, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪

admin admin

বাংলাদেশে প্রবেশের অপেক্ষায় হাজার হাজার ভারতীয় গরু-মহিষ

প্রকাশ: ২০১৭-০৮-২৫ ১৯:৩০:৩৬ || আপডেট: ২০১৭-০৮-২৫ ১৯:৩০:৩৬

Spread the love
বাংলাদেশে প্রবেশের অপেক্ষায় হাজার হাজার ভারতীয় গরু-মহিষ
বাংলাদেশে প্রবেশের অপেক্ষায় হাজার হাজার ভারতীয় গরু-মহিষ

আরটিএমনিউজ২৪ডটকম, অনলাইন সংবাদঃ কোরবানির ঈদ সামনে রেখে চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও রাজশাহী সীমান্ত দিয়ে প্রতিদিন বাংলাদেশে প্রবেশ করছে হাজার হাজার ভারতীয় গরু-মহিষ। চাঁপাইনবাবগঞ্জের দুটি ও রাজশাহীর একটি বিট খাটালের মাধ্যমে এসব গরু-মহিষ বাংলাদেশে প্রবেশ করছে।এ ছাড়াও সীমান্ত এলাকার পদ্মার চরগুলোতে রয়েছে হাজার হাজার গরু-মহিষ। করিডরের ছাড়পত্রের অপেক্ষায় থাকা এসব গরু দুই-তিন দিনের মধ্যেই বাংলাদেশে প্রবেশ করবে। জানা গেছে, গরুগুলো ভারত সরকারের শুল্ক ফাঁকি দিয়ে এনে চরে রাখা হয়। তবে বিট খাটালে যে গরু-মহিষ আসে সেগুলো ভারতে শুল্ক দিয়ে আনা হয় বলে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন।

এদিকে গরু-মহিষ আমদানিতে বিট খাটাল ও পদ্মার খেয়াঘাটে সরকারিভাবে বেঁধে দেওয়া নিয়মের চেয়ে বেশি অর্থ আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সীমান্তের বিট খাটাল থেকে পদ্মা নদী পার করতে ৫০০ টাকা ট্যাক্সসহ গরু-মহিষ প্রতি ৭০০ টাকা খরচ হওয়ার কথা থাকলেও তাদের কাছ থেকে নেওয়া হয় ১২০০ টাকা।গত মঙ্গলবার সরেজমিন চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার রঘুনাথপুর বিট খাটালে এ ধরনের অনিয়মের অসংখ্য অভিযোগ পাওয়া গেছে।

 

সেদিন দুপুরে পদ্মার পূর্ব পারের বাখের আলী ঘাট থেকে পশ্চিম পারের রঘুনাথপুর ঘাটে নৌকায় যাওয়ার সময় পদ্মার পাঁচটি চরে শত-শত গরু দেখা গেছে। এগুলোর মধ্যে খলিফাপুর চর, দেবপুর চর, দশরোশিয়া চরের নাম জানা গেছে।চাঁপাইনবাবগঞ্জের চর বাগডাঙ্গা ইউনিয়নের বাখের আলী ঘাটের ইজারাদার মকলেছুর রহমান পিন্টু বলেন, কোরবানির ঈদ সামনে রেখে ভারত থেকে গরুগুলো পাচার করে চরে রাখা হয়েছে। করিডরের ছাড়পত্র নেওয়ার পর এগুলো পদ্মা পার করা হবে।জানা গেছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় বিট খাটাল রয়েছে সাতটি। এগুলো হলোÑ ওয়াহেদপুর, রঘুনাথপুর, সাতরোশিয়া, বাখের আলী, চর বাগডাঙা, হাকিমপুর ও ফরিদপুর।

 

এর মধ্যে শুধু শিবগঞ্জ উপজেলার পদ্মার পশ্চিম পারে অবস্থিত ওহায়েদপুর ও রঘুনাথপুরÑ এই দুটি বিট খাটাল দিয়ে বর্তমানে গরু-মহিষ ঢুকছে বাংলাদেশে। বাকিগুলো বন্ধ রয়েছে। তবে কী কারণে ওই বিট খাটালগুলো বন্ধ রয়েছে, তা জানাতে পারেননি সংশ্লিষ্টরা।সরেজমিন দেখা গেছে, গত সোমবার রঘুনাথপুর বিট খাটাল দিয়ে এক হাজার ৯৯৯টি গরু-মহিষ বাংলাদেশে প্রবেশ করে। ভোরে খাচ্চাপাড়া সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে গরু-মহিষগুলো ওই বিট খাটালে আসে। করিডরের ছাড়পত্র অনুযায়ী সকালেই গরু-মহিষের গায়ে নম্বর বসিয়ে দেয় বিজিবি। বিকালের মধ্যে সেগুলো নৌকায় করে পদ্মা পার করা হয়। এর আগের দিন এ বিট খাটাল দিয়ে আসে ১৫০০ গরু-মহিষ। এ ছাড়াও ওহায়েদপুর বিট খাটাল দিয়ে একইভাবে প্রতিদিন গরু-মহিষ আসছে।

