুষ সৃষ্টি করেছেন ?

আরটিএমনিউজ২৪ডটকম, ইসলাম ডেস্কঃ  আল্লাহ পাক তার প্রিয় সৃষ্টির সেরা মানবজাতিকে সঠিক পথে পরিচালিত করতে চান বলে সবাইকে তিনি ভালো-মন্দের জ্ঞান দিয়েই সৃষ্টি করেছেন।


দুনিয়ার বুকে তার যত সৃষ্টি আছে তার মধ্যে মানুষকে শ্রেষ্ঠ জীবের মর্যাদা দান করেছেন তিনি। তিনি মানুষকে অনেক বেশি ভালবাসেন বলে- সবাই যেন সঠিক পথে চলতে পারে সেই জন্য পুর্নাঙ্গ গাইড লাইন দিয়ে সাহায্য করেছেন। এর মাধ্যমে তিনি গোটা জাতিকে মহা অনুগ্রহ করেছেন। মহাগ্রন্থ আল কুরআনই হচ্ছে মানবজাতির হেদায়েত এবং সঠিক পথে পরিচালিত হওয়ার জন্য নির্ভুল গাইড বুক। 

মানুষ অপরাধ করুক অথবা ভালো কাজ করুক- কর্মের ভালো-মন্দ সম্পর্কে কিন্তু প্রতিটি মানুষ আল্লাহ প্রদত্ত নিয়ম অনুসারে বুঝতে পারে। বুঝার পর কেউ মন্দ কাজ থেকে নিজেকে বিরত রাখতে সক্ষম হয় অথবা নফসের গোলামি করতে গিয়ে অবৈধ কাজ করে বসে। এসব ক্ষেত্রে অবশ্য আল্লাহ মানুষকে স্বাধীনতা দিয়ে রেখেছেন। 

মানুষ ইচ্ছা করলে ভালো কাজ করতে পারে অথবা মন্দ কাজের দিকে অগ্রসর হতে পারে। মহান আল্লাহর সৃষ্টির বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী প্রতিটি মানুষ এই স্বাধীনতা ভোগ করছে। 

কুরআনে আল্লাহ বলেন- কসম মানুষের আত্মার এবং যিনি তাকে আকৃতিতে সুঠাম করেছেন, অতঃপর তাকে তার মন্দকর্ম ও তাকওয়ার(ইলহাম)জ্ঞান দান করেছেন (সুরা আশ শামস আয়াত ৭-৯)। মন্দকর্ম এবং তাকওয়ার জ্ঞান দান সম্পর্কে আল্লাহ প্রতিটি মানুষকে ইলহাম করে মূলতঃ সব মানুষকে সঠিক পথে চলতে সাহায্য করেছেন। 

ইলহাম সম্পর্কে ব্যাখায় তাফসিরকারক বলেন- ইলহাম শব্দটির উৎপত্তি লহম্ থেকে। এর মানে গিলে ফেলা। আমি(আল্লাহ)অমুক জিনিসটি তাকে গিলিয়ে দিয়েছি বা তার গলার নিচে নামিয়ে দিয়েছি। 

এই মৌলিক অর্থের দিক দিয়ে ইলহাম শব্দ পারিভাষিক অর্থে আল্লাহর পক্ষ থেকে কোন কল্পনা বা চিন্তাকে অবচেতনভাবে বান্দার মন ও মস্তিস্কের গোপন প্রদেশে নামিয়ে দেয়ার জন্য ব্যবহৃত হয়। মানুষের প্রতি তার পাপ এবং তার নেকি ও তাকওয়া ইলহাম করে দেয়ার দু’টি অর্থ হয়। এক, স্রষ্টা তার মধ্যে নেকি ও গোনাহ উভয়ের ঝোঁক প্রবণতা রেখে দিয়েছেন। 

