, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

admin admin

রোহিঙ্গাদের বাড়িতে সেনা ও বৌদ্ধ উগ্রপন্থীদের অগ্নিসংযোগ স্বচক্ষে দেখেলেন বিদেশী সাংবাদিকদরা

প্রকাশ: ২০১৭-০৯-১২ ০৮:৩২:০২ || আপডেট: ২০১৭-০৯-১২ ০৮:৩২:০২

Spread the love
রোহিঙ্গাদের বাড়িতে সেনা ও বৌদ্ধ উগ্রপন্থীদের অগ্নিসংযোগ  স্বচক্ষে দেখেলেন বিদেশী সাংবাদিকদরা
রোহিঙ্গাদের বাড়িতে সেনা ও বৌদ্ধ উগ্রপন্থীদের অগ্নিসংযোগ স্বচক্ষে দেখেলেন বিদেশী সাংবাদিকদরা

মিয়ানমারের রাখাইনে কিভাবে মুসলিম রোহিঙ্গাদের বাড়িতে পুলিশের সহায়তায় বৌদ্ধ উগ্রপন্থীরা অগ্নিসংযোগ করছে তা স্বচক্ষে দেখেছেন সাংবাদিকদের একটি টিম। ওই টিমে ছিলেন বিবিসি’র একজন সাংবাদিকও।

 

কড়া বিধিনিষেধ ও পুলিশি নিরাপত্তার মধ্যে সাংবাদিকদের ওই টিম সহিংসতা কবলিত রাখাইনের কয়েকটি শহর ও গ্রাম পরিদর্শন করেন।

গত দুই সপ্তাহে যে রোহিঙ্গা মুসলিমরা মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছেন, তারা এসেছেন মূলত তিনটি জেলা- মংডু, বুথিডং এবং রাথেডং থেকে। সেখানেই রয়েছে ‘মুক্ত পরিবেশে’ রোহিঙ্গা বসতি। বাকিদের বসবাস শরণার্থী শিবিরে।

বিবিসি’র জোনাথন হেড এক রিপোর্টে লিখেছেন, এসব জেলায় যাওয়া খুব কঠিন, রাস্তা খারাপ। তাছাড়া সেখানে যেতে সরকারি অনুমতিপত্র লাগে। আর সাংবাদিকরা তা খুব কমই পায়।

তিনি জানান, সম্প্রতি তারা ১৮ জন দেশি-বিদেশি সাংবাদিকের একটি টিমের অংশ হিসেবে মংডু জেলায় যাওয়ার এক বিরল সুযোগ পেয়েছিলেন। এ সফরের একটা সমস্যা হলো- আপনি শুধু সেসব জায়গাই দেখতে পারবেন, যেগুলোতে কর্তৃপক্ষ তাদের যেতে দেবে।

কিন্তু কখনো কখনো এমন হয় যে, এসব বিধিনিষেধের মধ্যেও আপনি অনেক কিছু বুঝে নিতে পারবেন। তা ছাড়া সরকারের কিছু যুক্তি আছে যা শোনা দরকার, যোগ করেন তিনি।

রাখাইন রাজ্যের রাজধানী সিটওয়েতে পৌঁছার পর সাংবাদিকদের বলে দেয়া হলো- কেউ গ্রুপ ছেড়ে গিয়ে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবে না। সন্ধ্যা ৬টা থেকে কারফিউ, তাই এর পর ঘুরে বেড়ানো যাবে না।

সিটওয়ে থেকে বুথিডং যেতে লাগে ছয় ঘণ্টা। সেখান থেকে এক ঘণ্টা পাহাড়ি পথ ধরে গেলে পৌঁছবেন মংডু। যাবার পথে পড়লো মাইও থু গি গ্রাম। সেখানে প্রথমবারের মতো পুড়িয়ে দেয়া গ্রাম দেখা গেল। এমনকি তালগাছগুলোও পুড়ে গেছে।

জোনাথন হেড বলছেন, ‘আমাদের প্রথম নেয়া হলো মংডুর একটি ছোট স্কুলে, এখানে আশ্রয় নিয়েছে ঘরবাড়ি হারানো হিন্দু পরিবার। সবাই বলছে একই গল্প – তাদের ওপর মুসলিমদের আক্রমণ এবং তার পর ভয়ে পালানোর কাহিনি।’

