, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

admin admin

মুসলমানদের আত্মার আত্মীয় মসজিদুল আল আকসা” পর্ব ১

প্রকাশ: ২০১৭-০৭-২৭ ০০:৫০:৫৮ || আপডেট: ২০১৭-০৭-২৭ ০০:৫০:৫৮

Spread the love
মুসলমানদের আত্মার আত্মীয় মসজিদুল আল আকসা
মুসলমানদের আত্মার আত্মীয় মসজিদুল আল আকসা

আবুল কাশেম, প্রবাসী লেখক।

পবিত্র তিনি যিনি নিয়ে গেছেন এক রাতে নিজের বান্দাকে মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আক্‌সা পর্যন্ত, যার পরিবেশকে তিনি বরকতময় করেছেন, যাতে তাকে নিজের কিছু নিদর্শন দেখান। আসলে তিনিই সবকিছুর শ্রোতা ও দ্রষ্টা। (সুরা ইসরা-১)

সুরা ইসরার ১ম আয়াতে আল্লাহ সুবহান তায়ালা কোড করেছেন মসজিদুল হারাম ( মক্কা) এবং মসজিদুল আকসা  ( জেরুজালেম), এই কারণে মসজিদ দুটি মুসলমানদের নিকট আত্মার চেয়েও বেশি প্রিয় ।

 

ইসলামের পবিত্রতম মসজিদ এবং প্রথম কেবলা ‘মসজিদুল আকসা বা বাইতুল মুকাদ্দাস’ যার সুস্পষ্ট নির্দেশনা রুয়েছে পবিত্র কুরআনে ।

মুসলমানদের প্রিয় এই মসজিদটি সুপ্রাচীন শহর জেরুজালেমে অবস্থিত। মুলত জেরুজালেমের দখল নিয়ে এখনো লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে মুসলমানরা ।

সুরা বনী ইসরাইলের তথ্যমতে ও ছহিহ হাদীসে উল্লেখ আছে এই শহর নিয়ে মুসলিম বিশ্বের সাথে ব্যাপক সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়বে ইহুদীরা । যেমনটি করে আসছে ইহুদীরা ।

মুসলমানদের প্রিয় এই মসজিদকে রক্ষা ও হেফাজত করা সব মুসলমানের ফরজ ।

গত ২৫ জুলাই ২০১৭ সালে ইস্তাম্বুলে এক বক্তিতায় সেই কথার পুনরাবৃত্তি করেছেন, তুর্কি প্রেসিডেন্ট রজব তায়েফ এরদোগান ।

তিনি বলেছেন আল আকসা শুধু ফিলিস্তানের নয় পুরো ১৭০ কোটি মুসলমানের ।
মহানবী সা: মক্কার মসজিদুল হারাম, মদিনার মসজিদুন্নবী ও মসজিদুল আকসার উদ্দেশে সফরকে বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন, যা অন্য কোনো মসজিদ সম্পর্কে করেননি। এর গুরুত্ব সম্পর্কে মহানবী সা: বলেছেন, ‘ঘরে নামাজ পড়লে এক গুণ, মসজিদে ২৫ গুণ, মসজিদে নববী ও আকসায় ৫০ হাজার গুণ, মসজিদে হারামে এক লাখ গুণ সাওয়াব’ (ইবনে মাজাহ)।

প্রতিষ্ঠার ইতিহাস ও ষড়যন্ত্র :
হজরত ইবরাহিম আ: কর্তৃক কাবাঘর নির্মাণের ৪০ বছর পর হজরত ইয়াকুব আ: জেরুসালেমে আল-আকসা মসজিদ নির্মাণ করেন। অতঃপর হজরত সুলায়মান আ: জিনদের মাধ্যমে এই পবিত্র মসজিদের পুনর্নির্মাণ করেন। ৬৩৮ খ্রিষ্টাব্দে পুরো বাইতুল মুকাদ্দাস এলাকা মুসলমানদের অধীনে আসে। ১০৯৯ সালের ১৫ জুলাই খ্রিষ্টান ক্রুসেডাররা নামধারী মুসলিম শাসকদের সহায়তায় সমগ্র সিরিয়া ও ফিলিস্তিন দখল করে। এরপর তারা ১০৯৯ সালের ৭ জুন বাইতুল মুকাদ্দাস অবরোধ করে এবং ১৫ জুলাই মসজিদের ভেতর প্রবেশ করে ব্যাপক পরিবর্তন করে একে গির্জায় পরিণত করে।