প্রত্যেক ব্যক্তিই এটি অনুভব করে। দুই, প্রত্যেক ব্যক্তির অবচেতন মনে আল্লাহ এ চিন্তাটি রেখে দিয়েছেন যে, নৈতিকতার ক্ষেত্রে কোন্ জিনিস ভালো ও কোন্ জিনিস মন্দ এবং সৎ নৈতিক বৃত্তি ও সৎকাজ এবং অসৎ নৈতিক বৃত্তি ও অসৎকাজ সমান নয়। ফুজুর(দুস্কৃতি ও পাপ)একটি খারাপ জিনিস এবং তাকওয়া(খারাপ কাজ থেকে দূরে থাকা)একটি ভালো জিনিস, এ চিন্তাধারা মানুষের জন্য নতুন নয় বরং তার প্রকৃতি এগুলোর সাথে পরিচিত। 

স্রষ্টা তার মধ্যে জন্মগতভাবে ভালো ও মন্দের পার্থক্যবোধ সৃষ্টি করে দিয়েছেন। 
কুরআনের অন্য জায়গায় আল্লাহ বলেন- ‘আর আমি ভালো ও মন্দ উভয় পথ তার জন্য সুস্পষ্ট করে রেখে দিয়েছি’(সুরা আল বালাদ)। ‘আমি তাদের পথ দেখিয়ে দিয়েছি, চাইলে তারা কৃতজ্ঞ হতে পারে আবার চাইলে হতে পারে অস্বীকারকারী’। (সুরা আদ্দাহর)। 

মানুষের মধ্যে একটি নফসে লাওয়ামাহ(বিবেক)আছে। সে অসৎকাজ করলে তাকে তিরস্কার করে। (সুরা আল কিয়ামাহ আয়াত-২)। আর প্রত্যেক ব্যক্তি সে যত ওজর পেশ করুক না কেন সে কি তা সে খুব ভালো করেই জানে।(সুরা আল কিয়ামাহ আয়াত ১৪-১৫)। 

এখানে একথাটিও ভালোভাবে বুঝে নিতে হবে যে, মহান আল্লাহ স্বভাবজাত ও প্রকৃতিগত ইলহাম করেছেন প্রত্যেক সৃষ্টির প্রতি তার মর্যাদা ও স্বরূপ অনুযায়ী। যেমন- প্রাণীদের প্রত্যেক প্রজাতিকে তার প্রয়োজন অনুযায়ী ইলহামী জ্ঞান দান করা হয়েছে। যার ফলে মাছ নিজে নিজেই সাঁতার কাটে। পাখি উড়ে বেড়ায়। মৌমাছি মৌচাক তৈরী করে। 

চাতক বাসা বানায়। মানুষকেও তার বিভিন্ন পর্যায় ও ভূমিকার ক্ষেত্রে পৃথক পৃথক ইলহামী জ্ঞান দান করা হয়েছে। মানুষ এক দিয়ে প্রাণী গোষ্ঠিভূক্ত। এই দিক দিয়ে তাকে যে ইলহামী জ্ঞান দান করা হয়েছে তার একটি সুস্পষ্ট দৃষ্টান্ত হচ্ছে, মানব শিশু জন্মের সাথে সাথে মায়ের স্তন চুষতে থাকে। 

আল্লাহ যদি প্রকৃতিগত ভাবে তাকে এ শিক্ষা না দিতেন তাহলে তাকে এ কৌশলটি শিক্ষা দেবার সাধ্য কারো ছিল না। 
অন্যদিকে মানুষ একটি বুদ্ধিবৃত্তিক প্রাণী। এ দিক দিয়ে তার সৃষ্টির শুরু থেকেই আল্লাহ তাকে অনবরত ইলহামী পথনির্দেশনা দিয়ে চলছেন। 

এর ফলে সে একের পর এক উদ্ভাবন ও আবিষ্কারের মাধ্যমে মানব সভ্যতার বিকাশ সাধন করছে। এই সমস্ত উদ্ভাবন আবিষ্কারের ইতিহাস অধ্যয়নকারী যে কোন ব্যক্তিই একথা অনুভব করবেন যে, সম্ভবত মানুষের চিন্তা ও পরিশ্রমের ফল হিসেবে দু’ একটি ব্যতিক্রম ছাড়া প্রত্যেকটি আবিষ্কার আকষ্মিকভাবে শুরু হয়েছে। 