‘কিন্তু বিস্ময়কর ব্যাপার হলো- যে হিন্দুরা বাংলাদেশে পালিয়েছে তারা সবাই বলছে, তাদের ওপর আক্রমণ চালিয়েছে রাখাইন বৌদ্ধরা। কারণ তারা (হিন্দুরা) দেখতে রোহিঙ্গাদেরই মতো’ যোগ করেন তিনি।

বিবিসি’র এই সাংবাদিক বলেন, ‘এই স্কুলে আমাদের সঙ্গে ছিল সশস্ত্র পুলিশ ও কর্মকর্তারা। তারা কি মুক্তভাবে কথা বলতে পারছিল? একজন লোক বলতে শুরু করলো কিভাবে সেনাবাহিনী তাদের গ্রামের ওপর গুলি করলো। কিন্তু খুব দ্রুত একজন প্রতিবেশী তার কথা সংশোধন করে দিল।’

‘কমলা রঙের ব্লাউজ এবং ধূসর-বেগুনি লুঙ্গি পরা এক মহিলা উত্তেজিতভাবে মুসলিমদের আক্রমণের কথা বলতে লাগলো’ যোগ করেন তিনি।

জোনাথন হেড বলেন, ‘এর পর আমাদের নিয়ে যাওয়া হলো একটি বৌদ্ধ মন্দিরে। সেখানে একজন ভিক্ষু বর্ণনা করলেন, কিভাবে মুসলিমরা তাদের বাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে। অগ্নিসংযোগের ছবিও আমাদের দেখানো হলো। ছবিগুলো অদ্ভূত!’

‘হাজিদের সাদা টুপি পরা কিছু লোক একটি পাতার তৈরি ঘরের চালায় আগুন দিচ্ছে। মহিলাদের দেখা যাচ্ছে- তারা নাটকীয় ভঙ্গিতে তলোয়ার এবং দা ঘোরাচ্ছে। তাদের মাথায় টেবিলক্লথের মতো লেসের কাজ করা কাপড়’ বলেন তিনি।

এই সাংবাদিক বলেন, ‘এর পর আমি দেখলাম- এই মহিলাদের একজন হচ্ছে স্কুলের সেই হিন্দু মহিলাটি, যে উত্তেজিতভাবে নির্যাতনের বর্ণনা দিচ্ছিল। আর এই ঘর পোড়ানো পুরুষদের মধ্যে একজনকে আমি সেই বাস্তুচ্যুত হিন্দুদের মধ্যে দেখেছি।’

‘তার মানে, তারা এমনভাবে কিছু ভুয়া ছবি তুলেছে, যাতে মনে হয় মুসলিমরা ঘরবাড়িতে আগুন লাগাচ্ছে’ যোগ করেন জোনাথন হেড।

তিনি বলেন, তাদের আরো কথা হয় কর্নেল ফোনে টিন্টের সঙ্গে তিনি হচ্ছেন স্থানীয় সীমান্ত নিরাপত্তা বিষয়ক মন্ত্রী। তিনি বর্ণনা করলেন, কিভাবে বাঙালি সন্ত্রাসীরা (আরাকান রোহিঙ্গা সালভেশন আর্মির জঙ্গিদের তারা এভাবেই বর্ণনা করে) রোহিঙ্গা গ্রামগুলো নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিয়েছে এবং গ্রামের লোকদের চাপ দিয়েছে যেন প্রতি বাড়ি থেকে যোদ্ধা হিসেবে একজন লোক দেয়া হয়। যারা একথা মানছে না তাদের বাড়ি পুড়িয়ে দেয়া হচ্ছে।

ওই কর্নেল আরো অভিযোগ করেন, জঙ্গিরা মাইন পাতছে এবং তিনটি সেতু উড়িয়ে দিয়েছে।

জোনাথন হেড তাকে জিজ্ঞেস করলেন, তার মানে তিনি কি এটাই বলতে চাচ্ছেন যে, এতসব গ্রাম পুড়িয়ে দেয়া হচ্ছে তা জঙ্গিরাই করছে? ওই কর্নেল নিশ্চিত করলেন যে, এটাই সরকারের বক্তব্য।

Logo-orginal