১১৬৯ সালের ২৩ মার্চ। ফাতেমি খিলাফতের কেন্দ্রীয় খলিফার নির্দেশে সালাহউদ্দিন আইয়ুবী র: গভর্নর ও সেনাপ্রধান হয়ে মিসরে আগমন করেন। এরপর ১১৮৭ সালের ২০ সেপ্টেম্বর রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে মুসলিম বীর সুলতান সালাহউদ্দিন আইয়ুবী র: জেরুসালেম শহর মুসলমানদের অধিকারে নিয়ে আসেন। অতঃপর ১১৮৭ সালের ২ অক্টোবর শুক্রবার সালাহউদ্দিন আইয়ুবী র: বিজয়ীর বেশে বাইতুল মুকাদ্দাস প্রবেশ করেন। বাইতুল মুকাদ্দাস মুক্ত হওয়ার পর সেখানকার মুসলিমরা প্রায় ৯০ বছর পর ক্রুসেডারদের অত্যাচার থেকে রেহাই পেয়েছিল।

মহানবী সা: ও মসজিদুল আকসা:
হিজরতের এক বছর আগে ২৭ রজব মিরাজের রাতে মহানবী সা: প্রথমে তারা বাইতুল আকসায় উপনীত হন। বোরাককে বাইরে বেঁধে মহানবী সা: মসজিদে প্রবেশ করেন এবং সেখানে দুই রাকাত নামাজ আদায় করেন। এ প্রসঙ্গে কুরআনে বলা হয়েছে, ‘পবিত্র ও মহিমাময় তিনি, যিনি তাঁর বান্দাকে রজনীযোগে ভ্রমণ করিয়েছিলেন মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আকসা পর্যন্ত, যার পরিবেশ আমি করেছিলাম বরকতময়, তাঁকে আমার নিদর্শন দেখানোর জন্য’ (সূরা বনি ইসরাইল, ১৭:১)। মহানবী সা: মিরাজ শেষে পুনরায় মসজিদুল আকসায় প্রত্যাবর্তন করেন এবং ইমাম হয়ে নবী-রাসূলদের নিয়ে নামাজ আদায় করেন।

মসজিদুল কিবলাতাইন ও মসজিদুল আকসা:
মহানবী সা: মদিনায় হিজরত করার পর প্রায় ১৬ মাস মসজিদুল আকসার দিকে মুখ করে নামাজ আদায় করেন। হিজরি দ্বিতীয় সনের শাবান মাসে মতান্তরে রজব মাসের মাঝামাঝি মহানবী সা: কিছু সাহাবায়ে কিরামসহ মদিনার অদূরে মসজিদে বনু সালামায় জোহর মতান্তরে আসর নামাজ আদায় করেন। দ্বিতীয় ও তৃতীয় রাকাতের মাঝামাঝি আল্লাহর নির্দেশে মহানবী সা: ও সাহাবায়ে কিরাম চার রাকাতবিশিষ্ট নামাজের দুই রাকাত কাবা শরিফের দিকে ফিরে আদায় করেছিলেন বিধায় ইসলামের ইতিহাসে মসজিদটি মসজিদে কিবলাতাইন বা দুই কিবলা হিসেবে সুপরিচিত ও সমাদৃত।

আল কুদ্স দিবস:
অভিশপ্ত ইহুদিদের হীন ষড়যন্ত্রে মসজিদুল আকসা ও জেরুসালেম নগরীতে মুসলমানদের পদচারণা আজ নিষিদ্ধ। ইসলামী প্রজাতন্ত্রের প্রতিষ্ঠাতা ইমাম খোমেনি ইরানের ইসলামী বিপ্লবের সাফল্যের পর ১৯৭০ সালের আগস্টে পবিত্র রমজানের শেষ শুক্রবারকে বিশ্ব আল কুদ্স দিবস হিসেবে পালনের আহ্বান জানিয়েছিলেন। তার সে আহ্বানে সাড়া দিয়ে বিশ্ববাসী বিশেষ করে মুসলমানেরা প্রতি বছর এ দিনটি বিশ্ব আল কুদ্স দিবস হিসেবে পালন করে আসছেন।

চলবে ।

শেষ কথা: লর্ড কার্জনের সেই উদ্ধত উক্তি- ‘আমরা মুসলিমদের মেরুদণ্ড খিলাফতকে ধ্বংস করে দিয়েছি, তারা আর দাঁড়াতে পারবে না। তারা সেই সুলতান সালাহউদ্দিন আইয়ুবীর কবরে লাথি মেরে বলেছিল, ওঠো সালাহউদ্দিন! তোমরা বাইতুল মুকাদ্দাসকে রক্ষা করো।’… আর আমরা কী করলাম? পেরেছি কি সেই খিলাফতকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে? পেরেছি কি সেই বাইতুল মুকাদ্দাসকে রক্ষা করতে? আজ সময় এসেছে ঐক্যবদ্ধ হয়ে বাতিলের মোকাবেলার।

Logo-orginal