, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

admin admin

পাল্টে যাচ্ছে জামায়াতে ইসলামী

প্রকাশ: ২০১৭-১০-২২ ১৩:৩৮:৪০ || আপডেট: ২০১৭-১০-২২ ১৩:৩৮:৪০

Spread the love

পাল্টে যাচ্ছে জামায়াতে ইসলামী
পাল্টে যাচ্ছে জামায়াতে ইসলামী
আরটিএমনিউজ২৪ডটকম, নিউজ ডেস্কঃ পাল্টে যাচ্ছে জামায়াতে ইসলামীর মাঠের কর্মসূচি। সম্প্রতি দলের শীর্ষ নেতাদের গ্রেফতারের পর রাজনীতিতে গুণগত মান পরিবর্তনের জন্য মাঠের কর্মসূচিতে নানা ধরনের পরিবর্তন আনতে চাচ্ছেন দলের ভারপ্রাপ্ত আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান ও ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম মাসুম। প্রতিবেদন দৈনিক মানবকন্ঠের।

দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা মানবকণ্ঠকে এ তথ্য জানিয়েছেন। তারা বলেন, অতীতের দিকে না তাকিয়ে সামনে কীভাবে সংগঠনকে দাঁড় করানো যায় সেদিকে বেশি নজর দিতে হবে। দলটির এক শীর্ষ নেতা বলেন, গ্রেফতার নেতাদের মুক্ত করতে আইনিভাবে মোকাবিলা করবেন জামায়াতের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের সঙ্গে যুক্ত নেতারা।

এদিকে জামায়াত আগামী সংসদ নির্বাচনে অংশ গ্রহণে কোনো ধরনের বাধা যেন না আসে, সেই লক্ষ্যে দলের নিবন্ধন পেতে সুপ্রিম কোর্টের আপিলাধীন মামলা নিষ্পত্তি করতে প্রস্তুতি নিচ্ছে দলটি। অন্যদিকে মাঠ পর্যায়ে নেতাকর্মীদের সহিংস কর্মকাণ্ডের পরিবর্তে অহিংস কর্মসূচি চলমান রাখতে নির্দেশ দেয়া হয় দলের পক্ষে থেকে। এমনটি জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় মজলিস শূরার এক সদস্য। তিনি বলেন, সামনে ঘুরে দাঁড়ানো হচ্ছে জামায়াতের লক্ষ্য। তাই ক্ষমতাসীনদের অপপ্রচার বন্ধ করতে এ বিকল্প পথে হাঁটছেন দলটির নেতাকর্মীরা।

অন্যদিকে ১৯ অক্টোবর প্রধান নির্বাচন কমিশনার বরাবর জামায়াতের সঙ্গে সংলাপের আবেদন জানিয়ে সাড়া না পেয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন দলের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মাসুম। তিনি বলেন, জামায়াত জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল। প্রত্যেক সংসদ ও বর্তমানে সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদে বিপুলসংখ্যক প্রতিনিধি রয়েছেন। তিনি বলেন, জামায়াত একটি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে জামায়াতের নিবন্ধন বিষয়ের মামলাটি বিচারাধীন আছে। স্বাভাবিকভাবেই জনগণের প্রতিনিধিত্বকারী দল হিসেবে নির্বাচন কমিশনের সংলাপে অংশগ্রহণ করার অধিকার জামায়াতের রয়েছে।

নির্বাচন কমিশনের সংলাপের দাওয়াত না পেয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন দলটির সর্ব পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। গত কয়েকদিন ফেনী, পিরোজপুর, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, খুলনাসহ বেশ কয়েকটি জেলা নেতাদের সঙ্গে কথা বলার পর এ কথা জানা গেছে। তারা বলেন, জামায়াতকে ভয় পেয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সব দিক থেকে আক্রমণ চালিয়ে নিরস্ত্র রেখে আগামীতে পুনরায় অবৈধভাবে ক্ষমতায় যাওয়ার পরিকল্পনা করছে। তারা বলেন, তাদের সেই অপচেষ্টা কখনো সফল হবে না।

অন্যদিকে জামায়াতের একাধিক নেতা জানিয়েছেন দলের এই দুঃসময়ে ২০ দলীয় জোটের প্রধান বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার প্রতি তাদের আস্থা রয়েছে। সেই আস্থা ধরে রাখতে জামায়াত নিয়ে বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের বক্তব্য যেন গণতান্ত্রিক হয় ও জোটের বিরুদ্ধে না হয়। সেদিকে খেয়াল রাখার আহ্বান জানান। বিএনপির সঙ্গে দূরত্ব নেই জানিয়ে ঢাকা মহানগর জামায়াতের শীর্ষ নেতা মেজবাহ উদ্দীন সাঈদ লিটন মানবকণ্ঠকে বলেন, জামায়াত তার আদর্শ, উদ্দেশ্য, লক্ষ্য রেখে সামনে এগিয়ে যাবে। ২০ দলীয় জোট নিয়ে রাজনীতির অঙ্গনে ক্ষমতাসীনরা যত অপপ্রচার চালাবে ততই জোট শক্তিশালী ও বিএনপি-জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে সম্পর্ক গাঢ় হবে। এ নেতা জানান, মাঠের রাজনীতিতে জামায়াত এখন অনেক শক্তিশালী দল। দলের নেতাদের গ্রেফতারে কোনো কিছুই হবে আমাদের, বরং সংগঠন দিন দিন শক্তিশালী হচ্ছে।

