, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

admin admin

‘হাসিনা আন্টি আমার বাবাকে ফিরিয়ে দেন, আমি আমার বাবার সঙ্গে ঈদ করব’

প্রকাশ: ২০১৭-০৮-২৯ ১৯:৩৭:৫৭ || আপডেট: ২০১৭-০৮-২৯ ১৯:৩৭:৫৭

Spread the love
‘হাসিনা আন্টি আমার বাবাকে ফিরিয়ে দেন, আমি আমার বাবার সঙ্গে ঈদ করব’
‘হাসিনা আন্টি আমার বাবাকে ফিরিয়ে দেন, আমি আমার বাবার সঙ্গে ঈদ করব’

ফাইল ছবি

আরটিএমনিউজ২৪ডটকম, অনলাইন ডেস্কঃ ‘হাসিনা আন্টি আমার বাবাকে ফিরিয়ে দেন, আমি আমার বাবার সঙ্গে ঈদ করব’- গুম হওয়া ছাত্রদল নেতা পারভেজের মেয়ে ছোট্ট হৃদি কান্না ভেজা চোখে প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে এভাবেই আকুল আবেদন জানায়।

মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবে আন্তর্জাতিক গুম দিবস উপলক্ষে ‘মায়ের ডাক’ অনুষ্ঠানে হৃদির মত আরও অনেক বাবা হারা, ছেলে হারা, ভাই হারা, স্বামী হারা স্বজন বক্তব্য দেন।

আগামীকাল ৩০ আগস্ট আন্তর্জাতিক গুম দিবস।

‘পবিত্র ঈদুল আজহার পূর্বে গুম হওয়া সন্তানদের মায়ের কোলে ফিরিয়ে দাও’ শীর্ষক এ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন মানবাধিকার কর্মী, রাজনীতিবিদও।

এসময় তারা দাবি করেন, ২০০৯ সালের পর থেকে এ পর্যন্ত ৩৯১ জনকে গুম করা হয়েছে। এসব গুম খুনের সঙ্গে জড়িতদের শাস্তি দিতে একটি নিরপেক্ষ কমিশন গঠনের দাবি জানান তারা।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন গুম হওয়া বিএনপি নেতা সাজেদুল ইসলাম সুমনের মা হাজেরা বেগম।

শিশু হৃদি বলে, ‘হাসিনা আন্টি আমার বাবাকে ফিরিয়ে দেন, আমি বাবার সঙ্গে ঈদ করবো। বাবার সঙ্গে ঈদে বেড়াতে যাব। মা-মনি আমার ঈদের জামা কিনে দেয়না। এখন আর আমাকে পুতুল কিনে দেয়না, আইচক্রীম কিনে দেয়না। হাসিনা আন্টি আপনি বাবাকে ফিরিয়ে দেন। তাহলেই বাবা আমাকে সব কিছু কিনে দেবে।’

গুম খালিদা হাসান সোহেলের ছোট্ট ছেলে আরিয়ান বলে, ‘আমি সব সময় আব্বুকে মিস করি। হাসিনা আন্টি আব্বুকে ফিরিয়ে দেন। আমি আব্বুর হাত ধরে ঈদগায়ে গিয়ে ঈদের নামাজ পড়তে চাই।’

সরকারি তিতুমীর কলেজের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র আব্দুর কাদের মাসুমের মা আয়শা বেগম বলেন, ‘ছেলে গুম হওয়ার পর ভেতরটা কষ্টে কষ্টে ঘুনে ধরেছে। এখন শুধু দেহের কভারটা আছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনিও স্বজন হারাদের একজন। আপনি এসব গুম খুন বন্ধ করেন। আমার ছেলে ফিরিয়ে দেন।’

ছেলে হারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেহরক্ষী সাবেক সেনা কর্মকর্তা আব্দুল মতিন বীরবিক্রম বলেন, ‘২০১৪ সালের ২৯ মার্চ তার ছেলে ছাত্রদল নেতা কাজী রকিবুল ইসলাম শাওনকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। আমার ছেলে সরকারের মন্ত্রী মুজিবুল হকের ঘনিষ্ট। র‌্যাব ডিজি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট অনেকের সঙ্গে ছেলের সন্ধান চেয়ে যোগাযোগ করেছি, কিন্তু ছেলেকে এখনও পাইনি।’

