, মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪

admin admin

দ্বিতীয় মেয়াদে রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে শপথ নিলেন মো. আবদুল হামিদ

প্রকাশ: ২০১৮-০৪-২৪ ২০:২১:৫৬ || আপডেট: ২০১৮-০৪-২৪ ২০:২১:৫৬

Spread the love

দ্বিতীয় মেয়াদে রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে শপথ নিলেন মো. আবদুল হামিদ।
দ্বিতীয় মেয়াদে রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে শপথ নিলেন মো. আবদুল হামিদ।

এই দেশে প্রথবারের কোনো রাষ্ট্রপতি টানা দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব পালন শুরু করলেন। দ্বিতীয় মেয়াদের পুরোটা পার করতে পারলে আবদুল হামিদই হবেন সবচেয়ে বেশি সময় রাষ্ট্রপতির পদে অধিষ্ঠিত ব্যক্তি।

বাংলাদেশের একবিংশতম রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে আবদুল হামিদকে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বঙ্গভবনের দরবার হলে শপথ পড়ান স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকে ১৯ মেয়াদে এ পর্যন্ত ১৬ জন রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। সেই হিসাবে আবদুল হামিদ এই পদে সপ্তদশ ব্যক্তি।

তবে টানা দ্বিতীয় মেয়াদে রাষ্ট্রপতি হতে যাচ্ছেন কেবল আবদুল হামিদই। সংবিধানে সর্বোচ্চ দুই বার রাষ্ট্রপতি পদে থাকার সুযোগ থাকায় এটাই হবে তার শেষ মেয়াদ।

শপথ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, রাষ্ট্রপতির পরিবারের সদস্য, মন্ত্রিসভার সদস্য, সংসদ সদস্য, তিন বাহিনীর প্রধান, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, গণমাধ্যমের কর্তাব্যক্তি, পেশাজীবী প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

বঙ্গভবনে পৌঁছালে আবদুল হামিদ ও তার স্ত্রী রাশিদা খানম সরকার প্রধান শেখ হাসিনাকে অভ্যর্থনা জানান। শেখ হাসিনার সঙ্গে বোন শেখ রেহানাও ছিলেন।

পরে স্পিকার শিরীন শারমিনসহ তারা একসঙ্গে দরবার হলে পৌঁছান। এসময় সামরিক বাহিনীর একটি বাদক দল ফ্যানফেয়ার বাজায়।

দরবার হলে ঢোকার পরে আবদুল হামিদ ও শিরীন শারমিন মঞ্চে ওঠেন। শপথ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম।

সাদা পাঞ্জাবি ও মুজিব কোট পরিহিত আবদুল হামিদ শপথ বাক্য পাঠ করার পর সবাইকে হাত তুলে সালাম জানান। পরে শপথ নামায় সই করেন তিনি।

শপথ নিয়ে মঞ্চ থেকে নেমে আবদুল হামিদ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেন। এসময় শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা ও বিরোধীদলীয় নেতা ফুল দিয়ে আবদুল হামিদকে শুভেচ্ছা জানান।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা, ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া, সংসদ উপনেতা সাজেদা চৌধুরী, শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, সমাজকল্যাণমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের,গণপূর্ত মন্ত্রী খোন্দকার মোশাররফ হোসেন, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

শপথ অনুষ্ঠানে ছিলেন সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, ঢাকা দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকনও ছিলেন এই অনুষ্ঠানে।

বঙ্গভবনে উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রধান সম্পাদক তৌফিক ইমরোজ খালিদী, বিএফইউজ সভাপতি মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিন।

কূটনীতিকদের মধ্যে ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট, চীনের রাষ্ট্রদূত ঝ্যাং জু, ভারতের হাই কমিশনার হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা, ডিপ্লোম্যাটিক কোরের ডিন ভ্যাটিকানের দূত জর্জ কোচেরি, জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি মিয়া সেপপো, ইইউ দূত রেনসে টিরিংক।

গত ৭ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের একবিংশতম রাষ্ট্রপতি পদে বর্তমান রাষ্ট্রপ্রধান মো. আবদুল হামিদকে নির্বাচিত ঘোষণা করে ইসি।

মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে আবদুল হামিদকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করেন এ নির্বাচনের নির্বাচনী কর্তার দায়িত্বে থাকা প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা।

এর আগে ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নিয়েছিলেন আবদুল হামিদ।

সেই মেয়াদ ফুরিয়ে আসায় গত ২৫ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন সিইসি। ৫ ফেব্রুয়ারি মনোনয়ন দাখিলের দিন একমাত্র আবদুল হামিদের মনোনয়নপত্রই জমা পড়ে।

বাংলাদেশে সংসদীয় গণতন্ত্রে ফেরার পর শুধু ১৯৯১ সালেই রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচন হয়েছিল। এরপর সবাই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন।

বুধবার বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতিকে গার্ড অব অনার দেবে প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্ট (পিজিআর)। ওইদিন বিকেলে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের সম্মান জানাবেন রাষ্ট্রপতি।

সাভার থেকে ফিরে যাবেন ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে। সেখানে জাতিন জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাবেন আবদুল হামিদ।

বৃহস্পতিবার গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জাতির জনকের সমাধিতে শ্রদ্ধা জানাতে যাবেন রাষ্ট্রপতি। শুক্রবার নিজের জন্মস্থান কিশোরগঞ্জের মিঠামইন যাবেন আবদুল হামিদ।

পেশায় আইনজীবী আবদুল হামিদ কিশোরগঞ্জ থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন সাতবার, স্পিকারের দায়িত্ব পালন করেছেন দুই দফা।

১৯৪৪ সালের ১ জানুয়ারি কিশোরগঞ্জের মিঠামইন উপজেলার কামালপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন আবদুল হামিদ। তার রাজনৈতিক জীবন শুরু হয় ১৯৫৯ সালে, ছাত্রলীগে যোগ দেয়ার মধ্য দিয়ে।

১৯৭০ সালের নির্বাচনে ময়মনসিংহ-১৮ আসন থেকে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সর্বকনিষ্ঠ সদস্য হিসাবে নির্বাচিত হন আবদুল হামিদ। মুক্তিযুদ্ধে অবদানের স্বীকৃতি হিসাবে ২০১৩ সালে আবদুল হামিদকে স্বাধীনতা পদকে ভূষিত করা হয়।

১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ দেশের প্রথম সাধারণ নির্বাচনে কিশোরগঞ্জ-৫ আসন থেকে নির্বাচিত হন আবদুল হামিদ। ১৯৮৬ সালের তৃতীয় সংসদ, ১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ, ১৯৯৬ সালের সপ্তম সংসদ, ২০০১ সালের অষ্টম সংসদ এবং সর্বশেষ ২০০৮ সালের নির্বাচনেও তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

সপ্তম সংসদে ১৯৯৬ সালের ১৩ জুলাই থেকে ২০০১ এর ১০ জুলাই পর্যন্ত ডেপুটি স্পিকারের দায়িত্ব পালনের পর ২০০১ এর ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত স্পিকার হিসাবে সংসদ পরিচালনা করেন আবদুল হামিদ।আর নবম সংসদে নির্বাচিত হওয়ার পর দ্বিতীয়বারের মতো স্পিকার হন।সুত্রঃ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম ।

Logo-orginal