, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

admin admin

ঠাকুরগাঁওয়ে আদিবাসী ভূমিহীনদের নামে ২৫ লাখ টাকা কৃষিঋণ তুলে আত্মসাতের অভিযোগ

প্রকাশ: ২০১৭-১১-১৬ ১৫:৩৪:২৬ || আপডেট: ২০১৭-১১-১৬ ১৫:৩৪:২৬

Spread the love

ঠাকুরগাঁওয়ে আদিবাসী ভূমিহীনদের নামে ২৫ লাখ টাকা কৃষিঋণ তুলে আত্মসাতের অভিযোগ
ঠাকুরগাঁওয়ে আদিবাসী ভূমিহীনদের নামে ২৫ লাখ টাকা কৃষিঋণ তুলে আত্মসাতের অভিযোগ

জেলা প্রতিনিধি: ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের শতাধিক আদিবাসী ভূমিহীন ও দুস্থদের নামে রোড সুগার মিল সোনালী ব্যাংক শাখা থেকে প্রায় ২৫ লাখ টাকা কৃষিঋণ তুলে আত্মসাতের চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে। ব্যাংক থেকে ওই কৃষিঋণ পরিশোধের নোটিশ আদিবাসী ভূমিহীন ও দুস্থদের কাছে গেলে তারা প্রতারিত হয়েছে বলে জানতে পারে।

শতাধিক আদিবাসী ভূমিহীন ও দুস্থদের ভুল বুঝিয়ে সরকারি অনুদান দেয়ার কথা বলে ব্যাংক কর্মকর্তাদের যোগসাজশে মোহাম্মদপুর এলাকার তরিকুল ও সোলেমান নামে দুই ব্যক্তি এ প্রতারণা করেছেন বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।

সম্প্রতি মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের মাতৃগাঁও ওয়ার্ডের আদিবাসী হাউয়া মরমু নামের এক আদিবাসী নারীর সঙ্গে বলে জানা যায়, ঠাকুরগাঁও সোনালী ব্যাংক রোড সুগার মিল শাখা হতে ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে আমন ফসল উৎপাদনের তার নামে জন্য ২৫ হাজার টাকা কৃষি ঋণ গ্রহণ করা হয়। কিন্তু হাউয়া মরমু এ সম্পর্কে কিছু জানেন না। তাকে শুধু সরকারি অনুদানের ২ হাজার টাকা দেয়া হয়েছে, তিনি এটাই জানেন। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ওই ঋণের জন্য সুদসহ ৩১ হাজার ৪৪১ টাকা পরিশোধ করার জন্য তাকে কিছুদিন আগে নোটিশ করেছে।

তখন তিনি দিশেহারা হয়ে আশপাশের সবার কাছে খোজঁখবর নিয়ে জানতে পারেন তার মতো সাঁওতাল সম্প্রদায়ের প্রায় ৪০টি পরিবারসহ ওই গ্রামের ভূমিহীন ও অসহায় শতাধিক পরিবারগুলোর অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে তরিকুল ও সোলেমান তাদেরকে প্রতারিত করেছে।

এখন এসব নিরীহ দরিদ্র মানুষগুলো চরম আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে। ঋণ থেকে মুক্তি পেতে তারা এখন স্থানীয় চেয়ারম্যানসহ গণ্যমান্য লোকদের কাছে ধরণা দিচ্ছেন প্রতিদিন।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ভুক্তভোগীরা সদর উপজেলার মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের মাতৃগাঁও গ্রামের ব্যাংকের দালাল হিসেবে পরিচিত তরিকুল ও সোলেমান নামে দুই ব্যক্তি কৌশলে সোনালী ব্যাংক রোড সুগার মিল শাখা থেকে ২০১৪-১৫ সালের অর্থ বছরে আমন ধান উৎপাদনের জন্য কৃষি ঋণের নাম করে আদিবাসী ভূমিহীন ও দুস্থ শতাধিক ব্যক্তির কাছ থেকে ভোটার আইডি কার্ড ও ছবি নেয়। আদিবাসী ভূমিহীন ও দুস্থদের নামে কাগজপত্র দেখিয়ে ব্যাংকে কৃষিঋণ নবায়ন করেন তারা।

এর আগে সরকারি অনুদান পাইয়ে দেয়ার কথা বলে আদিবাসী ভূমিহীন ও দুস্থদের কাছ থেকে জাতীয় পরিচয়পত্র, ছবি ও টিপসই সংগ্রহ করেন তরিকুল ও সোলেমান। এরপর ২০১৪-২০১৫ অর্থ বছরে তাদের প্রত্যেকের নামে ২০ থেকে ৩২ হাজার টাকা পর্যন্ত কৃষি ঋণ উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেন তারা। আর ওই আদিবাসী ভূমিহীন ও দুস্থদের ২-৩ হাজার টাকা করে সরকারি অনুদানের টাকা ধরিয়ে দেন।

ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর তরিকুল ও সোলেমান গা-ঢাকা দেয়। অনেক চেষ্টার পর ওই দুই প্রতারকের সঙ্গে কথা হলে তারা অভিযোগ স্বীকার করে জানান, ঋণ পরিশোধ করতে হবে না- বলে গ্রাহক সংগ্রহ করতে বলে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। আর গ্রাহক আনলেই তাদের দেয়া হতো দিনের পারিশ্রমিকের টাকা।

মোহাম্মদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সোহাগ বলেন, ব্যাংক থেকে ঋণ পরিশোধের কাগজ পাওয়ার পরে সকলে অভিযোগ করেছে। আমি লিখিতভাবে অভিযোগ পেয়েছি। সবার অভিযোগ একসঙ্গে করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

অনিয়মের বিষয়ে সোনালী ব্যাংক ঠাকুরগাঁও রোড সুগার মিল শাখার ম্যানেজার রেজাউল করিম পিও জানান, ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়ায় গ্রহিতাদের নোটিশ করা হয়েছে। ঋণ গ্রহীতার কাগজপত্র সঠিকভাবে যাচাই করার পর ঋণ বিতরণ করা হয়। কোনো অনিয়ম হয়ে থাকলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। বর্তমানে এ শাখা দালাল মুক্ত বলেও দাবি করেন তিনি।

ঠাকুরগাঁওয়ের জেলা প্রশাসক আবদুল আওয়াল বলেন, প্রতারক চক্রকে শনাক্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। ব্যাংকের সঙ্গে কথা বলে সমস্যা সমাধানে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

Logo-orginal