এদিকে জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ পুরনো। দলটির বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাদের রাজনৈতিক কর্মসূচি মানেই জ্বালাও-পোড়াও কর্মকাণ্ড। কিন্তু ২০১৬ সাল থেকে এই দলটির ভেতরে পরিবর্তন ঘটতে থাকে। ওই সময় থেকে দলের নেতাকর্মীরা সাংগঠনিক কাজে সর্বোচ্চ মনোযোগ দেয়া শুরু করেন। এই পরিবর্তনকে নেতাকর্মীরা দলের রাজনৈতিক নতুন কৌশল বললেও জামায়াতপন্থি বুদ্ধিজীবীরা বিষয়টিকে দেখছেন রাজনীতির স্বাভাবিক গতি-প্রকৃতি হিসেবেই।

তারা বলছেন, দেশের অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর ক্ষেত্রেও এমন পরিবর্তন ঘটে। গত কয়েক বছরের মতো রাজপথের কর্মসূচিতে নিষ্ক্রিয় থাকতে দেখা গেছে সম্প্রতি দলটির ডাকা বিক্ষোভ ও একদিনের হরতালেও। দলের আমির, সেক্রেটারি জেনারেলসহ শীর্ষ নেতাদের গ্রেফতারের প্রতিবাদে ডাকা এই দুই দিনের বিক্ষোভ-হরতালে নেতাকর্মীরা ঝটিকা মিছিল করলেও সহিংস কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েননি। হরতালের আগের রাতেও দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকে ধৈর্য ধরার কঠোর নির্দেশনা ছিল। এ ছাড়া ১০ অক্টোবর ভারপ্রাপ্ত আমির হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর অধ্যাপক মুজিবুর রহমান এক বিবৃতিতে দলের সব নেতকর্মীকে ধৈর্য ও সহনশীলতার সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলা করার আহ্বান জানান।

তবে জামায়াতের রাজনীতির পর্যবেক্ষক শাহ আবদুল হান্নান দলটির এই অবস্থানকে বড় ধরনের পরিবর্তন বলে মনে করছেন না। তিনি বলেন, জামায়াত কমবেশি রাজনীতি সব সময়ই করে। কম করে তখনই, যখন তারা দেখে অত্যাচার বেশি, মারপিট বেশি, গুলি বেশি, তখন তারা রাজনীতি কম করে।

বিষয়টির ব্যাখ্যা দিয়ে জামায়াতের রাজনৈতিক ভাষ্যকার শাহ আবদুল হান্নান সম্প্রতি গণমাধ্যমকে জানান, এই সময়ে দলের নেতাকর্মীরা বইপত্রে চলে যান। মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ান। বিভিন্ন রকমের দাওয়াতি কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত হয়ে পড়েন। জামায়াতের রাজনৈতিক পরিবর্তন বিষয়ে তিনি আরো বলেন, দলটির দ্বিতীয় কাজ হচ্ছে, সম্ভব হলে সমাজকে ইসলামের পথে চালিত করা। জামায়াত নীতিগতভাবে শক্তি প্রয়োগের রাজনীতির বিরুদ্ধে। কারণ, ইসলামে কোনো জবরদস্তি নেই। এসব কারণে জামায়াতের কৌশল এমন।

শাহ আবদুল হান্নান প্রশ্ন রাখেন, অন্য দলেরও কৌশল পরিবর্তন হয়। তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, বর্তমান ক্ষমতাসীন দলের অবস্থান দেখুন। পঁচাত্তরে এক রকম ছিল, এখন আরেক রকম। এটা তো হতেই পারে। এটা তো এমন কিছু না যে, জামায়াতের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে ঘটছে। নাথিং স্পেশাল। এটা স্মল-ন্যাচারাল। কিন্তু জামায়াতের বিষয়টি লোকে বেশি করে দেখে। এর বিরুদ্ধে এত প্রোপাগান্ডা! সবকিছু ভালো করে দেখতে চায় জনগণ। তিনি বলেন, যখন ঘরে বসতে দেবে না, মিটিং করতে দেবে না, তখন তো স্বাভাবিক যে, দলটি নীরব থাকবে।

Logo-orginal