 

বিশরোশিয়া সীমান্ত দিয়ে এ বিট খাটালে গরু আসে।শামীম হাসান নামে এক গরু ব্যবসায়ী বলেন, বিট খাটালে গরু-মহিষপ্রতি ৫০ টাকা নেওয়ার নিয়ম রয়েছে। এর মধ্যে সার্ভিস চার্জ (রাখাল খরচ) ২০ টাকা এবং অবস্থান ফি ৩০ টাকা; কিন্তু বিট খাটাল মালিকরা সেখানে আদায় করছেন গরুপ্রতি ২৫০ টাকা। এ ছাড়া করিডরের ছাড়পত্র নিতে ৫০০ টাকা ট্যাক্স নেওয়ার নিয়ম থাকলেও বিট খাটাল মালিকরা নিচ্ছেন ৫৫০ টাকা।অন্যদিকে ফেরিঘাটে গরু-মহিষপ্রতি ১৫০ টাকা নেওয়ার নিয়ম থাকলেও নেওয়া হচ্ছে ২৫০ টাকা। এ টাকার মধ্যেই নদী পার করে দেওয়ার কথা থাকলেও ঘাট ইজারাদাররা তা দেন না। ফলে নৌকা ভাড়া করে গরু-মহিষ নদী পার করতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। এ জন্য তাদের গরু-মহিষপ্রতি আরও ১৫০ টাকা করে অতিরিক্ত খরচ হচ্ছে বলে জানিয়েছেন এই গরু ব্যবসায়ী। এ ছাড়া সীমান্ত থেকে নদী পার করে দেওয়া পর্যন্ত প্রতিটি গরুর জন্য রাখালকে দিতে হয় ২০০ টাকা। এমনটিই জানান শামীম হাসান।

 

এ ব্যাপারে কথা বলতে রঘুনাথপুর বিট খাটাল মালিক আব্দুল খালেককে পাওয়া যায়নি। তবে গত এক সপ্তাহে এ পথ দিয়ে ছয় হাজার গরু-মহিষ বাংলাদেশে ঢুকেছে বলে জানান বিট খাটালের তত্ত্বাবধায়ক সবুর আলী। তাদের বিট খাটালে অতিরিক্ত কোনো টাকা আদায় করা হয় না দাবি করে সবুর আলী বলেন, রাখালের খরচ হিসেবে অতিরিক্ত ২০০ টাকা করে নেওয়া হয়, যা নিয়মের মধ্যেই বলে দাবি করেন তিনি।চর বাগডাঙ্গা ইউনিয়নের মেম্বার জামাল উদ্দিন বলেন, যে পথগুলো দিয়ে গরু-মহিষ আমদানি সহজ হয় সেগুলোর বিট খাটাল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। রহস্যজনকভাবে সেগুলো বন্ধ করে দুর্গম এলাকার দুটি বিট খাটাল দিয়ে গরু-মহিষ আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়। এতে গরু-মহিষ আমদানি করতে ব্যবসায়ীদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে বলে জানান তিনি।এদিকে রাজশাহী জেলায় ছয়টি বিট খাটাল থাকলেও গরু ঢুকছে শুধু একটি দিয়ে।

 

চর মাজারদিয়ার ওই বিট খাটাল দিয়ে প্রতিদিন ছয়শ থেকে এক হাজার গরু বাংলাদেশে প্রবেশ করে। মঙ্গলবারও এ বিট খাটাল দিয়ে গরু আসতে দেখা যায়।নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক বিট খাটাল মালিক জানান, সাধারণত স্থানীয় বিজিবির কর্মকর্তারা নির্ধারণ করে দিতেন কোন বিট খাটাল দিয়ে কতটি গরু আসবে। সে অনুযায়ী বিজিবির বিওপি ক্যাম্পে মেসেজ দিতেন; কিন্তু এবার বিজিবির সদর দপ্তর থেকে কোন বিট খাটালের মাধ্যমে গরু-মহিষ আসবে তা নির্ধারণ করে মেসেজ পাঠানো হচ্ছে। এতে চরম ক্ষতির মুখে পড়েছেন বিট খাটাল মালিকরা বলে জানান তিনি। সুত্রঃ আমাদের সময় ।

Logo-orginal