, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

admin admin

আরকানের মুসলমানদের বাচাতে এগিয়ে আসতে হবে যাদের”

প্রকাশ: ২০১৭-০৮-২৬ ১৯:৪৮:২০ || আপডেট: ২০১৭-০৮-২৬ ২৩:৫৪:৩২

Spread the love
আরকানের মুসলমানদের বাচাতে এগিয়ে আসতে হবে যাদের"
আরকানের মুসলমানদের বাচাতে এগিয়ে আসতে হবে যাদের”

আবুল কাশেম, আরটিএমনিউজ২৪ডটকমঃ  মানুষ মানুষের জন্য,  জীবন জীবনের জন্য, মানুষ কি পারে না একটু সহানুভূতি দেখাতে ?

এটি ভূপেন হাজারিকার জননন্দিত একটি গান। মানবিকতার প্রসঙ্গ এলেই মনের অজান্তে গুনগুন করে এই গানটি কম বেশি সবাই গেয়ে থাকে। মানুষ মানুষের জন্য জীবন জীবনের জন্য এই কথাটি মিথ্যে পরিণত হতে যাচ্ছে। কারণ এখন আর মানুষ মানুষের জন্যে তো নয়! উল্টো জীবন কেড়ে নেয়। মানুষের বড় পরিচয় যে মানুষ সেটা আমরা ভুলে যেতে বসেছি। যার ফলে আরকানের নিরীহ মুসলমানদের নির্মম নির্যাতন দেখেও না দেখার ভান করে দিনপাত করছি। একটা সময় তো এমন ছিল যখন কেউ কষ্ট পেত সবাই এগিয়ে যেত সান্ত¦না দিতে, এখন আর তেমনটা দেখা যায় না।

হা, মুসলমানদের ক্ষেত্রে এমন চিত্র হলেও হিন্দু বৌদ্ধ খৃষ্টানদের ক্ষেত্রে তাহা সম্পূর্ণ ভিন্ন চিত্র।  তবে মুসলমানদের মাঝে এক সময় এই চিত্র ছিল । ১৯৭৯ থেকে ২০১৭ সাল দীর্ঘ ৩৮ বছরেও থামেনি বার্মার বৌদ্ধদের অত্যাচার । রোহিঙ্গা মুসলমানরা প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে বাংলাদেশ ভারত চীন থাইল্যান্ড সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আশ্রিত । সৌদিতে আশ্রয় দেওয়া হয়েছিল লাখো বার্মিজ মুসলমানকে । নাগরিকত্ব পেয়েছিল অনেকে ।

গত বছরের বিক্ষোভ
গত বছরের বিক্ষোভ

ইতিহাসে বার্মা, ফিলিস্তান, কাস্মীরসহ মুসলমানদের সমস্যা সমাধান হবার কোন পদক্ষেপ বা মুসলিম বিশ্বের জোরালো ভুমিকা আকাশ কুসুম কল্পনা মাত্র।

আমি আমার বিবেককে হাজার বার প্রশ্ন করেছি, মুসলমানরা মুসলমানদের জন্য কাঁদে কেন ?

অথচ আমাদের দেশে যখন রামুতে বৌদ্ধ মন্দিরে হামলা হল, উন্নত কয়েক দেশ হুমকি দিল সাহায্যে বন্ধ করে দেওয়ার ।

আসলে মুসলমানদের জন্য যেই সৌদি আরবের এগিয়ে আসার কথা, তারাই এখন ভিন্ন জগতের বাসিন্দা ।

তবে আশির দশকে মুসলিম বিশ্বের ভুমিকা ছিল চ্যালেঞ্জিং । সাদ্দাম, গাদ্দাফি, ইয়াসির আরফাত, মাহাথীর মোহাম্মদ,  মেজর জিয়া, বাদশাহ ফয়সাল, শেখ জাবের,  আনোয়ার সাদত ও জেনারেল জিয়াউল হকের হুংকারে ভীত থাকত মুসলিম বিরোধী ইহুদী তথা ইন্দো মার্কিন শক্তি। সক্রিয় ছিল ও আই সি, জাতিসংঘ তৎপরতা ছিল আশাব্যঞ্জক ।

কোথাও মুসলিম বিরোধী কর্মকান্ড প্রকাশের সাথে সাথে বিক্ষোভে ফেটে পড়ত গোটা মুসলিম বিশ্ব । আল আকসা ও কাশ্মীরের জন্য বিক্ষোভ মিছিল সমাবেশ ছিল মুসলমান দেশের নিত্ত্য ঘটনা । বিশ্ব আলেম ওলামাদের ভুমিকা ছিল বেশ বলিষ্ট ।

বিংশ্ব শতাব্দীতে বদলে  গেছে সেই দৃশ্যপট, হারিয়ে যাচ্ছে ভাতৃত্ব, উঠে যাচ্ছে আন্তরিকতা, ভোগ বিলাসে মত্ত আজ মুসলিম নেতৃত্ব, আলেম-ওলামা ব্যস্ত ফতোয়াবাজিতে, এই যখন মুসলিমদের পরিস্থিতি তখন বিশ্ব ইহুদী লবি মুসলমান ধ্বংসের ছককে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে বিনা বাধায় ।

দেশে দেশে তৈরি করছে আই এস এস, দায়েস, জঙ্গী ইত্যাদি সন্ত্রাসী গোষ্টি । অত্যন্ত  সুন্দর পদ্ধতিতে ব্রেইন ওয়াশ করে মুসলিম যুবকদের টেলে দেওয়া হচ্ছে মুসলমানদের বিরুদ্ধে ।

