, বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪

admin admin

রোহিঙ্গাদের জন্য ৪৪ লাখ ২৫ হাজার টন ত্রাণ ও ৪৫৮ কোটি ৯২ লাখ টাকা সহায়তা পাওয়া গেছে।

প্রকাশ: ২০১৮-০৪-২৬ ১৯:৫২:১৮ || আপডেট: ২০১৮-০৪-২৬ ১৯:৫২:১৮

Spread the love

রোহিঙ্গাদের জন্য ৪৪ লাখ ২৫ হাজার টন ত্রাণ ও ৪৫৮ কোটি ৯২ লাখ টাকা সহায়তা পাওয়া গেছে
নিপীড়নের মুখে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের জন্য দেশি-বিদেশি মিলিয়ে ৪৪ লাখ ২৫ হাজার টন ত্রাণ (খাদ্যসামগ্রী) ও ৪৫৮ কোটি ৯২ লাখ ৭৫ হাজার টাকা সহায়তা হিসেবে পাওয়া গেছে।

‘বাংলাদেশে অনুপ্রবেশকারী বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিকদের (রোহিঙ্গা) জন্য চলমান ত্রাণ কার্যক্রম, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাসহ অন্যান্য কার্যক্রমের হালনাগাদ তথ্যাদি’র প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

সম্প্রতি চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় থেকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে এ প্রতিবেদন পাঠানো হয়।

চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার মো. আবদুল মান্নান জাগো নিউজকে বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের ত্রাণ নিয়ে আমরা কী করব, কী করছি, আগে কী করেছি, কারা কী করছে এবং ভবিষ্যতে কী করতে হবে- সবকিছুই আমরা সময়ে সময়ে সরকারকে অবহিত করি। তা না হলে হঠাৎ করে খাদ্যের ঘাটতি হলে, রোহিঙ্গাদের সমস্যা হলে সরকারের ইমেজ (ভাবমূর্তি) নষ্ট হবে। তাই আমরা আগে থেকেই সব ধরনের সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়ে থাকি।’

ত্রাণের মধ্যে রয়েছে সরকারি চাল ৪৯০ টন, বেসরকারি চাল দুই হাজার ১১৪ টন, ডাল ২০ টন, তেল ৭৬ হাজার ৩২৬ লিটার, লবন ২৮৫ টন ও চিনি ৩৮৪ টন।

অর্থ সহায়তা হিসাবে সরকারি জিআর ক্যাশ ৩০ লাখ টাকা, প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিল থেকে ২০ লাখ টাকা এবং চলতি হিসাবে বিভিন্ন সংস্থা ও ব্যক্তি দিয়েছেন ৪৫৮ কোটি ৪২ লাখ ৭৫ হাজার ৬১৯ টাকা।

মিয়ানমার নাগরিকদের জন্য মানবিক সহায়তা নামে সোনালী ব্যাংকের কক্সবাজার শাখায় একটি চলতি হিসাব (হিসাব নং- ৩৩০২৪৬২৫) খোলা হয়েছে বলে জানান বিভাগীয় কমিশনার।

এছাড়া বিভিন্ন ব্যক্তি, দল ও সংস্থা ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করছেন বলে প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে।

মালয়েশিয়া, মরক্কো, ইন্দোনেশিয়া, ভারত, ইরান, সৌদি আরব, সুইজারল্যান্ড, জাপান, চীন, ইংল্যান্ড, নরওয়ে, ফিনল্যান্ড, ইটালি, সিঙ্গাপুর, আরব আমিরাত ও স্লোভাকিয়া রোহিঙ্গাদের জন্য ত্রাণসামগ্রী দিয়েছে। দেশগুলো চাল, ডাল, তেল, লবন, আলু, চিনি, মুড়ি, আটা, হাই এনার্জি বিস্কুটসহ মোট ৪৩ লাখ ৪৫ হাজার ৬১৯ টন ত্রাণ সহায়তা দিয়েছে।

