, বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪

admin admin

আরাকানের কুকুরটি মনে করিয়ে দিল আসহাবে কাহাফের কুকুরের কথা

প্রকাশ: ২০১৭-১০-০৯ ০০:২৫:২০ || আপডেট: ২০১৭-১০-০৯ ০০:২৫:২০

Spread the love
আরাকানের কুকুরটি মনে করিয়ে দিল আসহাবে কাহাফের কুকুরের কথা
আরাকানের কুকুরটি মনে করিয়ে দিল আসহাবে কাহাফের কুকুরের কথা

অত্যাচারী শাসকদের নির্যাতনের কারণে দেশে ছেড়ে চলে গিয়েছিল একদল যুবক। তাদের সঙ্গে একটি কুকুরও পালিয়েছিল। তারপর তারা একটি গুহায় ঘুমিয়ে গেলে সেখানেই ৩০০ বছর অতিক্রম হয়ে যায়। পবিত্র কুরআনে বর্ণিত হয়েছে এ অলৌকিক ঘটনা।

বহু বছর পর আরাকানে এরকম একটি ঘটনা আসহাবে কাহাফের কথা মনে করিয়ে দিল। বার্মার দক্ষিণ রাখাইনের বুচিদং জাংহামা নামের গ্রামের মো: সাদেকের বাড়িতে একটি কুকুর ছিল। সাদেক যখন বার্মার সেনাদের নির্যাতনে পালিয়ে আসেন বাংলাদেশে সেই কুকুরটিও চলে আসে তাদের সাথে।

দৈনিক জনকণ্ঠের এক প্রতিবেদনে উঠে আসে এনই ঘটনা। সাদেক জানায়, দশ বারো দিন আগে বর্মী জাংহামা রোহিঙ্গা পল্লীতে হামলা চালিয়ে রোহিঙ্গাদের ধাওয়া এবং লুটপাট চালায় তাদের বাড়িঘরে।

পরে অগ্নিসংযোগ করে সকল বসতি জ্বালিয়ে দেয়ার সময় জ্বলন্ত বাড়িঘরের সামনে প্রাণপনে ঘেউ ঘেউ করে বর্মী সৈন্যদের হুংকার ছাড়ে কুকুরটি। কিন্তু কুকুরের দিকেও রাইফেল তাক করে গুলি চালাতে থাকলে দৌঁড়ে পালায়।

পাহাড়ি দূর্গম পথ বেয়ে বাংলাদেশের দিকে পা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কুকুরটিও গৃহস্তের পিছু নেয়। কখনও আগে কখনও পরে মনিবের পরিবারকে সুরক্ষা দিয়ে সামনে চলে। বিল-ঝিল, নদী-নালা, পাহাড়-পর্বত মাড়িয়ে সীমান্তের কাছে পৌঁছতে তাদের ৩০ মাইলের মতো হাঁটতে হয় ।
নাফ নদীর কিনারায় তাবু ফেলে সাদেক। অপেক্ষা করে নদী পার হওয়ার। শুধু সাদেকের পরিবার নয়, আশ্রয় সন্ধানী হাজারও রোহিঙ্গার জমায়েত হতে থাকে নাফের পাড়ে।

একে একে পাঁচদিন খেয়ে না খেয়ে কাটায় সাদেকের পরিবার। কুকুরটিও এদিক সেদিক ঘুরে আবারও মনিবের কাছে চলে আসে। সাদেকের পরিবার নৌকায় ওঠার আগে কুকুরটির গায়ে হাত বুলিয়ে শেষ বিদায় জানায় সাদেক। যেখানে খুশি চলে যাওয়ার জন্য ইশারা ইঙ্গিত করে।
নৌকার ইঞ্জিন স্টার্ট হয়। ওপার থেকে কুকুরটি হুঁ হুঁ করে ডাক ছেড়ে কাঁদতে থাকে। নদী পারের এদিক সেদিক ছুটাছুটি করে আর একের পর এক ডাক ছাড়ে।

সাদেকের পরিবারের সদস্যরা তা দেখে চোখের পানি ধরে রাখতে পারেনি। কিন্তু তারা অসহায়। এতো রোহিঙ্গা নিয়ে ছেড়ে আসা ইঞ্জিন নৌকাটি ফের মিয়ানমারের সীমান্তে যাওয়াটা কেউই মানবে না। কাঁদে সাদেকের স্ত্রী।

কিছুক্ষণপর নদীতেই ঝাপ দেয় কুকুরটি। শরীরের জোর দিয়ে জোয়ারের বিপরীতে সাঁতরাতে শুরু করে টেকনাফের দিকে। মনিবকে (সাদেক) বহনকারী নৌকা যে দিকে গেছে সেদিকে ছুটতে থাকে। দূর থেকে সাদেকদের নজরে আসে কুকুনটি সাঁতরিয়ে আসছে।

এবার সাদেক নৌকার মাঝিকে কুকুরটিকে তোলার জন্য কাঁকুতি মিনতি করে। প্রয়োজনে আরও একজনের ভাড়া বাড়িয়ে দেয়ার কথা জানান। মাঝি আশ্বস্থ হয়ে নৌকা ঘুরিয়ে কুকুরটিকে তোলে নেয় তার ইঞ্জিন চালিত নৌকায়।

ঘন্টাখানেক পর টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপে ভিড়ে সাদেকদের বহনকারী নৌকা। আশ্রয় সন্ধানী দল নৌকা থেকে কূলে ওঠে। কিছু বলতে হয়নি, উঠে আসে সঙ্গে কুকুরটিও। তারপর প্রভুভক্ত কুকুরটির আদ্যোপন্ত জানায় সাদেক।

কুকুরটি এখন সাদেকের সঙ্গে টেকনাফেই আছে। এখানে যদিও খাবারের সংকট, নির্বিঘ্নে ঘোরার স্বাধীনতা নেই, কিন্তু বার্মা সেনা নামের পাষণ্ডদের নির্যাতন নেই। আপাতত ওটাই বড় শান্তি।

আওয়ার ইসলাম/বাংলামেইল৭১

Logo-orginal