, বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪

admin admin

কিশোরী ধর্ষণের দায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ভারতের৭৭ বছর বয়সী গুরু আশারামকে

প্রকাশ: ২০১৮-০৪-২৫ ১৭:০৩:৪৬ || আপডেট: ২০১৮-০৪-২৫ ১৭:০৩:৪৬

Spread the love

কিশোরী ধর্ষণের দায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ভারতের৭৭ বছর বয়সী গুরু আশারামকে
শুরুটা হয়েছিল গুজরাটের সবরমতী নদীর তীরে ছোট্ট একটা কুটির থেকে। ৭০-এর দশকের কথা। তারপর সবরমতী দিয়ে অনেক জল গড়িয়ে গেছে। ভারতের স্বঘোষিত ধর্মগুরু আসারামের প্রতিপত্তিও এগিয়েছে নদীর স্রোতের মতোই।

পরের চার দশকে গড়ে উঠেছিল সারা দেশজুড়ে ৪০০টির বেশি আশ্রম। সম্পদের মাপকাঠিতে শিল্পপতিদেরও টেক্কা দিতে পারেন আসারাম। তার সম্পদের পরিমাণ চোখ কপালে তোলার মতো। প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার একটা সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছিলেন আসারাম। ভক্ত সংখ্যা কয়েক হাজার।
স্বঘোষিত গুরু আশারাম বাপুকে কিশোরী ধর্ষণের দায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন ভারতের একটি আদালত। বুধবার রাজস্থানের যোধপুরের আদালত ৭৭ বছর বয়সী আশারামকে এ দণ্ড দেন।

সবকিছুই ঠিকঠাক চলছিল। কিন্তু ধর্ষণের অভিযোগ আসার পর আসন টলে গেল আসারামের। ২০১৩ সালে এক স্কুল ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেফতার হওয়ার পর মোতেরা এলাকার আশ্রম থেকে বাজেয়াপ্ত নথিপত্র হাতে পাওয়ার পর একটু অবাকই হন পুলিশের তদন্তকারী কর্মকর্তারা।

আসারামের সম্পদের পরিমাণ প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা। এর বাইরে রয়েছে রয়েছে বিপুল পরিমাণ জমিজমা। ধর্ষণের মামলায় গ্রেফতারের পরও কিছু ভক্ত রয়েছে তার। কিন্তু তারপর থেকে জমি জবরদখল ও আশ্রমে লুটপাটের মতো অভিযোগ উঠে এসেছে আসারামের বিরুদ্ধে।

তার অফিসিয়াল ওয়েবসাইট অনুসারে দেশভাগের আগে অধুনা পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশের বেরানি গ্রামে আসারামের জন্ম। নাম ছিল আসুমল সিরুমালানি। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর বাবা-মার সঙ্গে আহমেদাবাদে চলে আসেন তিনি।

মণিনগরের স্কুলে যখন চতুর্থ শ্রেণীতে পড়তেন তখন তার বাবা মারা যায়। ফলে ১০ বছর বয়সে স্কুল ছাড়তে হয় তাকে। তরুণ বয়সে বিভিন্ন ধরনের কাজ করেন। তারপর ‘আধ্মাত্যিকতার সন্ধানে হিমালয় যাত্রা’ করেন বলে ওয়েবসাইটের তথ্যচিত্রে দাবি করা হয়েছে।

সেখানে লীলাশাহ বাপু নামে ‘গুরু’র সন্ধান পান আসারাম। ওই গুরুই তার আসারাম নামকরণ করেন। গুরু তাকে ‘নিজের পথ বেছে নিতে এবং মানুষকে পথ দেখানো’র নির্দেশ দেন বলে দাবি করা হয়েছে ওই তথ্যচিত্রে।

৭০-এর দশকের গোড়ায় আহমেদাবাদে এসে মোতেরা এলাকায় সবরমতীর ধারে ‘তপস্যা’ শুরু করেন আসারাম। ওই নদীর ধারেই ‘মোক্ষ কুটির’ নামে আশ্রম তৈরি করেন তিনি। কয়েক বছরের মধ্যেই সন্ত হিসেবে তার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। চার দশকের মধ্যে সারা দেশে ও বিদেশে তার ৪০০ আশ্রম গড়ে ওঠে।

আসারাম লক্ষ্মীদেবীকে বিয়ে করেন। তার এক পুত্র ও কন্যাসন্তান রয়েছে। ছেলে নারায়ণ সাঁইও এখন জেলেই রয়েছেন। মেয়ের নাম ভারতী দেবী। ২০০৮ সালে প্রথম সমস্যার সম্মুখীন হন আসারাম। দীপেশ ও অভিষেক বাঘেলা নামে দুই ভাইয়ের মোতেরায় আসারামের গুরুকুল আশ্রম সংলগ্ন নদীর তীরে পাওয়া যায়। তারা ওই আশ্রমেই থাকত।

২০০৯ সালে সিআইডি আশ্রমের নয়জন ভক্তের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। নিহত দুই ভাইয়ের অভিভাবকরা দাবি করেন যে, আসারামের আশ্রমে তুকতাক করা হত। এই তুকতাক করতে গিয়েই দুজনকে মেরে ফেলা হয়েছে।

তবে আসারামের প্রকৃত পতন শুরু হয় রাজস্থানে নাবালিকাকে ধর্ষণের ঘটনায় গ্রেফতার হওয়ার পর। এরপর সুরাতের দুই বোন আসারাম ও তার ছেলের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ আনে।

২০১৩ সালের অক্টোবরে সুরাত পুলিশ আসারাম ও নারায়ণ সাঁইয়ের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। সেই মামলা এখনও চলছে গান্ধীনগর আদালতে।
সুরাত ও আহমেদাবাদে আশ্রম তৈরির জন্য জমি দখলেরও অভিযোগ উঠেছে আসারামের বিরুদ্ধে।
ধর্ষণের মামলায় সাক্ষীদের হুমকি ও নিগ্রহর জন্য আসারামের বেশ কয়েকজন ভক্তও গ্রেফতার হয়েছে। এবিপি আনন্দ। সুত্র: জাগোনিউজ২৪।

Logo-orginal