তিনি বলেন, ‘গোয়েন্দা সংস্থার সাবেক একজন কর্মকর্তা হিসাবে বলতে চাই, গুম হওয়া অনেকেই গুপ্তস্থানে বন্দি আছে, সেই আশাই এখন সরকারের বিভিন্ন মহলে যোগযোগ করে যাচ্ছি।

গুম হওয়া আল আমিনের ছোট ভাই রুহুল আমিন বলে, ‘আমার মা প্রায়ই জানতে চায় তোর ভাই কবে ফিরবে, মাকে আমি কোনো উত্তর দিতে পারি না।’

নিখোঁজ সম্রাট মোল্লার বোন কানিজ ফাতেমা বলেন, ‘২০১৩ সালের ২৮ নভেম্বর ভাইকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিচয়ে তুলে নেয়া হয়েছে, এখন পর্যন্ত তার কোনো সন্ধান পাইনি। আমরা তার সন্ধান চাই।’

স্বজনদের মধ্যে আরও বক্তব্য দেন, আল মোকাদ্দাসের চাচা মো আব্দুল হাই, সাজেদুল ইসলাম সুমনের বোন মারুফ ইসলাম, রেদোয়ানের মা সেলিনা হোসেন, কাউসারের ছোট্ট মেয়ে মীম, চঞ্চলের ছেলে আহাদ, জাহিদুল করিম তানভীর স্বজন আফরোজা ইসলাম আখি, চঞ্চলের মা হাজেরা, সুজনের ভাই শাকিল।

মানবাধিকার সংস্থার মধ্যে অধিকারের প্রেসিডেন্ট সি আর আরবার বলেন, ‘‘পৃথিবীর যেসব দেশে গুম খুন হয়েছে, সেসব দেশে এ ‘মায়ের ডাকের’ মতে মায়েরা একজোট হয়ে এ ধরনের অপকর্মের জন্য দায়ীদের কাঠগোড়ায় দ্বার করাতে সক্ষম হয়েছিলো। আমরাও তাই করবো, এর ব্যতয় ঘটবে না। এটা সম্ভব হবে আমাদের যৌথ প্রয়াসের মাধ্যমে।’’

নাসির উদ্দিন এলিন বলেন, ‘২০০৯ সালের জুন থেকে ২০১৭ সালের জুন পর্যন্ত ৩৮৮ জনকে গুম করা হয়েছে। এটা আমাদের মানবাধিকার সংগঠনের বিভিন্ন জেলা প্রতিনিধিদের পাঠানো প্রতিবেদন থেকে প্রাপ্ত তথ্য। এসব গুম করা হয়েছে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের আগে অথবা পরে।’

মানবাধিকার কর্মী শিরীন হক বলেন, এ কান্না শেষ হওয়ার নয় আবার সহ্য করারও নয়।’

রাজনীতিবিদদের মধ্যে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘চল্লিশ বছর ধরে স্বজন হারাদের স্মৃতি বয়ে বেড়াচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি এখনকার স্বজন হারাদের বেদনা শুনছেন না, দেখছেনও না। কারণ, এ রাষ্ট্র সরকার এখন মানবিক নয়।’

তিনি বলেন, ‘একটা ভয়ের চাদর সারাদেশের মানুষকে ডেকে দিয়েছে। তাদের চোখে সবাই খারাপ। আমি সরকারকে বলব, একটা নির্বাচন দিয়ে দেখেন, কাদের কেমন জনপ্রিয়তা।’

এসব গুম খুনের জন্য একটি স্বাধীন নিরপেক্ষ কমিশন গঠনের দাবি জানিয়ে বাসদের সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান বলেন, ‘১৯৭১ সালে পাকিস্তান হানাদার বাহিনী গুম খুন করতো। এখন স্বাধীনতার চেতনার দাবিদার ক্ষমতাসীনরা লুকোচুরি করে গুম করে চলেছে।’

এছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. আসিফ নজরুল, মানবাধিকারকর্মী নূর খান লিটন বক্তব্য দেন। উৎসঃ পরিবর্তন ডটকম।

Logo-orginal