 

আজ আবারো আগুন দিয়ে জালিয়ে দেওয়া হচ্ছে আরকানে মুসলমানদের বাড়িঘর, মসজিদ মাদ্রাসা ও দোকান পাঠ ।

বিশ্ব বিবেক জেগে উঠলেও মিয়ানমার সরকারের সাথে আর্থিক ও বাণিজ্যিক স্বার্থের কারণে মার্কিন প্রভাবাধীন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নীরব ভূমিকা পালনের কারণে রোহিঙ্গাদের ওপর নিপীড়ন বেড়েই চলছে। হত্যা করা হচ্ছে নিষ্পাপ শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধাদেরকে। অসংখ্য মা বোনের ইজ্জত কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। সন্তানহারা করা হচ্ছে অসংখ্যা মমতাময়ী মাকে। স্বামীহারা করছে হাজারো স্ত্রীকে। ভাইয়ের সামনে বোনের ইজ্জত লুটে নিয়ে উল্লাস করলেও ভাই তার বোনের ইজ্জতকে রক্ষা করতে পারছেন না। মজলুম মুসলিম রোহিঙ্গাদের চোখের পানিতে ভাসছে মিয়ানমার। পৃথিবীতে দেড়শ কোটি মুসলমান থাকার পরও দেশে দেশে মুসলিম নিধন চলছে। তাহলে কি আমরা ধরেই নিব রোহিঙ্গারা মুসলিম হওয়াটাই অপরাধ ?

গণহত্যা,ধর্ষণ,নির্যাতনের শিকার রোহিঙ্গাদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয়া হচ্ছে তা কিন্তু নয়। বাড়ি থেকে জোর করে উচ্ছেদ করা হচ্ছে। নিজ দেশে জন্ম গ্রহণ করেও তারা ভিটে বাড়িতে না থাকতে পেরে জীবন বাঁচানোর তাগিদে সমুদ্র পথে মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে পাড়ি জমাচ্ছে অজানা গন্তব্যে।

বাংলাদেশের প্রতিবেশী রাষ্ট্ মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর দমন-নির্যাতন অমানবিকতার সকল সীমা ছাড়িয়ে গেছে। বিশ্ব গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা যাচ্ছে, দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা দমন-নির্যাতনের সঙ্গে সম্প্রতি শুরু হয়েছে ভয়াবহ নির্যাতন।

আবারো আশ্রয়ের খোঁজে বাংলাদেশ মুখি রোহিঙ্গা মুসলমানরা, কিন্তু কেউ কেউ সীমান্ত পার হতে পারলেও, অনেককে ফেরত পাঠাচ্ছে বিজিবি ।
গত বছর  মিয়ানমার সরকার অভিযোগ তুলেছে, রোহিঙ্গারা নাকি রাষ্ট্রদোহী এবং তাদের জঙ্গিরা নাকি সম্প্রতি কয়েকজন সেনা সদস্যকে হত্যা করেছে।

অন্যদিকে তথ্যভিত্তিক খবরে জানা গেছে, রোহিঙ্গারা নয়, কথিত ওই হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী আসলে দেশটির মাদক ব্যবসায়ী গোষ্ঠী, যারা ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদক সামগ্রী বাংলাদেশে চোরাচালানের অবৈধ পথে পাচার করে থাকে।  সেনাদের হত্যার পেছনেও মাদক ব্যবসায়ীদের শক্তিশালী চক্রই জড়িত রয়েছে।

কিন্তু  প্রকৃত সত্য পাশ কাটিয়ে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রোহিঙ্গা মুসলমানদের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযান শুরু করেছে।

জাতিসংঘের কোন উদ্যেগ আজ পর্যন্ত সফলতার মুখ দেখেছে, সেই রেকর্ড নেই, বরং মুসলমানরাই বার বার ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে ।

কফি আনান কমিশনের সুপারিশকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে গত ১৫ আগস্ট থেকে নতুন করে হামলার শিকার মুসলিম জনগোষ্ঠি ।

 

যাদের এগিয়ে আসতে হবেঃ

৩ কোটি ১০ লাখ লোকের একটা সরকারের প্রধান হিসেবে আমাকে তারা কী করতে বলে? তারা কি চায় আমি চোখ বুজে থাকি? আমার মুখ বন্ধ করে রাখি?” বলেন নাজিব, “আমি তা করব না। তাদেরকে (রোহিঙ্গা) আমাদের রক্ষা করতেই হবে। একই ধর্মবিশ্বাসের জন্য নয়, তারা মানুষ, তাদের জীবনের মূল্য আছে, এজন্য।

এই ঐতিহাসিক বাণী মালেশিয়া প্রধানমন্ত্রীর । একই কথা বলতে হবে মুসলিম বিশ্বকে। এগিয়ে আসতে হবে বাংলাদেশকে, ডাক দিতে হবে ইরান, তুরস্ক, কাতার, কুয়েত, মালেশিয়া, ইন্দোনেশিয়াসহ সব মুসলিম বিশ্বকে ।

তবে উল্লেখিত দেশগুলি এগিয়ে এলে দৃশ্যপট পাল্টে যাবে ।  শক্তি ফিরে পাবে অসহায়রা । আমি আশাবাদী এমনই হবে । ইনশাআল্লাহ মাবুদ এই রকম দৃশ্য মুসলমানদের দেখার সুযোগ দেবে ।

 

 

Logo-orginal