, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

Avatar rtm

একজন অভিমানী প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশ: ২০১৮-০৪-১২ ১৭:২৫:১১ || আপডেট: ২০১৮-০৪-১২ ১৭:৩৩:৩৪

Spread the love
একজন অভিমানী প্রধানমন্ত্রী

আরটিএমনিউজ২৪ডটকম: কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থীরা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি অবহিত হয়ে কোটা পদ্ধতি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে নির্দেশ দিলেন।

গত সোমবার সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিদের সাথে বৈঠক করেন সরকারের প্রতিনিধি সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সহ মন্ত্রীপরিষদ সচিব। বৈঠকে কোটা ব্যবস্থা নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে ৭ই মে পর্যন্ত আন্দোলন স্থগিত করার সিদ্ধান্ত হয়। এরমধ্যে কোটা পদ্ধতি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেই সংস্কারের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে মন্ত্রীপরিষদ সচিব জানান।

কিন্তু আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা এটাও মেনে নেননি। তারা আবার আন্দোলনে নেমে পড়েন। একপর্যায়ে তারা ঢাবি উপাচার্যের বাসভবনেও হামলা করেন।

পরদিন ছাত্রলীগ সভাপতি-সম্পাদক প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করতে গেলে প্রধানমন্ত্রী তাদের জানান সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি থাকবেনা। পরবর্তীতে বুধবার বিকেলে সংসদ অধিবেশনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা যদি কোটা না চাই তাহলে কোটা রেখে কি হবে, বাতিল-ই করে দেয়া হোক। কোটা থাকলেই আরেক দল এসে আবার সংস্কারের আন্দোলন করবে, কোটা না থাকলেই আর আন্দোলন হবেনা।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কণ্ঠে অভিমানের সুর, বিরক্তির সুর:

প্রধানমন্ত্রীর কোটা পরীক্ষা-নিরীক্ষার করার নির্দেশনা ছাত্রছাত্রীরা মানেনি। আন্দোলন অব্যাহত রেখেছে। রাতে উপাচার্যের বাসভবনে হামলা। প্রধানমন্ত্রী যেখানে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার কথা চিন্তা করে কোটা ব্যবস্থা পরীক্ষা-নিরীক্ষার নির্দেশ দিয়েছেন সেটাও না মেনে লিখিত এবং তাৎক্ষণিক ঘোষণা শুনতে আন্দোলন অব্যাহত রাখেন। এতেই মনে হয় মাননীয়  প্রধানমন্ত্রী কিছুটা বিরক্ত হয়েছেন। উনার কণ্ঠে ছিল অভিমান।
তাৎক্ষণিক এরকম সিদ্ধান্ত ছাড়া মনে হয় নেত্রীর কোনো অপশন ছিলোনা।

হে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী! আপনি মানবতার নেত্রী, আপনি গণমানুষের নেত্রী। আপনি কখনো ভুল সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। আপনাকে অভিমান করা মানায় না নেত্রী। আপনি আমাদের মা। আপনার সন্তানরা ভুল করতেই পারে। আশা করি আপনি সেটি সংশোধন করেই সিদ্ধান্ত নিবেন।

অনগ্রসর সমাজের জন্য কোটা ব্যবস্থা চালু করেছিলেন জাতির পিতা। মাননীয় নেত্রী আজও এদেশে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীরা সমাজে অগ্রসর হতে পারেনি। প্রতিবন্ধীরা আজও সমাজে পিছিয়ে। দেশের অগ্রসর জেলা ঢাকা ও চট্টগ্রাম বাদ দিলে বাকি জেলাগুলো আজও অনেক পিছিয়ে।

জেলা কোটা বাতিল হলে ঢাকা ও চট্টগ্রামের সেরা ২০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরাই সরকারি চাকরিতে সুযোগ পাবে। লালমনিরহাটের কৃষকের শিক্ষিত ছেলেটি আর প্রতিযোগিতায় টিকে থাকবে না।

মাননীয় নেত্রী! সত্যিকারের মুক্তিযোদ্ধারা আজও পিছিয়ে। ১৯৭৫ -এর পর ২১ বছর তাদের দমন-নিপীড়ন করা হয়েছে। ৯৬তে আপনি ক্ষমতায় এসে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের জন্য সুযোগ-সুবিধা অব্যাহত রেখেছেন। স্বাধীনতার ৪৭ বছর হয়েছে বটে কিন্তু ৪৭ বছর সরকারি সুযোগ-সুবিধা পেয়েছেন তারা?

মাননীয় নেত্রী! আপনি অভিমানী, আপনি মাও বটে। আপনি সন্তানদের ক্ষমা করবেন। আপনি কখনো ভুল সিদ্ধান্ত নেননি। কোটা সংস্কারের ব্যাপারেও আপনি সঠিক সিদ্ধান্ত নিবেন বলে আমরা আশা রাখি।

কোটা বাতিল হলে অনগ্রসর জনগোষ্ঠী কখনোই অগ্রসর হতে পারবে না। গ্রামের কৃষকের সন্তানটি হেরে যাবে শহরে ছেলেদের কাছে। যারা এগিয়ে তারা আরও এগিয়ে যাবে, যারা পিছিয়ে তার আরও পিছিয়ে যাবে। কোটা বাতিলে বৈষম্য কমবেনা, বরং বাড়বে।।

সমাজে অনগ্রসর মানুষের জন্য  জাতির পিতা কোটা চালু করেছিল। আজ সমাজ অনেক এগিয়েছে। আজ আমরা উন্নয়নশীল দেশ হয়েছি। মধ্যেম আয়ের দেশ হওয়ার লক্ষে এগিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু সমাজে এখনো পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর সংখ্যা নেহায়েত কম নয়। মাননীয় নেত্রী আমরা আশা করি আপনি পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর কথা চিন্তা করে জাতির পিতা যে কোটা চালু করেছিল সেটার সাথে সমন্বয় করে আপনি একটি যৌক্তিক কোটা ব্যবস্থা চালু করবেন। যেটার কারণে উপকৃত হবে সাধারণ মানুষ। উপকৃত হবে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী। কোটা ব্যবস্থা বহাল রেখে একটি যথোপযুক্ত কোটা সংস্কার দাবি করছি। পরিশেষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার দীর্ঘায়ু কামনা করছি।

লেখক: মোঃ জাহেদুল ইসলাম পারভেজ
তৃণমূল কর্মী, সাতকানিয়া উপজেলা ছাত্রলীগ
email : zahadulislam4@gmail.com

Logo-orginal