হঠাৎ এক ব্যক্তির মাথায় এক চিন্তার উদয় হয়েছে এবং তারই ভিত্তিতে সে কোন জিনিস আবিষ্কার করেছে। এই দু’টি মর্যাদা ছাড়াও মানুষের আর একটি মর্যাদা ও ভূমিকা আছে। সে একটি নৈতিক জীবও। এই পর্যায়ে আল্লাহ তাকে ভাল ও মন্দের মধ্যে পার্থক্য করার শক্তি এবং ভালোকে ভালো ও মন্দকে মন্দ জানার অনুভূতি ইলহাম করেছেন। 

এই শক্তি, বোধ ও অনুভূতি একটি বিশ্বজনীন সত্য। 

এর ফলে আজ পর্যন্ত দুনিয়ায় এমন কোন সমাজ ও সভ্যতা গড়ে ওঠেনি যেখানে ভালো ও মন্দের ধারণা ও চিন্তা কার্যকর ছিল না। আর এমন কোন সমাজ ইতিহাসে কোন দিন পাওয়া যায়নি এবং আজো পাওয়া যায়না যেখানকার ব্যবস্থায় ভালো ও মন্দের এবং সৎ ও অসৎকর্মের জন্য পুরস্কার ও শাস্তির কোন না কোন পদ্ধতি অবলম্বিত হয়নি। 

প্রতিযুগে, প্রত্যেক জায়গায় এবং সভ্যতা-সংস্কৃতির প্রত্যেক পর্যায়ে এই জিনিসটির অস্তিত্বই এর স্বভাবজাত ও প্রকৃতিগত হবার সুস্পষ্ট প্রমাণ। এছাড়াও একজন বিজ্ঞ ও বিচক্ষন স্রষ্টা মানুষের প্রকৃতির মধ্যেই এটি গচ্ছিত রেখেছেন, একথাও এ থেকে প্রমাণিত হয়। ভাল ও মন্দ সম্পর্কে জ্ঞান দান করে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন প্রতিটি মানুষকে সঠিক পথে চলতে পথনির্দেশনা দিয়ে সৃষ্টির সেরা জীবের প্রতি দয়া করেছেন। 


কুরআনে আল্লাহ বলেন- অবশ্যই সফলকাম হয়েছে সে ব্যক্তি, যে নিজেকে পরিশুদ্ধ করেছে; আর বিফল হয়েছে সে ব্যক্তি, যে নিজেকে পাপাচারে কলুষিত করেছে (সুরা আশ শামস আয়াত-১০)। আয়াতটির ব্যাখা ভাল করে অধ্যয়ন করলে প্রতিটি মানুষ তার জীবনের সাফল্য ও ব্যর্থতা সম্পর্কে পরিস্কার ধারণা পাবেন এবং বুঝতে পারবেন এ সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান থাকা তার জন্য কতটা জরুরি। 

ব্যাখায় বলা হয়েছে- যে সব গভীর তত্ব আল্লাহ মানুষকে বুঝাতে চান সেগুলো সম্পর্কে তিনি কুরআনে যে বিশেষ নিয়ম অবলম্বন করেছেন তা হচ্ছে এই যে, সেগুলো প্রমাণ করার জন্য তিনি হাতের কাছের এমন কিছু সুস্পষ্ট ও সর্বজন পরিচিত জিনিস পেশ করেন, যা প্রত্যেক ব্যক্তি তার আশেপাশে অথবা নিজের অস্তিত্বের মধ্যে প্রতিদিন ও প্রতি মুহুর্তে দেখে। 

এই নিয়ম অনুযায়ী এখানে এক এক জোড়া জিনিস নিয়ে তাদেরকে পরস্পরের বিরুদ্ধে পেশ করা হয়েছে। তারা পরস্পরের বিপরীতধর্মী কাজেই তাদের প্রভাব ও ফলাফলও সমান নয়। বরং অনিবার্যভাবে তারা পরস্পর বিভিন্ন। একদিকে সূর্য, অন্যদিকে চাঁদ। 

