admin
প্রকাশ: ২০১৮-০৪-২৩ ১৭:২১:২৬ || আপডেট: ২০১৮-০৪-২৩ ১৭:২১:২৬
খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জুর মাসিক আয়ের সঙ্গে তার জীবনযাত্রার কোনো মিল নেই। তিনি যে গাড়িটি চালান, সেটি সংসদ সদস্য থাকাকালে বিনা শুল্কে আনার সুযোগ পেলেও সেটির দাম পড়ে অন্তত ৮০ লাখ টাকা। এই গাড়ির প্রতি মাসে যে খরচ হয়, তা মঞ্জুর দেখানো আয়ে কুলাবে না।
মনোনয়নপত্রের সঙ্গে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে জমা দেয়া হলফনামা অনুযায়ী মঞ্জুর মাসে আয় ২০ হাজার টাকার সামান্য বেশি। তার বার্ষিক আয় তিনি দেখিয়েছেন দুই লাখ ৪৩ হাজার টাকা। অথচ তার গাড়ির খরচই কমসে কম ৪০ হাজার টাকা।
২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খুলনা সদর আসন থেকে জিতেছিলেন মঞ্জু। এরপর তিনি বিনা শুল্কে টয়োটা জিপ আনিয়েছেন বিদেশ থেকে।
ঢাকায় গাড়ি আমদানির ব্যবসা করেন এমন একজন ঢাকাটাইমসকে জানান, এই গাড়িগুলো কর দিয়ে দেশে আনলে দাম পড়ার কথা সাড়ে চার থেকে পাঁচ কোটি টাকা। কিন্তু সংসদ সদস্যরা ট্যাক্স ফ্রি সুবিধা পান বলে ৮০ লাখ টাকার মধ্যেই আনতে পারেন।
ডিজেলে চলা এই গাড়িটি প্রতি লিটারে তিন থেকে বড়জোর চার কিলোমিটার চলে। এই গাড়িতে করেই মঞ্জু খুলনা থেকে ঢাকা বা অন্য কোথাও চলাচল করেন। এখন প্রশ্ন উঠেছে, যার মাসে আয় ২০ হাজার টাকা, তার পক্ষে ৮০ লাখ টাকার গাড়ি কেনা কীভাবে সম্ভব। এই প্রশ্ন তুলেছে মঞ্জুর প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগ।
ক্ষমতাসীন দলের নেতা এস এম কামাল হোসেন বলেন, ‘বর্তমান সময়ে একজন মানুষ সাদাসিধে জীবনযাপন করলেও তার পারিবারিক খরচ প্রতিমাসে ২৫-৩০ হাজার টাকার কমে সম্ভব না। অথচ মঞ্জু এই বাস্তবতাকে এড়িয়ে মিথ্যা তথ্য প্রতিষ্ঠিত করতে চাইছেন।’
‘মঞ্জু কোটি টাকার গাড়িতে চলেন কীভাবে। তার ড্রাইভার বা কী করে চলে?’-এমন প্রশ্ন রেখে কামাল হোসেন বলেন, ‘তিনি যে বাড়িতে থাকেন, সেটার ভাড়াও তো কমসে কম ২০ হাজার টাকা। তাহলে কি বাড়িওয়ালা তাকে বিনা পয়সায় থাকতে দিয়েছেন?’
মাসে ২০ হাজার টাকা আয় করেন, চালককে কত দেন, গাড়ির খরচই বা কোথা থেকে আসে-এমন প্রশ্নে মঞ্জু জানান, তিনি তার গাড়ির চালককে মাসে সাত হাজার টাকা বেতন দেন। আর শ্বশুরবাড়ির সহযোগিতায় সংসার চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।
হলফনামা প্রকাশ হওয়ার পর মঞ্জু এসব প্রশ্নের মুখে পড়েন আওয়ামী লীগ নেতা ছাড়াও বহুজনের কাছ থেকে। আর গত ১৮ এপ্রিল তিনি খুলনা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এক কথায় জবাব দেয়ার চেষ্টা করেন যে, তার শ্বশুর খুলনা শহরের ধনাঢ্য ব্যক্তি। তার টাকাতেই সন্তানদের লেখাপড়া এবং পরিবারের খরচ আসে।
মঞ্জুর দাবি, ঢাকায় আইন বিভাগে পড়া তার মেয়ে মাসের খরচ যোগায় চারটি টিউশনি করে।
বিএনপির প্রার্থী জানান, ১৯৯৪ সালে বিয়ের সময় দুটি খাট এবং উপহার হিসেবে একটি টেলিভিশন পেয়েছিলেন। আর শ্যালক একটি ফ্রিজ উপহার দিয়েছেন।
স্ত্রীর চাকরির টাকায় সোফা সেট কেনার কথা জানান। আর এক দশক আগে ঘরের এসি কেনা হয়েছে কিস্তিুতে।
মঞ্জুর দেয়া হিসাব অনুযায়ী তার চেয়ে তার ওপর নির্ভরশীলদের বার্ষিক আয় বেশি। তিনি যেখানে বছরে দুই লাখ ৪৩ হাজার টাকা আয় করেন, সেখানে তার ওপর নির্ভরশীলদের বার্ষিক আয় ২ লাখ ৮২ হাজার টাকা।
নিজের নূন্যতম আয়েও মঞ্জুর স্ত্রীর ২০ ভরি স্বর্ণালঙ্কার রয়েছে। যৌথ মালিকানায় একটি চারতলা ভবনও রয়েছে। এ ছাড়া নগদ তিন লাখ টাকা ও ৮৯০ ডলার এবং স্ত্রীর কাছে নগদ দুই লাখ টাকা ও ১৭ হাজার ৪৫৪ ডলার আছে। সুত্র: ঢাকা টাইমস।