, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

admin admin

নয় বছরেও ধরা পড়েনি মুক্তার রোগ : পোকা ধরেছে শরীরে

প্রকাশ: ২০১৭-০৭-১০ ২০:০০:৪১ || আপডেট: ২০১৭-০৭-১০ ২০:০০:৪১

Spread the love
নয় বছরেও ধরা পড়েনি মুক্তার রোগ : পোকা ধরেছে শরীরে
নয় বছরেও ধরা পড়েনি মুক্তার রোগ : পোকা ধরেছে শরীরে

টিউমার। হাড়ের ক্যান্সার। রক্ত টিউমার। বোন টিবি। হাড়ে ইনফেকশন। একেক সময় একেক চিকিৎসক একেক রকম বলেছেন। ওষুধও দিয়েছেন একেক রকম। উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন অ্যান্টিবায়োটিক চলেছে বছরের পর বছর। কিন্তু কোন লাভ হয়নি। প্রতিনিয়ত তাই এখন যন্ত্রণায় ছটফট করছে ১১ বছরের শিশু মুক্তা। তার ডান হাতের বিশালাকৃতির মাংসপিÐে পচন ধরেছে। পোকা ধরেছে। দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে মুক্তা কি রোগে আক্রান্ত তা নির্ণয়ে ব্যর্থ হয়েছে বাংলাদেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা।  সংবাদ    দৈনিক ইনকিলাব এর।
আর মেয়ের রোগ সারাতে যশোর, খুলনা ও ঢাকার চিকিৎসকদের দ্বারে দ্বারে ঘুরে সর্বশান্ত হয়েছে মুক্তার বাবা সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বাশদাহ গ্রামের দক্ষিণ কামারবায়সা গ্রামের ইব্রাহিম হোসেন ও মা আসমা খাতুন দম্পতি। মেয়ের চিকিৎসায় ১০ লক্ষাধিক টাকা ব্যয় করেছেন তারা। এখন সর্বশান্ত হয়ে শুধু প্রার্থনাই শেষ সম্বল তাদের।
মুক্তার বাবা ইব্রাহিম হোসেন জানান, তার তিন ছেলে-মেয়ে। মেয়ে দুটো জমজ। হিরা ও মুক্তা। আর ছেলে আল-আমিনের বয়স এক বছর তিন মাস।
ইব্রাহিম হোসেন বলেন, দেড় বছর বয়সে মুক্তাকে কোলে নিলে তার ডান হাতের কনুইয়ের উপরের অংশে ব্যথা অনুভব করতো। এরপর আমরা যখন বুঝতে পারি, তখন তার কনুইয়ের উপরের দিকের চামড়ার উপর হাত দিলে একটা গোটা মতো অনুভব করা যেত। প্রথমে হোমিও চিকিৎসা করাতাম। কিন্তু কিছুদিন ভাল থাকতো। ওষুধ বন্ধ করে দিলে আগের অবস্থায় ফিরে যেত। পরে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা বললো মুক্তার বয়স ৬-৭ বছর না হলে রোগ নির্ণয় করা যাবে না। এই কথা শুনে আর হাসপাতালে নেওয়া হয়নি। এটাই হয়েছে বড় ভুল। মুক্তার বয়স যখন ৬ বছর, তখন তাকে আবার ডাক্তারের কাছে নিয়ে যায়।
ডা. মাজিদুল হক, ডা. ইব্রাহিম খলিল, ডা. মেহেদী নেওয়াজ সকলের কাছেই গেছি। একেকজন একেক রকম বলেছেন। কিন্তু কেউ রোগ ধরতে পারেননি। পরে তাদেরই পরামর্শে যশোর, খুলনা ও ঢাকার আরও অনেক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে দেখায়। কিন্তু অবস্থার উন্নতি হয়নি।
এরই মধ্যে রোগ ছড়িয়ে পড়ে সমগ্র হাতে, বুকের একাংশে। ফুলে যায়। বর্তমানে পচে পোকা হয়ে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। যশোর, খুলনা, ঢাকা করেছি। এভাবেই চলেছে বিগত সাড়ে নয় বছর। কিন্তু বাবা হিসেবে বসে বসে দেখা ছাড়া আমার আর কিছুই করার নেই এখন। মেয়ের এই কষ্টের কথা বলতে গিয়ে চোখ ছলছল করে ওঠে বাড়ির সাথে লাগোয়া ছোট মুদি দোকানি ইব্রাহিম হোসেনের।
তিনি প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, আমার মেয়ের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করে দিন। একটা রোগ কেউ ধরতে পারলো না। আমার মেয়ের মতো যেন অন্য কেউ এমন কষ্ট না পায়।
যন্ত্রণায় কাতর মুক্তা বলেন, সব সময় যন্ত্রণা হয়। হাত চাকাতি পারি না। হাতের মধ্যে চিলিক মারে, আপনারা আমাকে ভাল করে দেন। আমি আপুর সাথে আবার স্কুলে যাব।
ইব্রাহিম হোসেনের বড় মেয়ে চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী হিরা বলে, আপুর অনেক কষ্ট হয়। আমরা আগে এক সাথে স্কুলে যেতাম। কিন্তু আপু আর স্কুলে যেতে পারে না। ওকে দেখলে অন্যান্যরা ভয় পায়। আল্লাহ আপুকে ভাল করে দিক, এটাই চাই। মুক্তার মা আসমা খাতুন বলেন, ফুটফুটে মেয়েটার দিকে তাকানো যায় না। রোগ আস্তে আস্তে সমগ্র শরীরে ছড়িয়ে পড়ছে। শরীর ছুকিয়ে যাচ্ছে। পরিষ্কার সাদা মুখটা ছোট হয়ে আসছে। সারাদিন শুইয়ে রাখতে হয় তাকে। এরপর আর কিছু বলতে পারেননি তিনি।
মুক্তাদের প্রতিবেশী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, আপনারা কিছু একটা করেন। একটা জীবন, সেই ছোট বেলা থেকেই যে কখনও হাসতে পারেনি, তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করুন। এজন্য তিনি প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

 

Logo-orginal