সূর্যের আলো অত্যন্ত প্রখর। এর মধ্যে রয়েছে তাপ। এর তুলনায় চাঁদের নিজস্ব কোন আলো নেই। সূর্যের উপস্থিতিতে সে আকাশে থাকলেও আলোহীন থাকে। সূর্য ডুবে যাওয়ার পর সে আলোকিত ও উজ্জল হয়। সে সময়ও তার আলোর মধ্যে রাতকে দিন বানিয়ে দেবার ঔজ্জ্বল্য থাকে না। সূর্য তার আলোর প্রখরতা দিয়ে দুনিয়ায় যে কাজ করে চাঁদের আলোর মধ্যে সে প্রখরতা থাকেনা। তবে তার নিজস্ব কিছু প্রভাব রয়েছে। 

এ গুলো সূর্যের প্রভাব থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রকৃতির। এভাবে একদিকে আছে দিন অন্যদিকে আছে রাত। এরা পরস্পর বিপরীতধর্মী। উভয়ের প্রভাব ও ফলাফল এত বেশী বিভিন্ন যে, এদেরকে কেউ এক সাথে জড়াতে পারে না। 

এমনকি সব চাইতে নির্বোধ ব্যক্তিটির পক্ষেও একথা বলা সম্ভব হয় না যে, রাত হলেই বা কি আর দিন হলেই বা কি, এতে কোন পার্থক্য হয় না। ঠিক তেমনি একদিকে রয়েছে আকাশ। স্রষ্টা তাকে উঁচুতে স্থাপন করেছেন। অন্যদিকে রয়েছে পৃথিবী। 

এর স্রষ্টা একে আকাশের তলায় বিছানার মত করে বিছিয়ে দিয়েছেন। এরা উভয়েই একই বিশ্ব জাহানের ও তার ব্যবস্থার সেবা করছে এবং তার প্রয়োজন পূর্ণ করছে। কিন্তু উভয়ের কাজ এবং প্রভাব ও ফলাফলের মধ্যে আসমান ও জমিন ফারাক। উর্ধজগতের এই সাক্ষ্য প্রমানগুলো পেশ করার পর মানুষের নিজের শরীর সম্পর্কে বলা হয়েছে, তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ এবং ইন্দ্রিয় ও মস্তিষ্কেও শক্তিগুলোকে আনুপাতিক ও সমতাপূর্ণ মিশ্রণের মাধ্যমে সুগঠিত করে স্রষ্টা তার মধ্যে সৎ ও অসৎ উভয় প্রবনতা ও কার্যকারণসমূহ রেখে দিয়েছেন। এগুলো পরস্পরের বিপরীতধর্মী। 

ইলহামী তথা অবচেতনভাবে তাকে এদের উভয়ের পার্থক্য বুঝিয়ে দিয়েছেন। তাকে জানিয়ে দিয়েছেন, এদের একটি ফুজুর-দুস্কৃতি, তা খারাপ এবং অন্যটি হচ্ছে, তাকওয়া-আল্লাহভীতি, তা ভাল। এখন যদি সূর্য ও চন্দ্র, রাত ও দিন এবং আকাশ ও পৃথিবী এক না হয়ে থাকে বরং তাদের প্রভাব ও ফলাফল অনিবার্যভাবে পরস্পর থেকে আলাদা হয়ে থাকে তাহলে, মানুষের নফসের দুষ্কৃতি ও তাকওয়া পরস্পরের বিপরীতধর্মী হওয়া সত্বেও এক হতে পারে কেমন করে? 

মানুষ নিজেই এই দুনিয়ায় নেকী ও পাপকে এই মনে করে না। নিজের মনগড়া দর্শনের দৃষ্টিতে সে যদি ভালো ও মন্দের কিছু মানদন্ড তৈরী করে নিয়েই থাকে তাহলেও যে জিনিসটিকে সে নেকী মনে করে, সে সম্পর্কে তার অভিমত হচ্ছে এই যে, তা প্রশংসনীয় এবং প্রতিফল ও পুরস্কার লাভের যোগ্য। 

