, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

admin admin

ঘুষ না দেওয়ায় মাদ্রাসা সুপারকে পিটিয়ে হত্যা করল পুলিশের

প্রকাশ: ২০১৭-০৯-১৭ ১১:৫৯:৫৬ || আপডেট: ২০১৭-০৯-১৭ ১২:০৬:৫৪

Spread the love
ঘুষ না দেওয়ায় মাদ্রাসা সুপারকে পিটিয়ে হত্যা করল পুলিশের
ঘুষ না দেওয়ায় মাদ্রাসা সুপারকে পিটিয়ে হত্যা করল পুলিশের

সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলায় গ্রেপ্তারের পর এক মাদ্রাসার সুপারকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে। তাঁর শরীরের একাধিক স্থানে নির্যাতনের চিহ্ন রয়েছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের চিকিৎসক।  আজ শনিবার ভোর সাড়ে ৪টার দিকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান ওই মাদ্রাসাসুপার। তাঁর নাম সাঈদুর রহমান (৪৭)। তিনি উপজেলার হঠাৎগঞ্জ মাদ্রাসার সুপার ছিলেন।

নিহতের পরিবারের দাবি, গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১টার দিকে সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আসাদুজ্জামানের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল সাঈদুরকে দুটি নাশকতার মামলায় বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারের পর তাঁর কাছে এক লাখ টাকা ঘুষ দাবি করে পুলিশ। কিন্তু টাকা দিতে না পারায় তাঁকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়।

তবে পুলিশের ভাষ্য, গ্রেপ্তারের সময় মাদ্রাসাসুপার সাঈদুর মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আহত হয়েছিলেন। তাঁকে নির্যাতন করা হয়নি।নিহতের পরিবারের সদস্য ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গ্রেপ্তারের পর সাঈদুর রহমানকে কাথণ্ডা বাজারে নিয়ে যায় পুলিশ। এ সময় তাঁকে নির্মমভাবে মারধর করা হয়।

 

এতে তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে সেখানকার পল্লীচিকিৎসক আবদুল্লাহর চেম্বারে নিয়ে চিকিৎসা দেয় পুলিশ।সেখানে সাঈদুরের ভাতিজা মুত্তাসিম বিল্লাহ ৫০০ টাকা এনে চাচাকে ছেড়ে দেওয়ার অনুরোধ জানায় পুলিশের কাছে। কিন্তু পুলিশ তাঁর কাছে এক লাখ টাকা ঘুষ দাবি করে।

কিন্তু তাঁরা টাকা দিতে না পারায় সাঈদুরকে সাতক্ষীরা সদর থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেও তাঁকে নির্যাতন করে পুলিশ।নিহতের ভাই রফিকুল ইসলাম ও ভাতিজা মুত্তাসিম বিল্লাহ অভিযোগ করেন, গতকাল শুক্রবার দিনভর পুলিশ হেফাজতে রেখে সাঈদুরের ওপর দফায় দফায় নির্যাতন করা হয়। এতে তিনি নিস্তেজ হয়ে পড়েন। পরে তাঁকে আদালতে নেওয়া হয়।

 

কিন্তু সাঈদুরের শারীরিক অবস্থা খারাপ দেখে তাঁকে গ্রহণ করেননি আদালত।পরে পুলিশ ওই শিক্ষককে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দেয়। এতে তিনি কিছুটা সুস্থ হলে গতকাল বিকেল ৫টার দিকে পুলিশ ফের তাঁকে আদালতে হাজির করে। বিকেলে সাঈদুরকে আদালত সাতক্ষীরা কারাগারে পাঠায়।সাতক্ষীরার জেলসুপার হাফিজুর রহমান বলেন, ‘কারাগারের মধ্যে ওই রাতে তিনি (সাঈদুর) অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে প্রথমে তাঁকে কারা হাসপাতালে ও মধ্যরাতে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখানেই তাঁর চিকিৎসা চলছিল।’ সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. ফরহাদ জামিল বলেন, ‘হাসপাতালে আনার পর তাঁর (সাঈদুর) চিকিৎসা চলছিল। ভোরে তিনি মারা যান। লাশের ময়নাতদন্ত হবে।’মাদ্রাসা সুপার সাঈদুর রহমানের শরীরের একাধিক স্থানে নির্যাতনের চিহ্ন পাওয়া গেছে বলে জানান ফরহাদ জামিল।এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাতক্ষীরা সদর থানার এসআই মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘আমি তাঁকে (সাঈদুর) গ্রেপ্তার করলেও নির্যাতন করিনি। তাঁর কাছে ঘুষও চাইনি। আগে থেকেই তিনি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আহত হয়ে অসুস্থ ছিলেন। গ্রেপ্তারের পর তাঁকে হাসপাতালে চিকিৎসা দিয়ে আদালতে পাঠানো হয়। এরপর তাঁর মৃত্যু সম্পর্কে আর কোনো তথ্য আমার কাছে নেই।’

এসআই আসাদুজ্জামানের বিরুদ্ধে আরো অভিযোগ 

একাধিক ভুক্তভোগী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, এসআই  আসাদুজ্জামান গ্রামে গ্রামে আসামি ধরার নামে বেপরোয়া আচরণ করছেন। প্রায় রাতেই তিনি আসামি ধরে মারপিট করে তাদের থেকে ঘুষ, চাঁদা আদায় করেন।সদর উপজেলার বাঁশদহা ইউনিয়নের কুলিয়াডাঙ্গা গ্রামের আকতারুল ইসলাম জানান, গত ২৭ আগস্ট রাতে তাঁকে বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করেন এসআই আসাদুজ্জামান। এ সময় তাঁর কাছে থাকা চারটি ছাগল বিক্রির টাকা ঘুষ হিসেবে দাবি করেন। না হলে তাঁর বিরুদ্ধে জামায়াতের লোক বানিয়ে মামলা দেওয়ার হুমকি দেন।আক্তারুল সেই টাকা দিতে না চাওয়ায় তাঁকে সদর থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।

সেখানে নিয়ে নির্যাতনের পর তাঁর কাছ থেকে ৬৫ হাজার টাকা ঘুষ নেন এসআই। সেই টাকা নেওয়ার পরেও তাঁকে পরের দিন আদালতে চালান দেওয়া হয়।আক্তারুল বলেন, ‘ঈদ উপলক্ষে চারটি পোষা ছাগল বিক্রি করেছিলাম। পুলিশ সেই টাকা নিয়ে নিল। এ নিয়ে মার খেলাম, মামলাও খেলাম।# এন টিভি।

 

Logo-orginal