, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

Avatar rtm

যেসব কারণে রোজা ‘মাকরূহ’ হয় কিন্তু ভঙ্গ হবে না

প্রকাশ: ২০১৮-০৫-১৮ ১৭:৪২:৪৪ || আপডেট: ২০১৮-০৫-১৮ ১৭:৪৩:৪১

Spread the love
যেসব কারণে রোজা ‘মাকরূহ’ হয় কিন্তু ভঙ্গ হবে না

আরটিএমনিউজ২৪ডটকম: মাহে রমজানের ০১তম রোজা আজ, রহমতের প্রথম দিন। এই পবিত্র মাসে আমরা রোজা রেখে অনেক কাজ করি যা ইসলামী শরিয়তের দৃষ্টিতে মাকরুহ, তথা অপছন্দনীয়।

এসব কাজ হয়তো আমরা জেনে করি কিংবা না জেনে। তবে একটু সচেতন হলেই মাকরুহ এড়ানো যায়। এতে সঠিকভাবে রোজা পালনও হয়। আর রোজা আদায় ইসলামী শরিয়ত মতে হলেই ‘আল্লাহর মকবুল বান্দা’ হিসেবে অন্তর্ভূক্ত হওয়ার সৌভাগ্য অর্জিত হবে।

‘মাকরূহ’ শব্দের অর্থ অপছন্দনীয়। আর রোজা (সওম)- এর মাকরূহ হল রোজা পালন অবস্থায় যেসব কাজ করা অপছন্দনীয়।  কিন্তু রোজা ভঙ্গ হবে না বরং আদায় হয়ে যাবে। মূলত রোজা ভঙ্গ না হলেও রোজাদারের এসব কাজ করা উচিত নয়। কারণ, এসব কাজ কখনও কখনও রোজা ভঙ্গের কাছাকাছি নিয়ে যায়।

সাহাবি হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হযরত মুহাম্মদ (সা.) এরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি (রোজা রেখে) খারাপ কথা ও খারাপ কাজ পরিহার করেনি, তার ক্ষুধার্থ থাকা আল্লাহ পাকের কাছে কোনো প্রয়োজন নেই। (সহিহ বুখারী, ১ম খন্ড, হাদিস-১৯০৩)

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে আরো একটি হাদিস বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, মহানবী (সা.) বলেছেন, রোজা হচ্ছে ঢাল, যতক্ষণ না সেটাকে ছিদ্র করে দাও। জিজ্ঞেস করা হলো- হে রাসূল (সা.) কোন জিনিস দিয়ে ছিদ্র করা হয়? রাসূল (সা.) উত্তর দিলেন মিথ্যা কিংবা গীবত দ্বারা। (আত্তারগীব ওয়াত্তারহীব, ২য় খণ্ড)

রোজার মাকরূহসমুহ :

 মিথ্যা বলা, চোগলখোরী করা, কুদৃষ্টি দেওয়া, গালিগালাজ করা, শরিয়তের অনুমতি ব্যতীত কাউকে কষ্ট দেওয়া, দাঁড়ি মুণ্ডানো ইত্যাদি কাজ এমনিতেই ইসলামে হারাম (কঠোরভাবে নিষিদ্ধ) করা হয়েছে। আর এসব কাজ যদি কেউ রোজা রেখে করেন তাহলে রোজা মাকরূহ হবে।

রোজাদার যদি কোনো খাবারের জিনিস বিনা কারণে স্বাদ গ্রহণ করে কিংবা চিবানো হয় তাহলে মাকরূহ হবে। তবে কোনো নারীর স্বামী যদি বদমেজাজি হয়ে তরিতরকারিতে লবন কম বেশি হলে রাগ করবে তাহলে এ কারণে রোজাদার স্বাদ গ্রহণ করতে পারবে। মাকরূহ হবে না।

তবে চিবানোর জন্য ওজর (কারণ) হচ্ছে এত ছোট শিশু যে রুটি চিবুতে পারে না, এমন নরম খাদ্যও নাই যে তাকে খাওয়ানো যাবে, কিংবা এ সময় এমন কেউ তার পাশে নাই যার শরিয়া অনুযায়ী রোজা ভঙ্গের শরীয় হুকুম রয়েছে (হায়েজ নিফাস সম্পন্ন মহিলা) যে একটু চিবিয়ে খাইয়ে দেবে। এক্ষেত্রে রোজাদার তার শিশুকে রুটি চিবিয়ে খাইয়ে দিতে পারবে, এতে রোজা মাকরূহ হবে না। তবে এতটাই সতর্ক থাকতে হবে যাতে খাদ্য কণ্ঠনালীর নিচে নেমে না যায়। তাহলে রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে। (দূররে মোখতার ৩য় খণ্ড)

স্ত্রীকে আলিঙ্গন করা, চুমু দেওয়া কিংবা স্পর্শ করার মধ্যে যদি বীর্যপাতের আশঙ্কা থাকে কিংবা সহবাসের আকাঙ্খা তীব্র হয় তাহলে রোজা মাকরূহ হবে। তাছাড়া রোজা রাখাবস্থায় ঠোট ও জিহবা শোষণ করা নি:শর্তভাবে মাকরূহ। (রদ্দুল মুহতার, ৩য় খণ্ড)

রোজা রাখাবস্থায় বারবার থুথু এলে তা গিলে ফেলায় অনেকেই রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে মনে করেন। একারণে অনেকেই রোজা রাখা অবস্থায় বারবার থুথু ফেলেন। এভাবে রোজাবস্থায় থুথু ফেলা মাকরূহ।

রোজা রাখা অবস্থায় মিসওয়াক করা মাকরূহ নয়, তবে মিসওয়াক করতে গিয়ে যদি মিসওয়াকের আঁশ কণ্ঠনালীর ভেতরে চলে যায় তাহলে রোজা ভেঙ্গে যাবে।

আমরা অনেকেই মনে করি, রোজা রাখাবস্থায় মিসওয়াক করা যাবে না। বরং রোজা রেখে রাসূলুল্লাহ (সা.) মিসওয়াক করতেন।

সাহাবি আমের ইবনে রবীআহ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি অনেকবার রাসূলুল্লাহ (সা.) কে রোজাবস্থায় মিসওয়াক করতে দেখেছি। (তিরমিযী, ২য় খণ্ড)

রোজাবস্থায় গোলাপ কিংবা মেশক ইত্যাদির ঘ্রাণ নেওয়া, দাঁড়ি-গোঁফে তেল লাগানো ও সুরমা লাগানো মাকরূহ নয়।

তাই আসুন, এসব অপছন্দনীয় কাজ বর্জন করে সঠিকভাবে সিয়াম সাধনার মাধ্যমে মহান আল্লাহ পাক ও তার প্রিয় হাবিব (সা.)- এর সন্তুষ্টির্জন করি।

আল্লাহ আমাদের সবাইকে রোজার মাকরূহ হতে সতর্ক ও সচেতন থাকার তওফিক দিন…আমীন।

Logo-orginal