অন্যদিকে যাকে সে অসৎ ও গোনাহ মনে করে, সে সম্পর্কে তার নিজের নিরপেক্ষ অভিমত হচ্ছে এই যে, তা নিন্দনীয় ও শাস্তিযোগ্য। কিন্তু আসল ফায়সালা মানুষের হাতে নেই। বরং যে স্রষ্টা মানুষের প্রতি তার গোনাহ ও তাকওয়া ইলহাম করেছেন তার হাতেই রয়েছে এর ফায়সালা। স্রষ্টার দৃষ্টিতে যা গোনাহ ও দুষ্কৃতি আসলে তাই হচ্ছে গোনাহ ও দুষ্কৃতি এবং তাঁর দৃষ্টিতে যা তাকওয়া আসলে তাই হচ্ছে তাকওয়া। সৃষ্টার কাছে এ দু’টির রয়েছে পৃথক পরিনাম। 

একটির পরিনাম হচ্ছে, যে নিজের নফসের পরিশুদ্ধি করবে সে সাফল্য লাভ করবে এবং অন্যটির পরিনাম হচ্ছে, যে ব্যক্তি নফসকে দাবিয়ে দেবে সে ব্যর্থ হবে। পরিশুদ্ধ করা মানে পাক-পবিত্র করা, বিকশিত করা এবং উদ্বুদ্ধ ও উন্নত করা। 

এর পরিস্কার অর্থ দাড়ায়, যে ব্যক্তি নিজের নফস্ ও প্রবৃত্তিকে দুষ্কৃতি থেকে পাক-পবিত্র করে, তাকে উদ্বুদ্ধ ও উন্নত করে তাকওয়ার উচ্চতম পর্যায়ে নিয়ে যায় এবং তার মধ্যে সৎপ্রবণতাকে বিকশিত করে, সে সাফল্য লাভ করবে। এর বিপরীতে যে নিজের নফসের মধ্যে নেকী ও সৎকর্মের যে প্রবণতা পাওয়া যাচ্ছিল তাকে উজ্জীবিত ও বিকশিত করার পরিবর্তে দাবিয়ে দেয়, তাকে বিভ্রান্ত করে অসৎপ্রবণতার দিকে নিয়ে যায় এবং দৃষ্কৃতিকে তার উপর এত বেশী প্রবল করে দেয় যার ফলে তাকওয়া তার নীচে এমনভাবে মুখ ঢাকে যেমন কোন লাশকে কবরের মধ্যে রেখে তার উপর মাটি চাপা দিলে তা ঢেকে যায়। 

একজন কিভাবে সফল হবেন তা আল্লাহর ফায়সালার উপর নির্ভলশীল। তবে প্রকৃত সাফল্য ও ব্যর্থতাকে আল্লাহ মানুষের প্রচেষ্টা নির্ভরও করে দিয়েছেন। 

আল্লাহ মানুষ ও জিন জাতিকে সৃষ্টিই করেছেন তার ইবাদাত বা দাসত্ব করার জন্য। ইবাদাতের অর্থ হচ্ছে- গোলামী, দাসত্ব, আনুগত্য এবং আদেশানুবর্তিতা। ইসলাম-পূর্বকালে আরবের লোকেরা তাদের ধর্মগুরুদের নির্দেশ ও বাপ-দাদার ধারণা কল্পনা মেনে চলতে গিয়ে খাদ্য-পানীয় বিষয়ে নানা ধরনের বিধি-নিষেধ মেনে চলতো। 


তারা ইসলাম গ্রহণ করলে আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা যদি আমারই ইবাদাত করো তবে এসব বিধি-নিষেধ, বাধ্য-বাধকতার অবসান ঘটিয়ে আমি যা হালাল করেছি, তাকে হালাল মনে করে নির্দ্বিধায় তা খাও।’ এর স্পষ্ট দ্ব্যর্থহীন অর্থ এই যে, তোমাদের পন্ডিত-গুরুদের নয়, তোমরা যদি আমারই বান্দাহ হয়ে থাক, সত্যিই যদি তোমরা তাদের আনুগত্য আদেশানুবর্তিতা ত্যাগ করে আমার আনুগত্য গ্রহণ করে থাকো, তাহলে হালাল-হারাম এবং বৈধ-অবৈধের ব্যাপারে তাদের মনগড়া বিধানের পরিবর্তে আমার বিধান মেনে চলতে হবে। 