ডাব্লিউএফপি খাদ্য সহায়তা দিয়েছে ৩৯ হাজার ৮৫৮ টন। আয়ারল্যান্ড দিয়েছে ৩৬ হাজার ৬৯৫ টন। ডাব্লিউএফপি চারটি অস্থায়ী খাদ্যগুদাম নির্মাণ করে দিয়েছে। সেখানে খাদ্যসামগ্রী মজুদ করা হচ্ছে বলে বিভাগীয় কমিশনার প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন।

এছাড়া ইউনিসেফ শিক্ষা কার্যক্রম, শিশুখাদ্য ও স্যানিটেশনে সহায়তা দিচ্ছে। সংস্থাটি ১০ হাজার টয়লেট নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এর মধ্যে নির্মিত হয়েছে সাড়ে সাত হাজারটি।

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সহিংসতা ও মানবতাবিরোধী ধ্বংসযজ্ঞের কারণে রোহিঙ্গারা কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়া উপজেলা এবং বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় স্থায়ী ও অস্থায়ী ক্যাম্পসহ বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান করছে।

মিয়ানমারের সীমান্তে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর চেকপোস্টে হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত বছরের ২৫ আগস্ট থেকে নতুন করে রাখাইনে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর অভিযান শুরু করে দেশটির সেনাবাহিনী। তখন থেকে রোহিঙ্গারা জীবন বাঁচাতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসছে।

গত ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা মোট ১১ লাখ তিন হাজার। এছাড়া রামু, কক্সবাজারের পৌরসভাসহ অন্যান্য এলাকা, বান্দরবার, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আরও প্রায় দুই লাখ রোহিঙ্গা রয়েছে বলে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক এক প্রতিবেদনে জানান।

বর্তমানে রোহিঙ্গাদের জন্য ১৪টি ক্যাম্প এবং ক্যাম্পগুলোতে ২৩টি ব্লক রয়েছে। দুই লাখ শেল্টার নির্মাণের কার্যক্রম প্রায় শেষ হওয়ার পথে। উখিয়া উপজেলার কুতুপালং ও বালুখালী এলাকায় চার হাজার একর জমিতে ক্যাম্প স্থাপন করা হচ্ছে।

৬২৩ রোহিঙ্গার শাস্তি

চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার মো. আবদুল মান্নান জানান, কক্সবাজার জেলায় গত বছরের ২৫ আগস্ট থেকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ, বিজিবি, র্যাব ও আনসার সদস্যদের সমন্বয়ে আইনশৃঙ্খলা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে পুলিশ, বিজিবি, র্যাব ও আনসার সদস্যদের সহায়তায় নিয়মিত চারটি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হচ্ছে। এর মাধ্যমে ইতোমথ্যে ৬২৩ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি দেয়া হয়েছে।

রোহিঙ্গারা যাতে অন্যত্র ছড়িয়ে পড়তে না পারে সেজন্য জেলা পুলিশ ১১টি চেকপোস্ট বসিয়েছে। এর মাধ্যমে ৫২ হাজার ৮৮৫ রোহিঙ্গাকে ক্যাম্পে ফেরত পাঠানো হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন জেলা থেকে তিন হাজার ২০ জনকে কুতুপালং এলাকায় ফেরত পাঠানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।

আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নসহ (এপিবিএন) প্রায় এক হাজার পুলিশ সদস্য, ২২০ জন আনসার সদস্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কাজে এবং সেনাবাহিনীর এক হাজার ৭০০ সদস্য পর্যায়ক্রমে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমে সহায়তা করছে বলেও চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে।

এছাড়া ‘এশিয়ান ডিজাস্টার প্রিপিয়ার্ডনেস সেন্টার ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়’র যৌথ উদ্যোগে সম্ভাব্য ভূমিধস ও পাহাড়ি ঢলে আক্রান্ত হতে পারে এমন এলাকা চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব এলাকায় প্রায় এক লাখ লোককে নিরাপদ স্থানে স্থানান্তরের জন্য কুতুপালং ও বালুখালী নতুন ক্যাম্প এলাকার সীমানা পশ্চিম দিক বরাবর সম্প্রসারণের কাজ শুরু হয়েছে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। উৎসঃ জাগোনিউজ২৪.কম।

Logo-orginal