সুতরাং এখানেও ইবাদাত শব্দটি দাসত্ব আনুগত্য অর্থেই ব্যবহৃত হয়েছে। ‘আল্লাহর ইবাদাত করো এবং তাগুতের ইবাদাত থেকে বিরত থাকো-এ শিক্ষা দেয়ার জন্য আমরা প্রতিটি কওমের মধ্যে একজন পয়গাম্বর প্রেরণ করেছি।’ (সুরা আন্ নাহল)। ‘রহমানের সামনে গোলাম হিসেবে হাযির হবে না- আসমান যমীনের বাসিন্দাদের মধ্যে এমন কেউ নেই। তিনি সকলকে শুমার করে রেখেছেন। 

আর কিয়ামতের দিন এক এক করে সকলেই তাঁর সামনে উপস্থিত হবে।’(সুরা মারইয়াম)। আল্লাহ তার গোলামী বা দাসত্ব করার জন্যই খেলাফতের দায়িত্ব দিয়ে মানবজাতিকে দুনিয়ার বুকে পাঠিয়েছেন। 


একজন গোলাম বা দাস বা খলিফা যদি তার মুনিবের শতভাগ দাসত্ব করে এবং পূর্ণাঙ্গ আনুগত্য সহকারে দায়িত্ব পালন করে তাহলে এটাই তার জন্য উত্তম কাজ হিসেবে বিবেচিত হবে তার মুনিবের দরবারে। মুনিবের দেয়া দায়িত্ব সঠিক ভাবে পালন না করলে দাস এবং মুনিবের মধ্যে ভাল সম্পর্ক থাকতে পারে না। আর যদি গোলাম বা দাস তার মুনিবের দেয়া গাইড বুক অনুযায়ী নিজের সকল কাজ পরিচালনা করে তাহলে অবশ্যই উভয়ের মধ্যে সম্পর্ক ভাল হবে। 

এমনটি হলে গোলাম বা দাসেরই লাভ বেশী। এর ব্যতিক্রম হলেই হবে পরিনতি হবে মারাত্মক। বিপর্যয় নেমে আসবে। আল্লাহর বিধান অনুযায়ী প্রতিটি মানুষকে তার কর্মের ফল ভোগ করতে হবে। পূর্ণ দাসত্ব করলে মুনিব তার গোলামের প্রতি খুশি থাকবেন। এছাড়া গোলাম যদি ভালভাবে তার মুনিবের গোলামী করে তাহলে মুনিবের নিকট হতে সঠিক পুরস্কার এবং আরো যা কিছু পাওয়া দরকার তা ঠিক মতই পাবে। 

এ কথা সকল মুসলমানের পরিষ্কার মনে রাখা উচিৎ যে, প্রভূর শতভাগ গোলামী করার মধ্যেই তার শ্রেষ্ঠত্ব নিহিত রয়েছে। এই জন্য কোন প্রকার দ্বিধাদ্বন্দ্ব থাকা একদম ঠিক নয়। তাই প্রভূর নির্দেশনা অনুযায়ী জীবন পরিচালনার জন্য সকল গোলামের সিদ্ধান্ত গ্রহণের বিকল্প নেই। কঠিন জাহান্নাম থেকে বাঁচতে হলে আল্লাহর শতভাগ আনুগত্য করার সিন্ধান্ত নিতে হবে সকল গোলামকে। 

এর বিপরীত হলে মুনিবের নিকট থেকে পুরষ্কার না পেয়ে বরং সবাই শাস্তি পাবে এটিই সাধারণ হিসাবের কথা। আর আল্লাহ কিন্তু সকল মানুষকে ভাল-মন্দ এবং সাফল্য ও ব্যর্থতার জ্ঞান দিয়ে সৃষ্টি করেছেন তার শাস্তি ভোগ করার জন্য নয় বরং সবাই যাতে জান্নাতে প্রবেশ করে চিরস্থায়ী সূখ ও শান্তি ভোগ করতে পারে তা নিশ্চিত করার জন্য।লেখকঃ আবুল কাশেম আমিন, (বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ)

Logo-orginal